সাধারণ ক্যামেরা, মোবাইল ফোনের ক্যামেরা থেকে শুরু করে প্ল্যানেটোরিয়ামের প্রোজেক্টরের লেন্স – ভালো করে তাকালে হয়ত দেখবেন তা তৈরি করেছে জার্মানির কার্ল সাইস কোম্পানি৷ পরবর্তী প্রজন্মকেও আকৃষ্ট করতে এই সংস্থা উদ্যোগ নিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
জার্মানির ইয়েনা শহরের স্কুল পড়ুয়াদের জন্য কার্ল সাইস কোম্পানি শহরের মাঝে এক তাঁবু গড়ে তুলেছে৷ ভেতরে ঢুকলে গবেষণার নানা সুযোগ পাওয়া যায়৷ এখানে তারা প্রজাপতির ডানা পরীক্ষা করতে পারে অথবা মাইক্রোস্কোপের নীচে সাপের চামড়া বিশ্লেষণ করতে পারে৷ একজন সঙ্গে একটা ক্রিস্টাল বা স্ফটিকখণ্ড নিয়ে এসেছে৷ স্কুল ছাত্র ফ্লোরিয়ান লাউকনার বলে, ‘‘আমি ক্রিস্টালের ধার দেখতে পাচ্ছি৷ কোণগুলি অনেকটা পিরামিডের মতো৷ অন্য পাথরও তার গায়ে লেগে রয়েছে৷ ব্যাপারটা নিয়ে আমার এত আগ্রহ, যে হয়তো আমি বড় হয়ে বিজ্ঞানী হবো৷ এভাবে খালি চোখে দেখা যায় না, এমন কত কত কী যে আবিষ্কার করা যায়!''
বিশ্বের প্রাচীনতম প্ল্যানেটোরিয়ামগুলির মধ্যে একটি এই শহরেই রয়েছে৷ সেখানেও শিশুদের বিজ্ঞান সম্পর্কে উৎসাহিত করে তোলার উদ্যোগ নেওয়া হয়৷ আধুনিক প্ল্যানেটোরিয়াম নক্ষত্র, মহাকাশ ও প্রকৃতির গল্প শোনায়৷ শিশুদের নানা প্রতিক্রিয়া শোনা যায়৷ একজন বললো, তার খুব ভালো লাগে, কারণ এখানে সবকিছু বুঝিয়ে বলা হয়৷ সব কিছু ঘোরে বলে তাদের আর ঘোরার প্রয়োজন হয় না৷
ক্যামেরার চোখে বাংলাদেশে শিশু শ্রম
বাংলাদেশে ৪৫ লাখ শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত৷ তাদের মধ্যে ১৭ লাখের বেশি আবার কাজ করে রাজধানী ঢাকায়৷ আমাদের আলোকচিত্রী মুস্তাফিজ মামুন শিশুশ্রমের কিছু চিত্র তুলে এনেছেন আপনাদের জন্য৷
ছবি: Mustafiz Mamun
বেলুন কারখানায় শিশু শ্রমিক
ঢাকার কামরাঙ্গীর চরের একটি বেলুন তৈরির কারখানায় কাজ করছে দশ বছরের এক শিশু৷ সরকারি তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশে ৪৫ লাখেরও বেশি শিশু ঝুঁকিপূর্ণ কাজে নিয়োজিত, যার প্রায় ১৭ লাখেরও বেশি শিশু শ্রমিক খোদ রাজধানীতেই৷
ছবি: Mustafiz Mamun
নেই কোনো নজরদারি
কামরাঙ্গীর চরের এই বেলুন কারখানায় খোলামেলাভাবে নানা ধরনের রাসায়নিকের মাঝে কাজ করে শিশু শ্রমিকরা৷ বাংলাদেশ সরকার ঝুঁকিপূর্ণ ৩৮টি কাজে শিশুশ্রম নিষিদ্ধ করলেও আদতে তা মানা হচ্ছে না৷ সরকারিভাবে নেই কোনো নজরদারির ব্যবস্থা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
