প্রায় দুই মাসের অনিশ্চয়তার পর ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট মাক্রোঁ নতুন প্রধানমন্ত্রী নিয়োগ করেছেন৷ মিশেল বার্নিয়ে জাতীয় ঐক্য সরকার গড়ে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণের অঙ্গীকার করেছেন৷
বিজ্ঞাপন
প্রায় দুই মাস ধরে রাজনৈতিক অনিশ্চয়তার পর ফ্রান্সে অবশেষে সরকার গড়ার উদ্যোগ দেখা যাচ্ছে৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রাক্তন ব্রেক্সিট মধ্যস্থতাকারী হিসেবে অভিজ্ঞ এই রক্ষণশীল রাজনীতিক বিভিন্ন দলের সমর্থন নিয়ে সংসদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা প্রমাণ করতে পারবেন বলে মাক্রোঁ আশা করছেন৷ উল্লেখ্য, ফ্রান্সে আগাম সংসদ নির্বাচনে কোনো দল বা শিবির প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে না পারায় বর্তমানে রাজনৈতিক অচলাবস্থা বিরাজ করছে৷ আপাতত ২০২৫ সালের বাজেট পাশ করা অত্যন্ত জরুরি হয়ে উঠেছে৷
চরম দক্ষিণপন্থি ন্যাশানাল ব়্যালি দলের নেত্রী মারিন ল্য পেন আপাতত বার্নিয়ে-র মনোনয়ন সমর্থন করছেন৷ ফলে সংসদে ভোটাভুটির সময়ে তিনি কিছুটা ভরসা পেতে পারেন৷ তবে অভিবাসন ও নিরাপত্তার মতো ক্ষেত্রে আরএন দলের সংশয় বিবেচনা না করলে ল্য পেন সেই সমর্থন প্রত্যাহারের প্রচ্ছন্ন হুমকিও দিয়েছেন৷ দলের আর এক নেতা যত দ্রুত সম্ভব সংসদ ভেঙে দিয়ে নতুন নির্বাচন ডাকার শর্ত আরোপ করেছেন৷ সে ক্ষেত্রে আগামী বছর জুলাই মাসেই সরকার ভেঙে দিতে হবে৷
বার্নিয়ে নিজে এক স্থিতিশীল জাতীয় ঐক্য সরকার গঠনের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করে ভোটারদের অসন্তোষ যতটা সম্ভব দূর করার অঙ্গীকার করেছেন৷ তিনি বলেন, দেশের বিভিন্ন শহর, শহরের উপকণ্ঠ ও গ্রামাঞ্চলে মানুষের মধ্যে যে ক্ষোভ, কষ্ট, পরিত্যাগ ও অবিচারের অনুভূতি রয়েছে, সেই বিষয়গুলিকে তিনি গুরুত্ব দিতে চান৷ বার্নিয়ে সব রাজনৈতিক শিবিরের বক্তব্য শুনে নীতি নির্ধারণ করার ইচ্ছে প্রকাশ করেছেন৷ ফ্রান্সের আধুনিক রাজনৈতিক ইতিহাসে ৭৩ বছর বয়সি বার্নিয়ে সবচেয়ে বয়স্ক প্রধানমন্ত্রী হলেন৷ তাঁর পূর্বসুরি গার্বিয়েল আটাল ছিলেন সবচেয়ে কম বয়সি প্রধানমন্ত্রী৷ ২০২১ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বার্নিয়ে নিজের দলের মনোনয়ন পেতে ব্যর্থ হয়েছিলেন৷ ২৭ বছর বয়সে সংসদ সদস্য হয়ে জাতীয় ও ইউরোপীয় স্তরে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ পদে তিনি কর্মরত ছিলেন৷
ফ্রান্সের বামপন্থি শিবির সংসদ নির্বাচনে সবচেয়ে ভালো ফল করেও প্রয়োজনীয় সংখ্যাগরিষ্ঠতার অভাবে সরকার গঠনের সুযোগ পায় নি৷ এই শিবির বার্নিয়ের বিরোধিতা করবে বলে জানিয়েছে৷ চরম বামপন্থি নেতা জঁ-লুক মেলাশোঁ বলেন, ফরাসি জনগণের কাছ থেকে এই নির্বাচন চুরি করা হয়েছে৷ তিনি শনিবার রাজপথে বিক্ষোভের ডাক দিয়েছেন৷
জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস, ইইউ কমিশনের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন, ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনিসহ ইউরোপের অনেক নেতাকে বার্নিয়ে-কে শুভেচ্ছা জানিয়ে সাফল্য কামনা করেছেন৷ এবার তাঁকে বিভিন্ন শিবির থেকে মন্ত্রী নিয়োগ করে সংসদে সমর্থন প্রমাণ করতে হবে৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)
