বিচারপতি অভিজিৎ গঙ্গেপাধ্যায়ের হাত থেকে প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতি মামলা সরিয়ে নিল সুপ্রিম কোর্ট।
বিজ্ঞাপন
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় সম্প্রতি একটি টিভি চ্যানেলে সাক্ষাৎকার দিয়েছিলেন। তাতে নিজের ব্যক্তিগত কথা, ভালোলাগা, পছন্দের বই নিয়ে যমন বলেছিলেন, তেমনই মামলা সম্পর্কেও বলেছিলেন। সেই সাক্ষাৎকার সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতি চন্দ্রচূড় ও বিচারপতি পি ভি নরসিমহা দেখেন। তার অনুবাদ পড়েন। কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রারের কাছ থেকে রিপোর্ট চান। তারপর সেই সাক্ষাৎকারের প্রসঙ্গ তুলে সুপ্রিম কোর্টের প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বাধীন বেঞ্চ বলেছে, কলকাতা হাইকোর্টের প্রধান বিচারপতি প্রাথমিক নিয়োগ-দুর্নীতির মামলা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে নিয়ে অন্য কোনো বিচারপতিকে দেবেন।
সুপ্রিম কোর্টের রায় এখনো আপলোড করা হয়নি। এই নির্দেশ নিয়ে আইনজীবীদের মধ্যে দ্বিমত আছে। কিছু আইনজীবী মনে করছেন, প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতি সংক্রান্ত সব মামলা বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের হাত থেকে সরিয়ে নেয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। আবার বিকাশ ভট্টাচার্যের মতো কিছু আইনজীবী মনে করছেন, শুধুমাত্র অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় সক্রান্ত মামলাটি সরিয়ে নেয়া হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের রায় আপলোড করা হলে, বিষয়টি স্পষ্ট হবে।
শুধু তাই নয়, গত ২১ এপ্রিল পুরসভায় নিয়োগ-দুর্নীতি নিয়ে সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দিয়েছিলেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়। পরের দিন থেকেই সিবিআই ও ইডি তদন্ত শুরু করে দেয়। এই নির্দেশের উপরেও স্থগিতাদেশ দিয়েছে সুপ্রিম কোর্ট। তারা বলেছে, তিনদিনের মধ্যে রাজ্য সরকার হাইকোর্টে রিভিউ পিটিশন দেবে। তারপর সাতদিনের মধ্যে হাইকোর্ট ঠিক করবে, এই নিয়ে কী নির্দেশ দেয়া হবে। ততদিন পর্যন্ত সিবিআই-ইডি তদন্ত বন্ধ রাখবে।
শান্তনু এবং অয়নের বিরাট সম্পত্তি
নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় ইডি-র হাতে গ্রেপ্তার তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায় ও অয়ন শীল। ডিডাব্লিউয়ের ক্যামেরায় তাদের সম্পত্তির ছবি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শান্তনুর বাড়ি
১০ মার্চ তৃণমূল নেতা শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় গ্রেপ্তার করে ইডি। ৩৭ ঘণ্টা জেরা করার পর তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। শান্তনুর কাছে বিরাট সম্পত্তির হদিশ পায় ইডি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শান্তনুর ফোনের দোকান
জিরাটে শান্তনুর ফোনের দোকান। এই দোকানে শান্তনু বসতেন। শান্তনুর প্রতিবেশী দোকানদারের অভিযোগ, রাজনীতিতে যুক্ত হওয়ার পর দোকানে আর খুব বেশি আসতেন না শান্তনু।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শান্তনুর ধাবা
বলাগড়ে এই ধাবাটি চালাতেন শান্তনু। ইডি-র কর্মকর্তারা এই ধাবাতেও তল্লাশি চালিয়েছে। এই ধাবা কীভাবে শান্তনু কিনেছিলেন, কোথা থেকে টাকা এসেছে, তা খতিয়ে দেখছে পুলিশ।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শান্তনুর কাকার বাড়ি
