মঙ্গলবার ভোরে এক বিশেষ অভিযানে ৯ ‘জঙ্গি' নিহত হয়েছে বলে দাবি করেছে পুলিশ৷ পুলিশের কথায়, এরা গুলশানের মতো বড় ধরনের হামলার প্রস্তুতি নিচ্ছিল৷ বিস্তারিত পরিচয় জানা না গেলেও, নিহদের বয়স ২০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে বলে খবর৷
বিজ্ঞাপন
পুলিশ জানায়, সোমবার রাত একটার দিকে তারা বিশেষ অভিযানে বের হলে ঢাকার কল্যাণপুর এলাকার পাঁচ নম্বর সড়কের ‘জাহাজ বিল্ডিং' নামে পরিচিত একটি বাড়ি থেকে তাদের লক্ষ্য করে গ্রেনেড ছুড়ে মারা হয়৷ এতে একজন পুলিশ সদস্য আহত হন এবং এক হামলাকারী পালাতে গিয়ে পুলিশর হাতে ধরা পড়ে৷ এরপর র্যাব পুলিশের অতিরিক্ত ফোর্স এসে বাড়িটির চারপাশ ঘিরে রাখে এবং মঙ্গলবার ভোর পাঁচটার দিকে অভিযান চালায় যৌথ বাহিনী৷ এক ঘণ্টার সেই অভিযানে ন'জন ‘জঙ্গি' নিহত হয়৷ পালিয়ে যায় একজন৷
তারপর দুপুর নাগাদ চারটি আগ্নেয়াস্ত্র, ২২ রাউন্ড গুলি, ২৩টি গ্রেনেড, কিছু দেশীয় অস্ত্র ও পাঁচ কেজি বিস্ফোরক উদ্ধার করে পুলিশ৷
ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া দুপুরের পর এক সংবাদ সম্মেলনে দাবি করেন, ‘‘যারা নিহত হয়েছে তারা নিশ্চিতভাবেই জঙ্গি৷ এ বিষয়ে আমরা শতভাগ নিশ্চিত৷ আর অভিযানে আমাদের কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি৷''
শহিদুল হক
তিনি বলেন, ‘‘আমাদের তেমন কোনো ক্ষয়-ক্ষতি না হলেও, অভিযানের সময় জঙ্গিদের সঙ্গে ব্যাপক গুলি বিনিময় হয়৷ তবে পরিকল্পনা মাফিক অভিযান পরিচালনা করায় কোনো ক্ষয়-ক্ষতি হয়নি৷''
তবে সংবাদ সম্মেলনে কমিশনার আছাদুজ্জামান মিয়া অবশ্য সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি৷
তিনি শুধু বলেন, ‘‘গুলশান হামলায় অংশ নেয়া জঙ্গি এবং কল্যাণপুরের জঙ্গিরা একই গ্রুপের সদস্য৷ তাদের বিস্তারিত নাম-ঠিকানা এখনও জানা না গেলেও, এটুকু বলতে পারি যে, তারা উচ্চশিক্ষিত৷'' জানা যায়, গত জুন মাসে বাড়িটির পাঁচতলা ভাড়া নেয় এই ‘জঙ্গিরা'৷ পরিচয় দেয় যে, তারা বাংলা কলেজের ছাত্র৷
এদিকে পুলিশের আইজি একেএম শহীদুল হক জানান যে, নিহতরা জেএমবির সদস্য৷ তারা নিজেদের বলে জেএমবি আর আমরা বলি আইএস৷ তাদের পরনে তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস-এর মতো কালো পোশাক ছিল৷ এমনকি কালো পতাকা ও পাগড়িও উদ্ধার করা হয়েছে তাদের কাছ থেকে৷
ফরেনসিক বিশেষজ্ঞরা ইতিমধ্যেই ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ প্রাথমিকভাবে পরীক্ষা করেছেন৷ তবে এবার লাশের ময়নাতদন্ত করা হবে ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে৷ রাত নাগাদ লাশ সেখানে নেয়া হতে পারে৷
বিভীষিকার ১২ ঘণ্টা
ঢাকার গুলশানের আর্টিজান ক্যাফেতে দীর্ঘ ১২ ঘণ্টার জিম্মি ঘটনার অবসান হলেও মানুষের মন থেকে আতঙ্ক যাচ্ছে না৷ এ ঘটনায় শুক্রবার রাতেই নিহত হয়েছে ২০ জিম্মি৷ নিহত হয়েছেন দুই পুলিশ কর্মকর্তাও৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
ঘটনার শুরু
