1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

জঙ্গিবিরোধী অভিযানের দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৩ মে ২০১৭

সিলেটে জঙ্গিবিরোধী অভিযানের সময় জঙ্গি হামলায় পাঁচজন নিহতের ঘটনা এবং সর্বশেষ রাজশাহীতে অভিযানের সময় জঙ্গি হামলায় ফায়ার সার্ভিস কর্মী নিহতের ঘটনায় এ ধরনের অভিযানের দক্ষতা, পরিকল্পনা এবং গোয়েন্দা তথ্য নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে৷

ছবি: Getty Images/AFP/Str

রাজশাহীর গোদাগাড়ির বেণীপুর গ্রামে জঙ্গি আস্তানায় ‘অপারেশন সান ডেভিল' শেষ হয় শুক্রবার বেলা ১ টার দিকে৷ আর অভিযান শুরু হয় আগের দিন সকাল ৮ টার দিকে৷ অভিযানে এক নারীসহ পাঁচ জঙ্গি নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ৷ আর নারী জঙ্গি বেলি আত্মঘাতী হওয়ার আগে কুপিয়ে হত্যা করেছে ফায়ার সার্ভিস কর্মী আব্দুল মতিনকে৷ এই অপারেশন পরিচালনা করেছে রাজশাহীর স্থানীয় পুলিশ৷ আব্দুল মতিনের মৃত্যুর ঘটনায় প্রশ্ন উঠেছে অভিযান পরিচালনার অদক্ষতা এবং সুষ্ঠু পরিকল্পনার না থাকা নিয়ে৷

বেণীপুরের জঙ্গি আস্তানাটি মাটির দেয়াল দেয়া একটি টিনের ঘর৷ প্রত্যন্ত গ্রামে এর অবস্থান৷ স্থানীয় সাংবাদিক দুলাল আব্দুল্লাহ জানিয়েছেন, ‘‘বৃহস্পতিবার অভিযান শুরুর পর জঙ্গিরা বাড়ির ভেতরে অবস্থান করছিল৷ কোনো সাড়া শব্দ না পেয়ে অভিযানে থাকা পুলিশ সদস্যরা ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বাড়ির মাটির দেয়ালে পানি দেয়ার কাজে লাগায়৷ তাদের ধারণা ছিল পানিতে মাটির দেয়াল ভিজে ধসে পড়লে ভিতরে জঙ্গিরা কী অবস্থায় আছে তা দেখা যাবে৷ ওই সময় ভেতর থেকে নারী জঙ্গি বেলি ধারালো অস্ত্র নিয়ে মতিনের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে৷ অন্য জঙ্গিরাও ধারালো অস্ত্র নিয়ে বের হয়ে আসে৷ তারা মতিনকে হত্যা করে৷ এর কিছুক্ষণের মধ্যেই বিস্ফোরণ ঘটে৷ মতিন নিহত হন এবং পুলিশের চার সদস্য এসময় আহত হন৷''

nisarul - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

এ প্রসঙ্গে ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক মেজর একেএম শাকিল নেওয়াজের কাছে জানতে চাওয়া হলে তিনি ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ফায়ার সার্ভিসের চারজন সদস্য সেখানে ছিলেন৷ তারা ছিলেন নিরস্ত্র৷ তারা পানি দিচ্ছিলেন মাটির দেয়ালে৷ পেছনে পুলিশ ছিল৷ কী অবস্থায় ফায়ারম্যান মতিন নিহত হয়েছেন তা ভিডিও ফুটেজেই স্পষ্ট হয়েছে৷ তাদের প্রটেকশন দেয়া হয়েছে কিনা সেখানেই স্পষ্ট৷ আমরা ঘটনাটি তদন্ত করছি৷ পুলিশ করছে কিনা জানি না৷''

রাজশাহী বিভাগীয় ফায়ার সার্ভিসের উপ-পরিচালক নুরুল ইসলামকে প্রধান করে ৫ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে৷ কারো গাফিলতির কারণে ফায়ারম্যান মতিনের মৃত্যু হয়েছে কিনা তারা তা তদন্ত করবেন৷''

Major Shakil - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

কাউন্টার টেররিজম অথবা কোনো বিশেষ টিমের সহায়তা ছাড়াই রাজশাহীর স্থানীয় পুলিশ এই অভিযান চালিয়েছিল৷ রাজশাহী রেঞ্জের পুলিশের অতিরিক্তি ডিআইজি নিশারুল আরিফ ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজশাহী জেলা পুলিশ এবং রেঞ্জ রিজার্ভ ফোর্স এই অভিযান চালিয়েছিল৷ স্থানীয় কাউন্টার টেররিজম-এর একটি বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট ছিল ভেস্ট এবং বোমা নিষ্ক্রিয় করার জন্য৷ তারা অভিযানে অংশ নেয়নি, আর রাজশাহী সিআইডি'র সদস্যরা ক্রাইম সিনের দায়িত্বে ছিলেন৷''