বলাগড়ে শান্তনুর কাকার বাড়ি। এই বাড়িতেও আসতেন শান্তনু। স্থানীয় মানুষের অভিযোগ, এই বাড়িতেও শান্তনুর বিনিয়োগ ছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শান্তনুর রিসর্ট
বলাগড়ে এই রিসর্ট তৈরি করেছিলেন শান্তনু। এই রিসর্টে তল্লাশি চালিয়েছে ইডি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বলাগড় থানা
শান্তনুকে এই থানাতে এনেই প্রাথমিকভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করেছিল ইডি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
শান্তনুর স্ত্রীয়ের বাড়ি
শান্তনু বন্দ্যোপাধ্যায়ের স্ত্রী এখন এই বাড়িতে আছেন। এই বাড়িতেও শান্তনুর নিয়মিত যাতায়াত ছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অয়নের অফিস
শান্তনুর সূত্র ধরেই ব্যবসায়ী অয়ন শীলকে গ্রেপ্তার করে ইডি। তিনিও নিয়োগ দুর্নীতি মামলায় যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ। অয়নের সঙ্গে বীরভূমের নেতা ধৃত অনুব্রত মণ্ডলের যোগাযোগ ছিল বলে পুলিশের ধারণা। সল্টলেকে এই অফিসে বসতেন অয়ন। থাকতেনও এখানে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অয়নের গাড়ি
অয়ন গ্রেপ্তার হয়েছেন। বাড়ির সামনে এখনও পড়ে তার বিলাসবহুল গাড়ি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
9 ছবি1 | 9
বিচারপতির দেয়া নির্দেশের কী হবে?
সুপ্রিম কোর্টের এই নির্দেশের পর বেশ কয়েকটি প্রশ্ন উঠেছে। যেমন প্রশ্ন উঠেছে, এবার কোন বিচারপতির কাছে এই মামলা যাবে? এর জবাব সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে রয়েছে। কলকাতা হাইকোর্টের ভারপ্রাপ্ত প্রধান বিচারপতি এটা ঠিক করবেন।
দ্বিতায় প্রশ্ন, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় এতদিন এই মামলায় যে নির্দেশ দিয়েছিলেন তার কী হবে? আইনজীবীদের বক্তব্য, নতুন বিচারপতি বিষয়টি দেখবেন। তিনি ওই নির্দেশ বহাল রাখতে পারেন। পরিবর্তনও করতে পারেন।
তৃতীয় প্রশ্ন হলো, এর কী প্রতিক্রিয়া হতে পারে? এই বিষয়ে প্রচুর রাজনীতিক মুখ খুলেছেন। অধিকাংশের মত হলো, নিয়োগ-দুর্নীতিকে যে জায়গায় পৌঁছে দিয়েছেন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়, যে জায়গায় জনমত চলে গেছে, তাকে উপেক্ষা করা সম্ভব হবে না। তাদের আশা, যে বিচারপতিই এই মামলা বিচারের ভার পান না কেন, তিনি একই পথে চলবেন।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় যা বলেছেন
তবে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশ আসার কিছুক্ষণের মধ্যেই বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় সুপ্রিম কোর্টের সেক্রেটারি জেনারেলের কাছ থেকে তার সাক্ষাৎকারের অনুবাদ চেয়ে পাঠিয়েছেন। স্বচ্ছতার স্বার্থেই তিনি এটা চেয়েছেন বলে জানিয়েছেন। কলকাতা হাইকোর্টের রেজিস্ট্রার যে রিপোর্ট পাঠিয়েছিলেন, সেটাও তার কাছে পাঠাতে হবে বলে নির্দেশ দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, রাত বারোটার মধ্যে এই অনুবাদ ও রিপোর্ট তার কাছে পৌঁছে দিতে হবে। তিনি রাত সওয়া বারোটা পর্যন্ত তিনি চেম্বারে অপেক্ষা করবেন।
বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, তিনি এখন থেকে আর প্রাথমিকে নিয়োগ-দুর্নীতির মামলা শুনবেন না।
বিক্ষোভে রাস্তায় চাকরিপ্রার্থীরা, তাদের জীবনে উৎসব নেই
করোনার পর এবার শারদোৎসবে মেতেছে গোটা পশ্চিমবঙ্গ। তবে চাকরিপ্রার্থীরা উৎসবের মধ্যেও আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসবের দিনেও প্রতিবাদ
