ম্যার্কেলপন্থি রক্ষণশীলদের সঙ্গে জোট মেনে নিল মধ্যবামপন্থি দল এসপিডি'র সদস্যরা৷ তাই মহাজোট গঠনে আর বাধা রইল না৷ ফলে চতুর্থবারের মতো চ্যান্সেলরের চেয়ারে বসতে যাচ্ছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
বিজ্ঞাপন
এই জট খুলে যাওয়ায় আগামী দু'সপ্তাহের মধ্যেই জার্মানিতে নতুন সরকার দায়িত্ব নিতে পারে বলে শোনা যাচ্ছে৷
গত সেপ্টেম্বরে অনুষ্ঠিত হয় জার্মান জাতীয় নির্বাচন৷ এরপর থেকেই সরকার গঠনে শুরু হয় জোট আলোচনা৷
প্রথমে সবুজ দল ও ফ্রি ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে আলোচনা ব্যর্থ হয়৷ এসপিডি শুরুর দিকে আবারো মহাজোট গঠনে কোনো আগ্রহ না দেখালেও পরবর্তীতে দলের বামপন্থিদের আপত্তি সত্ত্বেও রাজি হয় আলোচনায় বসতে৷
এ সব আলোচনার নানা ধাপ পেরিয়ে অবশেষে পাঁচ মাস পর সরকার গঠনের বিষয়টি চূড়ান্ত হলো৷
ম্যার্কেলের রক্ষণশীল সিডিইউ-সিএসইউ'র সঙ্গে আদৌ জোট গঠন করা হবে কি না এ প্রশ্নটিই ছিল এসপিডির রবিবারের চূড়ান্ত ধাপ৷
সামাজিক গণতন্ত্রী দলটির ৬৬ ভাগ সদস্য এই মহাজোটের পক্ষে ভোট দিয়েছেন৷ বাকি ৩৪ ভাগ করেছেন বিরোধিতা৷
বার্লিনে রবিবার সকালে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সাড়ে চার লাখ সদস্যের ভোটের চূড়ান্ত ফল ঘোষণা করা হয়৷
‘‘এসপিডি'র জন্য এটা সহজ সিদ্ধান্ত ছিল না৷'' বলছিলেন দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওলাফ শলৎস৷ ‘‘জোট আলোচনায় আমরা অনেক বিষয়েই আমরা একমত হতে পেরেছি৷ সে কারণেই মহাজোটের সিদ্ধান্ত বলবৎ রাখতে পেরেছি৷''
মহাজোট চুক্তি করতে এখন আর কোনো বাধা নেই৷ জার্মান সংসদ বুন্দেসটাগ ম্যার্কেলকে ১৯তম অধিবেশনের জন্য চ্যান্সেলর নির্বাচিত করবে৷ আগামী ১৪ মার্চ এই ভোট হবার কথা রয়েছে৷
জার্মান নেতা হিসেবে ১৩ বছরে এটি ম্যার্কেলের তৃতীয় মহাজোট গঠন৷
তবে এই মহাজোট আলোচনা প্রক্রিয়ায় নিজের অবস্থান হারিয়েছেন মার্টিন শুলৎস৷ কয়েকদিন আগে এসপিডি'র চেয়ারম্যান পদ হারান তিনি৷
ম্যার্কেল তাঁর মন্ত্রিদের নাম এরই মধ্যে ঘোষণা করে দিয়েছেন৷
কোয়ালিশন চুক্তির ক্ষেত্রে অনেক ছাড় ও অর্থ মন্ত্রণালয় হারানোর কারণে সিডিইউ দলের মধ্যে ক্ষোভের কথা বিলক্ষণ জানেন ম্যার্কেল৷ তাঁর নেতৃত্ব নিয়ে সার্বিক সংশয় সম্পর্কেও তিনি সচেতন৷
দলীয় সম্মেলনে সমালোচকদের আক্রমণ প্রতিহত করতে তিনি তাই গত সপ্তাহেই সম্ভাব্য মন্ত্রীদের নাম ঘোষণা করেছেন৷ সেই তালিকায় বেশ কিছু চমক রেখেছেন তিনি৷
আগের তুলনায় আরও বেশি নারী এবং তরুণ মুখ উঠে এসেছে৷ বিশেষ করে ৩৭ বছর বয়সি তরুণ নেতা ও ম্যার্কেলের সমালোচক বলে পরিচিত ইয়েন্স স্পানকে তিনি স্বাস্থ্যমন্ত্রীর পদ দিয়ে অনেককেই অবাক করেছেন৷ মন্ত্রী হিসেবে স্পান আর প্রকাশ্যে ম্যার্কেলের সমালোচনা করতে পারবেন না, এমনটাই মনে করছেন পর্যবেক্ষকরা৷
