অবরোধ চলাকালে নাশকতায় প্রাণহানির সংখ্যা বাড়ার পাশাপাশি বাড়ছে ‘ক্রসফায়ারে’ নিহতের সংখ্যাও৷ সরকার এবং বিরোধী পক্ষের মধ্যে সমঝোতার উদ্যোগ নেই, নেই প্রাণহানি বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ৷
বিজ্ঞাপন
বাংলাদেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা প্রভাব দেখা যাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও৷ অবরোধের আগুনে ঝলসে যাওয়া মানুষের ছবি শেয়ার করছেন অনেকে৷ বিশেষ করে সেসব ছবি যা গণমাধ্যম প্রকাশ করতে পারছে না দুর্বল চিত্তের পাঠকের কথা চিন্তা করে৷ বিভৎস সেসব ছবির সঙ্গে যোগ হচ্ছে ‘ক্রসফায়ারে' নিহত মানুষের ছবিও৷ টুইটারে বাংলাদেশ সম্পর্কিত বিভিন্ন হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করে ছবি সার্চ করলে এমন ছবির অভাব নেই৷ আমাদের নীতিমালা সেসব ছবি প্রকাশের অনুমতি দেয়না৷ তাই সেগুলো এখানে প্রকাশ করা যাচ্ছে না৷ তবে বাংলাদেশ নিয়ে আলোচনার কিছু দিক তুলে ধরতে যোগ করা হলো কিছু টুইট:
এদিকে, অবরোধের মধ্যে নাশকতা ‘যে কোনো উপায়ে দমন' করতে পুলিশকে নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ আর এই ‘দমনের' প্রতিক্রিয়ায় যা কিছু হবে তার দায়িত্ব তিনি নেবেন বলেও জানিয়েছেন৷ বুধবার ঢাকায় এক সভায় একথা বলেন শেখ হাসিনা৷ ডয়চে ভেলের ফেসবুক পাতায় প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন অনেক পাঠক৷ আসলাম খালেদ লিখেছেন, ‘‘হাসিনার চিন্তা হলো, যে কোনো মূল্যে ক্ষমতায় থাকতেই হবে, জনগণ মেরে হলেও৷''
অস্থির বাংলাদেশ
বাংলাদেশে দশম সংসদীয় নির্বাচনের বছরপূর্তিতে ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় সংঘর্ষের খবর পাওয়া গেছে৷ এতে একাধিক প্রাণহানির ঘটনা ঘটেছে৷ ৫ই জানুয়ারি রাজনৈতিক অস্থিরতার কয়েকটি ছবি পাবেন এখানে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
অবরুদ্ধ খালেদা
বিএনপি চেয়ারপার্সন খালেদা জিয়াকে তাঁর গুলশান কার্যালয়ে আটকে রেখেছে পুলিশ৷ যদিও সরকারের তরফ থেকে বলা হচ্ছে তাঁর নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে, তবে সোমবার তিনি বাইরে যেতে চাইলে পুলিশ তাঁর গেটে তালা লাগিয়ে দেয়৷ ফলে অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন গেটের মধ্যেই৷
ছবি: AFP/Getty Images
অবরোধ ঘোষণা
অবরুদ্ধ খালেদা জিয়া পরবর্তী ঘোষণা না দেওয়া পর্যন্ত সারা দেশে অবরোধের ঘোষণা দিয়েছেন৷ গুলশানের কার্যালয়ে সোমবার সাংবাদিকদের তিনি বলেন, ‘‘আজ আমাদের কালো পতাকা কর্মসূচি ছিল৷ সমাবেশ করতে দেওয়া হয় নাই৷ পরবর্তী কর্মসূচি না দেওয়া পর্যন্ত অবরোধ কর্মসূচি চলবে৷’’
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
খালেদার কার্যালয় ঘিরে পুলিশ
প্রসঙ্গত, গত দু’দিন ধরে খালেদা জিয়ার কার্যালয় ঘিরে রেখেছে পুলিশ৷ ছবিতে পুলিশে একটি গাড়ি রাস্তায় আড়াআড়িভাবে রেখে রাস্তা বন্ধ করে দেয়া হয়েছে৷ এভাবে আরো কয়েকটি বালু এবং ইটভর্তি ট্রাকও রাখা হয়েছে৷
ছবি: picture alliance/Landov
গাড়িতে আগুন
