1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অপরাধ স্বীকার করায় তাদের ‘সালাম’

৭ জানুয়ারি ২০২১

গত ছয়মাসে সাত হাজার ৬৫০ জন ব্যক্তি কালো টাকা সাদা করেছেন৷ সে কারণে এনবিআর প্রায় ৯৪০ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে৷ সাদা হয়েছে দশ হাজার কোটি টাকারও বেশি৷

গত ছয়মাসে সাত হাজার ৬৫০ জন ব্যক্তি কালো টাকা সাদা করেছেন। সে কারণে এনবিআর প্রায় ৯৪০ কোটি টাকা রাজস্ব পেয়েছে। সাদা হয়েছে দশ হাজার কোটি টাকারও বেশি।
ছবি: DW

তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের পর এবারই সর্বোচ্চ সংখ্যক ব্যক্তি কালো টাকা সাদা করলেন৷ তবে দুই আমলের মধ্যে পার্থক্য আছে৷ ২০০৭ সালে তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময় কালো টাকা সাদা করার সুযোগ গ্রহণ না করলে শাস্তির হুমকি দেয়া হয়েছিল৷ বলা হয়েছিল, নির্দিষ্ট সময়ের পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড এনবিআর-এর একটি বিশেষ টিম অনুসন্ধানে নামবে এবং কারো অঘোষিত আয় খুঁজে পাওয়া গেলে সর্বোচ্চ ২৫০ শতাংশ জরিমানা করা হবে। সেই ভয়ে তখন ৩২ হাজার ৫৫৮ ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান কালো টাকা সাদা করেছিলেন৷ এতে বৈধ হয়েছিল তিন হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা, আর সরকার রাজস্ব পেয়েছিল প্রায় সাড়ে ৬৮৭ কোটি টাকা৷

আর এবার গত ছয় মাসে এত সংখ্যক ব্যক্তির কালো টাকা সাদা করার সুযোগ গ্রহণ করার কারণ বাজেটে দেয়া দুটি বাড়তি সুবিধা৷ এগুলো হলো:

  • প্রচলিত আইনে যা-ই থাকুক না কেন ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত ব্যক্তি শ্রেণির করদাতারা আয়কর রিটার্নে অপ্রদর্শিত জমি, বিল্ডিং, ফ্ল্যাট ও অ্যাপার্টমেন্টের উপর প্রতি বর্গমিটারের উপর নির্দিষ্ট হারে, এবং গচ্ছিত অর্থ, সঞ্চয়পত্র, শেয়ার, বন্ড বা অন্য কোনো সিকিউরিটিজের উপর ১০ শতাংশ কর দিয়ে আয়কর রিটার্নে প্রদর্শন করলে আয়কর কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না৷
  • তিন বছরের লক-ইনসহ কতিপয় শর্তে ১ জুলাই ২০২০ থেকে ৩০ জুন ২০২১ পর্যন্ত ব্যক্তি শ্রেণির করদাতা পুঁজিবাজারে অর্থ বিনিয়োগ করলে এবং ওই বিনিয়োগের উপর ১০ শতাংশ কর দিলে আয়কর কর্তৃপক্ষ বা অন্য কোনো কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে কোনো প্রশ্ন করতে পারবে না৷

প্রিয় পাঠক, একটা বিষয় খেয়াল করুন৷ মাত্র ১০ শতাংশ কর দিয়ে কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হয়েছে৷ মানে, যারা নিয়ম মেনে কর দিয়েছেন তাদের কর দিতে হয়েছে ৩০ শতাংশ, আর নিয়ম না মানা ব্যক্তিরা ১০ শতাংশ কর দিয়েই পার পেয়ে গেলেন৷ সরকারও সেই সুযোগ করে দিলো৷ অনেকটা লটারি জেতার মতোই সুযোগ, কী বলেন?

জাহিদুল হক, ডয়চে ভেলে বাংলাছবি: DW

কিন্তু এমন সুবর্ণ সুযোগ গ্রহণ করলেন মাত্র সাত হাজার ৬৫০ জন৷ অথচ আমরা জানি, দেশে কালো টাকার মালিকের সংখ্যা এর চেয়েও অনেক, অনেক বেশি৷ তারা এই সুযোগ নেয়ার কথা চিন্তা করছেন না৷ কারণ, এটা করলে তো সরকারকে জানাতে হবে যে, তাদের কাছে কালো টাকা আছে৷ সেধে সেটা জানানোর দরকার কী?

এই এক বিবেচনায় আমরা ঐ সাত হাজার ৬৫০ জন ব্যক্তিকে ‘সালাম’ দিতেই পারি, কেননা তারা তো অন্তত লজ্জার মাথা খেয়ে স্বীকার করেছেন যে, তাদের কাছে কালো টাকা ছিল৷

বাকিদের কাছ থেকে টাকা আদায় করা যাবে কীভাবে? তারা যেহেতু 'লটারি’র টোপ গিলছেন না, তাই তাদের হুমকি-শাস্তির ভয় দেখাতে হবে৷ কিন্তু সেখানেই তো কবি নীরব! কারণ, প্রভাবশালী সব ব্যক্তিরা আছেন ঐ তালিকায়৷ যারা হুমকি-ধামকি দেবেন, খুঁজলে দেখা যাবে, তাদের পরিচিতজনেরাও আছেন সেই তালিকায়৷

লেখার এই পর্যায়ে এসে সাবেক অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের একটি মন্তব্য মনে পড়ে গেল৷ ২০০৯ সালে অর্থমন্ত্রী দায়িত্ব নেয়ার পর বাজেটের আগে তিনি ঘোষণা দিয়েছিলেন যে, কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া হবে না৷ কিন্তু বাজেট ঘোষণায় ঠিকই সুযোগটি দেয়া হয়েছিল৷ এর কারণ জানাতে গিয়ে তিনি বলেছিলেন, ‘‘কালো টাকা সাদা করার সুযোগ দেয়া নৈতিকভাবে সমর্থনযোগ্য নয়৷ তারপরও এই সুযোগ দেয়া হচ্ছে রাজনৈতিকভাবে সর্বোচ্চ সমঝোতা৷ কেননা, রাজনীতি হলো আপোশের সবচেয়ে নিপুণ কৌশল৷ রাজনীতিতে সব ধরনের মানুষ ও সব ধরনের স্বার্থকে সমন্বয় করে চলতে হয়৷ এ হচ্ছে, রাজনীতির কাছে নৈতিকতার পরাজয়৷’’

প্রিয় পাঠক, মুহিতের শেষ কথাটি আবার পড়ুন আর ভাবুন। এরপর কি আর কথা থাকতে পারে?

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

আরো সংবাদ দেখান
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