অফিসে কাজের চাপে হতাশা, ক্ষোভ, অসহায় অবস্থা আজকের যুগে বিরল ঘটনা নয়৷ অথচ বিশেষজ্ঞদের মতে, কর্মীদের কর্মক্ষমতার পূর্ণ সদ্ব্যবহার করতে হলে কাজের সঠিক বণ্টন অত্যন্ত জরুরি৷ একটি সফটওয়্যার সেই দিশা দেখাতে পারে৷
বিজ্ঞাপন
ভবিষ্যতে কর্মীদের ঠিক ততটাই কাজ দেওয়া হবে, যতটা তারা ভালোভাবে করতে পারবেন৷ একটি সফটওয়্যার সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজের বণ্টন করবে৷ এমন স্বপ্ন বাস্তব করার চেষ্টা চলছে৷ সেই লক্ষ্যে কর্মীদের সব সময়ে নাড়ি মাপার যন্ত্র পরে থাকতে হবে এবং একটি ক্যামেরা তাদের মুখচ্ছবির ভিডিও তুলে যাবে৷ এভাবে মানসিক চাপ ও মনের অবস্থা পরিমাপ করা হবে৷ সেই সব তথ্যের ভিত্তিতে সফটওয়্যার স্থির করবে, যে সেই ব্যক্তিকে কত পরিমাণ কাজ দেওয়া যায়৷
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ কমানোর সেরা কিছু কৌশল
যাঁরা প্রায়ই মানসিক চাপের মধ্যে থাকেন তাঁদের ডিপ্রেশন, হার্ট অ্যাটাক বা স্ট্রোকের মতো অসুখ হওয়ার ঝুঁকি অনেক বেশি৷ তাই শত ব্যস্তার মাঝেও নিজেকে কীভাবে এ সব অসুখের ঝুঁকি থেকে দূরে রাখা সম্ভব, তার সেরা টিপসগুলো জেনে নিন৷
ছবি: Colourbox
ব্যায়াম বা খেলাধুলা
হালকা ব্যায়াম বা খেলাধুলা মানসিক চাপ কমাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে৷ জগিং বা সাইকেল চালালে স্ট্রেস হরমোন কমে গিয়ে হৃদপিণ্ডকে সুস্থ রাখে৷ সমীক্ষায় দেখা গেছে ক্লান্ত, পরিশ্রান্ত মানুষকেও হালকা খেলাধুলা বা ব্যায়াম প্রফুল্ল রাখে৷ তবে অবশ্যই মানসিক চাপ আরো বেড়ে যাওয়ার মতো কোনো প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা নয় কিন্তু!
ছবি: picture alliance/dpa/B. Pedersen
রিল্যাক্স করার কৌশল
পেশী রিল্যাক্স করার নতুন কৌশলগুলোর মধ্যে যোগব্যায়াম বা ইয়োগা এবং মেডিটেশনের কথা বলছেন বিশেষজ্ঞরা৷ যার মাধ্যমে শারীরিক এবং মানসিক চাপ কমে শরীর ও মনকে করে হালকা ও ফুরফুরে৷ বিশেষজ্ঞের মতে, প্রচণ্ড চাপ থাকা সত্ত্বেও অনেকের ক্ষেত্রেই ইয়োগা বা মেডিটেশনের মতো রিল্যাক্স করার এই নতুন কৌশল বেশ সাহায্য করে৷
ছবি: Colourbox
সবুজ প্রকৃতি সুস্থ রাখে
নেদারল্যান্ডের গবেষকরা খুঁজে বের করেছেন যে, সবুজ রং মানুষের নার্ভকে একদিকে যেমন শান্ত রাখে তেমনি আনন্দিতও করে৷ কারণ সমীক্ষায় জানা যায়, যাঁরা শহরের কেন্দ্রস্থলে বসবাস করেন তাঁদের চেয়ে যাঁদের বাড়িতে বাগান আছে বা সবুজে ঘেরা বাগানের কাছাকাছি বসবাস করেন, তাঁরা মানসিকভাবে সুস্থ থাকেন৷
ছবি: Colourbox
কাজের ফাঁকে বিশ্রাম
শরীর এবং মন দু’টোরই মাঝে মাঝে ভালোভাবে বিশ্রামের প্রয়োজন হয়৷ বিশেষ করে যাঁরা সারাদিন কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করেন, তাঁদের মানসিক চাপে রক্তে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেড়ে যায়৷ এক্ষেত্রে কাজের ফাঁকে খানিকক্ষণ মুক্ত বাতাসে হাঁটা বা হালকা ব্যায়াম করলে আবার বেশ তরতাজা বা ফ্রেশ হয়ে কর্মস্থলে ফেরা যায়৷
