ক্ষমতায় আসার পর প্রথম ৪০ দিন ধরে তর্জন-গর্জনের পর সংসদে এক ভাষণে অবশেষে কিছুটা নরম সুর শোনালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প৷ বাকি বিশ্বের প্রতি সমঝোতার হাতও বাড়িয়ে দিলেন৷
বিজ্ঞাপন
প্রেসিডেন্ট হিসেবে হোয়াইট হাউসে আসার পরেও নির্বাচনি প্রচারের উগ্র ভাষা ছাড়েননি ট্রাম্প৷ তড়িঘড়ি করে সব নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি পালনের একক প্রচেষ্টা চালিয়ে গেছেন৷ গণতান্ত্রিক কাঠামোয় ক্ষমতার অন্য স্তম্ভগুলির প্রতিও অবজ্ঞা দেখিয়েছেন৷ সংবাদমাধ্যমে কোনো সমালোচনা সহ্য করতেও প্রস্তুত নন তিনি৷ টুইটারের মাধ্যমে সরাসরি বক্তব্য তুলে ধরেছেন৷ অবশেষে কংগ্রেসের দুই কক্ষের যৌথ অধিবেশনে প্রথম ভাষণে তাঁর সুর কিছুটা নরম হলো৷ সংঘাতের বদলে সহযোগিতার মাধ্যমে নিজের লক্ষ্য পূরণ করার পথে এক ধাপ এগোলেন ডোনাল্ড ট্রাম্প৷
আরও কর্মসংস্থান, অভিবাসন ব্যবস্থার সংস্কার ও জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে প্রশাসনের পরিকল্পনা তুলে ধরেছেন ট্রাম্প৷ অভিবাসন সংক্রান্ত বিতর্কিত সিদ্ধান্তের ফলে চাপের মুখে পড়ে তিনি গোটা ব্যবস্থার আমূল সংস্কারের উপর জোর দিতে চান৷ ক্যানাডা ও অস্ট্রেলিয়ার মতো দেশের আদলে মেধার ভিত্তিতে অভিবাসীদের অ্যামেরিকায় প্রবেশের সুযোগ দিতে চান তিনি৷ সামাজিক সুরক্ষার ক্ষেত্রেও বেশ কিছু পদক্ষেপ কার্যকর করতে চান ট্রাম্প৷
ট্রাম্পের প্রথম সাতদিনের নির্বাহী আদেশ ও নির্দেশ
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তাঁর ক্ষমতা গ্রহণের সাতদিনের মধ্যেই ডজন খানেক নির্বাহী পদক্ষেপ নিয়েছেন, যার মধ্যে ‘এক্সিকিউটিভ অর্ডার’ ও ‘মেমোরান্ডাম’, দুই’ই আছে৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
অভিবাসন
শুক্রবারের একটি নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প সাতটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ থেকে যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন সাময়িকভাবে নিষিদ্ধ করেন ও সিরীয় উদ্বাস্তু গ্রহণ অনির্দ্দিষ্টকালের জন্য স্থগিত রাখেন৷
ছবি: Picture-Alliance/AP Photo/K. Willens
ওবামাকেয়ার
শপথগ্রহণের কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই ট্রাম্প তাঁর প্রথম এক্সিকিউটিভ অর্ডারে স্বাক্ষর করেন৷ আদেশটির ঘোষিত উদ্দেশ্য ছিল ওবামার ‘অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার অ্যাক্ট’-এর ‘‘অনাবশ্যক অর্থনৈতিক ও নিয়ন্ত্রণমূলক বোঝা’’ হ্রাস করা৷
ছবি: Getty Images/A. Wong
মেক্সিকো সীমান্তে প্রাকার
বুধবার ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটি পরিদর্শন করার অবকাশে ট্রাম্প একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করেন, যাতে ডিপার্টমেন্টের সেক্রেটারি (মন্ত্রীকে) ‘‘অবিলম্বে দক্ষিণ সীমান্ত বরাবর একটি প্রাচীর নির্মাণের পরিকল্পনা, নকশা ও নির্মাণকার্য শুরু করার’’ যাবতীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/C. Torres
‘স্যাঙ্কচুয়ারি সিটিজ’
বুধবার ট্রাম্প আরো একটি এক্সিকিউটিভ অর্ডার স্বাক্ষর করেন, যা অনুযায়ী যে সব ‘অভয়াশ্রমের’ শহর বেআইনি অভিবাসীদের নথিবদ্ধ বা বহিষ্কার করে না, তাদের ফেডারাল অনুদান বাতিল করা হবে৷
