1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অপ্রতুল সহায়তা, শীতে কাহিল উত্তরের মানুষ

সমীর কুমার দে ঢাকা
২০ ডিসেম্বর ২০২০

উত্তর-পশ্চিমসহ বাংলাদেশের বিস্তীর্ণ অঞ্চলজুড়ে বইছে শৈত্যপ্রবাহ৷ বেড়েছে ঠান্ডার তীব্রতা৷ পর্যাপ্ত সহায়তা না থাকায় কষ্টে আছেন শ্রমজীবী মানুষ৷ শীতজনিত রোগে ভুগছে শিশু ও বৃদ্ধরা৷ হাসপাতালে বেড়েছে রোগীর সংখ্যা৷ 

ফাইল ছবিছবি: bdnews24

শনিবার বাংলাদেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা নেমেছিল ছয় দশমিক ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷ রোববার তা কিছুটা বেড়ে ৭ ডিগ্রি হয়েছে৷ কুড়িগ্রামের রাজারহাট আবহাওয়া পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রের পর্যবেক্ষক সুবল চন্দ্র সরকার ডয়চে ভেলেকে জানান, রোববার কুড়িগ্রাম ও পঞ্চগড়ে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস৷ আগামী দুই দিন এই পরিস্থিতি অব্যাহত থাকবে৷ তবে ধীরে ধীরে রাতের তাপমাত্রাও বাড়বে৷

কনকনে শীত ও ঘন কুয়াশায় সবচেয়ে বেশি দুর্ভোগে পড়েছে খেটে খাওয়া মানুষ৷ উত্তরের কয়েকটি জেলার কয়েক হাজার মানুষ রয়েছেন নিদারুণ শীত কষ্টে৷ অসহায় জীবন যাপন করছেন খোলা আকাশের নিচে বসবাসকারী মানুষজন৷ শীত বস্ত্রের অভাবে ভোগান্তিতে রয়েছেন বহু মানুষ৷

আব্দুল মোতালেব

This browser does not support the audio element.

দ্রুত সহায়তা দরকার

কনকনে ঠান্ডায় স্থবির হয়ে পড়েছে কুড়িগ্রামের জনজীবন৷ গরম কাপড়ের অভাবে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ৷ খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারনের চেষ্টা করছেন অনেকেই৷ কুড়িগ্রামের জেলা প্রশাসক রেজাউল করিম জানান, সরকারিভাবে জেলার হতদরিদ্র মানুষের মাঝে ৩৫ হাজার কম্বল বিতরণ করা হয়েছে৷ এছাড়া জেলার নয় উপজেলায় গরম কাপড় কিনে বিতরণের জন্য ছয় লাখ টাকা করে বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে৷

তবে কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলার বেরুবাড়ী ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান আব্দুল মোতালেব ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘এ পর্যন্ত সরকারিভাবে ৪৫০ পিস কম্বল পাওয়া গেছে৷ আমার ইউনিয়নের ২০ হাজার পরিবার রয়েছে৷ এদের অধিকাংশ চরাঞ্চলের মানুষ৷ এদের অধিকাংশ হতদরিদ্র৷ আমরা অগ্রাধিকার ভিত্তিতে একটি তালিকাও করেছি৷ কিন্তু সরকারি বা বেসরকারি কোন ধরনের সহায়তা না আসায় মানুষগুলো খুব কষ্টে দিন পার করছেন৷ গত ২০ দিনে সাত-আট জন বয়স্ক মানুষ মারা গেছেন৷ শীতের কারণেই যে মারা গেছেন তা বলছি না৷ কিন্তু তাদের মৃত্যুর জন্য শীতও বড় কারণ৷ দ্রুত এখানকার মানুষের সহায়তা দরকার৷’’

হাসপাতালে বাড়ছে রোগী

কুড়িগ্রামের নাগেশ্বরী উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সাইফ জামান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘শ্বাসকষ্ট ও নিউমোনিয়ার সমস্যা নিয়ে বয়স্ক ও শিশুরা বেশি হাসপাতালে আসছেন৷ গত কয়েকদিনে রোগীর সংখ্যাও বেড়ে গেছে৷ আগে যেখানে ২০-২২ জন রোগী আসত এখন সেখানে রোগীর সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ৩৫-৪০ জন৷ বিশেষ করে শিশুদের নিউমোনিয়া বেশি হচ্ছে৷ তবে হাসপাতালে কারো মৃত্যু হয়নি৷''

