এবার দেশে গিয়ে গ্রামীণ ফোনের একটা সিম কিনেছিলাম৷ শুনেছিলাম, তাদের ইন্টারনেটের গতি সবচেয়ে ভালো৷ নেটওয়ার্কের পরিধিও বিস্তৃত৷ তাই, তাদের দ্বারস্থ হয়েছিলাম৷ তবে সিম কেনা, আর সেটা পরিচালনার অভিজ্ঞতা খুব একটা সুখকর ছিল না৷
বিজ্ঞাপন
‘‘২০০ টাকা লাগবে,'' সিম কেনার আগ্রহ প্রকাশের পর বললেন গুলশানের এক দোকানদার৷ আমি বললাম, সিম কখন চালু হবে? তিনি বললেন, ‘‘সিম চালু আছে৷ পয়সা দেবেন, নিয়ে যাবেন৷'' বলেই ছোট্ট একটা কৌটার মধ্যে কাগজে মোড়ানো কিছু একটা হাতে নিলেন তিনি৷
গভীর মনোযোগে দোকানদার কাগজে মোড়ানো বস্তুটি খুলতে লাগলেন৷ স্বচ্ছ প্লাস্টিক টেপ দিয়ে সেটা ভালোভাবেই মোড়ানো৷ খুলতে সময় লাগছে তাঁর৷ জানতে চাইলাম, সিম কেনার রিসিট দিতে পারবেন কিনা৷ পাশে থাকা একটা রসিদ বই দেখিয়ে বললেন, ‘‘কাগজ দিয়ে দেবো, আপনি লিখে নিয়েন৷''
সেপর্যন্ত সবই ঠিক ছিল, কিন্তু যখন বললাম যে, সিমটা আমার নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন করতে হবে, তিনি বেঁকে বসলেন৷ জানালেন, ‘‘সিম ইতোমধ্যে আরেকজনের নামে রেজিস্ট্রেশন করা আছে৷ নাম বদলানো যাবে না, তবে আজীবন ব্যবহার করা যাবে৷''
ওরা ইন্টারনেটে যা দেখে
জার্মানির মাইনৎস মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোদৈহিক বিভাগের একটি জরিপের ফলাফলে জানা গেছে, আজকের কিশোর-কিশোরীরা অতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহারের কারণে নিঃসঙ্গ হয়ে পড়ছে৷ কী দেখে তারা? ছবিঘরে পাবেন...
ছবি: Pub Crawl Cologne
অতিরিক্ত ইন্টারনেট টিন-এজারদের নিঃসঙ্গ করে তোলে
সম্প্রতি ১২ থেকে ১৮ বছর বয়সি ২,৪০০ কিশোর-কিশোরীদের নিয়ে একটি জরিপ করা হয়েছিলো৷ যারা দিনের ৬ ঘণ্টাই কম্পিউটার, ল্যাপটপ, মোবাইল বা ট্যাবলেটের সামনে বসে সময় কাটায়, তাদের সমবয়সি বা বন্ধুবান্ধবদের সাথে মেশার তেমন কোনো আগ্রহ নেই৷ কারণ সামনে থাকা যন্ত্রটিই তাদের বড় বন্ধু ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. von Jutrczenka
কম্পিউটার গেম
যখন মানুষের বন্ধুত্ব গড়ে ওঠার সবচেয়ে ভালো সময় ঠিক সেসময়ই যদি তারা দিনের এতটা সময় কম্পিউটার গেম বা যৌন বিষয়ক ওয়েবসাইট নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটায় তাহলে কারো সাথে বন্ধুত্ব হওয়া খুব কঠিন৷ এ কথা বলেন গবেষক টিমের প্রধান ডা.মানফ্রেড বয়টেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নেশা
যাদের নিয়ে গবেষণা করা হয়, তাদের মধ্যে শতকরা ৩.৪ শতাংশই ইন্টারনেটে নেশাগ্রস্ত৷ অর্থাৎ তারা দিনে ৬ ঘণ্টার বেশি অনলাইনে থাকে, অন্য কিছুর প্রতি তাদের কোনো আগ্রহ নেই৷ ১৩.৮ শতাংশ কিশোর-কিশোরীদের নেশা না হলেও তারাও ইন্টারনেটের প্রতি খুবই আগ্রহী৷ সময়ের দিক থেকে ছেলেমেয়ে সমানভাবেই ইন্টারনেট ব্যবহার করে থাকে৷