এদিকে, গত নির্বাচনে মাত্র ২০ শতাংশের মতো ভোট পেয়েও এসপিডি দল কোয়ালিশন চুক্তিতে নিজস্ব বিষয়গুলি অন্তর্ভুক্ত করে ও ১৫ জনের মধ্যে ছ'জন মন্ত্রীর পদ আদায় করতে পেরেছে৷
মহাজোটে যাওয়া না যাওয়া নিয়ে স্পষ্ট বিভক্তি দেখা গেছে এসপিডি'তে৷ দলের অনেকেই মনে করেন, এই জোটে যাবার জন্য দলের সমর্থন কমে যেতে পারে৷
মহাজোটে যাবার পক্ষে সদস্যের ভোট দেবার জন্য ক্যাম্পেইনে নেতৃত্ব দিয়েছেন দলের নারী নেত্রী আন্দ্রেয়া নাহলেস ও ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান ওলাফ শলৎস৷ অন্যদিকে, এসপিডি'র তরুণ অংশটির নেতা কেভিন ক্যুন্যার্ট ছিলেন এর বিপক্ষের ক্যাম্পেইনে৷
বিপক্ষে প্রচারণা চালালেও ক্যুন্যার্ট অবশ্য বারবারই বলেছেন যে, পার্টির সদস্যদের যে কোনো সিদ্ধান্ত মেনে নেবেন৷
জেফারসন চেজ/জেডএ
যেভাবে প্রতিদ্বন্দ্বীদের পরাস্ত করেন ম্যার্কেল
এমনকি ২০১৭ সালের নির্বাচনের আগেও তাঁর পথে বাধা হয়ে দাঁড়ানো রাজনীতিবিদদের নিষ্ক্রিয় বা পাশে সরিয়ে দিয়েছেন জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷ নিজের দল বা বিরোধী দলের অনেক নেতাকেই নানাভাবে ঠেকিয়েছেন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/ANP/R. De Waal
‘কোল গার্ল’ যখন গুরুকে ছাড়লেন
দীর্ঘদিন চ্যান্সেলর পদে থাকে হেলমুট কোল ম্যার্কেলকে মন্ত্রিসভায় প্রথম সুযোগ দিয়েছেন এবং তাঁর উত্থানে সহায়তা করেছিলেন৷ কিন্তু ১৯৯৮ সালে চ্যান্সেলর পদ হারানোর পর ম্যার্কেল এবং সিডিইউ তাঁর বিপক্ষে চলে যায়৷ কোল কিছু সূত্র থেকে নগদ অর্থ সাহায্য নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সে সব সূত্রের বিস্তারিত তিনি জানাননি যা দলের জন্য ক্ষতিকর বলে মন্তব্য করেছিলেন সেসময় সিডিইউ’র সাধারণ সম্পাদক আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Altwein
গেয়ারহার্ড শ্র্যোডার – রাজনৈতিক ক্যারিয়ারের সমাপ্তি
২০০৫ সালের নির্বাচনে এসপিডি’র চ্যান্সেলর শ্র্যোডারকে পরাস্ত করেন ম্যার্কেল৷ তবে এই পরাজয়ে শ্র্যোডারের নিজের দাম্ভিকতাও কিছুটা ভূমিকা রেখেছিল৷ সেই নির্বাচনে খুব অল্প ব্যবধানে সিডিইউ’র কাছে হেরে যায় এসপিডি৷ যদিও নির্বাচনের আগে টিভি বিতর্কে তিনি দাবি করেছিলেন, যে জার্মানরা চায় তিনি ক্ষমতায় থাকুন৷ কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি এবং তিনি রাজনীতি থেকে বিদায় নেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার - দীর্ঘদিনের সঙ্গী