প্রত্যক্ষদর্শীর বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত পৌনে ৯টার দিকে ‘আল্লাহু আকবর’ বলে একদল অস্ত্রধারী গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে হামলা চালালে অবস্থানরত অজ্ঞাত সংখ্যক অতিথি সেখানে আটকা পড়েন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
দুই পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যু
পরিস্থিতি সামাল দিতে গিয়ে নিহত হন বনানী থানার ওসি সালাউদ্দিন ও গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার রবিউল ইসলাম৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
প্রধানমন্ত্রীর বক্তব্য
কমান্ডো অভিযান চালিয়ে ১৩ জিম্মিকে জীবিত উদ্ধারের পাশাপাশি ছ'জন হামলাকারীকে হত্যা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ বলেছেন, বাকি কয়েকজনকে হয়তো বাঁচানো যায়নি৷ এই জঙ্গি হামলায় জড়িত একজন ধরা পড়েছে বলেও শনিবার সকালে এক অনুষ্ঠানে জানিয়েছেন তিনি৷
ছবি: Reuters
এ যেন দুঃস্বপ্ন
কমান্ডো অভিযানে মুক্ত গুলশানের ক্যাফে থেকে উদ্ধার পাওয়া ব্যক্তিদের ১২ ঘণ্টার ‘দুঃস্বপ্ন’ কাটছে না৷ তাঁদের চোখে মুখে ক্লান্তি ও ভীতির ছাপ৷ তারা বলছিলেন, কয়েকজনের মৃতদেহ দেখেছেন, অনেক জায়গায় রক্তের ছাপ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
প্রত্যক্ষদর্শীদের বক্তব্য
তাঁরা বলছেন, জিম্মিকারীরা বাংলাদেশি মুসলমানদের সুরা পড়তে বলে৷ সুরা পড়তে পারার পর তাঁদেরকে রাতে খেতেও দেওয়া হয়৷ যাঁরা হিজাব পরা ছিল, তাঁদের বাড়তি খাতির করা হয়৷
ছবি: picture alliance/ZUMA Press/S. K. Das
আইএস-এর দায় স্বীকার
তথাকথিত ইসলামিক স্টেট বা আইএস এই হামলার দায়িত্ব স্বীকার করেছে বলে সাইট ইন্টিলিজেন্স গ্রুপ জানিয়েছে৷ এই জঙ্গি দলের মুখপত্র আমাক নিউজ এজেন্সির বরাত দিয়ে এ সব খবরে দাবি করা হয় যে, ‘তাদের’ এই হামলায় ২৪ জন নিহত হয়েছেন, আহত হয়েছেন ৪০ জন৷
ছবি: picture-alliance/abaca
কমান্ডো অভিযান
সকাল ৭ টা ৩০ মিনিটে রাতভর গুলশানের হোলি আর্টিজান রেস্টুরেন্ট সংলগ্ন এলাকা ঘিরে রাখার পর যৌথ সেনা, নৌ, পুলিশ, র্যাব এবং বিজিবির সমন্বয়ে যৌথ কমান্ডো দল গুলশানে অভিযানের চূড়ান্ত প্রস্তুতি নেয়৷ ৮ টা ১৫ মিনিটে প্রথম দফায় নারী ও শিশুসহ ৬ জনকে উদ্ধার করা হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
ভবনের নিয়ন্ত্রণ ও আতঙ্কের অবসান
৮ টা ৫৫ মিনিটে ভবনের নিয়ন্ত্রণ নেয় অভিযানকারীরা৷ গোয়েন্দা দল ভবনের ভেতর বিস্ফোরকের জন্য তল্লাশি শুরু করে৷ ৯ টা ১৫ মিনিটে ১২ ঘণ্টার রক্তাক্ত জিম্মি সংকটের অবসান হয়৷
ছবি: Getty Images/M. H. Opu
8 ছবি1 | 8
প্রসঙ্গত, অপারেশন স্টর্ম-২৬ নামের এই অভিযানের সময় প্রায় দুই বর্গ কি.মি. এলাকা ঘিরে রাখা হয়৷ কল্যাণপুর এলকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বন্ধও রাখা হয় এদিন৷ এমনকি কয়েকটি সড়কে যান চলাচলও বন্ধ থাকে৷ সেষ পাওয়া খবর অনুযায়ী, এলকাটিতে এখনও তল্লাশী অভিযান অব্যাহত রেখেছে পুলিশ৷