1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
১ আগস্ট ২০১৮

বাসের চাপায় দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার পর, প্রতিবাদে উত্তাল বাংলাদেশের রাজধানী৷ বুধবার দ্বিতীয় দিনের মতো শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে ঢাকা অচল করে দেয়৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জানিয়েছেন সড়ক নিরাপত্তার সব দাবি মেনে নিয়েছে সরকার৷

Bangladesh Dhaka Straßenunfall
ছবি: bdnews24

সোমবার দুপুরে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের অদূরে বিমানবন্দর সড়কে (র‌্যাডিসন হোটেলের উলটো দিকে) বাস চাপা পড়ে রমিজউদ্দিন ক্যান্টনমেন্ট কলেজের দুই শিক্ষার্থী নিহত হয়৷ দুপুর সাড়ে ১২টায় বিমানবন্দর সড়কের বাঁ-পাশে বাসের জন্য অপেক্ষা করার সময় জাবালে নূর পরিবহনের একটি বাস তাদের চাপা দিলে এ ঘটনা ঘটে৷ নিহতরা হলেন দিয়া খানম মীম ও আব্দুল করিম৷

ঐদিনই শোকার্ত এবং বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ ও গাড়ি ভাঙচুর করে প্রতিবাদ জানায়৷ মঙ্গলবার ঢাকার সব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্র-ছাত্রীরা রাস্তায় নেমে এসে শহর অচল করে দেয়৷ এই প্রতিবাদ অব্যাহত থাকে বুধবারও৷ বুধবার, অর্থাৎ আজও শিক্ষার্থীরা সড়ক অবরোধ করে শহর অচল করে দেয়৷ একইসঙ্গে তারা যানবাহনের কাগজপত্র পরীক্ষা করে দলবেধে৷

‘আইনগত ব্যবস্থা না নেওয়ায় অপ্রাপ্ত বয়স্ক, অদক্ষ, লাইসেন্স ছাড়া চালকের সংখ্যা বাড়ছে’

This browser does not support the audio element.

বাংলামটর এলাকায় বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদের গাড়ি উলটো পথে আসলে তারা গাড়িটি থামায়৷ তোফায়েল আহমেদ নেমে তাদের সঙ্গে কথা বলেন৷ এরপর গাড়ি নিয়ে ফিরে যান সঠিক পথে৷ তারা পুলিশের কিছু গাড়িও উলটো পথে আসায় তারা আটক করে৷ তবে শনির আখড়া এলাকায় গাড়ির কাগজপত্র দেখার সময় একটি পিকআপ ভ্যান না থেমে ফয়সাল নামে এক ছাত্রকে চাপা দিয়ে চলে যায়৷ আহত অবস্থায় তাকে ঢাকার একটি হাসপাতালে ভর্তি করা হয়৷ বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা বুধবারও কিছু গাড়ি ভাঙচুর করে৷

শিক্ষার্থীরা সড়ক নিরপত্তা ও নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খানের নিঃশর্ত ক্ষমা প্রার্থনাসহ যে ৯ দফা দাবি দিয়েছে, তা মেনে নেয়া হয়েছে বলে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল৷ দুপুরে তিনি সচিবালয়ে পরিবহণ নেতাদের সঙ্গে বৈঠক করেন৷ সেখানে পরিবহণ নেতা হিসেবে নৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খানও উপস্থিত ছিলেন৷ সরাষ্ট্রমন্ত্রী বলেছেন, ‘‘এখন থেকে প্রতিটি গাড়ি ছাড়ার আগে গাড়ির কাগজপত্র, ফিটনেস এবং ড্রাইভারের লাইসেন্স পরীক্ষা করা হবে৷ কোনো ঘটনা ঘটলে তার সর্বোচ্চ শাস্তি নিশ্চিত করা হবে৷''

অন্যদিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেছেন, ‘‘নতুন সড়ক নিরাপত্তা আইন সংসদের এই অধিবেশনেই পাশ করা হবে৷''

এর আগে মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনানৌ-মন্ত্রী শাহজাহান খানের হাসি এবং বক্তব্য নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেন৷এরপর নৌ-মন্ত্রী দুই শিক্ষার্থী নিহত হওয়ার ঘটনা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সময় হেসে হেসে কথা বলার জন্য ক্ষমা প্রার্থনা করেন৷

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় থেকে এরইমধ্যে অপ্রাপ্তবয়স্ক চালক ও ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে৷ পুলিশ দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় তিনজন চালক ও দু'জন হেলপারকে আটক করে রিমান্ডে নিয়েছে৷ আর জাবালে নূর পরিবহণের লাইসেন্স বাতিল করা হয়েছে৷ এই পরিবহণ সংস্থাটি নৌ-মন্ত্রীর শ্যালক বলে জানা গেছে৷ পুলিশ বুধবার বিকেলে পরিবহণ সংস্থাটির মালিক শাহদাত হোসেনকে আটক করেছে৷

‘যাদের লাইসেন্স আছে তাদের বেশিরভাগেরই প্রশিক্ষণ নাই, বেপরোয়া গাড়ি চালায়’

This browser does not support the audio element.

