1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অফুরন্ত বিদ্যুৎ সরবরাহ করতে পারে ফিউশন কেন্দ্র

১ জুন ২০২০

পরিবেশ দূষণের এই যুগে পরিবেশবান্ধব অথচ অফুরন্ত জ্বালানির স্বপ্ন মানুষকে আরো উদ্যোগী করে তুলছে৷ সূর্যের মতো পৃথিবীর বুকেও হাইড্রোজেন ফিউশনের মাধ্যমে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে চলছে একাধিক প্রচেষ্টা৷

Frankreich Fusions-Forschungsreaktor Iter
ছবি: picture-alliance/dpa/dpaweb/epa/E. Tschaen

যে জ্বালানি সূর্যের আলো নিশ্চিত করে, তা হলো পারমাণবিক ফিউশন৷ বেশ কয়েক দশক ধরে বিজ্ঞানীরা সেই শক্তি কাজে লাগানোর চেষ্টা করে চলেছেন৷ মৌলিক বিজ্ঞান অনুযায়ী সূর্যের মতো অত্যন্ত উচ্চ তাপমাত্রা, যথেষ্ট ঘনত্ব ও সময়ের কারণে হাইড্রোজেন পরমাণু একটির সঙ্গে আরেকটি মিলে হিলিয়াম সৃষ্টি করে৷ সেইসঙ্গে বিপুল পরিমাণ জ্বালানীও সৃষ্টি হয়৷

সমুদ্রের পানি থেকে হাইড্রোজেন পাওয়া সম্ভব৷ অর্থাৎ, এভাবে অফুরন্ত কাঁচামাল কাজে লাগানো যেতে পারে৷ ‘ফার্স্ট লাইট ফিউশন' কোম্পানির প্রধান নিকোলাস হকার বলেন, ‘‘ফিউশন আসলে প্রচলিত পারমাণবিক প্রক্রিয়ার সম্পূর্ণ বিপরীত৷ পরমাণু শক্তির ক্ষেত্রে ভারি কোনো মৌলিক উপাদান স্প্লিটিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে জ্বালানি ছাড়ে৷ তার ফলে যা পাওয়া যায়, তা সামলানো বেশ কঠিন৷ ফিউশন এমন কোনো ‘চেন রিয়্যাকশন' নয়৷ পালাবার কোনো পথ থাকে না বলে মেল্টডাউন ঘটে৷''

কোনো ফিউশনভিত্তিক বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র কাগজে-কলমে পরমাণু বিদ্যুৎ কেন্দ্রের তুলনায় নিরাপদ৷ এর কারণ খুব সহজ৷ ‘ফার্স্ট লাইট ফিউশন' কোম্পানির জানলুকা পিসানেলো বলেন, ‘‘প্রচলিত পরমাণু জ্বালানি ক্ষেত্রে প্রতিক্রিয়া আটকে রাখতে বিশাল উদ্যোগ নিতে হয়৷ অন্যদিকে ফিউশনের ক্ষেত্রে সেই প্রতিক্রিয়া চালু রাখতে অনেক কাঠখড় পোড়াতে হয়৷''

ইংল্যান্ডের অক্সফোর্ড শহরে ‘ফার্স্ট লাইট ফিউশন' নামের স্টার্টআপ কোম্পানির বিজ্ঞানীরা এক ফিউশন চুল্লি তৈরি করার চেষ্টা করছেন৷ ফিউশন প্রক্রিয়া চালু করা সেই পথে সবচেয়ে বড় বাধা৷ সেটা করতে যত শক্তি ব্যবহার করতে হবে, সে তুলনায় চুল্লিতে কম জ্বালানি উৎপাদন হলে প্রক্রিয়াটি লাভজনক হবে না৷