সিংহভাগই শিশু শ্রমিক
ঢাকার কামরাঙ্গীর চরে কমপক্ষে দশটি বেলুন তৈরির কারখানা আছে, যেগুলোর সিংহভাগেই শিশু শ্রমিক কাজ করে৷ সড়ক থেকে একটু আড়ালে ভেতরের দিকেই কাজ করানো হয় শিশুদের৷ সপ্তাহে সাত দিনই সকাল-সন্ধ্যা কাজ করতে হয় তাদের৷ তবে শুক্রবারে আধাবেলা ছুটি মেলে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ
ঢাকার কেরাণীগঞ্জে সিলভারের তৈজসপত্র তৈরির কারখানায় কাজ করে শিশু শ্রমিক আলী হোসেন৷ মারাত্মক উচ্চ শব্দের মধ্যে সকাল থেকে রাত পর্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করতে হয় তাকে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ট্যানারি কারখানায় শিশু শ্রমিক
ঢাকার হাজারীবাগের একটি ট্যানারি কারখানায় বাইরে কাজ করে নোয়াখালীর আসিফ৷ বয়স মাত্র বারো৷ রাসায়নিক মিশ্রিত চামড়া শুকানোর কাজ করে সে৷ দিনে ১২ ঘণ্টারও বেশি কাজ করে সামান্য যে মজুরি পায় তা দিয়ে সংসার চালাতে মাকে সাহায্য করে আসিফ৷
ছবি: Mustafiz Mamun
মায়ের সঙ্গে রাব্বি
কামরাঙ্গীর চরের একটি প্লাস্টিক বোতল প্রক্রিয়াকরণ কেন্দ্রে মায়ের সঙ্গে কাজ করে চাঁদপুরের রাব্বি৷ এই কেন্দ্রের মালিক নাকি শিশু শ্রমিক নিয়োগের বিরোধী৷ মায়ের অনুরোধে রাব্বিকে কাজ দেয়া হয়েছে বলে দাবি তাঁর৷ কারণ রাব্বির মা সারাদিন খেটে যে মজুরি পান তাতে সংসার চলে না৷ সংসার চালাতে তাই কাজ করতে হচ্ছে রাব্বিকে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
হিউম্যান হলারে শিশু হেল্পার
ঢাকার রাস্তায় চলাচলকারী হিউম্যান হলারগুলোতে শিশু শ্রমিক চোখে পড়ার মতো৷ বাহনগুলো দরজায় ঝুলে ঝুলে কাজ করতে হয় এ সব শিশুদের৷ চলন্ত গাড়ি থেকে পড়ে গিয়ে প্রায়ই দুর্ঘটনার শিকারও হয় এসব শিশুরা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
ব্রিক ফিল্ডে শিশুরা
ঢাকার আমিন বাজারের বিভিন্ন ব্রিক ফিল্ডেও কাজ করে শিশু শ্রমিকরা৷ প্রতি হাজার ইট বহন করে পারিশ্রমিক পায় ১০০-১২০ টাকা৷ একটি কাঁচা ইটের ওজন কমপক্ষে তিন কেজি৷ একেকটি শিশু ৬ থেকে ১৬টি ইট এক-একবারে মাথায় নিয়ে পৌঁছে দেয় কমপক্ষে ৫০০ গজ দূরে, ইট ভাটায়৷ তাদের কোনো কর্মঘণ্টাও ঠিক করা নেই৷ একটু বেশি উপার্জনের আশায় রাত পর্যন্ত কাজ করে তারা৷
