‘অপ্রয়োজনে' অস্ত্রোপচার চলছে জার্মানিতে!
৯ নভেম্বর ২০১৭ব্রেমেন বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচালিত নতুন এ গবেষণার বলা হচ্ছে, জার্মান হাসপাতালগুলো ও ডাক্তাররা এখন নাকি রোগীদের ব্যয়বহুল চিকিৎসা এবং অপ্রয়োজনীয় অপারেশন করার উপদেশ দিচ্ছেন৷ বলা বাহুল্য, কখনও কখনও তা সত্যিই হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে৷
সারাদেশের ৬০ জন ডাক্তার ও হাসপাতালের পরিচালকের সাক্ষাত্কারের ভিত্তিতে এই গবেষণাটি করা হয়৷ এতে দেখা যায় যে, বিশেষ বয়স্কদের জটিল রোগের চিকিৎসার ক্ষেত্রে জার্মানদের বেশ ভুগতে হচ্ছে৷
গবেষণাটির লেখক কার্ল হাইনৎস ভেহকাম্প নিজেও একজন ডাক্তার৷ তিনি বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমরা আরও অনেক ডাক্তারের সঙ্গেই কথা বলতে পারতাম৷ কারণ তাঁদের বেশিরভাগই এ নিয়ে কথা বলতে চান এবং তাঁরা মনে করেন যে, সাধারণ মানুষ ও রাজনীতিবিদদের এ সব ব্যাপারে আরও সজাগ হওয়া উচিত৷''
স্বাস্থ্যবীমা কোনো সমস্যা নয়
জার্মানিতে মূলক দু'ধরনের স্বাস্থ্যবীমা রয়েছে – ব্যক্তিগত এবং সরকারি৷ ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যবীমার আওতায় যারা চিকিৎসা করান, সেইসব রোগীদের পরামর্শ কেন্দ্র ইউপিডি-র মেডিকেল পরিচালক ডা. ইওহানেস শেঙ্কেল বলেন, গবেষণাটি থেকে পাওয়া অনুসিদ্ধান্তগুলো নতুন নয়, তবে কোনো কোনো ক্ষেত্রে ডাক্তারদের সাক্ষাত্কার তাঁকেও বিস্মিত করে৷ ‘‘সবার আগে তাঁদের পেশাদারিত্বের কথা মনে রাখতে হবে'' বলেন তিনি৷
অতীতেও বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গেছে যে, জার্মান ডাক্তাররা প্রায়ই শরীরের পেছন ও নীচের অংশের ব্যাথার জন্য অকারণে এক্স-রে, ইসিজি ও অপ্রয়োজনীয় ব্লাডার ক্যাথেটার দিচ্ছেন৷
এই অতি চিকিৎসা কি রোগীর স্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ? শেঙ্কেল বলেন, ‘‘অপ্রয়োজনীয় যে কোনো অপারেশন এবং চিকিৎসার সম্ভাব্য ক্ষতি রয়েছে৷ মূত্রাশয়ের একটি সাধারণ ক্যাথেটার থেকে নানা সংক্রমণ হতে পারে৷ আর শক্ত ধরনের ক্যাথেটার থেকে তো শরীরের ভেতরে রক্তক্ষরণসহ আরও অনেক মারাত্মক জটিলতা দেখা দিতে পারে৷''
রাজনৈতিক ব্যবস্থাসমূহ
জার্মানির সোশ্যাল কেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের (ভিডিকে) স্বাস্থ্যসেবা বিষয়ক পরামর্শক আইনৎস ভার্সফোল জানান, গত কয়েক বছর ধরেই জার্মানি তার স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থার সংস্কারের চেষ্টা করছে৷ কিন্তু তারপরও মুনাফা করার প্রবণতায় পরিবর্তন আসেনি৷ তিনি বলেন, ‘‘অপারেশনটি ভুল না সঠিক হচ্ছে, সেটা কোনো প্রশ্ন নয়৷ কারণ সেটা নির্ধারণ করা সহজ নয়৷ মৌলিক সমস্যাটি হচ্ছে, ডাক্তারদের সিদ্ধান্ত নিতে হবে: আমি কি এখনই অপারেশনটি করবো নাকি অপেক্ষা করব?''
এক ই-মেল বিবৃতিতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র দাবি করেন যে, বিগত দিনগুলোতে সরকার অনেকবার এই অতিরিক্ত চিকিত্সা প্রবণতা কমাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে৷
নিজেদের তৈরি করা সমস্যা
ডা. শেঙ্কেল মনে করেন, ‘‘এই সমস্যা জার্মানির স্বাস্থ্যসেবা নীতির কারণেই সৃষ্টি হয়েছে৷ হাসপাতালগুলোর এই অর্থনৈতিক চরিত্র আমাদেরই তৈরি করা৷ নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে এই নিয়ম চালু হওয়ার সময়ই বোঝা গিয়েছিল যে, এ ধরনের সমস্য তৈরি হবে৷''
তবে হাসাপাতালে চিকিৎসার সময় খরচ মেটানোর পদ্ধতিতে সংস্কার খানিকটা কাজে এসেছে৷ হাসপাতালে থাকার প্রত্যেক দিনের খরচের বদলে যে রোগটি হয়েছে তার সেরে যাওয়ার পর টাকা দেয়ার নিয়ম চালু হওয়ায় চিকিৎসা ব্যবস্থায় অনেকটা সচলতা এসেছে৷
অবশ্য ভার্সফোলের মতে, ‘‘আগের নিয়মটি ভালো ছিল না৷ কারণ রোগী সেরে ওঠার পরও শুধুমাত্র টাকার জন্য তাঁকে নানা অজুহাতে হাসপাতালে রেখে দেয়া হতো৷ কিন্তু এখন আবার বিপরীত ধরনের সমস্যা হয়েছে৷ রোগীরা এখন পুরোপুরি সুস্থ্য না হতেই তাঁদের ছেড়ে দিচ্ছে হাসপাতাল কতৃপক্ষ৷''
বেন নাইট/এএম