খুন, অবৈধ মাদক ব্যবসা, অস্ত্র চোরাচালানের আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রগুলোকে ধরতে অপারেশন ট্রোজান শিল্ড নামের বিশেষ এক অভিযানে সারাবিশ্বে আটশ জনকে আটক করা হয়েছে।
বিজ্ঞাপন
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, যুক্তরাষ্ট্রসহ উন্নত বিশ্বের বেশ কয়েকটি দেশের আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী এ অভিযানে যুক্ত ছিল।
ডিজিটাল পদ্ধতিতে আন্তর্জাতিক চক্রগুলোর উপর নজরদারি চালাতে অ্যানোম নামে একটি ডিজিটাল অ্যাপ চালু করে তারা। গত ১৮ মাস ধরে এমন অপারেশন পরিচালনা করে সফল হয় বলে দাবি তাদের।
আন্তর্জাতিক সমন্বয়ে শুরু করা এমন অপারেশনের সফলতা ও সম্ভাব্য ব্যবহার বিষয়ে ইউরোপের দেশগুলোর অপরাধ নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ইউরোপোল এক সংবাদ সম্মেলনে জানায়, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে অ্যানম প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিভিন্ন অভিযানে তারা সফলতা পেয়েছে।
''আন্তর্জাতিক পর্যায়ে অপরাধ দমনে আমরা যে সফলতা পেয়েছি তা অসাধারণ,'' বলেন ইউরোপোলের ডেপুটি এক্সিকিউটিভ ডাইরেক্টর ইয়েন-ফিলিপ লেকোফে।
সংবাদ সম্মেলনে উপস্থিত যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইয়ের ক্রিমিনাল ইনভেস্টিগেশন বিভাগের অ্যাসিট্যান্ট ডিরেক্টর কেলভিন শিভারস বলেন, ''অপারেশন ট্রোজান শিল্ড-এর সফলতার পেছনে রয়েছে উদ্ভাবনী শক্তি, আন্তরিক চেষ্টা ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ের সহযোগিতা।
অপারেশনে যা পাওয়া গেল
মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকারের যত অভিযান
মাদক ব্যবহারকারীর সংখ্যা বাড়ছে৷ সেই সাথে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর হাতে জব্দ হওয়া মাদকের পরিমাণও বাড়ছে৷ পাশাপাশি মাদকবিরোধী অভিযানে বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের অভিযোগও তুলছে মানবাধিকার সংস্থাগুলো৷ ছবিঘরে বিস্তারিত..
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
মাদক চোরাচালান
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, দেশে বিভিন্ন ধরনের মাদক চোরাচালানের পরিমাণ বাড়ছে৷ সরকারের সর্বশেষ প্রতিবেদন অনুযায়ী, আটককৃত মাদকের পরিমাণ ও এর সাথে জড়িতদের সংখ্যা তার আগের বছরগুলোর তুলনায় কয়েকগুণ বেড়েছে৷
ছবি: AFP
বেড়েছে ইয়াবা
মাদক নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, ২০২০ সালে তিন কোটি ৬৮ লাখ ৮১ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করেছে। ২০১৯ সালে এর পরিমান ছিল তিন কোটি চার লাখ ৪৬ হাজার পিস। ২০১৯ সালের চেয়ে ২০২০ সালে করোনার বছরে বেশি ইয়াবা উদ্ধার হয়েছে।
ছবি: Getty Images/Afp/Y. A. Thu
গাঁজা আটকও বাড়ছে
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের প্রতিবেদন বলছে, ২০১৫ সালেদেশের বিভিন্ন বাহিনীর সদস্যরা ৩৯ হাজার নয়শ ৬৮ কেজি গাঁজা আটক করে৷ ২০২০ সালে আটকের পরিমাণ দাঁড়ায় ৫০ হাজার দুইশ ৭৯ কেজি৷
ছবি: Fadel Senna/AFP/Getty Images
হেরোইন বেড়েছে প্রায় দ্বিগুণ
আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সারা দেশে অভিযান চালিয়ে ২০১৫ সালে একশ সাত দশমিক ৫৪ কেজি হেরোইন উদ্ধার করে৷ ২০২০ সালে উদ্ধারের পরিমাণ ছিল দুইশ ১০ দশমিক ৪৪ কেজি৷
ছবি: Bulgarian Prosecutor's Office/picture-alliance/AP
সরকারের বিশেষ অভিযান
মাদক নিয়ন্ত্রণে সরকার ২০১৮ সালের মে মাসে দেশব্যাপী বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে৷ বিশেষ করে দেশের সীমান্তবর্তী এলাকাগুলোতে ‘সাড়াশি অভিযান’ চালায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
হাজার হাজার আটক
মাদকবিরোধী এ অভিযান শুরুর প্রথম দুই মাসের মাথায় প্রায় ২৫ হাজার মামলা দায়ের হয়৷ এসব মামলায় ৩৫ হাজারেরও বেশি লোককে আটক করা হয় বলে জানিয়েছে সংবাদমাধ্যমগুলো৷
ছবি: bdnews24.com/A. Al Momin
শতাধিক আত্মসমর্পন
অভিযান চলার সময় মাদকব্যবসায়ীদের আত্মসমর্পনের সুযোগ দেওয়া হয়৷ ২০১৯ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে কক্সবাজারের টেকনাফে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে ১০২জন মাদক ব্যবসায়ী আত্মসমর্পন করেন৷
ছবি: Getty Images/Afp
সমালোচনায় মাদকবিরোধী অভিযান
এদিকে অভিযানের প্রায় পুরোসময় জুড়েই দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাথে ‘বন্দুকযুদ্ধে’ নিহতের খবর পাওয়া যায়৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের তথ্য মতে, এ সময় ‘৪৬৬ জন বিচারবহির্ভূত’ হত্যার শিকার হয়৷ বিষয়টি নিয়ে দেশ-বিদেশে সমালোচনার মুখে পড়ে সরকার৷
ছবি: bdnews24.com
কতটা সফল মাদকবিরোধী অভিযান?
