দুর্বোধ্য হলেও শিল্প উপভোগ করা যায় কি? আইসল্যান্ডের সংগীতশিল্পী বিয়র্ক তাঁর গানে এমন আবহ সৃষ্টি করেন, যা না বুঝেও মুগ্ধ হওয়া যায়৷ এবং সেই গান থেকে প্রেরণা নিয়ে মঞ্চে অপেরা তৈরি হচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
গায়িকা হিসেবে বিয়র্ক কণ্ঠ নিয়ে খেলা করেন, সাউন্ডস্কেপ সৃষ্টি করেন, বর্ণাঢ্য শো-র মাধ্যমে চমক সৃষ্টি করেন৷ মোটকথা তাঁর সম্পর্কে কিছু বলতে গেলে বেশ কিছু সেরা বিশেষণ ব্যবহার করতে হয়৷ তাঁর সংগীত রহস্যে ভরা, অদ্ভুত প্রকৃতির. অনবদ্য ও চিত্তাকর্ষক৷
মঞ্চে ‘রিপ্লেসমেন্ট' নামের অনুষ্ঠান চলছে৷ অপেরার মঞ্চে বিয়র্ক-এর অনবদ্য কণ্ঠ উপস্থাপন করা মোটেই সহজ নয়৷ তাঁর পপ সংস্করণ ও জি ইউন-এর অপেরা সোপ্রানোর মধ্যে তুলনা করলেই তা বোঝা যায়৷ কিন্তু জি ইউন নিজের কণ্ঠ ধরে রাখতে পারেন৷ তিনি কি চিরকাল বিয়র্ক-এর ফ্যান ছিলেন? আগে না হলেও এখন তো বটেই৷
বিয়র্ক-এর অ্যালবাম ‘ভেসপার্টাইন' এই প্রোডাকশনের ভিত্তি৷ তাঁর গানের কথা থেকে অনুপ্রেরণা নিয়ে গল্পটি লেখা হয়েছে৷ আইসল্যান্ডের এই গায়িকা অপেরায় সেটি ব্যবহারের অনুমতি দিয়েছেন, তবে নিজে সেই কাজে অংশ নেন নি৷ ডেনমার্কের ‘হোটেল প্রো ফর্মা' নামের এক গোষ্ঠী শিল্প নির্দেশনার দায়িত্ব নিয়েছে৷ গোষ্ঠীর প্রতিনিধি ইয়ন আর স্কুলবার্গ বলেন, ‘‘আমরা ল্যাবে এক বিজ্ঞানী ও তাঁর মতোই দেখতে আরেক জনের সঙ্গে সাক্ষাৎ করছি৷''
‘হোটেল প্রো ফর্মা'-র আরেক প্রতিনিধি কিয়র্স্টেন ডেলহল্ম বলেন, ‘‘ভালবাসার বিষয়ে, ভালবাসা নিয়ে ছবি ও সংগীতে ভরা এই অপেরা৷''
বিশ্বের অসাধারণ কয়েকটি সংগীত ভেন্যু
বিশ্বের নামি-দামি সংগীত ও অপেরা শিল্পীদের আলোয় যেসব মঞ্চ উদ্ভাসিত হয়, বিশ্বের সেরা অর্কেস্ট্রা যেসব মঞ্চে পারফর্ম করে, তেমন কয়েকটি সংগীত ভেন্যু আছে এই ছবিঘরে, যাদের স্থাপত্য এবং আধুনিকতা মুগ্ধ করবে আপনাকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/H. Jiajie
এল্বফিলাহার্মোনি হামব্যুর্গ, জার্মানি
১১ জানুয়ারি জার্মানির এই বৃহত্তর কনসার্ট হলটির উদ্বোধন হয়৷ এমনভাবে এটি তৈরি, যে সমুদ্রবন্দরের একফোটা শব্দ এর ভেতরে প্রবেশ করে না৷ একটি মালগুদামের উপর কাচের এই বাড়িটি যেন জলের ওপর ভাসছে৷ এটি নির্মাণ করতে সময় লেগেছে একদশক৷
ছবি: T. Rätzke
গুয়াংসৌ অপেরা হাউজ, চীন