ঢাকা শিশু হাসপাতালের নিউমোনিয়া বিভাগ ও এ্যাজমা সেন্টারের প্রধান সহযোগী অধ্যাপক কামরুজ্জামান কামরুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘ঢাকাতেও নিউমোনিয়ার রোগী বাড়ছে৷ বিশেষ করে শিশুদের শ্বাসকষ্ট বেশি হচ্ছে৷ আমরা সবাইকে বলছি, শিশুদের কোনভাবে ঠান্ডা লাগানো যাবে না৷ ঠান্ডার কারণেই এটা হচ্ছে৷ প্রতিটি শিশুকে দিনের একটা নির্দিষ্ট সময় অবশ্যই রোদে রাখতে হবে৷ ভালোভাবে শীতের পোশাক পরিয়ে রাখতে হবে৷ ঠান্ডা থেকে বুকে কফ বসে যাওয়ায় শিশুরা শ্বাসকষ্টে ভুগছে বেশি৷’’

আব্দুল মান্নান

This browser does not support the audio element.

যোগাযোগ বাধাগ্রস্থ

শৈত্যপ্রবাহের সঙ্গে ঘন কুয়াশার কারণে বিমান চলাচলও বাধাগ্রস্থ হচ্ছে৷ গত তিন দিনে নীলফামারি বিমানবন্দরে দুপুর একটা পর্যন্ত বিমান উঠানামা করতে পারেনি৷ অন্যদিকে রাত ১০টার পর থেকে আরিচা-দৌলতদিয়া এবং মাওয়া-কাঁঠালিয়া রুটে ফেরি চলাচল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে৷ ফলে ফেরিঘাটে দীর্ঘ যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে৷ 

আবহাওয়া অধিদফতরের আবহাওয়াবিদ আব্দুল মান্নান ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘বর্তমানে যে শৈত্যপ্রবাহটি চলছে, এটি আস্তে আস্তে সরে যাচ্ছে৷ আপাতত তাপমাত্রা আর নামবে না৷ আগামী তিন দিনের মধ্যে তাপমাত্রার উন্নতি হবে৷ তবে এ মাসের শেষ দিকে আরেকটি শৈত্যপ্রবাহ আসছে৷ সেটার জন্য এখনই প্রস্তুতি নিতে হবে৷’’

কৃষির ক্ষতি

এদিকে, শীত ও ঘন কুয়াশার কারণে নষ্ট হচ্ছে বোরো ধানের বীজতলা৷ বিভিন্ন ধরনের ছত্রাকনাশক ছিটিয়েও তেমন ফল পাওয়া যাচ্ছে না৷ আবহাওয়া অধিদফতরের তথ্যমতে, শস্যভাণ্ডারখ্যাত উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রা তলানিতে নেমে গেছে৷ এ অবস্থায় বীজতলা পচে বোরোর চারা সংকট দেখা দেয়ার শঙ্কা তৈরি হয়েছে৷

কৃষকরা বলছেন, তারা বীজতলায় ছত্রাকনাশক ছিটাচ্ছেন৷ কুয়াশার হাত থেকে বাঁচাতে বীজতলা পলিথিন দিয়ে ঢেকেও রাখছেন৷ তবে অনেকসময় তাতেও কাজ হচ্ছে না৷ গত আমন এবং আউশ  মৌসুমে বন্যা ও বিরূপ আবহাওয়ার কারণে তারা ভালো ফলন পাননি৷ এবারের শীত-কুয়াশার কারণে বোরো নিয়েও শঙ্কা দেখা দিয়েছে৷

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের তথ্য মতে, দেশে গতবছর বোরোর ফলন হয়েছিল দুই কোটি এক লাখ ৮১ হাজার ৩৭৯ মেট্টিক টন৷ এ বছর বোরোর লক্ষমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে দুই কোটি পাঁচ লাখ ৩১ হাজার ৪৭০ মেট্টিক টন৷ এর মধ্যে এখন পর্যন্ত শুধু হাওর এলাকায় বোরো ধান রোপণ শুরু হয়েছে৷ অন্য এলাকায় চারা প্রস্তুত করা হচ্ছে৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