ছবি: AP
দু’টি তেলের পাইপলাইনের অনুমতি
তাঁর কর্মকালের দ্বিতীয় দিনেই ডোনাল্ড ট্রাম্প দু’টি আদেশের মাধ্যমে দু’টি বিতর্কিত পাইপলাইন নির্মাণের কাজ চালিয়ে নিয়ে যেতে বলেছেন৷ কি-স্টোন এক্সএল পাইপলাইনটি যাবে ক্যানাডা থেকে গাল্ফ কোস্টে মার্কিন রিফাইনারিগুলি অবধি: প্রেসিডেন্ট ওবামা ২০১৫ সালে এই পাইপলাইন নির্মাণের কাজ বন্ধ রাখেন৷ ডাকোটা অ্যাক্সেস পাইপলাইনটি ইন্ডিয়ান উপজাতিদের এলাকার মধ্য দিয়ে যাচ্ছে বলে ব্যাপক বিক্ষোভের অবতারণা ঘটে৷
ছবি: REUTERS/L. Jackson
গর্ভপাত সংক্রান্ত ‘গ্লোবাল গ্যাগ রুল’
‘বিশ্বের মুখ চেপে ধরার নীতি’ হিসেবে পরিচিত এই নীতি প্রথম বাস্তবায়িত হয় ১৯৮৪ সালে, প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রেগানের আমলে৷ মেক্সিকো সিটি পলিসি নামেও পরিচিত এই নীতি অনুযায়ী যে সব বিদেশি এনজিও গর্ভপাত সংক্রান্ত পরামর্শ বা সাহায্য দেয়, তাদের ফেডারাল সাহায্য না পাবার কথা৷ ট্রাম্প এই নিষেধাজ্ঞা পুনরায় সক্রিয় করেছেন৷
ছবি: AP
টিটিপ থেকে পশ্চাদপসারণ
তাঁর কর্মকালের তৃতীয় দিনে (সোমবার) ট্রাম্প একটি মেমোরান্ডামের মাধ্যমে মার্কিন বাণিজ্য প্রতিনিধিকে ট্রান্স-প্যাসিফিক পার্টনারশিপ বাণিজ্য চুক্তি থেকে স্থায়ীভাবে পশ্চাদপসারণ করার নির্দেশ দেন৷
ছবি: Reuters/K. Lamarque
7 ছবি1 | 7
সম্প্রতি অ্যামেরিকায় বিদেশিদের উপর হামলা ও ইহুদি-বিদ্বেষের যে সব ঘটনা ঘটেছে, অবশেষে তার তীব্র নিন্দা করেছেন ট্রাম্প৷ দেশের মধ্যে ঐক্যের প্রয়োজনীয়তার ইঙ্গিত দিয়েছেন তিনি৷
‘সবার আগে অ্যামেরিকা' – এই বুলি সম্বল করে ট্রাম্প আন্তর্জাতিক জোটসঙ্গীদের প্রতি তাঁর প্রশাসনের দায়িত্ব থেকে সরে আসার ইঙ্গিত দিয়ে এসেছেন৷ তবে ন্যাটোর মতো জোটে সহযোগীদের আরও সক্রিয় ভূমিকার দাবি থেকে সরে আসেন তিনি তিনি৷ মঙ্গলবার তাঁর ভাষণে তিনি বলেন, শত্রু-মিত্র সব দেশই আরও শক্তিশালী অ্যামেরিকা দেখতে পাবে৷ তথাকথিত ইসলামিক স্টেটকে নির্মূল করার অঙ্গীকারেরও পুনরাবৃত্তি করেন তিনি৷
ভাষণের পর ট্রাম্প বাস্তবে কতটা সহযোগিতার মাধ্যমে এগোবেন, তার ভিত্তিতেই তাঁর মূল্যায়ন করবেন রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা৷ অন্যথায় সংসদের সঙ্গে প্রশাসনের সংঘাতের আশঙ্কা বেড়ে যাবে বলে তাঁরা মনে করছেন৷
এসবি/ডিজি (রয়টার্স, এএফপি/ডিপিএ)
কার্নিভালে জার্মান ভাঁড়রা রাজাগজাদের এক হাত নিলেন
জার্মান কার্নিভালের একটা রাজনৈতিক দিক আছে: রাজনীতিকদের ব্যঙ্গ করে, তাদের হাস্যকর করে মজা পায় আপামর জনতা৷ এবার হুল ফোটানো হয়েছে বিশেষ করে ডোনাল্ড ট্রাম্পকে – তবে আঙ্গেলা ম্যার্কেলও পুরোপুরি বাদ যাননি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gambarini
ট্রাম্প এবং স্ট্যাচু অফ লিবার্টি
২০১৭ সালে এই ‘ফ্লোট’ বা শকটটাই সবচেয়ে বেশি হাততালি কুড়িয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প লিবার্টির সঙ্গে যা করছেন, তা কিছুটা অশালীন হলেও, ঐ ঝুঁকিটাই ড্যুসেলডর্ফের শোভাযাত্রার উদ্যোক্তাদের ভালো লাগে, বিশেষ করে যদি তার ফলে প্রতিদ্বন্দ্বী কোলোনের নাক কাটা যায়!