পার্ল নদীর উপর এই ভবনটি নির্মাণ করা হয়েছে৷ বিশাল আকৃতির একটি প্রস্তরখণ্ডের মত দেখতে এটি৷
ছবি: picture-alliance/ANN
অপেরা সিডনি, অস্ট্রেলিয়া
অসাধারণ এই স্থাপত্যের নির্মাতা ডেনিশ স্থপতি ইয়র্ন উৎসন৷ এটির নির্মাণ শেষ হওয়ার আগেই যিনি পদত্যাগ করেছিলেন৷ এর পেছনে খরচ হয়েছিল প্রচুর অর্থ, ছড়িয়ে পড়েছিল অনেক গুজব৷ ১৪ বছর লেগেছিল এটির নির্মাণ কাজ শেষ হতে৷ চালু হয়েছিল ১৯৭৩ সালে৷ ২০০৭ সালে জাতিসংঘের বিশ্ব ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান পায় এটি৷ ছ’বছরের সংস্কার শেষে চলতি বছরের মে মাসে আবারও এটি চালু হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Naupold
ন্যাশনাল সেন্টার ফর দ্য পারফর্মিং আর্টস, চীন
বেইজিং-এ তিয়েনানমেন স্কয়ার থেকে খুব বেশি দূরে নয়, কিছুটা পথ গেলেই কৃত্রিম লেকের উপর ‘বিশাল একটি ডিম’ বা ‘পানির ফোটা’-র মতো এই ভবনটির দেখা পাবেন৷ ফরাসি স্থপতি পল অ্যান্ড্রু ১৯৯৯ সালে এটি নির্মাণ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/L. Xiashun
পালাউ দে লেজার্ত রেইনা সোফিয়া, স্পেন
নিজের জন্মস্থান ভ্যালেন্সিয়ায় শিল্প ও বিজ্ঞানের অপূর্ব সংমিশ্রণে একটি পুরো শহর নির্মাণ করেছেন বিশ্বখ্যাত স্থপতি সান্তিয়াগো কালাত্রাভা৷ ‘কুইন সোফিয়া প্যালেস অফ দ্য আর্টস’-এর অনন্য নিদর্শন ৷ এটি দেখে কী মনে হয়? ভবন বা স্থাপত্য? নাকি কোনো বিশালাকৃতির রাজহাঁস বা একটি তিমি?
লস অ্যাঞ্জেলেসের ফিলহার্মোনিক অর্কেস্ট্রার হোম ভেন্যু এটি, বর্তমানে যেটির পরিচালক গুস্তাভো দ্যুদামেল৷ বিশাল একটি ফুলের মতো দেখতে এই স্থাপনাটির নামকরণ করা হয়েছে ওয়াল্ট ডিজনির নামে৷
ছবি: picture-alliance/Photoshot
এসপ্লানাডে থিয়েটার্স অন দ্য বে, সিঙ্গাপুর
দু’টি গোলাকৃতির কাঠামো এবং ৭ হাজার ত্রিকোণাকৃতির কাচ দিয়ে স্থাপনাটি নির্মিত৷ স্থানীয় মৌসুমী ফলের নামে স্থানীয়রা এটির নাম দিয়েছেন ‘ডুরিয়ান’৷ সিঙ্গাপুরের সিম্ফোনি অর্কেস্ট্রা এই কনসার্ট হলে প্রায়ই অনুষ্ঠান করে৷ এখানে আসন সংখ্যা ১৬০০৷ এছাড়া নাটক ও অন্যান্য পারফর্মেন্সের জন্য আলাদা ২০০০ আসন রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/robertharding/A. Hall
হার্পা মিউজিক হল, রাইকজাভিক, আইসল্যান্ড