ছবি: Fotolia/Andreas Haertle
মনকে শান্ত করার বিশেষ জায়গা
কিছুক্ষণের নীরবতা মাঝে মাঝে শরীর ও মনকে এতটাই শান্ত করতে পারে যে মানসিক চাপ বা স্ট্রেসের বিরুদ্ধে তা ঠিক যেন ওষুধের মতো কাজ করে৷ তাই বাড়ির কোথাও একটি খালি ঘরে দিনে ১৫ থেকে ২০ মিনিট সময় কাটাতে পারেন৷ যারা বড় শহরে থাকেন, তারা চলে যান কোনো মিউজিয়ামে বা লাইব্রেরিতে৷ আর শরীর ও মনকে শান্ত করতে পারে মসজিদ, মন্দির বা গির্জার মতো ধর্মীয় স্থানগুলোও৷
ছবি: DW/D. Maksimovic
5 ছবি1 | 5
মার্কো মায়ার এই সফটওয়্যার তৈরির কাজে অংশ নিয়েছেন৷ চ্যাডলিস প্রোটোকলের ভিত্তিতে তিনি কাজের সময়ে কর্মীদের অবস্থা বিশ্লেষণ করে কাজের চাপ ও আবেগ বোঝার চেষ্টা করছেন৷ সেটা বুঝতে হলে কম্পিউটারকে আবেগ বিশ্লেষণ করা শিখতে হবে৷
স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে রেগিনা বুয়র্গমায়ার কঠিন এক দায়িত্ব পেয়েছেন৷ তাঁকে অনেকগুলি লেখা টাইপ করতে হবে৷ তবে তিনি জানেন না যে টেক্সটগুলি ধীরে ধীরে আরও কঠিন হয়ে উঠবে৷ প্রথমে শিশুদের গল্প, তারপর জটিল রাসায়নিক ফর্মুলা সংক্রান্ত টেক্সট তাঁকে টাইপ করতে হবে৷
পরিমাপ যন্ত্র তাঁর বেড়ে চলা মানসিক চাপের উপর নজর রাখছে৷ সেইসঙ্গে ক্যামেরা তাঁর মুখের নির্দিষ্ট কিছু পেশি সঞ্চালন রেকর্ড করছে, যা থেকে তাঁর আবেগ টের পাওয়া যায়৷ রেগিনা বেশ ভাবলেশহীন হয়ে থাকলেও তাঁর সম্পর্কে অনেক কিছু জানা যাচ্ছে৷ মার্কো মায়ার বলেন, ‘‘ডানদিকে তাকালে বোঝা যাবে, তিনি কতটা উত্তেজিত৷ এখনই দেখলাম উত্তেজনার মাত্রা বেড়ে চলেছে৷ ফলে বোঝা যাচ্ছে যে কাজটা তাঁর জন্য কঠিন বলে উত্তেজনা বাড়ছে৷ আরেকটি বিষয় হলো ভিডিও দেখে হৃদস্পন্দনও টের পাওয়া যাচ্ছে৷ অর্থাৎ হৃদযন্ত্র নিয়মিত, অনিয়মিত, দ্রুত না ধীরে চলছে৷ চিকিৎসাবিদ্যা ও মনস্তত্ত্বের ভিত্তিতে এমন কিছু স্যাম্পেল রয়েছে, যা মানসিক চাপ বা শিথিল অবস্থা তুলে ধরে৷ এর সাহায্যে এমনকি ভাবলেশহীন ‘পোকার ফেস' থাকলেও কারও মনের উত্তেজনা আমরা টের পাই৷''
কর্মীদের সম্মতি ছাড়া জার্মানিতে এমন পর্যবেক্ষণ নিষিদ্ধ৷ কিন্তু তাঁদের কি সবসময়ে সেই সুযোগ রয়েছে? মার্কো মায়ার নজরদারি বা তথ্য সংরক্ষণ করতে চান না৷ তিনি শুধু প্রত্যেক কর্মীর জন্য উপযুক্ত কাজের পরিবেশ সৃষ্টি করতে চান৷ এমন এক প্রণালী তৈরি করতে চান, যা গভীর মনোযোগের সময়ে টেলিফোন কল আসতে দেবে না৷ টনি কোম্পানির প্রধান মার্কো মায়ার বলেন, ‘‘অনেকেই যেটা মানতে বাধ্য হবেন, সেটা হলো প্রযুক্তিগত উন্নতির কারণে মনোযোগে বিঘ্নের কারণ বেড়ে গেছে৷ ইমেল, মেসেঞ্জার, সোশাল মিডিয়া ব্যাঘাত ঘটাচ্ছে৷ অর্থাৎ গভীর মনোযোগ দিয়ে একটানা অনেক সময় জুড়ে কাজ করা কঠিন হয়ে উঠেছে৷''
মানসিক চাপ শরীর ও মস্তিষ্কে যা ঘটায়
স্ট্রেস বা মানসিক চাপ আমাদের ঘুম কেড়ে নেয়৷ মেজাজ তো খারাপ করেই, তাছাড়া মস্তিষ্কেরও ক্ষতি করে৷ বিস্তারিত থাকছে ছবিঘরে৷