ফ্রান্সের আলোচিত তরুণ রাজনীতিক বারডেলা
ফ্রান্সে সংসদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া ন্যাশনাল ব়্যালি বা আরএন দলের প্রধান ২৮ বছর বয়সি জর্ডান বারডেলা৷ রোববার দ্বিতীয় ধাপে তার দল জয়ী হলে তিনি ফ্রান্সের সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রী হতে পারেন৷
ছবি: Michel Euler/AP Photo/picture alliance
পরিচয়
ফ্রান্সে ৩০ জুন অনুষ্ঠিত সংসদ নির্বাচনের প্রথম ধাপে সবচেয়ে বেশি ভোট পাওয়া দল হচ্ছে ন্যাশনাল ব়্যালি বা আরএন৷ ডানপন্থি ও অভিবাসনবিরোধী হিসেবে পরিচিত এই দলের প্রধান ২৮ বছর বয়সি জর্ডান বারডেলা৷
ছবি: Sarah Meyssonnier/REUTERS
জন্ম
১৯৯৫ সালের ১৩ সেপ্টেম্বর ফ্রান্সের প্যারিসে ইটালীয় অভিবাসী পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন তিনি৷ তার দাদির বাবা আলজেরিয়া থেকে ফ্রান্সে গিয়েছিলেন৷ কর্মজীবী শ্রেণির মানুষেরা প্যারিসের যে এলাকায় থাকেন সেই সেন স্যাঁ-ডেনি এলাকায় বেড়ে উঠেছেন বারডেলা৷
ছবি: Eliot Blondet/abaca/picture alliance
বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়াশোনা শেষ করেননি
হাইস্কুলে পড়াশোনা শেষে প্যারিসের সরবন বিশ্ববিদ্যালয়ে ভূগোল নিয়ে পড়াশোনা শুরু করেছিলেন৷ কিন্তু রাজনীতিতে মনোযোগ দেওয়ার পড়াশোনা শেষ করতে পারেননি৷
ছবি: JULIEN DE ROSA/AFP
রাজনীতিতে যোগদান
মাত্র ১৬ বছর বয়সে আরএন দলে যোগ দেন৷ ২১ বছর বয়সে তাকে দলের মুখপাত্র নিয়োগ দেন আরএন দলের সেই সময়কার নেতা মারিন ল্য পেন৷ ল্য পেনের বাবা ১৯৭২ সালে আরএন দল প্রতিষ্ঠা করেছিলেন৷
ছবি: Julien de Rosa/AFP/Getty Images
ইইউ সাংসদ নির্বাচিত
২০১৯ সালে ২৩ বছর বয়সে ইউরোপীয় সাংসদ নির্বাচিত হন বারডেলা৷
ছবি: Shootpix/ABACA/picture alliance
দলীয় প্রধানের দায়িত্ব
আরএন দলের নেতা ল্য পেন (বামে) দুবার ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে এমানুয়েল মাক্রোঁর কাছে হেরেছেন৷ ২০২৭ সালে আবার তিনি প্রেসিডেন্ট নির্বাচন করতে চান৷ সেই প্রচেষ্টায় পূর্ণ মনোযোগী হতে তিনি ২০২২ সালে বারডেলাকে আরএন দলের প্রধান নির্বাচন করেন৷
ছবি: Alain Jocard/AFP/Getty Images
নিজের সম্পর্কে বারডেলা যা বলেন
আরএন দলের প্রতি তরুণ প্রজন্মের আকর্ষণ বাড়ার পেছনে বারডেলার অবদান রয়েছে বলে মনে করা হয়৷ টিকটকে তার অনুসারীর সংখ্যা প্রায় ১৮ লাখ৷ ‘‘আমি অন্য জায়গা থেকে এসেছি, কিন্তু, আজ আমার যা পরিচয়, তা এখানেই হয়েছে৷ আমি ফ্রান্সের ইতিহাসকে বিয়ে করেছি,’’ টিকটকে নিজের পরিচয় সম্পর্কে এভাবেই বলেছেন বারডেলা৷
ছবি: Michel Euler/AP Photo/picture alliance
শান্তির বার্তা
বারডেলা একজন কট্টর অভিবাসনবিরোধী বলে ডিডাব্লিউকে জানান কার্ডিফ বিশ্ববিদ্যালয়ে ডানপন্থা বিষয়ে বিশেষজ্ঞ মার্টা লরিমে৷ তবে ৩০ জুন প্রথম ধাপের নির্বাচনে জয়ের পর বারডেলার কণ্ঠে কিছুটা শান্তির বার্তা শোনা গেছে৷ তিনি বলেছেন, দ্বিতীয় ধাপের নির্বাচনে জয় পেলে তিনি সব ফরাসি নাগরিকের প্রধানমন্ত্রী হবেন, সবার কথা শুনবেন, জাতীয় ঐক্যের কথা মনে রাখবেন৷