প্রথমবারের মতো গাড়ি চালানোর অনুমতি পাচ্ছেন সৌদি আরবের নারীরা৷ বাদশাহ সালমান মঙ্গলবার এই আদেশ জারি করেছেন বলে জানিয়েছে সেদেশের রাষ্ট্রীয় গণমাধ্যম৷ আদেশ কার্যকর হলে আগামী গ্রীষ্ম থেকে নারীরা গাড়ি চালাতে পারবেন৷
বিজ্ঞাপন
সৌদি আরব বিশ্বের একমাত্র দেশ, যেখানে এখনো নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতি নেই৷ গত কয়েক দশক ধরে গাড়ি চালানোয় নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে আন্দোলন করে যাচ্ছেন নারীরা৷ এ পর্যন্ত অনেক নারীকে গাড়ি চালানোর অপরাধে গ্রেফতার বা হয়রানির শিকার হতে হয়েছে৷
১৯৯০ সালে রাজধানী রিয়াদের রাস্তায় প্রথম এই নিষেধাজ্ঞার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানিয়েছিলেন ৫০ জন নারী৷ তখন গ্রেফতার করার পাশাপাশি তাঁদের পাসপোর্ট বাজেয়াপ্ত করে চাকুরিচ্যুতও করা হয়েছিল৷ এরপর ২০১১ সালে গাড়ি চালানোর অপরাধে এক নারীকে ১০ বার বেত্রাঘাত করার নির্দেশ দেয় আদালত৷ তবে প্রয়াত বাদশাহ আব্দুল্লাহ পরে সেই শাস্তি মওকুফ করে দেন৷
সৌদি প্রেস এজেন্সি জানিয়েছে, নারীদের গাড়ি চালানোর বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে ৩০ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন তৈরি করতে বলা হয়েছে৷ আদেশটি ২০১৮ সালের জুন থেকে কার্যকর হবে৷ বাদশাহ'র এই আদেশ অনুযায়ী, পুরুষের পাশাপাশি নারীদেরও গাড়ি চালানোর লাইসেন্স দেওয়া হবে, এক্ষেত্রে কোনো বৈষম্য থাকবে না বলেও জানানো হয়েছে৷
এদিকে, নারীদের গাড়ি চালানোর অনুমতিসংক্রান্ত আদেশকে ‘ঐতিহাসিক’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন যুক্তরাষ্ট্রে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত প্রিন্স খালেদ বিন সালমান৷ তিনি বলেছেন, ‘‘সঠিক সময়ে সঠিক সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে৷’’
প্রিন্স খালেদ বিন সালমান আরো বলেন, ‘‘গাড়ি চালানোর লাইসেন্স পাওয়ার জন্য নারীদের তাঁদের পুরুষ অভিভাবকদের অনুমতি নিতে হবে না৷ নারীরা তাঁদের ইচ্ছানুযায়ী যে কোনো জায়গায় গাড়ি চালাতে পারবেন৷’’ সৌদি সরকারের এ পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র৷ জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেসও এই উদ্যোগের প্রশংসা করেছেন৷
গত বছরের নভেম্বরে সৌদি আরবের যুবরাজ আলওয়ালিদ বিন তালাল নারীদের গাড়ি চালানোর উপর নিষেধাজ্ঞা অবিলম্বে তুলে নেয়ার আহ্বান জানিয়েছিলেন৷
এপিবি/এসিবি (এপি, এএফপি, রয়টার্স, ডিপিএ)
সৌদি ক্ষমতাকেন্দ্রে তারুণ্য
সৌদি আরবের ভবিষ্যৎ বাদশাহ মহম্মদ বিন সালমান ‘এমবিএস’ নামেও পরিচিত৷ গত কয়েক বছরে ক্ষমতাকেন্দ্রে তাঁর উত্থান সবার নজর কেড়েছে৷ এই তরুণ নেতা সম্পর্কে এই তথ্যগুলো কি জানা আছে?