ছবি: Shaikh Azizur Rahman
ছেলে-মেয়ের পার্থক্য
সময়ের দিক থেকে পার্থক্য না থাকলেও ছেলে এবং মেয়েদের মধ্যে কিছুটা পার্থক্য রয়েছে বিষয় নির্বাচনের ক্ষেত্রে৷ যেমন মেয়েরা বেশি সময় কাটায় সামাজিক যোগাযোগ এবং অনলাইন শপিং-এ, আরা ছেলেরা বেশি সময় খরচ করে কম্পিউটার গেম এ, এবং যৌনআনন্দে৷
ছবি: Fotolia/apops
বন্ধু চাই
যেসব টিন-এজ বা কিশোর-কিশোরীরা সমাজে ভালোভাবে মেলামেশা করতে পারেনা, তারা এমন অনলাইন কার্যক্রমে ব্যস্ত থাকে যেগুলোতে সামাজিক যোগাযোগ কম হয়৷ এ তথ্য জানান ড.বয়টেল তাঁদের ক্লিনিকের আউটডোর পেশেন্ট হিসেবে আসা কম্পিউটারে ‘নেশা’ টিন-এজারদের সম্পর্কে৷
ছবি: Fotolia/Doreen Salcher
সামাজিকভাবে মেলামেশার পরামর্শ
এরকম ছেলে-মেয়েদের বাবা-মা এবং শিক্ষকদের প্রতি ডা.মানফ্রেড বয়টেলের পরামর্শ, টিন-এজারদের প্রযুক্তির উন্নয়ন ব্যবহারের পাশাপাশি সামাজিকভাবে মেলামেশার বিষয়টির দিকেও সমান গুরুত্ব দেওয়া এবং লক্ষ্য রাখা উচিত৷
ছবি: Pub Crawl Cologne
6 ছবি1 | 6
আমি কিঞ্চিত চিন্তায় পড়ে গেলাম, গুলশান হামলার পর থেকে সিম নিয়ে নানা কথা শুনেছি৷ এখন এই সিম কার নামে আছে কে জানে৷ বললাম, ভাই, নিজের নামে রেজিস্ট্রেশন না করা গেলে সিম কিনবো না৷ দোকানদার নির্বিকার চিত্তে সিমটি আবার আগের কৌটায় পুরে ফেললেন৷ অন্য এক কাস্টমারের দিকে মনোযোগ দিতে দিতে জানিয়ে দিলেন, ‘‘দেশি আইডি কার্ড ছাড়া নিজের নামে সিম পাবেন না৷''
আমি হতাশ না হয়ে আরো কয়েক দোকানে ঘুরে জানতে পারলাম, কাস্টমার কেয়ার থেকে বৈধভাবে দেশি আইডি কার্ড ছাড়াও সিম কেনা যাবে৷ কোনো জটিলতা নেই৷ ফলে বেশ খানিকটা ঘুরে সেখানেই হাজির হই৷
সিম পেতে সমস্যা হলো না৷ বরং এসির বাতাসে কিছুক্ষণ সময় কাটিয়ে ভালোই লাগলো৷ বেশ কিছু টাকাও পুরে নিলাম সিম কার্ডে৷ কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো ইন্টারনেট ব্যবহার করতে গিয়ে৷ আধাঘণ্টা ইন্টারনেট ব্যবহার করে দেখি, বেশ কিছু টাকা হাওয়া৷
পরিচিত একজনের কাছে জানতে চাইলাম, কী করবো? তিনি পরামর্শ দিলেন ইন্টারনেট প্যাকেজ কেনার৷ টাকা আপনার নম্বরে জমা থাকা ব্যালেন্স থেকে নিয়ে নেবে৷ এ সব প্যাকেজ নির্দিষ্ট টাকা দিয়ে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কিনতে হয়৷ সেই সময়ের মধ্যে যদি প্যাকেজে থাকা গিগাবাইট শেষ করতে না পারেন, তাহলে সেটা পুনরায় সেই প্যাকেজ না কিনলে বাতিল হয়ে যাবে৷ অর্থাৎ, আপনি একমাসের জন্য দশ গিগাবাইট ইন্টারনেটের একটা প্যাকেজ কিনলে সেটা সেই সময়ের মধ্যেই শেষ করতে হবে৷ যদি দেখা যায়, মাস শেষে তিন গিগাবাইট রয়ে গেছে, তখন সেটা বিসর্জন দিতে হবে৷ আর প্যাকেজের মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আপনি যদি ইন্টারনেট ব্যবহার অব্যাহত রাখেন, তাহলে সেজন্য প্যাকেজের আওতার চেয়ে অনেক বেশি অর্থ খরচ করতে হবে৷