তাঁর বর্ণনায় জানা যায়, চারজন ফায়ারম্যান ১৫০ গজ দূর থেকে মাটির দেয়ালে পানি দিচ্ছিলেন৷ তাদের তিন দিকে পুলিশ ছিল৷ তবে এ ধরনের ঘটনা আগে না ঘটনায় তারা অপ্রস্তুত হয়ে পড়েছিলেন৷ জঙ্গিরা আস্তানা থেকে বেরিয়ে এসে হামলা চালায় আর মতিন পা পিছলে পড়ে গেলে তাকে কোপাতে থাকে ঐ নারী৷ তিনি জানান, ‘‘ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের হাতে অস্ত্র ছিলো না তবে পুলিশ ফাঁকা গুলি ছুড়েছিল৷ কিন্তু এটা দুর্ভাগ্যজনক হলেও সত্যি তাকে রক্ষা করা যায়নি৷''

Dulal - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

এই ঘটনায় তাই প্রশ্ন উঠেছে বিশেষ বাহিনীর সহায়তা ছাড়া স্থানীয় পুলিশ ফোর্স দিয়ে এককভাবে অভিযান পরিচালনা করা হলো কেন? অভিযানে ওই বাড়ি থেকে ১১টি বোমা, একটি পিস্তল, দুই রাউন্ড গুলি, একটি ম্যাগাজিন, গান পাউডার পাওয়া গেছে৷ এছাড়া পাওয়া গেছে দুইটি সুসাইডাল ভেস্ট৷ প্রশ্ন ওই বোমা এবং বিস্ফোরকের মজুদ সম্পর্কে অভিযানের আগে স্থানীয় পুলিশের কাছে আদৌ কোনো তথ্য ছিল কিনা?

গত বছরের ১লা জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গি হামলার পর পুলিশের ‘কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্স ন্যাশনাল ক্রাইম টিম' গঠন করা হয়৷ আর অভিযানের জন্য বিশেষ প্রশিক্ষিত টিম সোয়াট কাজ করছে৷ এই টিমগুলো হলি আর্টিজান ঘটনার পরজঙ্গিবিরোধী অভিযানে সাফল্য পেয়েছে৷ কিন্তু রাজশাহীর অভিযানে তাদের কাজে লাগানো হয়নি৷ পুলিশের একাধিক সূত্র দাবি করেছে স্থানীয় পুলিশ সফলতার বাহবা পেতে এককভাবে এই অভিযান চালাতে গিয়ে বিপদ ডেকে এনেছে৷

abdur rashid - MP3-Stereo

This browser does not support the audio element.

এর আগে গত মার্চে সিলেটের দক্ষিণ সুরমা এলাকার আতিয়ামহলে অভিযান চলাকালেই পাশের জনবহুল এলাকায় জঙ্গিরা দু'দফা হামলা চালায়, এতে পাঁচজন নিহত হন৷ তাদের মধ্যে র‌্যাব পুলিশের কর্মকর্তাও ছিলেন৷

রাজশাহীর অভিযান প্রসঙ্গে নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল আব্দুর রশীদ(অব.) ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘রাজশাহীতে স্থানীয় পুলিশ অভিযান চালিয়েছে, যা ঠিক হয়নি৷ জঙ্গিবিরোধী অভিযান সাধারণ অপরাধ দমন অভিযান নয়৷ এই অভিযান চালাতে গেলে বিশেষভাবে দক্ষ হতে হয়৷ অভিযান পরিকল্পনায় অদক্ষতা ও তথ্যের অভাব ছিল, ফায়ার সার্ভিসের কর্মীদের বিনা প্রটেকশনে অত কাছে পাঠানো হল৷ জেলা পুলিশের এই দক্ষতা থাকার কথা নয়৷''  তাঁর মতে এখন প্রত্যেক জেলাতেই পুলিশের জঙ্গিবিরোধী বিশেষ ইউনিট থাকা প্রয়োজন৷ কারণ সব সময় ঢাকা থেকে গিয়ে অভিযান পরিচালনা সম্ভব নয়৷ প্রসঙ্গত পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট সারাদেশেই গঠন করার কথা৷ এরইমধ্যে বিভাগীয় শহরে ইউনিট রয়েছে৷

আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