ছবি: Mustafiz Mamun
লেদ কারখানায় ঝুঁকিপূর্ণ কাজে শিশুরা
পুরনো ঢাকার লালবাগের একটি লেদ কারখানায় কাজ করে ১১ বছরের শিশু রহিম৷ সারাদিন লোহা কাটা, ভারি যন্ত্রপাতি মেরামত, হাতুরি পেটানোসহ নানা রকম ঝুঁকিপূর্ণ কাজ করে সে৷
ছবি: Mustafiz Mamun
9 ছবি1 | 9
কার্ল সাইস কারখানা যেন শহরের মধ্যে আরেকটা শহর৷ কারখানার নিজস্ব প্ল্যানেটোরিয়ামে প্রযুক্তি পরীক্ষা করা হয়৷ এই যন্ত্রটি কলকাতায় পাঠানো হচ্ছে৷ ষাটের দশকে সেখানে সাইস কোম্পানির যে যন্ত্রটি পাঠানো হয়েছিল, সেটি বড় সেকেলে হয়ে গেছে৷ মানুষের চোখ প্রকৃতিকে হুবহু দেখতে পায়, ফিল্ম ক্যামেরা যা পারে না৷ সাইস কোম্পানির পদার্থবিদ ফল্কমার শরখট বলেন, ‘‘এই গোলক নক্ষত্রগুলি ফুটিয়ে তোলে৷ আলো বেরোনোর ফলে বড় লেন্সগুলি জ্বলজ্বল করছে৷ মোট ১২টি লেন্স রয়েছে৷ এই ১২টি প্রোজেক্টর দিয়ে আমরা গোটা রাতের আকাশ ফুটিয়ে তুলতে পারি৷''
পাশের হলেই প্ল্যানেটোরিয়ামের লেন্স তৈরি হয়৷ সব কাজ শেষ করে প্রতিদিন একটি করে প্রোজেক্টর প্রস্তুত হয়৷ দাম প্রায় ৫০,০০০ ইউরো৷ দুই জার্মানির পুনরেকত্রীকরণের পর পশ্চিম দিক থেকে আরও বেশি কম্পিউটার প্রযুক্তি এসেছিল৷ কোম্পানির ইঞ্জিনিয়ার ফ্রাংক সেমরাউ বলেন, ‘‘আমি মজা করে বলি, এমন যন্ত্রের উপযোগিতার প্রায় ৫০ শতাংশই আসে সফটওয়্যার থেকে৷ এই প্রযুক্তির সামনে আত্মসমর্পণ করতেই হয়৷
আর্কাইভের প্রধান কোম্পানির ইতিহাস জানেন৷ শীতল যুদ্ধের সময় সোভিয়েত জোটের মধ্যে সাইস ছিল সবচেয়ে বড় লেন্স কোম্পানি৷ তখন প্রায় ৭০,০০০ কর্মী এই সংস্থায় কাজ করতেন৷ এক নোবেলজয়ী পদার্থবিদের সঙ্গে সহযোগিতায় আধুনিক এই অপটিকাল মাইক্রোস্কোপ তৈরি হয়েছে৷ এই ক্ষেত্রে বেশ মুনাফা হয়৷ সাইস গোটা বিশ্বে প্রথম সারির কোম্পানি হিসেবে পরিচিত৷ কোম্পানির মার্কেটিং প্রধান ইয়খেন টাম বলেন, ‘‘মস্তিষ্ক নিয়ে গবেষণা একটা গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্র৷ প্রত্যেকটি স্নায়ুকোষের মধ্যে আদান-প্রদানের সূক্ষ্ম ছবিও পর্দায় আমরা দেখতে পাচ্ছি৷''
ইনস্টাগ্রাম লেন্সের চোখে বার্লিন
বার্লিনে ফেব্রুয়ারি মাস মানেই ধূসর, বরফে ঢাকা, বৃষ্টি-ভেজা পরিবেশ৷ কিন্তু ইনস্টাগ্রামের ফটোগ্রাফারদের জন্য এর আলাদা আকর্ষণ রয়েছে৷ কী দেখেন তাঁরা নিজেদের লেন্সের চোখে? বার্লিনে ইনস্টাগ্রামের জগতেই বা কী চলছে?