গ্রামীণ ফোনসহ সব মোবাইল নেটওয়ার্কের এমন নানা ইন্টারনেট প্যাকেজ আছে৷ তাদের নিয়মকানুনও অনেকটা একইরকম৷ গ্রামীণ ফোনের অভিজ্ঞতায় আলোকে বলতে পারি, এ সব প্যাকেজ বেশ জটিল৷ আর এই জটিলতায় পড়ে অনেকেই অকারণে টাকা হারান৷
কথা বলার প্যাকেজের কথাই ধরুন৷ একদিন আমার একাউন্ট ব্যালেন্স শেষ হওয়ার পর তাতে নির্দিষ্ট অংকের টাকা ভরলাম৷ এরপর ফোন করতে গিয়ে দেখি ব্যালেন্স নেই৷ দোকানদারের কাছে ফিরে গেলে তিনি বলেন, আপনি যে প্যাকেজ কিনেছেন তা দিয়ে শুধু গ্রামীণ ফোনের নম্বরে ফোন করতে পারবেন৷ বুঝুন অবস্থা, তারমানে এখন আমার পরিচিতদের মধ্যে যাদের শুধু গ্রামীণ ফোন আছে তাদের সাথে কথা বলতে হবে, অথবা সবাইকে অনুরোধ করতে হবে গ্রামীণ ফোন ব্যবহার করতে৷
আবারো বলছি, শুধু গ্রামীণ ফোন নয়, সব মোবাইল সেবাদাতার এরকম নানা প্যাকেজ আছে৷ আর শুধু প্যাকেজের জ্বালা কেনো, রাতবিরেতে ফোন, এসএমএস করে জ্বালাতেও তাদের জুড়িমেলা ভার৷ এক সন্ধ্যায় পরিবারের সঙ্গে ডিনার করছি, হঠাৎ দেখি চার্জে থাকা ফোন বাজছে৷ দ্রুত উঠে ফোন রিসিভ করতেই ওপার থেকে মিষ্টি গলায় একজন কোনো এক প্রতিষ্ঠানের অফারের কথা জানাতে লাগলেন৷ বিরক্ত হয়ে ফোন রেখে দিলাম৷ তবে ওপ্রান্তে কোনো বিরক্তি নেই৷ পরেরদিন আবারো এলো সেই ফোন, ভিন্ন এক সময়ে৷ আর এসএমএসতো আছেই, কখনো সরকারি ফর্মান, কখনো নানা লোভনীয় অফার৷ এমনকি যার কোটি টাকার গাড়ি কেনার সাধ্য নেই, তাঁকে সেই গাড়ির দাম এবং ডিসকাউন্টসহ এসএমএস পাঠায় এই সেবাদাতারা৷
এবার আসি জার্মানির অভিজ্ঞতায়৷ আমি যে ফোন ব্যবহার করি সেটির এত প্যাকেজের জটিলতা নেই৷ মাসে নির্দিষ্ট একটি টাকার বিনিময়ে জার্মানির সব ল্যান্ডফোন এবং মুঠোফোনে কথা বলতে পারি বাড়তি কোনো টাকা খরচ না করে, আর তিন গিগাবাইট পর্যন্ত হাইস্পিড ইন্টারনেট পাই, সেটা শেষ হয়ে গেলে ইন্টারনেটে গতি স্লো হয়ে যায়৷ কিন্তু বাড়তি কোনো চার্জ করে না৷ আর আমি যদি নিজে থেকে কোনো বিষয়ে এসএমএস বা ফোন কল না চাই, তাহলে সেটা আমার ফোনে কোনো অবস্থাতেই আসবে না৷
বিশ্বের শীর্ষ ৮টি টেলিযোগাযোগ কোম্পানি
টেলিযোগাযোগ শিল্প গত কয়েক বছরে ব্যাপক উন্নতি করেছে৷ ব্যবসা এবং প্রাত্যহিক জীবনের অংশ হয়ে উঠেছে এটি৷ ছবিঘরে জেনে নিন বিশ্বের সেরা ৮টি টেলিযোগাযোগ কোম্পানির কথা৷
ছবি: dapd
চায়না মোবাইল লিমিটেড
