অপরাধী ধরতে প্রায় এক বছর ধরে ‘চাইল্ডস প্লে' নামের একটি জনপ্রিয় শিশু পর্নোগ্রাফি ওয়েবসাইট চালিয়েছে অষ্ট্রেলিয়ান পুলিশ৷ নরওয়ের এক সংবাদপত্রের অনুসন্ধানে উঠে এসেছে এই তথ্য৷
বিজ্ঞাপন
ভারডেনস গং বা ভিজি নামে পরিচিত নরওয়ের অন্যতম এই ট্যাবলয়েড পত্রিকা বেশ কিছুদিন ধরেই এ ধরনের স্পর্শকাতর কার্যক্রমের উপর অনুসন্ধান চালিয়ে আসছে৷ এরই অংশ হিসেবে অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের প্রায় ১১ মাস ধরে শিশু পর্নোসাইট চালানোর তথ্যটি প্রকাশিত হয়৷ ভিজির অনুসন্ধানে উঠে আসে, এ বছরের সেপ্টেম্বরে সাইটটি বন্ধ করে দেয়ার আগ পর্যন্ত এতে পুলিশের পক্ষ থেকে শিশুদের অপব্যবহার ও ধর্ষণসহ চরম অবমাননাকরপর্নোগ্রাফি আপলোড ও শেয়ার করা হয়েছে৷ গতবছর ‘চাইল্ডস প্লে' নামের এই সাইটের মূল চালক যুক্তরাষ্ট্র থেকে গ্রেফতারের পর কুইন্সল্যান্ড পুলিশের ‘টাস্কফোর্স আর্গস' এই ওয়েবসাইটটি নিজেদের নিয়ন্ত্রণে নেয়৷ যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধী ধরতে এ ধরনের কার্যক্রমের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও অস্ট্রেলিয়ায় এর উপর আইনগত বাধা নেই৷
এর আগে মার্কিন পুলিশ ‘গিফটবক্স' নামের আরেকটি ফোরামে ‘চাইল্ডস প্লে' সাইটের মূল চালক ও তার সহযোগীর যোগাযোগের সূত্র ধরে তাদের গ্রেফতার করে৷ পরবর্তীতে যুক্তরাষ্ট্রে অপরাধী ধরতে অপরাধমূলক কার্যক্রম নিষিদ্ধ করার পর ‘চাইল্ডস প্লে' সাইটের নিয়ন্ত্রণ নেয় অস্ট্রেলিয়ান পুলিশ৷
বর্তমানে এ সাইটে ১০ লাখেরও বেশি মানুষের প্রোফাইল রয়েছে, যার মধ্যে চার হাজারেরও বেশি সক্রিয় ব্যবহারকারী ও অন্তত ১০০ জন রয়েছে যারা নিজেরাই শিশু ধর্ষণ করে তা রেকর্ড করে বা অন্য কারো দ্বারা শিশু ধর্ষণের ভিডিও ধারণ করে সেগুলো আপলোড করে৷
যদিও অস্ট্রেলিয়ার পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, শিশু যৌন নিপীড়ণকারীদের ধরতে তাদের এ কার্যক্রম যৌক্তিক, এখনো পর্যন্ত এ বিষয়ে উল্লেখযোগ্য কোনো সাফল্যের খবর পাওয়া যায়নি৷ অন্যদিকে, ‘হানি ট্র্যাপ' হিসেবে এ সাইটে অসংখ্যশিশু নিপীড়ণমূলক ছবি ও ভিডিও পোষ্ট করেছিল আর্গস৷
ভিজি-র অনুসন্ধান অনুযায়ী, সারা বিশ্বে অন্তত ৬০ থেকে ৮০ জন মানুষের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা শুরুর প্রস্তুতি চলছে৷ এ অনুসন্ধানের সূত্র ধরে ক্যানাডায় এক ডজনেরও বেশি শিশুকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়েছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে৷
আলিস্টেয়ার ওয়ালশ/আরএন
যৌন হয়রানির হাত থেকে কীভাবে বাঁচাবেন শিশুকে
শিশুরা বিকৃতকাম মানুষের সহজ শিকার৷ সারল্যের সুযোগ নিয়ে সহজে ভোলানো যায় তাদের৷ অনেক সময় শিশুরা বুঝতে পারে না, চিনতে পারে না পিশাচের থাবা৷ আর বুঝলেও করতে পারে না প্রতিবাদ, প্রতিরোধ৷ শুধু একটা অস্বস্তি থেকে যায় সারাটা জীবন৷
ছবি: picture alliance/abaca
ভয়াবহ অবস্থা ভারতে
