1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

"অপরিচিত” দুই দলকে নিবন্ধন দেয়ার উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্ন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১৭ জুলাই ২০২৩

যে দুইটি নতুন রাজনৈতিক দলকে নির্বাচন কমিশন নিবন্ধন দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে তার একটি বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)-এর আহ্বায়ক ডা. আব্দুর রহমান বিএনপির একজন সাবেক সংসদ সদস্য।

নির্বাচন ভবন (ফাইল ফটো)
নির্বাচন ভবন (ফাইল ফটো)ছবি: bdnews24.com

আর আরেকটি বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টির আহ্বায়ক শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ তরিকত ফেডারেশনের নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারির চাচাত ভাই।

মোট ১২টি দলকে নির্বাচন কমিশন প্রাথমিকভাবে বাছাই করেছিলো। নির্বাচন কমিশনের সচিব জাহাঙ্গীর আলম জানিয়েছেন বাকি ১০টি দলের মাঠ পর্যায়ে তথ্যে গরমিল পাওয়া তাদের নিবন্ধন দেয়া হচ্ছে না। নির্বাচনের আগে আর কোনো নতুন দলকে নিবন্ধন দেয়া হবে না। মোট ৯৩টি দল নিবন্ধনের জন্য আবেদন করেছিলো।

এদিকে এর তীব্র প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে নাগরিক ঐক্য, গণ অধিকার পরিষদ ও এবি পার্টিসহ নিবন্ধন প্রত্যাশী কয়েকটি রাজনৈতিক দল। তারা এর বিরুদ্ধে আদালতে যাবেন বলে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন। তাদের অভিযোগ সরকারের কথায় কমিশন  নির্বাচনের আগে ভিন্ন উদ্দেশ্যে এমন দুইটি দলকে নিবন্ধন দিচ্ছে যাদের খুঁজে পাওয়া কঠিন।

আর সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল(অব.) এম সাখাওয়াৎ হোসেন বলেন, "নির্বাচন কমিশন এমন দুইটি দলকে নিবন্ধন দিচ্ছে যাদের নাম আপনার মুখে আমি প্রথম শুনলাম। যারা দীর্ঘদিন ধরে রাজনীতিতে সক্রিয় আছে তাদের দিচ্ছে না। এর মাধ্যমে কমিশন আরো বিতর্কিত হচ্ছে।”

দুই দলের কথা:

বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন (বিএনএম)-এর আহ্বায়ক ডা. আব্দুর রহমান ডয়চে ভেলেকে জানান, তার গ্রামের বাড়ি বরগুণা জেলার বেতাগী উপজেলায়। তিনি ষষ্ঠ সংসদ নির্বাচনে বিএনপির টিকিটে  সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। রাজনীতি শুরু করেন জিয়াউর রহমানের সময়  ছাত্রদল দিয়ে । সর্বশেষ তিনি বরগুণা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ছিলেন। ২০০৬ সালে বিএনপির রাজনীতি ছেড়ে দেন। তার দলের সদস্য সচিব মেজর (অব.) হানিফ বিএনপির কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য ও বেগম খালেদা জিয়ার প্রধান নিরাপত্তা কর্মকর্তা ছিলেন। ঢাকার মহাখালীতে তার দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়। তিনি বলেন, "দেশে জাতীয়তাবাদী রাজনীতির আরো তিনটি দল আছে।  আমি প্রকৃত জাতীয়তাবাদের অনুসারীদের নিয়ে দল করেছি। যারা মনোনয়ন বিক্রি করবে না, কমিটি বিক্রি করবে না, রাষ্ট্রীয় সম্পদ লুন্ঠন করবে না, যারা প্রকৃত জাতীয়তাবাদকে ধারণ করে তাদের সংগঠিত করেছি।” আগামী নির্বাচনে অংশ নেয়ার ব্যাপারে  কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্যদের সঙ্গে বসে তার পরে সিদ্ধান্ত নেবেন বলে জানান তিনি। তাদের দলীয় প্রতীক নোঙর। দলের ২২টি জেলা কমিটি ও ১০০ উপজেলা কমিটি আছে বলে দাবি করেন ডা. আব্দুর রহমান।

‘এমন দলকে নিবন্ধন দেয়ার কী উদ্দেশ্য থাকতে পারে?’

This browser does not support the audio element.

অন্যদিকে তরিকত ফেডারেশনের চেয়ারম্যান নজিবুল বাশার মাইজভান্ডারির চাচাত ভাই শাহজাদা সৈয়দ সাইফুদ্দিন আহমেদ সুপ্রিম পার্টির আহ্বায়ক । তাদের কেন্দ্রীয় কার্যালয় মিরপুর মাইজভান্ডারি খানকাহ শরিফে। তিনি বলেন, "আমরা সব শর্ত পুরণ করেই নিবন্ধন পাচ্ছি। তরিকত ফেডারেশনের মতো আমরা কোনো ইসলামী দল না। আমরা একটি গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল।”

তার কথা,"আমরা রাজনৈতিক দল গঠনের আগে সামাজিক কাজ করেছি।  আমাদের কয়েকটি সামাজিক সংগঠন আছে। আমরা জঙ্গিবাদ ও মাদকের বিরুদ্ধে অনেক দিন ধরেই কাজ করে আসছি। আগামী নির্বাচনে আমাদের অংশ নেয়ার ইচ্ছা আছে।”

তিনি দাবী করেন, দুই বছর আগে গঠন করা তাদের রাজনৈতিক দলের  ১০০ উপজেলা ও ২৫টি জেলায় কমিটি ও অফিস আছে। শুরুতে দলের প্রতীক ছিলো আপেল। আরেকটি দল আদালতে মামলা করে ওই প্রতীক পাওয়ায় এখন তাদের প্রতীক একতারা।

নতুন দলের নিবন্ধন পাওয়ার নিয়ম কী?