সেই সমস্যার সমাধান করতে প্রোজেক্টাইল মোশনের গতিবেগ এতটাই বাড়িয়ে দেওয়ার চেষ্টা চলছে যার প্রতিক্রিয়া হিসেবে ফিউশন প্রক্রিয়া শুরু হয়ে যেতে পারে৷ একটি কিউবের ছোট বুদবুদের মধ্যে হাইড্রোজেন বন্ধ রাখতে চান গবেষকরা৷ প্রোজেক্টাইল যখন সেকেন্ডে প্রায় ১৫ কিলোমিটার গতিবেগে কিউবের উপর আছড়ে পড়বে, তখন সেই কিউবের শক্ত উপাদান তরলের মতো আচরণ করবে৷ বুদবুদের মধ্যে গ্যাস সেকেন্ডের ভগ্নাংশের মধ্যে প্রবল চাপ সৃষ্টি করবে৷ গবেষকদের আশা, এমন অবস্থায় ফিউশন প্রক্রিয়া ঘটবে৷ নিকোলাস হকার বলেন, ‘‘কোনো বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্রে প্রত্যেক লক্ষ্যবস্তু এক পিপে তেলের সমান জ্বালানী তৈরি করবে৷ এটাই হলো এনার্জি ফিউশন৷''

কাগজেকলমে প্রত্যেকটি ক্ষুদ্র কিউব প্রায় ৬ গিগাজুল মাত্রার উত্তাপ বা নির্মল জ্বালানি সৃষ্টি করবে৷ এর মাধ্যমে একটি রেফ্রিজারেটরের তিন বছরের বেশি জ্বালানির চাহিদা মেটানো সম্ভব৷

এই স্টার্টআপ কোম্পানি নিজস্ব তত্ত্ব বাস্তবে প্রয়োগের চেষ্টা শুরু করেছে৷ প্রোজেক্টাইলের গতি বাড়াতে বিশাল এক যন্ত্র তৈরি করা হয়েছে৷ এবার কিউব আরো নিখুঁত করতে এবং হাইড্রোজেনের বুদবুদের ঘনত্ব আরও বাড়ানোর কাজ চলছে৷

ফিউশানভিত্তিক জ্বালানির স্বপ্ন বাস্তবে রূপান্তর করতে আরো উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷ যেমন ফ্রান্সের দক্ষিণে আইটার নামের আন্তর্জাতিক প্রকল্পের আওতায় বিশাল এক গবেষণামূলক চুল্লি তৈরির কাজ চলছে৷ সেখানে কমপ্রেশন প্রযুক্তির বদলে উত্তাপের মাধ্যমে হাইড্রোজেন ফিউশনের চেষ্টা চালানো হবে৷ এই ধরনের চুল্লিকে টোকামাক বলা হয়৷ বিশাল ফাঁপা আংটির মতো দেখতে চক্রের মধ্যে অত্যন্ত গরম হাইড্রোজেন প্লাজমা ভরে দেওয়া হবে৷ তড়িৎ গতিতে চক্রাকারে সেটি ঘুরতে থাকবে এবং শক্তিশালী চুম্পকের মাধ্যমে তার অবস্থান স্থির রাখা হবে৷

প্রায় দশ বছর ধরে আইটার প্রকল্পের চুল্লি নির্মাণের কাজ চলছে৷ চলতি দশকের মাঝামাঝি সময়ে প্রথম পরীক্ষার জন্য সেটি প্রস্তুত হয়ে যাবার কথা৷

ফিউশনভিত্তিক জ্বালানি কীভাবে আমাদের বিদ্যুৎ গ্রিডে আদর্শভাবে সরবরাহ করা সম্ভব, সে বিষয়ে এখনই পূর্বাভাষ দেওয়া কঠিন৷ অনেক বিশ্লেষকের মতে, ফিউশান চুল্লির সার্বিক ব্যবহার শুরু হতে কমপক্ষে আরো ২০ বছর সময় লাগবে৷ সূর্যের শক্তি কাজে লাগানো মোটেই সহজ কাজ নয়৷

ডেরিক ভিলিয়াম্স/এসবি

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