এক বছর পরেও ছবিটা বদলালো না। ২০২১ সালের দুর্গোৎসবেও ঘরবাড়ি ছেড়ে এভাবেই আন্দোলনের মধ্যে কাটিয়েছিলেন চাকরিপ্রার্থীরা। এই বছরও কাটাচ্ছেন। তারা উৎসবে নেই, প্রতিবাদে আছেন। এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের কাছে উৎসবের আলাদা তাৎপর্য নেই। তাদের দাবি, পরীক্ষা দিয়ে পাস করার পরেও দুর্নীতির জন্য চাকরি পাননি। তাই সকলে যতদিন চাকরি না পাচ্ছেন, ততদিন প্রতিবাদ চলবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
তিন দফার প্রতিবাদ
এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের আন্দোলন শুরু হয়েছিল ২০১৯-এ। তিন দফায় এই আন্দোলনের বয়স আজ সাড়ে পাঁচশ দিন পেরিয়ে গেছে। কলকাতা হাইকোর্ট জানিয়েছে, এসএসসি চাকরিপ্রার্থীদের নিয়োগে দুর্নীতি ছিল। কতজন এইভাবে চাকরি পেয়েছেন তা জানানোর নির্দেশ দিয়েছে আদালত।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঝড়-জল উপেক্ষা করে
এই কয়েকবছরে গান্ধীমূর্তির পাদদেশের এই ধর্নামঞ্চ রাজ্যের বিভিন্ন জেলা থেকে আসা এই মানুষগুলোর কাছে অভ্যেসে পরিণত হয়েছে। নেই পানীয় জলের ব্যবস্থা, নেই শৌচাগারও। ঝড়-বৃষ্টি-রোদ উপেক্ষা করে দিনের পর দিন অবস্থান করে চলেছেন এরা। কেউ অসুস্থ বাবা-মাকে বাড়িতে রেখে কেউ বা কোলের শিশুকে সঙ্গে নিয়ে। আন্দোলন এখন এদের জীবনের অঙ্গ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসবের দিনেও
গত দুইবছর ধরে ধর্না মঞ্চেই কেটেছে উৎসবের দিনগুলি। দুইটি ঈদ, দুইটি দুর্গাপুজার মত বড় উৎসব এভাবে কেটেছে চাকরিপ্রার্থীদের। বস্তুত তাদের জীবনে উৎসব নেই, আনন্দ নেই, আছে কেবল অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে চাকরি পাওয়ার লড়াই।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অর্পিতার কাহিনি
পশ্চিম মেদিনীপুরের পিংলার অর্পিতা হাজরা। ধর্নামঞ্চে উপস্থিত থাকার জন্য যাতায়াত মিলিয়ে সাতঘণ্টা লাগে অর্পিতার। ভোর পাঁচটায় উঠে রান্না করে তারপর আসেন, আবার বাড়ি ফিরে ১০ বছরের মেয়েকে নিয়ে পড়াতে বসেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
আনন্দ নয়, লড়াই
অর্পিতা জানালেন, ''ছোট্টো মেয়েটাকে নিয়ে যখন জামাকাপড়ের দোকানে গিয়ে শপিং করার কথা, পুজোর চারদিন কীভাবে কাটাব সেই পরিকল্পনা করার কথা, সেই সময় বসে রয়েছি রাস্তার ধারে। পুজোটা আমাদের কাছে প্রবল যন্ত্রণার। সকলকে আনন্দ করতে দেখে আরও যন্ত্রণা পাই ভেতরে ভেতরে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
ঈদও কেটেছে এখানেই
সরকারিভাবে বসতে নিষেধ ছিল, তাও এইবছর দুপুরের পরে এখানে বসেই ঈদ পালন করেছে কামরুজ্জামান, বাড়ির লোকেদের সঙ্গে দেখা করাও হয়ে ওঠেনি। অন্যান্যবার দুর্গাপুজোতেও মুর্শিদাবাদের বাড়ির সামনের পুজোতেই হাজির থাকে কামরুজ্জামান। এইবছর ধর্নামঞ্চেই কাটবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিরানন্দ পিঙ্কি
হুগলির পিঙ্কি সাধুখাঁ জানালেন, ''আমাদের এবারের পুজোর দিনগুলো এভাবে কাটার কথা ছিল না। চাকরির নিয়োগপত্র হাতে পেয়ে বাচ্চার হাত ধরে মণ্ডপে মণ্ডপে অনন্দ করে বেড়ানোর কথা ছিল। যেদিন থেকে জানতে পেরেছি আমরা দুর্নীতির শিকার, সেদিন থেকে আমাদের জীবনের আনন্দ চলে গিয়েছে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
সীমার প্রশ্ন
পুজোমণ্ডপে না গিয়ে কোলের বাচ্চা নিয়ে ধর্নামঞ্চে অবস্থান করছেন সীমা। তিনি বললেন, ''নিজের মনেই যদি আনন্দ না থাকে বাচ্চাকে কীভাবে আনন্দ দেব বলতে পারেন?''