ছবি: picture-alliance/AltoPress/Maxppp/T. Lannié
নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ায়
বিভিন্ন চাপের কারণে মাঝেমধ্যে মানুষের স্ট্রেসে থাকা একেবারেই স্বাভাবিক৷ তবে তা যদি নিয়মিত হতে থাকে, তবে শরীর ও মনে তার বড় ধরনের প্রভাব পড়ে৷ দেখা দেয় কার্ডিওভাসকুলার, ডায়াবেটিস ও পেটের নানা সমস্যার মতো রোগ৷
ছবি: picture-alliance/imageBROKER/J. Tack
গবেষণা
হার্ভার্ড মেডিকেল স্কুল মধ্যবয়সি ২,০০০ মানুষ নিয়ে দীর্ঘ আট বছর ধরে একটি গবেষণা করেছে৷ এতে অংশগ্রহণকারীদের স্মরণশক্তি ও চিন্তাশক্তির পরীক্ষা করা হয়৷ তাছাড়াও রক্তে কর্টিসোল বা স্ট্রেস হরমোন টেস্ট করা হয়৷
ছবি: Colourbox/Phovoir
স্মরণশক্তি বা চিন্তাশক্তি দূর্বলের কারণ
গবেষণায় দেখা গেছে, যাদের রক্তে কর্টিসোলের মাত্রা স্বাভাবিক বা কম তাদের চেয়ে, যাদের রক্তে কর্টিসোল মাত্রা বা স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা বেশি, তাদের স্মরণশক্তি বা চিন্তাশক্তি দূর্বল থাকে৷
ছবি: Colourbox/Wodicka
অতিরিক্ত স্ট্রেসে কর্টিসোলের মাত্রা বেশি
অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যাদের অতিরিক্ত স্ট্রেস ছিলো তাদের রক্তে কর্টিসোলের মাত্রা বেশি দেখা গেছে৷
ছবি: picture-alliance/Bildagentur-online
যা করা উচিত
স্ট্রেস কমাতে নিয়মিত ব্যয়াম, খেলাধুলা ও যোগব্যয়াম করা উচিত বলে বিশেজ্ঞরা মনে করেন৷
ছবি: Colourbox
জগিং, সাইকেল
জগিং করলে কিংবা সাইকেল চালালে একদিকে যেমন কার্ডিওভাসকুলার সিস্টেম শক্তিশালী হয়, তেমনি মানসিক চাপও কমে৷ তবে কোনো প্রতিযোগিতামূলক খেলাধুলা নয় কিন্তু! কারণ এতে ফল হয় উলটো, অর্থাৎ রক্তে স্ট্রেস হরমোনের মাত্রা আরো বেড়ে যেতে পারে৷
ছবি: DW/S. Caroline
স্ট্রেসের নেতিবাচক প্রভাব
সারা বিশ্বে আজ ‘বার্নড আউট’ বা স্ট্রেস রোগীর সংখ্যা দিনদিন বাড়ছে৷ কর্মক্ষেত্রে চাপ ও প্রতিযোগিতা বাড়াই হয়তো এর বড় কারণ৷ স্ট্রেস বাড়ার ফলে যে কর্মক্ষেত্রে শুধু কর্মীরাই ভোগেন তা নয়, এর নেতিবাচক প্রভাব পড়ে দেশের অর্থনীতিতেও৷
ছবি: Colourbox
7 ছবি1 | 7
ফলে তথাকথিত ‘ফ্লো কন্ডিশন' বা আরামদায়ক কাজের সময় বিরল হয়ে উঠছে৷ মার্কো বলেন, ‘‘এই অবস্থাকে প্রায়ই একদিকে অপর্যাপ্ত চ্যালেঞ্জ ও একঘেয়েমি এবং অন্যদিকে অতিমাত্রার কাজ ও মানসিক চাপের মধ্যে আদর্শ ভারসাম্য হিসেবে বর্ণনা করা হয়৷ চ্যালেঞ্জ সত্ত্বেও দায়িত্ব পালন করতে পারলে আমি ‘ফ্লো'-এর মধ্যে থাকি৷''
এই ‘ফ্লো' পর্যায়ে আমাদের শরীর এন্ডোরফিন নামের সুখের হরমোন নিঃসরণ করে৷ তাছাড়া হৃদস্পন্দনের ছন্দেরও উন্নতি হয় এবং ত্বকের পরিবাহিতা বেড়ে যায়৷ মায়ার এই সব শারীরিক প্রতিক্রিয়া কাজে লাগিয়ে কম্পিউটারকে এমন সব আবেগ শনাক্ত করতে শেখাতে চান৷ সেই তথ্যের ভিত্তিতে ক্ষমতা অনুযায়ী কোনো কর্মীর কাজ বণ্টন করা হবে৷