রবিবার থেকেই ঢাকায় সভা, সমাবেশ, শোভাযাত্রা নিষিদ্ধ করেছিল৷ কিন্তু তা সত্ত্বেও সমাবেশ করার সিদ্ধান্তে অটল থাকে বিএনপিসহ বিশ দল৷ ঢাকায় একটি সিএনজি এবং মোটর সাইকেলে আগুন ধরিয়ে দেয়ার ছবি এটি৷ বিএনপি সমর্থকরা এটা করেছে বলে জানিয়েছে সংবাদসংস্থা৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS.com
পার্ক করা গাড়িতে আগুন
পার্ক করে রাখা একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন দিচ্ছে বিএনপির সমর্থকরা৷ ছবিটি ঢাকা থেকে তোলা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
রাজপথে সরব আওয়ামী লীগ
পুলিশ সভা, সমাবেশ নিষিদ্ধ করলেও ঢাকার বিভিন্ন স্থানে ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীরা জড়ো হন৷ বিষয়টি সমালোচনা করে ফেসবুকে সাংবাদিক প্রভাষ আমিন লিখেছেন, ‘‘...নিষেধাজ্ঞা কি শুধু বিএনপির জন্য? আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা তো দেখি শহরজুড়ে মিছিল করছে, উল্লাস করছে, গান শুনছে, গান গাইছে৷’’ ছবিতে ঢাকায় বিএনপির এক সমর্থককে পেটাচ্ছে আওয়ামী লীগের কর্মীরা৷
ছবি: picture-alliance/epa/A. Abdullah
‘শান্তির পথে আসুন’
এদিকে সোমবার রাতে জাতির উদ্দেশ্যে দেয়া ভাষণে বিএনপি নেত্রীকে শান্তির পথে আসার আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা৷ তবে মধ্যবর্তী নির্বাচনের যে দাবিতে বিএনপিসহ বিশদল আন্দোলন করেছে, সেই দাবির প্রতি কোন নমনীয়তা দেখাননি তিনি৷ হাসিনা মনে করেন, সর্বশেষ জাতীয় নির্বাচনে অংশ না নেয়াটা বিএনপির রাজনৈতিক ভুল ছিল৷
ছবি: Oli Scarff/Getty Images
‘একতরফা’ নির্বাচন
উল্লেখ্য, ২০১৪ সালের পাঁচ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিসহ বেশ কয়েকটি দল অংশ নেয়নি৷ সেই নির্বাচনে ৩০০ আসনের মধ্যে ১৫৩টি আসনে কোন ভোটাভুটি হয়নি৷ বাকি আসনগুলোতে ভোটার উপস্থিতি ছিল বেশ কম৷ ইউরোপীয় ইউনিয়ন সেটিকে ‘একতরফা’ নির্বাচন আখ্যা দিয়েছে৷
ছবি: DW
8 ছবি1 | 8
তবে স্বর্ণা হক প্রধানমন্ত্রীর এই বক্তব্যকে সমর্থন করেছেন৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘তিনি (শেখ হাসিনা) একদম ঠিক বলেছেন, এভাবে একদল মানুষ মারবে, আর তিনি প্রধানমন্ত্রী হয়ে তা চেয়ে চেয়ে দেখবেন তা তো হতে পারেনা, সবাইকে রক্ষা করাই তার দায়িত্ব৷''
অবশ্য বর্তমানে পুলিশের আচরণের একটি চিত্র পাওয়া গেলো তানভীর আহমেদের বক্তব্যে৷ তিনি লিখেছেন, ‘‘গত এক সপ্তাহ আগে পুলিশ আমার হোন্ডা আটকায়ে ৩০ মিনিট দাড়া করিয়ে রেখেছে, অথচ আমার সামনেই ছাত্রলীগ এর ছেলেদের হোন্ডা একটা ফোন পাওয়ার সাথে সাথে ছেরে দিসে৷ তাই আমি প্রধানমন্ত্রীর কথার বিপক্ষে৷''
থেমে নেই বাংলা ব্লগও৷ রাজনৈতিক অস্থিরতা নিয়ে প্রতিদিন অসংখ্য নিবন্ধ প্রকাশ করছেন ব্লগাররা৷ সামহয়্যার ইন ব্লগে আতিক স্বাধীনের লেখার শিরোনাম ‘‘ব়্যাব: দ্য কোল্ড ব্লাডেড মার্ডার৷'' তিনি তাঁর লেখায় ব়্যাব সৃষ্টির ইতিহাস থেকে এখন পর্যন্ত তাদের বিভিন্ন কর্মকাণ্ড বিশেষ করে ‘ক্রসফায়ারের' দিকটি তুলে এনেছেন৷ তিনি প্রশ্ন করেছেন, ‘‘এত যে ‘ক্রসফায়ার' হয় র্যাব মরেছে বলে তো শুনি না; তবে তারা কি সুপার হিউম্যান? স্পাইডারম্যান, ব্যাটম্যান, কৃষের মতো৷''