ছবি: Subrata Goswami/DW
উৎসব আর নেই
আশিকুল ইসলাম জানালেন, ''যোগ্য হয়েও চাকরি পাইনি। এই আনন্দে এখন আর কোনও উৎসাহ পাই না। দিনলিপি থেকে মুছে গেছে উৎসব।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
দুর্গারা পথে
মুর্শিদাবাদের রহুল বিশ্বাস বললেন, ''একদিকে দেবী দুর্গা পুজিত হচ্ছেন আর এখানে দুর্গারা বঞ্চিত হয়ে পথের ধারে পড়ে আছে। সরকার চাইলে যেকোনও সময় আমাদের এই অবস্থা থেকে মুক্তি দিতে পারে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিরুপায় তপতী
বাড়িতে সন্তানকে রেখে চুঁচুড়া থেকে প্রতিদিন এই ধর্নামঞ্চে আসেন তপতী দাস। পুজোমণ্ডপে গেলেও মন পড়ে থাকবে এই ধর্নামঞ্চে। তিনি জানালেন, ''আমরা নিরুপায়। বাধ্য হয়ে একটা আশা নিয়েই দিনের পর দিন বসে রয়েছি এখানে।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
চোখে জল জয়ন্তের
সাড়ে তিন বছরের বাচ্চা ফোনে তাকে বার বার বাড়িতে আসতে বলছে। বাবার কোলে চড়ে ঠাকুর দেখার বায়না ছোট্ট ছেলেটার। কথাগুলো বলতে বলতে চোখ মুছতে থাকে বীরভূমের জয়ন্ত। ''যখন সারা কলকাতা আলোর রোশনাইতে মেতে উঠেছে, আমরা গান্ধীমূর্তির পাদদেশে, অন্ধকারেই পড়ে আছি। দুইটি পুজো এভাবেই কেটেছে, চাকরির নিয়োগপত্র হাতে না পেলে জীবনের সব পুজো এখানেই কাটাতে পারি।''
ছবি: Subrata Goswami/DW
নিয়োগপত্র চাই
বনগাঁর সোমা মালাকার বললেন, ''দুর্নীতি করে যারা চাকরি পেয়েছে, তারা আজ পরিবার পরিজন নিয়ে আনন্দে পুজো কাটাচ্ছে। অথচ আমরা যোগ্য হয়েও পথে পড়ে রয়েছি। চাকরির নিয়োগপত্রই আমাদের কাছে পূজার প্রসাদ। যেদিন হাতে পাব সেদিনই আমাদের সত্যিকারের পুজো।'' বললেন, বনগাঁর সোমা মালাকার।
ছবি: Subrata Goswami/DW
14 ছবি1 | 14
এর পাশাপাশি বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় বলেছেন, ''কুণাল ঘোষকে প্রণাম জানাব। তিনি যে ভবিষ্যদ্বানী করেছিলেন তা পুরোপুরি মিলে গেছে। তিনি যে এত বড় ভবিষ্যৎদ্রস্টা তা জানা ছিল না।''
পরে কুণাল টুইট করে বলেন, ''সারা দেশে প্রথম কেউ বুঝলেন, সবকা বিকাশ কাকে বলে। বিকাশ ছুঁলে কী হয়। কমরেড, সমবেদনা রইলো।''
রাজনীতিকদের প্রতিক্রিয়া
যিনি সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেছিলেন, সেই অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছেন, ''সর্বোচ্চ আদালত যে নির্দেশ দিয়েছে তা শিরোধার্য। তদন্ত হোক। কেউ দোষী হলে নজিরবিহীন শাস্তি হোক। বিচারব্যবস্থার উপর আমার ভরসা আছে। প্রধান বিচারপতির রায়কে স্বাগত জানাই।'' অভিষেকের বক্তব্য, ''২২ মাসে ২৩টা সিবিআই হয়েছে। এই মাসে আরো তিনটি সিবিআই। দুই-একজনই এই রায় দিয়েছেন। আমরা এখন বিষয়টি সর্বোচ্চ আদালতে নিয়ে যাচ্ছি।''