ছবি: Instagram/Tobias Koch
কুৎসিত, অথচ আকর্ষণীয়
বার্লিন শহর নোংরা, ধূসর, কুৎসিত৷ যুদ্ধের ক্ষতচিহ্নের অভাব নেই৷ অনেক বাড়িঘর কিছুটা তৈরি হয়ে পড়ে আছে, অথবা ভেঙে দেওয়া হয়েছে৷ কিন্তু সেটাই তো চোখে পড়ার মতো! বার্লিন প্রাচীর পতনের পর থেকে মুক্তি ও সৃজনশীলতার তাগিদ অনুভব করা যায় বলে মনে করেন মিশায়েল শুলৎস৷ তিনিই ইনস্টাগ্রামে বার্লিনের সবচেয়ে জনপ্রিয় অ্যাকাউন্ট @berlinstagram-এর স্রষ্টা৷
ছবি: Instagram/Michael Schulz
মোবাইল নয়, আসল ক্যামেরার কারসাজি
‘আমার ফোন কখনো কাদায় পড়ে যায়নি’ – গর্ব করে এ কথা বলতে পারেন ক’জন? মোবাইল ফোনের ক্যামেরার অনেক উন্নতি সত্ত্বেও লিন্ডা ব্যার্গ (@lindaberlin) কিন্তু তাঁর পেশাদারী ডিএসএলআর ক্যামেরার উপরই নির্ভর করেন৷ সেই ক্যামেরার অনেক কারসাজি দিয়ে অভিনব প্রেক্ষাপটে শহরের স্থাপত্য তুলে ধরেন তিনি৷
ছবি: Instagram/Linda Berg
বাড়ির উঠানেই জীবনের কাহিনি
ডকুমেন্টরি ফটোগ্রাফার কারোলিন ভাইনকফ (@careauxphotography) বার্লিনের সদা পরিবর্তনশীল দৈনন্দিন জীবনযাত্রার ছবি তোলেন৷ ইনস্টাগ্রাম যেন তাঁর ভার্চুয়াল ডায়রি৷ ধৈর্য ধরে সব সময়ে ‘মোটিফ’-এর সন্ধান করে বেড়ান তিনি৷ আচমকা অসাধারণ মুহূর্ত উঠে আসে চোখের সামনে৷ প্রস্তুত না থাকলেই সেটি চিরকালের জন্য হাতছাড়া হয়ে যায়৷
ছবি: Instagram/Carolin Weinkopf
লেন্সের সামনে খাদ্যের সমাহার
মুখে জল আনা খাবার-দাবার ক্যামেরাবন্দি করার চেষ্টা করেন এৎসগি পোলাট (@ezgipolat)৷ তবে ফিল্টার নয়, স্বাভাবিক আলোতেই ছবি তুলতে ভালেবাসেন তিনি৷ স্থানীয় বাজার থেকে তাজা ফলমূল, তরিতরকারি এনে সুন্দরভাবে সাজিয়ে দেন তিনি৷ হাটেও আনাগোনা রয়েছে তাঁর৷ শহরের কোন পাড়ায় কবে কোন হাট বসে, সে খবর তাঁর ঝুলিতে রয়েছে৷
ছবি: Instagram/Ezgi Polat
অন্যদের সঙ্গে আদান-প্রদান
খুঁটিনাটি নিয়ে মাথা ঘামানো বৃথা বলে মনে করেন মিশায়েল শুলৎস৷ আনাড়ি ফটোগ্রাফারদের জন্য তাঁর পরামর্শ – নিখুঁত ছবির বদলে নিজস্ব আগ্রহের মোটিফ ও গল্প বলার ভঙ্গি গড়ে তোলাই মূল কাজ৷ স্থানীয় ফটোগ্রাফারদের কাজ দেখতে, চলতি প্রবণতা বুঝতে হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা উচিত (যেমন #igersberlin, #berlin, #kreuzberg)৷ ছবির ‘জিওট্যাগিং’ করাও জরুরি৷
ছবি: Instagram/Michael Schulz
মোটিফ সর্বত্র, প্রস্তুত থাকা চাই
ফটোগ্রাফার হিসেবে টোবিয়াস কখ (@tokography) আরও ব়্যাডিকাল হতে পিছপা হন না৷ তিনি ব্যস্ত রাজপথের মাঝখানে গিয়ে সবার ভ্রূকুটি অগ্রাহ্য করে ছবি তোলেন৷ ফোনের ক্যামেরাই তাঁর সঙ্গী৷ সেটি কখনো হাত ফসকে কাদায় পড়েনি৷ বিষয় বাছাইয়ের ক্ষেত্রে কোনো ছুতমার্গ নেই তাঁর৷ রাস্তার গর্ত থেকে শুরু করে দোকানের জানালা – যে কোনো জায়গায় আকর্ষণীয় মোটিফ খুঁজে পাওয়া যেতে পারে৷
ছবি: Instagram/Tobias Koch
6 ছবি1 | 6
ভবিষ্যতের দক্ষ কর্মী খুঁজতে সাইস কোম্পানির এখনো তেমন অসুবিধা হচ্ছে না৷ গোটা অঞ্চলে অনেকেই এই কোম্পানিতে প্রশিক্ষণের সুযোগ পেতে আগ্রহী৷