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহণ কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) তথ্যমতে, সারা দেশে চলাচল করছে প্রায় ৩০ লাখ যানবাহন৷ এর মধ্যে ঢাকায় চলছে প্রায় ১১ লাখ৷ বিআরটিএ বলছে, সারা দেশে ফিটনেসবিহীন যানবাহনের সংখ্যা ১ লাখ ৬০ হাজার, যার এক-তৃতীয়াংশ বা ৫০ হাজারের বেশি চলে রাজধানীতে৷ যানবাহনের চালকদের মধ্যে মাত্র ২০ লাখের বিআরটিএ-র লাইসেন্স আছে৷

নিবন্ধন ছাড়া আরো ১৯-২০ লাখ যানবাহন আছে, যা ঢাকার উপকণ্ঠে এবং ঢাকার বাইরে চলাচল করে৷ এই যানবাহনগুলো স্থানীয়ভাবে গ্যারেজে তৈরি৷ এই হিসাব ধরলে দেশে এখন যানবাহন চলছে ৫০-৫১ লাখ৷ অনিবন্ধিত যানবাহন ভুয়া নাম্বার প্লেট বা পুলিশকে ম্যানেজ করে চলে৷

তাদের মধ্যে শতকরা ১৫ ভাগের মতো চালকের দক্ষতা বা প্রশিক্ষণ আছে৷ অনেক লাইসেন্সধারী চালক আছেন যাদের প্রশিক্ষণ নেই৷ ভয়াবহ ব্যাপার হলো, চালকদের শতকরা ৩৫ শতাংশের বয়স ১৫ বছরের নীচে৷ যাদের শিশুই বলা যায়৷ তবে যাত্রী কল্যাণ সমিতির মতে  বাস্তবে ১০ লাখের মতো যানবাহনের ফিটনেস নেই৷ এছাড়া ২০ লাখ চালকের লাইসেন্স থাকলেও আরো ৫০ লাখ চালক লাইসেন্স ছাড়াই গাড়ি চালাচ্ছে৷ দুই শিক্ষার্থী নিহতের ঘটনায় আটক তিন চালকের কারুরই বাসা চালানোর লাইসেন্স নেই৷ তার হাল্কা যানবাহনের (কার, মাইক্রোবাস) লাইসেন্স দিয়েই বাস চালাচ্ছিলেন৷

বাস চালক হিসেবে লাইসেন্স পেতেও কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা লাগে না৷ ব্র্যাক-এর এক গবেষণায় বলা হয়েছে, ৫৯ শতাংশ চালক ট্রাফিক আইন মেনে গাড়ি চালান না৷ অধিকাংশ চালকের সড়ক নিরাপত্তা বাতি এবং সাইন সম্পর্কে সম্যক ধারণা নেই৷

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল হক চৌধুরী ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘দীর্ঘদিনের অব্যবস্থার কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে৷ অপ্রপ্ত বয়স্ক, অদক্ষ বা লাইনেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে কোনো আইনগত ব্যবস্থা নেয় হয় না৷ ফলে দিন দিন অপ্রাপ্তবয়স্ক, অদক্ষ এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকের সংখ্যা বাড়ছে৷''

তিনি আরেক প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘‘এখানে ফিটনেসবিহীন গাড়ি চালানো লাভজনক৷ কারণ অবৈধ চাঁদা দিয়ে সড়কে যানবাহন চালাতে হয়৷ ফিটসেন থাকলেও একই নিয়ম৷ তাহলে ফিটনেসের আর দরকার কী?''

বাংলাদেশ শ্রমিক লীগের যুগ্ম সম্পাদক মো. হানিফ খোকন ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘লাইসেন্স ছাড়া গাড়ি চালালে বর্তমান আইনে শাস্তি মাত্র ৫ হাজার টাকা জরিমানা৷ ফলে অদক্ষ, অপ্রাপ্ত বয়স্ক এবং লাইসেন্স ছাড়া চালকের সংখ্যা বাড়ছে৷ যাদের লাইসেন্স আছে তাদের বড় একটি অংশের প্রশিক্ষণ নাই৷ চালকরা ট্রিপ ভিত্তিতে গাড়ি চালাতে বাধ্য হয়৷ যত ট্রিপ বেশি হবে তত তার আয় বেশি হবে৷ তাই তারা বেপরোয়া গাড়ি চালায়৷''

তাঁর কথায়, ‘‘ফিটনেস যাদের দেখার কথা তারা দেখেন না৷ আবার দুর্নীতির কারণে যে বা যারা ফিটনেস পাওয়ার যোগ্য নয়, সেও ফিটসেন সার্টিফিকেট পায়৷''

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