পশেচিমবঙ্গের বিজেপি সভাপতি সুকান্ত মজুমদারের মতে, ''এই রায় দুর্ভাগ্যজনক। বাংলার মানুষ চিরদিন বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়কে মনে রাখবেন। পশ্চিমবঙ্গের মানুষ আশাহত হয়েছেন। মানুষ চেয়েছিলেন, তিনি দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই করন।'' সুকান্তর দাবি, ''এই রায়ের ফলে তৃণমূল নেতাদের স্বস্তির কোনো কারণ নেই। হয়ত কিছুদিন দেরি হবে, কিন্তু তাদের জেলে যেতে হবেই।''
তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ বলেছেন, ''আমাদের অভিযোগ ছিল, বিচারপতি গঙ্গোপাধ্য়ায় নির্ধারিত মামলার বাইরে গিয়ে রাজনৈতিক উইশ লিস্ট দিচ্ছেন। আইনের বাইরে গিয়ে এটা করছেন। তারই প্রতিবাদ করেছিলাম।''
পার্থের বান্ধবী অর্পিতার বাড়ি থেকে আরো টাকা উদ্ধার
বুধবার দিনভর অর্পিতার আরেকটি বাড়িতে তল্লাশি চালায় ইডি। উদ্ধার আরো টাকা এবং সোনা।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
এসএসসি দুর্নীতি এবং অর্পিতা
গত শনিবার স্কুল সার্ভিস কমিশন (এসএসসি) দুর্নীতির অভিযোগে পশ্চিমবঙ্গের বর্তমান শিল্পমন্ত্রী এবং সাবেক শিক্ষামন্ত্রী পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে গ্রেপ্তার করেছে এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। গ্রেপ্তার হয়েছেন তার বান্ধবী অর্পিতা মুখোপাধ্যায়। অর্পিতার দক্ষিণ কলকাতার বাড়ি থেকে ২০ কোটিরও বেশি টাকা এবং গুরুত্বপূর্ণ নথি উদ্ধার করেছিল ইডি। বুধবার তার আরেকটি বাড়িতে তল্লাশি চালানো হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
বেলঘরিয়ার বাড়ি
উত্তর কলকাতা শহরতলির বেলঘরিয়ায় এই আবাসনে অর্পিতার আরো দুইটি ফ্ল্যাট আছে। বুধবার তারই একটিতে তল্লাশি চালায় ইডি। উদ্ধার হয়েছে কোটি কোটি টাকা এবং গয়না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কী কী উদ্ধার
দিনভর তল্লাশি চালিয়ে ইডি শুধুমাত্র এই ফ্ল্যাটটি থেকে ২৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা উদ্ধার করেছে। তার সঙ্গে ছিল চার কোটি ৩১ লাখ টাকা বাজার মূল্যের সোনার গয়না।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
১৯ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি
বাড়িটিতে বুধবার ১৯ ঘণ্টা ধরে তল্লাশি চালায় ইডি। পরে ফ্ল্যাটটিতে নোটিস লাগিয়ে সিল করে দেওয়া হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
টাকা গোনার যন্ত্র
টাকা গোনার জন্য ব্যাংক থেকে চারটি বিশেষ যন্ত্র নিয়ে আসা হয় রাতের দিকে। সেই যন্ত্রের সাহায্যেই সারা রাত ধরে টাকা গোনা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
টাকা নেওয়ার ট্রাঙ্ক
টাকা নিয়ে যাওয়ার জন্য বিশেষ ট্রাকে ২০টি ট্রাঙ্ক নিয়ে আসা হয়। বৃহস্পতিবার ভোরে সেই ট্রাঙ্কে টাকা বোঝাই করে ট্রাকে তোলা হয়।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান
বুধবার দুপুরে অতিরিক্ত কেন্দ্রীয় বাহিনীর জওয়ান চেয়ে পাঠায় ইডি। তারা এসে ফ্ল্যাটটি ঘিরে ফেলে। সকাল পর্যন্ত তারা এলাকায় পাহারায় ছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
