বাংলাদেশ পুলিশে তৃণমূল পর্যায়ে কাউন্সেলিং শুরু হয়েছে৷ জানানো হচ্ছে মানবাধিকারের বিষয়গুলোও৷ সম্প্রতি তল্লাশির নামে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ ক’জনকে মারপিট ও হেনস্তার অভিযোগের পর, পুলিশ সদর দপ্তর থেকে এ উদ্যোগ নেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
বিজ্ঞাপন
গত ৯ জানুয়ারি রাতে ঢাকার মোহাম্মদপুরে জেনেভা ক্যাম্পের কাছে বাংলাদেশ ব্যাংকের কর্মকর্তা গোলাম রাব্বী ও ১৫ জানুয়ারি যাত্রাবাড়ীর মিরহাজিরবাগে সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তা বিকাশ চন্দ্র দাসকে তল্লাশির নামে নির্যাতনের ঘটনায় তীব্র সমালোচনার মুখে পড়ে পুলিশ৷
এরপর ১৭ জানুয়ারি মিরপুরে একজন অবসরপ্রাপ্ত সিনিয়র সহকারী সচিবের ছেলের পকেটে ইয়াবা দিয়ে আটক করে বিপাকে পড়ে পুলিশের একজন এএসআই৷ সর্বশেষ বুধবার ঢাকায় ব্যাংক এশিয়ার একজন কর্মচারীকে নির্যাতন করে সাধারণ মানুষের রোষের মুখে পড়ে ক্ষমা চেয়ে রক্ষা পায় এক পুলিশ সদস্য৷
এই পরিস্থিতিতে তল্লাশিসহ পুলিশ দায়িত্ব পালনকালে সাধারণ মানুষের সঙ্গে কেমন আচরণ করবে – তা নিয়ে ‘কাউন্সেলিং' শুরু হয়েছে৷ দেরি হলেও, অবশেষে সুরু হয়েছে পুলিশকে ‘বন্ধু’ বানানোর উদ্যোগ৷
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের যুগ্ম কমিশনার মনিরুল ইসলাম ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘থানা থেকে শুরু করে পুলিশ লাইন, পুলিশ ক্যাম্প, বিভাগ – সবখানেই কাউন্সেলিং চলছে৷ দিনের শুরুতে পুলিশ সদস্যদের হাজিরা নেয়ার সময় সবাইকে একসঙ্গে করে সিনিয়র অফিসাররা এই কাউন্সেলিং করছেন৷''
মনিরুল ইসলাম
This browser does not support the audio element.
কাউন্সেলিংয়ে কী থাকছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘কোনো তল্লাশি চালাতে হলে কী নিয়ম মানতে হবে, কী ধরণের আচরণ করতে হবে, তা জানানো হচ্ছে৷ নাগরিকদের যেন সম্মান দেয়া হয়, তাঁদের প্রতি যেন ভদ্র আচরণ করা হয় আর নিয়মের যেন লঙ্ঘন করা না হয় – এ কথাগুলো আবারো বোঝানো হচ্ছে৷''
মনিরুল ইসলাম জানান, ‘‘সাম্প্রতিক কিছু ঘটনায় পুলিশের প্রতি সাধারণ মানুষের বিরূপ ধারণা হওয়ার আশঙ্কায় এই কাউন্সেলিংয়ের ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে৷ তাদের বলা হচ্ছে, তল্লাশির সময় নাগরিকদের যেন ‘স্যার' সম্বোধন করা হয়৷ এছাড়া সাধারণ মানুষের অনুমতি নিয়ে আইন অনুযায়ী তল্লাশি করার কথাও বলা হচ্ছে তাদের৷''
প্রসঙ্গত, সিআরপিসি-র ১০৩ এবং ১৬৫ ধারা অনুযায়ী, তল্লাশি চালানোর আইনি অধিকার পুলিশের রয়েছে৷ তবে আইন বলছে, তল্লাশির সময় কমপক্ষে দু'জন গণ্যমান্য ব্যক্তির উপস্থিতিতে তল্লাশি চালাতে হবে৷ পুলিশ চাইলেই তার ইচ্ছামত নিজেরা তল্লাশি চালাতে পারে না৷