ছবি: picture-alliance/dpa/M. Kusch
ডোনাল্ড দ্য মেনেস
কোলোনই বা কম যাবে কেন? তাই কোলোনের শোভাযাত্রায় স্কুলের পড়ুয়া ডোনাল্ড লেডি লিবার্টির গাউনের তলায় হাত ঢোকাচ্ছে আর সহপাঠিনী হিলারি ক্লিন্টনের চুল ধরে টানছে৷ ক্লাস টিচার রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুটিন কিছুই বলছেন না...
ছবি: picture-alliance/dpa/O. Berg
বাই, ব্রিটানিয়া
মাইনৎস শহরের কার্নিভালের উদ্যোক্তাদের দাবি হলো, এ-বছর তাদের শোভাযাত্রা ছিল চিরকালের সবচেয়ে লম্বা কার্নিভালের শোভাযাত্রা: ১৫৪টি শকট জুড়ে প্রায় ৯ কিলোমিটার লম্বা৷ একটি শকটে ব্রিটেনের প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-কে দেখা গেছে, কীভাবে তিনি ইউরোপীয় ইউনিয়ন পরিত্যাগের পর ব্রিটেনের লাইফবোটটি চালনা করছেন৷
ছবি: Getty Images/T. Lohnes
নাৎসি কে বা কারা
ডোনাল্ড ট্রাম্প, ফরাসি প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী মারিন ল্য পেন, উগ্র ডাচ জাতীয়তাবাদী গেয়ার্ট ভিল্ডার্স এবং আডল্ফ হিটলার – এই চারজনে মিলে যে শালুটি বহন করছেন, তার অর্থ হলো: ‘ব্লন্ড মানে নতুন বাদামি’৷ ট্রাম্পের খোড়োচুল সকলেরই মাথায়৷ ওদিকে জার্মানিতে ‘বাদামি’ রংটির (রাজনৈতিক) তাৎপর্য হলো এই যে, তার সঙ্গে নাৎসিবাদকে জড়িত করা হয়ে থাকে, কেননা হিটলারের কুখ্যাত ব্রাউনশার্টদের উর্দির রং ছিল বাদামি৷
ছবি: picture-alliance/dpa/I. Fassbender
হাসুন, কিন্তু বিপদে পড়তে পারেন
এটিও একটি স্পর্শকাতর বিষয়: তুর্কি প্রেসিডেন্ট এর্দোয়ান জার্মান কমেডিয়ান ইয়ান ব্যোমারমানের বিরুদ্ধে মামলা করেছিলেন এর্দোয়ানকে নিয়ে লেখা একটি অশালীন কবিতা টেলিভিশনে পাঠ করে শোনানোর জন্য৷ কার্নিভালের শকটটিতে এর্দোয়ানের টুপির ওপর লেখা রয়েছে ‘এর্দোভান’ – জার্মানে ‘ভান’ কথাটির অর্থ হলো পাগলামো৷
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gambarini
গুড লাক, গ্রেট ব্রিটেন
ইংরেজিতেই লেখা৷ অথচ ড্যুসেলডর্ফের শোভাযাত্রার এই শকটটিতে টেরেসা মে মুখে ব্রেক্সিটের বন্দুকের নল ঢুকিয়ে আত্মহত্যা করতে চলেছেন৷ নলের উপর লেখা: ব্রেক্সিট!
ছবি: picture-alliance/dpa/F. Gambarini
ম্যামথ মারতে হলে
অধুনালুপ্ত অতীতের বিশালাকার হাতির সঙ্গে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের তুলনা করা হয়েছে – যে হাতিটিকে মারতে নেমেছেন মার্টিন শুলৎস৷ জার্মানে ম্যামথ কথাটি হলো ‘মামুট’, সেটাকেই ‘মামুটি’ করা হয়েছে এই ব্যঙ্গচিত্রে, কেননা জার্মানে ‘মুটি’ কথাটির অর্থ হলো ‘মা’ আর ম্যার্কেলকে ঠাট্টা করে জার্মানদের মা বলা হয়ে থাকে৷