ইডির অফিসাররা
বিকেলের পর ইডির উচ্চপদস্থ অফিসাররা ঘটনাস্থলে পৌঁছে যান। তাদের উপস্থিতিতেই টাকা গোনার কাজ হয়েছে। আবাসনের এক আবাসিককেও সাক্ষী হিসেবে রাখা হয়েছিল।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অন্য ফ্ল্যাটটি
ওই একই আবাসনে আরো একটি ফ্ল্যাট আছে অর্পিতার। সেখানে এখনো তল্লাশি চালানো হয়নি। ফ্ল্যাটটি সিল করে দিয়ে গেছে ইডি।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
অর্পিতার মা
গোটা ঘটনায় হতভম্ব অর্পিতার মা। বলেছেন, মেয়ে কী করছে, তার কোনো খবর তার কাছে ছিল না। তিনি ভাবতেও পারচেন না এমন সব ঘটনা ঘটেছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
মানিককে জেরা
বুধবার সিজিও কমপ্লেক্সে প্রাথমিক শিক্ষা পর্ষদের সাবেক সভাপতি ও তৃণমূল বিধায়ক মানিক ভট্টাচার্যকে ১৪ ঘণ্টা টানা জেরা করছে ইডি। শুক্রবার তাকে ফের যেতে বলা হয়েছে।
ছবি: Satyajit Shaw/DW
কুণাল ঘোষের বক্তব্য
বৃহস্পতিবার পার্থ চট্টোপাধ্যায়কে দল এবং মন্ত্রিসভা থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছেন তৃণমূলের মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। তিনি বলেছেন, যদি তার কথা দলের পছন্দ না হয়, তাহলে তাকে দল থেকে বিতাড়িত করা হোক। কিন্তু তিনি এই দুর্নীতি মেনে নেবেন না।
ছবি: Privat
12 ছবি1 | 12
প্রদেশ কংগ্রেস সভাপতি ও লোকসভায় কংগ্রেসের নেতা অধীর চৌধুরী মনে করেন, বিচারপতি বদল হলেও সিবিআই-ইডি আছে। ফলে দুর্নীতিবাজরা রেহাই পাবে না।
বিজেপি নেতা শমীক ভট্টাচার্য বলেছেন, ''বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায়ের জন্যই নিয়োগ-দুর্নীতি মামলা এই জায়গায় পৌঁছেছে। এত কোটি টাকা উদ্ধার হয়েছে। এতজন জেলে গেছে। শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে কী পরিমাণ দুর্নীতি হয়েছে, তা মানুষ দেখেছে।''
সিপিএম নেতা সুজন চক্রবর্তীর বক্তব্য, ''এর ফলে তৃণমূলের কিছু নেতা উচ্ছ্বসিত হতে পারেন, রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ করা মানুষগুলির চোখে জল আসতে পারে। কিন্তু এই লড়াই আরো তীব্র হবে। চোরেরা শাস্তি পাবেই। মানুষ ন্যায় পাবে।''
লড়াই হারিয়ে যাবে না তো!
রাজনৈতিক বিশ্লেষক বিশ্বনাথ চক্রবর্তী বলেছেন, ''প্রক্রিয়া মানতে গিয়ে দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই হারিয়ে যাবে না তো?
আর দুই বছরের বেশি সময় ধরে রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ দেখানো চাকরিপ্রার্থীরা বলেছেন, তারা আশাহত হলেন। বিচারপতি গঙ্গোপাধ্যায় তাদের মনে আশা জাগিয়েছিলেন। দুর্নীতিবাজরা শাস্তি পাবে, তারা ন্যায় পাবেন, এটা মনে হচ্ছিল। এই অবস্থায় এই নির্দেশ তাদের কাছে ধাক্কা। তারা চাইছেন, যে বিচারপতি এবার মামলার ভার পাবেন, তিনিও যেন তাদের আশার আলো দেখাতে পারেন।