তবে নিয়ম মেনে পুলিশ যাকে তল্লাশি করতে চাইবে, সেক্ষেত্রে পুলিশকে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা সহযোগিতা করতে আইনত বাধ্য৷ অন্যথায় সরকারি কাজে অসহযোগিতার অভিযোগে ৩৫৩ ধারায় ঐ ব্যক্তিকে আটকের অধিকার রাখে পুলিশ৷ অন্যদিকে তল্লাশির ক্ষেত্রে পুলিশ নিয়ম না মানলে সেই ব্যক্তি সংশ্লিষ্ট পুলিশ সদস্যদের বিরুদ্ধে মানহানি ও ক্ষতিপূরণের মামলা করতে পারবেন৷
অবশ্য পুলিশের বিরুদ্ধে সবচেয়ে বড় অভিযোগ হলো, তল্লাশির নামে এক শ্রেণির পুলিশ সাধারণ মানুষকে হয়রানি করে, মূলত অর্থ আদায়ের জন্য৷ ‘‘এটা অবিলম্বে বন্ধ হওয়া প্রয়োজন'', বলেন মনিরুল ইসলাম৷
র্যাব – বিতর্কিত এক বিশেষ বাহিনী
শুরুটা হয়েছিল ২০০৪ সালে৷ সেসময় বাঘা বাঘা জঙ্গিদের কুপোকাত করে ব্যাপক প্রশংসা কুড়ায় ব়্যাব৷ কিন্তু অসংখ্য ক্রসফায়ার, অপহরণ, হত্যার দায়ে এখন সমালোচিত এই ‘এলিট ফোর্স’৷ র্যাব নিয়ে আমাদের ছবিঘর৷
ছবি: Getty Images/AFP
‘এলিট ফোর্স’
বাংলাদেশে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন বা র্যাব নামক ‘এলিট ফোর্স’-এর যাত্রা শুরু হয় ২০০৪ সালে৷ এই বাহিনীর ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ‘‘পুলিশ বাহিনীর কার্যক্রমকে আরো গতিশীল ও কার্যকর করার লক্ষ্যে সরকার একটি এলিট ফোর্স গঠনের পরিকল্পনা করে৷’’ তবে এই বাহিনী এখন তুলে দেয়ার দাবি জানিয়েছে বিভিন্ন মহল৷
ছবি: Munir Uz Zaman/AFP/Getty Images
সমন্বিত বাহিনী
বাংলাদেশ পুলিশ, সেনা, নৌ ও বিমান বাহিনীর সদস্যদের নিয়ে র্যাব গঠন করা হয়৷ এই বাহিনীর উল্লেখযোগ্য কর্মকাণ্ডের মধ্যে রয়েছে সন্ত্রাস প্রতিরোধ, মাদক চোরাচালান রোধ, দ্রুত অভিযান পরিচালনা এবং জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন কার্যক্রমে নিরাপত্তা প্রদান৷
ছবি: Getty Images/AFP
জঙ্গি তৎপরতা দমন
শুরুর দিকের ব়্যাবের কার্যক্রম অবশ্য বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল৷ বিশেষ করে ২০০৫ এবং ২০০৬ সালে বাংলাদেশে মাথা চাড়া দিয়ে ওঠা উগ্র ইসলামি জঙ্গি তৎপরতা দমনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে র্যাব৷
ছবি: AP
জেএমবির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার
বাংলাদেশের ৬৩ জেলায় ২০০৫ সালে একসঙ্গে বোমা ফাটিয়ে আলোড়ন সৃষ্টি করা জেএমবির শীর্ষ নেতাদের আটক ব়্যাবের উল্লেখযোগ্য সাফল্য৷ ২০০৬ সালের ২ মার্চ শায়খ আব্দুর রহমান (ছবিতে) এবং ৬ মার্চ সিদ্দিকুল ইসলাম ওরফে বাংলা ভাইকে গ্রেপ্তারে সক্ষম হয় ব়্যাব৷ একাজে অবশ্য পুলিশ বাহিনীও তাদের সহায়তা করেছে৷
ছবি: DW
ভুক্তভোগী লিমন