ভারতের জাতীয় ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর পরিসংখ্যান অনুযায়ী, দেশের অর্ধেকেরও বেশি বাচ্চা যৌন নিগ্রহের শিকার৷ তবে সবচেয়ে ভয়ংকর সত্য হলো, নাবালিকা বা শিশুর ওপর যৌন হেনস্থার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটছে পরিবারের মধ্যে, পরিবারেরই কোনো মানসিক বিকারগ্রস্ত সদস্যের হাতে৷ তাই সে সব ঘটনা পুলিশের কাছে পৌঁছাচ্ছে না, হচ্ছে না কোনো ডাইরি অথবা মামলা৷
ছবি: Fotolia/Gina Sanders
হারিয়ে যাচ্ছে শৈশব
এভাবে প্রতিদিন বিকৃত যৌন নির্যাতনে হারিয়ে যাচ্ছে অগুন্তি শৈশব৷ অনেকক্ষেত্রেই শিশুরা বুঝে উঠতে পারছে না, বলে উঠতে পারছে না তাদের অমানবিক সেই সব অভিজ্ঞতার কথা৷ তাই শিশুদের প্রতি যৌনাসক্ত, বিকৃত মানুষগুলো থেকে যাচ্ছে লোকচক্ষুর আড়ালে৷ সমাজবিদরা বলছেন, এ জন্য আগাম সতর্কতার দায়িত্ব নিতে হবে অভিভাবক এবং স্কুলের৷ শিশুকে দিতে হবে তার প্রাপ্য শৈশব৷
ছবি: Fotolia/Kitty
যেভাবে বোঝাবেন বাচ্চাদের
সহজ ভাষায় খেলা বা গল্পচ্ছলে শিশুদের এ বিষয়ে একটা ধারণা গড়ে তোলা যেত পারে৷ বাচ্চাদের বলতে হবে যে, তাদের শরীরটা শুধুমাত্র তাদের৷ অর্থাৎ কেউ যেন তাদের ‘গোপন’ জায়গায় হাত না দেয়৷ তাই কোনো আত্মীয় বা পরিচিত ব্যক্তির আচরণ অস্বস্তিকর ঠেকলে, কেউ তাদের জোর ঘরে কোনো ঘরে নিয়ে গেলে, খেলার ছলে চুমু দিলে বা শরীরের কোথাও হাত দিলে – তা যেন মা-বাবাকে জানায় তারা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চিনিয়ে দিন যৌনাঙ্গ
অনেক বাবা-মা নিজ সন্তানের সঙ্গে যৌনাঙ্গ নিয়ে কথা বলতে কুণ্ঠা বোধ করেন৷ কিন্তু এই লজ্জা কাটিয়ে উঠতে হবে এবং খুব ছোটবেলাতেই ছবি এঁকে অথবা গল্পে-গানে বাচ্চাকে তার শরীরের অন্য সব অঙ্গের মতো যৌনাঙ্গ, লিঙ্গ ইত্যাদি চিনিয়ে দিতে হবে৷ এমনটা করলে কেউ যদি তাদের সঙ্গে পিশাচের মতো ব্যবহার করে, তাহলে শিশুরা সহজেই বলতে পারবে কে, কখন, কোথায় হাত দিয়েছিল৷
ছবি: DW/S.Rahman
শিশুর কথা শুনুন, তার পক্ষ নিন
শিশু যাতে আপনাকে বিশ্বাস করতে পারে, বন্ধুর মতো সবকিছু খুলে বলতে পারে – সেটা নিশ্চিত করুন৷ আপনার বাচ্চা যদি পরিবারের কাউকে বা আপনার কোনো বন্ধুকে হঠাৎ করে এড়িয়ে যেতে শুরু করে অথবা আপনাকে খুলে বলে বিকৃত সেই মানুষের কৃতকর্মের কথা, তবে সময় নষ্ট না করে শিশুটির পক্ষ নিন আর তিরস্কার করে বাড়ি থেকে বার করে দিন ঐ ‘অসুস্থ’ লোকটাকে৷
ছবি: Fotolia/pegbes
স্কুলেরও দায়িত্ব আছে
বাচ্চারা দিনের অনেকটা সময় স্কুলে কাটায়৷ তাই যৌন শিক্ষার ক্ষেত্রে স্কুলের একটা বড় দায়িত্ব থেকে যায়৷ তবে স্কুলের মধ্যে, বিদ্যালয় চত্বরেও ঘটতে পারে শিশু নির্যাতনের ঘটনা৷ তাই স্কুল থেকে ফেরার পর বাচ্চা যদি অতিরিক্ত চুপচাপ থাকে, একা একা সময় কাটায় বা পড়াশোনা করতে না চায়, তাহলে ওর সঙ্গে কথা বলুন৷ জানতে চান কী হয়েছে, প্রয়োজনে স্কুল কর্তৃপক্ষকেও জানান৷
ছবি: picture-alliance/blickwinkel
ছেলে-মেয়ে সমান!
আমাদের সমাজে ছোট থেকেই মেয়েদের সঙ্গে বৈষম্যমূলক আচরণ করা হয়৷ মেয়ে হলেই হাতে একটা পুতুল আর ছেলে হলে ধরিয়ে দেয়া হয় বল বা খেলনার পিস্তল৷ ছেলের পাতে যখন তুলে দেয়া হয় মাছের বড় টুকরোটা, তখন মেয়েটির হয়ত এক গ্লাস দুধও জোটে না৷ এ বৈষম্য বন্ধ করুন৷ বাবা-মায়ের চোখে ছেলে-মেয়ে সমান – সেভাবেই বড় করুন তাদের৷ তা না হলে নারীর ক্ষমতায়ন হবে কীভাবে? কীভাবে কমবে শিশু নির্যাতন?