শুরুতে ম্যার্কেলের অধীনে চারবছর পররাষ্ট্রমন্ত্রী ছিলেন ফ্রাঙ্ক-ভাল্টার স্টাইনমায়ার৷ এরপর ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে তাঁকে চ্যালেঞ্জ করেন সামাজিক গণতন্ত্রীদের এই রাজনীতিবিদ৷ কিন্তু সেই নির্বাচনে সুবিধা করতে পারেনি স্টাইনমায়ারের দল৷ পরবর্তীতে ২০১৩ সালে আবারো ম্যার্কেলের অধীনে পররাষ্ট্রমন্ত্রী হন স্টাইনমায়ার৷ আর চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে তিনি জার্মানির প্রেসিডেন্ট৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Kembowski
গ্যুন্টার ও্যটিঙার - পথের কাঁটা দূর হলো
ম্যার্কেল যে শুধু তাঁর সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের রাজনীতি থেকে দূরে সরিয়ে দেন এমন নয়৷ বরং নিজের দলে থাকা সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের লোভনীয় অন্য কোন পদেও পাঠিয়ে দেন৷ তাঁর সহকর্মী বাডেন-ভ্যুর্টেমব্যার্গ রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী গ্যুন্টার ও্যটিঙারকে ২০১০ সালে তিনি ইউরোপীয় কমিশনে বড় পদে পাঠিয়ে দেন৷ অথচ ও্যটিঙারের সেই পদ পাওয়ার মতো কোনো অভিজ্ঞতাই ছিল না৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Seeger
রোনাল্ড কখ - বাতিলের তালিকায় ফেলে দেয়া
দুই কারণে রোনাল্ড কখ পরিচিত৷ প্রথমত, তিনি দলাই লামার বন্ধু৷ দ্বিতীয়ত, সরকারের দ্বৈত নাগরিকত্ব চালুর পরিকল্পনার বিরুদ্ধে কয়েক মিলিয়ন স্বাক্ষর সংগ্রহের জন্য৷ হেসে রাজ্যের এই রাজ্য প্রধান কখনো ম্যার্কেলের উত্থানে বাধা না হলেও হঠাৎ করেই মনে করেছিলেন তাঁকে বার্লিনে বড় পদের জন্য ডাকা হবে৷ কিন্তু ম্যার্কেলকে তাঁকে সেরকম কোন সুযোগ দেননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ - একজন দুর্ভাগা রাষ্ট্রপতি
ক্রিস্টিয়ান ভুল্ফ প্রেসিডেন্ট হিসেবে ম্যার্কেলের প্রথম পছন্দ ছিলেন না৷ কিন্তু ২০১০ সালে হর্স্ট ক্যোলার পদত্যাগ করার পর সিডিইউ বর্তমান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েনের ব্যাপারে ঐকমত্যে পৌঁছাতে না পারায় ভুল্ফ সুযোগ পেয়ে যান৷ ভুল্ফ তখন লোয়ার স্যাক্সনি রাজ্যের রাজ্যপ্রধান৷ পরবর্তীতে অবশ্য দুর্নীতির দায়ে প্রেসিডেন্টের পদ ছাড়তে হয় তাঁকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
পেয়ার স্টাইনব্রুক – সঠিক মানুষ, ভুল সময়
২০১৩ সালে ম্যার্কেল যখন তাঁর ক্যারিয়ারের তুঙ্গে, তখন এসপিডি থেকে তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী হিসেবে বেছে নেয়া হয় পেয়ার স্টাইনব্রুক’কে৷ ম্যার্কেলের অধীনে একসময় অর্থমন্ত্রী থাকা এই রাজনীতিবিদের চ্যান্সেলর পদ পাওয়ার সব যোগ্যতাই ছিল৷ কিন্তু সময়টা ঠিক ছিল না৷ ম্যার্কেলের সঙ্গে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় সুবিধা করতে পারেননি তিনি৷