২০১১ সালে লিমন হোসেন নামক এক ১৬ বছর বয়সি কিশোরের পায়ে গুলি করে এক ব়্যাব সদস্য৷ গুলিতে গুরুতর আহত লিমনের বাম পা উরুর নীচ থেকে কেটে ফেলতে হয়৷ এই ঘটনায় ব়্যাবের বিরুদ্ধে তীব্র নিন্দা এবং প্রতিবাদের ঝড় ওঠে৷ তবে এখনো সুবিচার পায়নি লিমন৷ উল্টো বেশ কিছুদিন কারাভোগ করেছেন তিনি৷
ছবি: DW
‘মানবাধিকার লঙ্ঘন’
জঙ্গিবাদ দমনে সাফল্য দেখালেও ক্রসফায়ারের নামে অসংখ্য ‘বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের’ কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব়্যাবের বিরুদ্ধে সমালোচনা ক্রমশ বাড়তে থাকে৷ হিউম্যান রাইটস ওয়াচ ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করে জানিয়েছে, প্রতিষ্ঠার পর থেকেই এই বাহিনী ‘সিসটেমেটিক’ উপায়ে মানবাধিকার লঙ্ঘন করছে৷
ছবি: DW
‘ক্রসফায়ার’
বাংলাদেশের মানবাধিকার সংগঠন আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পর্যালোচনা প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৩ সালে ব়্যাবের ক্রসফায়ারে নিহত হয়েছেন ২৪ জন৷ অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের দাবি অনুযায়ী, ২০০৪ থেকে ২০১১ সালের আগস্ট পর্যন্ত সময়কালের মধ্যে কমপক্ষে সাতশো হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে ব়্যাব জড়িত ছিল৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আলোচিত সাত খুন
২০১৪ সালের মে মাসে ব়্যাবের বিরুদ্ধে ৬ কোটি টাকা ঘুসের বিনিময়ে সাত ব্যক্তিকে অপহরণ এবং খুনের অভিযোগ ওঠে৷ নারায়ণগঞ্জে আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের ঘটনায় তিন ব়্যাব কর্মকর্তাকে গ্রেপ্তারও করেছে পুলিশ৷ এই ঘটনার পর ব়্যাবের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আবারো বিতর্ক শুরু হয়েছে৷
ছবি: DW
প্রতিষ্ঠাতাই করছেন বিলুপ্তির দাবি
নারায়ণগঞ্জের আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর বাংলাদেশের অন্যতম বড় রাজনৈতিক দল বিএনপির চেয়ারপার্সন বেগম খালেদা জিয়া, ব়্যাবের বিলুপ্তি দাবি করেছেন৷ অথচ তিনি প্রধানমন্ত্রী থাকাকালীন ২০০৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল এই ‘এলিট ফোর্স’৷
ছবি: DW/M. Mamun
বিলুপ্তির দাবি নাকচ
বাংলাদেশে এবং আন্তর্জাতিক স্তর থেকে ব়্যাবকে বিলুপ্তির দাবি উঠলেও বর্তমান সরকার সেধরনের কোনো উদ্যোগ নিচ্ছে না৷ বরং তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু ব়্যাব বিলুপ্তির দাবি নাকচ করে দিয়েছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘র্যাবের কোনো সদস্য আইন ভঙ্গ করলে তাদের চিহ্নিত করে বিচারিক ও আইনগত ব্যবস্থা নেয়া হয়৷’’
ছবি: Getty Images/AFP
10 ছবি1 | 10
পুলিশ কি আদৌ সাধারণ মানুষের বন্ধু হতে পারবে? জানান আপনার মতামত, নীচের ঘরে৷