আংশিক রং করা কাচের বিল্ডিং ব্লকগুলোকে মৌমাছির চাকের মতো বসিয়ে আলোর জাদু সৃষ্টি করেছেন শিল্পী ওলাফুর এলিয়াসন৷ দিনের বেলায় বাইরে থেকে কাচের ওপর আলো পড়ে বর্ণালীর সৃষ্টি হয়, রাতে ভবনটির ভেতরের আলো জ্বললে পুরো ভবনটি রঙ বদলায় বহুরূপীর মতো৷
গেটসহেড আর নিউক্যাসলের মধ্যে টাইন নদীর ওপর সাতটা সেতু৷ তার মধ্যে মিলেনিয়াম ব্রিজটি সেজ গেটসহেড কনসার্ট হলের ওপর দিয়ে চলে গেছে৷ পুরো ভবনেই আলো জ্বলে৷ এর নকশা করেছেন প্রখ্যাত স্থপতি স্যার নর্মান ফস্টার৷ উদ্বোধন করা হয় ২০০৪ সালে৷ কনসার্ট হলটি প্রতিদিন ১৬ ঘণ্টা করে বছরে ৩৬৪ দিন খোলা থাকে৷
ছবি: picture alliance/Robertharding
কালচারাল সেন্টার হেডার আলিয়েভ, আজারবাইজান
এই সাংস্কৃতিক কেন্দ্রটি বাকু শহরে কাসপিয়ান সমুদ্রের ওপর নির্মিত৷ বর্তমান প্রেসিডেন্টের নামে নামকরণ করা হয়েছে এটির৷ ২০০৭ সালে এটির নকশা করেন স্থপতি জাহা হাদিদ৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/D. Shamkin
10 ছবি1 | 10
‘হোটেল প্রো ফর্মা' তাদের বর্ণাঢ্য মাল্টিমিডিয়া শো-র জন্য বিখ্যাত৷ মিউজিকাল থিয়েটারের নতুন রূপের খোঁজে বিয়র্ক অপেরা তাদের কাছে এক প্রেরণা৷ কিয়র্স্টেন বলেন, ‘‘হোটেল প্রো ফর্মা বিশ্বের সব ধরনের ঘটনা পরীক্ষা করে৷ শিল্প, ভিশুয়াল আর্টস, সংগীত, স্থাপত্য, চলচ্চিত্র ও মুভমেন্ট দিয়ে আমরা সেই কাজ করি৷''
এ ক্ষেত্রে তাঁদের বিষয় প্রেম-ভালবাসা৷ ‘ভেসপার্টাইন' সৃষ্টিকর্মে বিয়র্ক পুরুষ, শিশু ও প্রকৃতির প্রতি তাঁর ভালবাসা নিয়ে গান গাইছেন৷ অপেরার মঞ্চে সেইসঙ্গে বিজ্ঞানের প্রতি ভালবাসা যোগ করা হয়েছে৷ মহাকাশ ল্যাবের দুই গবেষক সেই মঞ্চায়নের প্রাণপুরুষ৷ কিন্তু বিয়র্ক-এর গানের দুর্বোধ্য কথার মতো তাঁদের অভিযানও অস্পষ্ট থেকে যাচ্ছে৷ কিয়র্স্টেন ডেলহল্ম বলেন, ‘‘বিজ্ঞানীরা তাঁদের ল্যাবে কোন ধরনের গবেষণা করছেন, আমরা তা জানি না৷ হয়ত নতুন শরীর, নতুন মানুষ, নতুন যন্ত্র, নতুন বুদ্ধিমত্তা সৃষ্টি করছেন৷''
ইয়ন আর স্কুলবার্গ এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘জীববিদ্যা ও প্রকৃতির মধ্যে প্রেম-ভালবাসা কী, মঞ্চে আমরা তা পরীক্ষা করছি৷ কারণ মানুষ হিসেবে আমরা এভাবেই বাঁচি৷''
বিয়র্ক-এর সংগীতের তারিফ করতে হলে তা বোঝার প্রয়োজন নেই৷ অপেরার ক্ষেত্রেও সেই যুক্তি খাটে৷ কণ্ঠ, শব্দ ও ছবি দর্শকদের সুন্দর ও রহস্যময় এক জগতে হাতছানি দিয়ে ডাকে৷ সেটাই আসল অনুভূতি৷