কক্সবাজারে ক্ষমতাসীন দলের কয়েকজন নেতার বিরুদ্ধে অভিযোগ থাকার পরও তাদের বিচারের আওতায় না আনার অভিযোগ ও কথিত বন্দুকযুদ্ধে ক্ষমতাসীন দলেরই এক কাউন্সিলরের মৃত্যুর পর প্রশ্নের মুখে পড়ে অভিযান৷ বিশ্লেষকরা বলছেন, এ ধরনের অভিযানে সময়িকভাবে ঠেকানো গেলেও মাদক নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/A.M. Ahad
বাড়ছে মাদকাসক্ত রোগীর সংখ্যা
মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের বরাত দিয়ে গণমাধ্যমগুলো জানায়, ২০১৯ সালে ১১৪জন রোগী সরকারি-বেসরকারি পুনর্বাসন কেন্দ্রে চিকিৎসা নিয়েছেন৷ ২০১৮ সালে এ সংখ্যা ছিল ১০৪ জন আর ২০১৭ সালে ৬৯জন৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Buchanan
নতুন মাদকের আবির্ভাব
বাংলাদেশে বিভিন্ন সময়ে উদ্ধার হওয়া মাদকের মধ্যে রয়েছে ইয়াবা, হেরোইন, গাঁজা ও ফেনসিডিল৷ সম্প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনা তদন্ত করতে গিয়ে এলএসডি নামের এক মাদকের সন্ধানও পায় গোয়েন্দা বিভাগ৷ পুলিশের দাবি, রাজধানীতে ১৫টি গ্রুপ রয়েছে, যারা এক বছর ধরে এলএসডি বিক্রি ও সেবনের সঙ্গে জড়িত৷
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo
11 ছবি1 | 11
১৮ মাস ধরে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে চালানো অভিযানে ছয় টন কোকেইন, পাঁচ টন মারিজুয়ানা, দুই টন ম্যাথঅ্যামফেটামিন, দুইশ ৫০টি আগ্নেয়াস্ত্র, ২৫টি বিলাসবহুল গাড়ি ও একশ ৪৮ মিলিয়ন ডলার উদ্ধার করা হয়েছে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানানো হয়।
অ্যানোম অ্যাপের মাধ্যমে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থাগুলো প্রায় ২৭ মিলিয়ন এনক্রিপটেড মেসেজ যাচাইবাছাই করেছে। আর এ প্রযুক্তি ব্যবহার করে বিশ্বের সাতশ" স্থানে অভিযান পরিচালনা করে। এসময় আটশ জনকে আটক করেছে বলে জানানো হয়।
এদিকে, ফ্রাঙ্কফুর্টে জার্মানির রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী জানান, বিশ্বব্যাপী চলা এ অভিযানের অংশ হিসেবে দেশটিতে প্রায় ১৫০টি স্থানে অভিযান চালিয়ে ৭০ জনকে আটক করা হয় ।
অপারেশনে যুক্ত যেসব দেশ
এ অপারেশনে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপোল, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড, নেদ্যারল্যান্ডস ও সুইডিশ পুলিশসহ মোট ১৬টি দেশের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যুক্ত ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআই, ইউরোপোল নেদারল্যান্ডস ও সুইডিশ পুলিশ অপারেশনের নেতৃত্ব দেয়।
অ্যানোম নামেন ডিজিটাল অ্যাপটি ব্যবহার কে সংস্থাগুলো আন্তর্জাতিক মাফিয়া চক্রের বিভিন্ন সময়ে পাঠানো বার্তা যাচাইবাছাই করতে সক্ষম হয় এবং সেই অনুযায়ী অভিযান পরিচালনা করে।