রাজনৈতিক দলের  নিবন্ধন আইন ২০২০-এ বলা হয়েছে আগ্রহী দলকে দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে দরখাস্ত জমা দেয়ার তারিখ পর্যন্ত সময়ের মধ্যে অনুষ্ঠিত কমপক্ষে দুইটি সংসদ নির্বাচনে দলীয় প্রতীক নিয়ে কমপক্ষে একটি আসন লাভ করতে হবে। অথবা অংশ নেয়া আসনের যেকোনো একটিতে কমপক্ষে পাঁচ শতাংশ ভোট পেতে হবে। ২২ জেলা ও  ১০০ উপজেলায় কমিটিসহ সক্রিয় দপ্তর থাকতে হবে। প্রত্যেক কমিটিতে কমপক্ষে ২০০ ভোটার সদস্য হতে হবে।

প্রতিক্রিয়া:

প্রাথমিকভাবে নিবন্ধনের জন্য মনোনীত ১০টি দলের পাঁচটি সোমবার সংবাদ মম্মেলন করে ইসির সিদ্ধান্ত প্রত্যাখ্যান করেছে।

নাগরিক ঐক্যের আহ্বায়ক মাহমুদুর রহমান মান্না  বলেন,"এটা একটা চূড়ান্ত অবিচার যদিও খুব অবাক হইনি। এই নির্বাচন কমিশনতো সরকারের ইচ্ছে পূরণের হাতিয়ার। তারা (ইসি) আমাদের জানিয়েছিল যে প্রাথমিকভাবে আমরা পাস। তারা ডকুমেন্টগুলো চেক করেছে। বিভিন্ন গণমাধ্যমে আসছে। তারপরও তারা যা যা জানতে চেয়েছে সে বিষয়ে আমরা তাদেরকে সহযোগিতা করেছি। যাদের নিবন্ধন দিয়েছে তাদেরতো চালচুলো নাই। এই ইসির হাতে ভালো নির্বাচন হওয়ার কোন সুযোগ নেই।  এটা তার আর একটা প্রমাণ।”

তিনি বলেন,"আমরা এখন সরকার বিরোধী আন্দোলনে আছি। তাই নিবন্ধন নিয়ে আলাদা করে আন্দোলন করব কী না ভাবছি।”

গণঅধিকার পরিষদের একাংশের আহ্বায়ক নুরুল হক নুর বলেন,"আমরা সব শর্ত পুরণ করার পরও আমাদের নিবন্ধন দেয়া হয়নি। আমরা এর বিরুদ্ধে আদালতে যাবো। রাজপথে আন্দোলন করব।”

তিনি অভিযোগ করেন,"সরকার আমাদের তাদের সঙ্গে নির্বাচনে যাওয়ার প্রস্তাব দিয়েছিলো। নির্বাচনের খরচ দেয়ার কথাও বলেছিল। তাতে রাজি না হওয়ায় আমাদের নিবন্ধন দেয়া হয়নি। আর যে দুইটি দলকে নিবন্ধন দেয়া হচ্ছে তা সরকারেই সৃষ্ট। একটি শাসক দলের মিত্র তরিকত ফেডারেশনের এবং আরেকটি বিএনপি থেকে কিছু লোক নিয়ে করা। বিএনপিকে ভাঙার জন্য এটা করা হচ্ছে।”

এবি পার্টির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মঞ্জু অভিযোগ করেন,"১২টি দলের মধ্যে আমরা এক নম্বরে থাকার পরও আমাদের নিবন্ধন দেয়া হয়নি। কারণ আমরা সরকারবিরোধী আন্দোলনে আছি। আর ইইউর প্রাক নির্বাচন পর্যবেক্ষক দলকে নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের কথা বলেছি। যাদের নিবন্ধন দেয়া হচ্ছে তাদের নামও আগে কেউ শোনেনি। ”

নির্বাচন কমিশন আরো গ্রহণযোগ্যতা হারাবে:

সাবেক নির্বাচন কমিশনার ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন মনে করেন এর মাধ্যমে নির্বাচন কমিশন আরো গ্রহণযোগ্যতা হারাবে। তিনি বলেন,"তারা কোন নিয়মে ওই দুইটিকে নিবন্ধন দিল আর বাকি ১০টিতে দিল না তা আমি জানি না। তবে যাদের দিয়েছে তাদের নাম আমি আপনার কাছে প্রথম শুনলাম, আগে কখনো শুনিনি। আর যারা পায়নি তাদের মধ্যে বেশ কয়েকটি দল আছে যারা অনেক দিন ধরেই রাজনীতির মাঠে আছে।”

তিনি বলেন,"যেসব দলের অস্তিত্ব নেই তাদের নির্বাচনের আগে নিবন্ধন দেয়ার কী  উদ্দেশ্য থাকতে পারে। ২০১৪ সাল থেকেই এই ধরনের কাজ শুরু হয়েছে। আর নির্বাচন কমিশন সরকারের কথায় কাজ করে নির্বাচনের আগে আরো বিতর্কিত হচ্ছে।”

২৬ জুলাই পর্যন্ত নিবন্ধনের জন্য চূড়ান্ত ওই দুইটি দলের ব্যাপারে কোনো আপত্তি থাকলে তা দেয়ার সুযোগ আছে বলে জানিয়েছে ইসি। তারপর তাদের আনুষ্ঠানিক নিবন্ধন দেয়া হবে।

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