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
বাদশাহর আস্থাভাজন
অশীতিপর বাবা বাদশাহ সালমান কার্যত দেশের ক্ষমতা প্রিয় ছেলের হাতেই তুলে দিয়েছেন বলে অনেকে মনে করেন৷ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় ছাড়াও তিনি পেট্রোলিয়াম কোম্পানি আরামকো ও দেশের অর্থনৈতিক সংস্কারের দায়িত্ব পালন করে আসছিলেন৷ উপ প্রধানমন্ত্রী পদও তাঁর দখলে ছিল৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/Saudi Press Agency
ঝুঁকি নিতে ভয় পান না
প্রচণ্ড পরিশ্রমী বলে পরিচিত মহম্মদ বিন সালমান সৌদি শাসকগোষ্ঠীর এতকালের ধীরস্থির ভাবমূর্তি ভেঙে দিয়েছেন৷ অর্থনৈতিক সংস্কারসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে তিনি এতদিনের নানা প্রথা ভেঙে দ্রুত পদক্ষেপ নিয়ে সবাইকে চমকে দিয়েছেন৷ তাঁর সমর্থকরা মনে করেন, বর্তমান চ্যালেঞ্জগুলির মোকাবিলা করতে দেশে এমন নেতারই প্রয়োজন৷
ছবি: picture-alliance/abaca/Balkis Press
পররাষ্ট্র নীতির পরিবর্তন
এতকালের সংযম ভেঙে ফেলে সৌদি আরব গোটা অঞ্চলে নিজস্ব স্বার্থরক্ষায় বেশ কিছু বিতর্কিত পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ ইরানের প্রতি বৈরি মনোভাব, ইয়েমেনে সেনা অভিযান থেকে শুরু করে কাতারকে একঘরে করে ফেলার সিদ্ধান্তের পেছনেও মহম্মদ বিন সুলতানের স্বাক্ষর স্পষ্ট৷ ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার স্থপতিও তিনি৷
ছবি: picture alliance / AP Photo
রাজপরিবারে উত্থান
সৌদি রাজপরিবারের জটিল ক্ষমতার কাঠামোর মধ্যে সম্ভাব্য প্রতিদ্বন্দ্বীদের কোণঠাসা করে বাদশাহর ঠিক পরে শীর্ষ স্থানে পৌঁছানোর মতো অসাধ্যসাধন করেছেন ‘এমবিএস’৷ শুধু তাই নয়, এতকাল মনোনীত ‘ক্রাউন প্রিন্স’ মহম্মদ বিন নায়েফ (বামে) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও উপাধি খুইয়েও তাঁর প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করেছেন৷
ছবি: Reuters/Saudi Press Agency
ব্যতিক্রমী জীবন
সৌদি রাজপরিবারের সন্তানরা সাধারনত বিদেশে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করেন, কমপক্ষে মাস্টার্স ডিগ্রি পর্যন্ত পৌঁছে যান৷ মহম্মদ বিন সালমান সেই পথে না গিয়ে দেশে থেকেই আইন নিয়ে পড়েছেন এবং বাবার কাজের সঙ্গে সম্পৃক্ত থেকেছেন৷ বাদশাহ সালমান যখন নিজে ক্রাউন প্রিন্স ছিলেন, তখনও তিনি বাবার রাজসভার দায়িত্বে ছিলেন৷
ছবি: Getty Images
পেট্রোলিয়ামের উপর নির্ভরতা
সৌদি অর্থনীতি এতকাল তার বিশাল পেট্রোলিয়াম ভাণ্ডারের উপর নির্ভর করে ছিল৷ মহম্মদ বিন সালমান অর্থনীতির খোলনলচে বদলে ২০৩০ সালের মধ্যে সেই পরিস্থিতি বদলানোর উদ্যোগ শুরু করেছেন৷ ভরতুকিসহ অনেক সুযোগসুবিধা বন্ধ করে তিনি বেশ কিছু অপ্রিয় সিদ্ধান্তও নিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Ali Jarekji
ধর্মীয় অনুশাসন
সৌদি আরবের প্রভাবশালী ধর্মীয় নেতাদের সঙ্গে এখনো কোনো বড় সংঘাতে যাননি মহম্মদ বিন সালমান৷ তবে দেশের বিশাল যুবসমাজের কথা ভেবে তিনি সংগীতের জলসা, অ্যামিউজমেন্ট পার্ক ইত্যাদির ব্যবস্থা করেছেন৷ সেইসঙ্গে ধর্মীয় অনুশাসনের তত্ত্বাবধায়ক পুলিশের দৌরাত্ম্য কিছুটা কমিয়েছেন৷