চীনের শীর্ষ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি এটি৷ এদের গ্রাহক সংখ্যা ৮৪ কোটি ৯০ লাখ৷ ২০১৭ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এর বাজার দর ছিল ২১ হাজার ৫৩০ কোটি ডলার৷
ভেরিজোন কমিউনিকেশনস ইনকর্পোরেশন
এটি যুক্তরাষ্ট্রের সর্ববৃহৎ টেলিযোগাযোগ কোম্পানি৷ ২০১৭ সালের এপ্রিলে এর বাজার দর ছিল ১৯ হাজার ১৭২ কোটি মার্কিন ডলার৷ ভেরিজোন বর্তমানে ১৫০টি দেশে কাজ করছে৷
ছবি: Reuters
এটি অ্যান্ড টি ইনকর্পোরেশন
এটি যুক্তরাষ্ট্রের দ্বিতীয় বৃহত্তম টেলিযোগাযোগ কোম্পানি৷ এর বাজার দর ২৪ হাজার ৫৫৮ কোটি মার্কিন ডলার৷ এটি বিশ্বের ২০০ টি দেশে ‘ভয়েস সার্ভিস’ প্রদান করে এবং এ সব দেশে এদের ৩৪ হাজার ওয়াইফাই হটস্পট রয়েছে৷ এদের ওয়েবসাইটে বলা হয়েছে, এরা ৩৫ কোটি ৫০ লাখ মানুষকে সেবা দিয়ে থাকে৷
ছবি: Reuters/S. Stapleton
ভোডাফোন গ্রুপ প্রোগ্রামেবল লজিক কন্ট্রোলার
এদের সদরদপ্তর যুক্তরাজ্যে৷ এদের মোবাইল ব্যবহারকারী গ্রাহক সংখ্যা ৪৪ কোটি ৪০ লাখ৷ ২০১৬ সালে এপ্রিলে এর বাজার দর ছিল ৬ হাজার ৮৪১ কোটি মার্কিন ডলার৷ ভোডাফোন যুক্তরাজ্যের অন্যতম দামি ব্র্যান্ড এবং ২৬ টি দেশে এদের মোবাইল সুবিধা রয়েছে৷
ছবি: Getty Images/S. Barbour
নিপ্পন টেলিগ্রাফ অ্যান্ড টেলিফোন করপোরেশন
জাপানের এই টেলিযোগাযোগ কোম্পানিটির বাজার দর ২০১৭ সালের এপ্রিলে ছিল ৮ হাজার ৬১৩ কোটি মার্কিন ডলার৷
ছবি: David Clausmeier/NC14
সফটব্যাংক গ্রুপ কর্পোরেশন
এটি ১৯৮১ সালে জাপানের এই কোম্পানিটি যাত্রা শুরু করে, সফটওয়্যার পরিবেশক হিসেবে৷ এর বাজার দর ৮১ হাজার ৪৫৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Nogi
ডয়চে টেলিকম ডয়চে টেলিকম এজি
জার্মান এটি কোম্পানিটির মোবাইল গ্রাহক সংখ্যা ১০ কোটিরও বেশি৷ বর্তমানে ৫০টি দেশে তাদের ২ লাখ ১৮ হাজারেরও বেশি কর্মী রয়েছে৷ এর বাজার দর ৭ হাজার ৬১১ কোটি মার্কিন ডলার৷
ছবি: Reuters/W. Rattay
টেলিফোনিকা এসএ
স্পেনের এই কোম্পানিটি ২১টি দেশে সেবা দিচ্ছে৷ তবে এর বেশিরভাগ গ্রাহক ল্যাটিন অ্যামেরিকার৷ এই কোম্পানির বাজার দর ৫ হাজার ২৮৪ কোটি মার্কিন ডলার৷ এই কোম্পানির তিনটি ব্র্যান্ডের আলাদা টার্গেট গ্রাহক আছে৷ মুভিস্টার স্পেন আর ল্যাটিন অ্যামেরিকায় সেবা দেয়, ওটু যুক্তরাজ্য, আয়ারল্যান্ড, জার্মানি, চেক প্রজাতন্ত্র এবং স্লোভাকিয়ায় সেবা দেয় আর ভিভো ব্রাজিলে সেবা দেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
8 ছবি1 | 8
বিদেশের এমন সহজ সেবায় অভ্যস্ত হয়ে দেশের জটিল সেবা নিতে গিয়ে বেশ কিছু টাকা খুইয়েছি এবার৷ আপনারও কি এমন অভিজ্ঞতা হয়েছে? লিখুন মন্তব্যের ঘরে৷