অবশেষে বনধ শেষ হলো পাহাড়ে
২৯ সেপ্টেম্বর ২০১৭গরমের ছুটি বাদ দিলে দার্জিলিং, কালিম্পং, কার্শিয়াং ও অন্যান্য পাহাড়ি শহরের উপার্জনের একটা বড় অংশ আসে দুর্গাপুজোর ছুটির পর্যটন মরশুম থেকে৷ টানা ১০৪ দিন পাহাড়ের স্বাভাবিক জীবযাত্রা স্তব্ধ থাকার পর, অবশেষে গত মঙ্গলবার, পুজোর ছুটির ঠিক আগে বনধ উঠল৷ কিন্তু তাতে সুবিধে কিছু হলো না৷ এবারের মতো মরশুমি পর্যটন থেকে রোজগারের সম্ভাবনা শেষ৷ দার্জিলিংয়ের পাহাড় থেকে দূরেই থাকলেন পর্যটকরা৷ মূলত ভয়েই৷ বনধের জেরে দার্জিলিংয়ের সঙ্গে টেলিফোন এবং ইন্টারনেট যোগাযোগ ব্যবস্থাও বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল৷ ফলে হোটেল বুকিং থেকে শুরু করে, কোনও কাজই করা যায়নি৷ যে পর্যটকরা অনেক আগে থেকে বুকিং সেরে রেখেছিলেন, তাঁদেরকে সাহস দিতে পারেননি হোটেল মালিকরা৷ কলকাতার রাহুল সেনগুপ্ত যেমন দার্জিলিংয়ের এক হোটেলে ঘর বুক করেছিলেন এক বছর আগে৷ কিন্তু তাঁকে কোনও ভরসা দিতে পারেনি তাঁর হোটেল৷ অগত্যা রাহুল গেছেন পাশের রাজ্য সিকিমে৷ সেখানে বসেও আশায় ছিলেন, দার্জিলিংয়ের পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে অন্তত দু'দিনের জন্যে চলে যাবেন৷ কিন্তু এত দেরিতে বনধ উঠল যে, বিজয়া দশমী একেবারে কাছে এসে গেল৷ এই দশমী, অর্থাৎ দশেরায় পাহাড়ের সব লোক নিজেদের বাড়িতে যান বয়োজ্যেষ্ঠদের হাত থেকে কপালে টিকা অর্থাৎ তিলক লাগাতে৷ এটা পাহাড়ের মানুষদের মধ্যে ব্যাপকভাবে প্রচলিত এক প্রথা৷ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতেই তাই দার্জিলিংয়ের বিভিন্ন হোটেলে কর্মরত লোকজন বাড়ির উদ্দেশে রওনা হয়েছেন৷ ফলে রাহুল যে হোটেলে বুকিং করেছিলেন, তার ম্যানেজার অনুরোধ করেছেন আর না আসতে৷ কারণ, খাবার রেঁধে দেওয়ারও কোনও লোক নেই, ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন রাহুল৷
এই বনধের কারণে পাহাড়ের ব্যবসার কতটা ক্ষতি হলো, তা ধরা পড়েছে দার্জিলিংয়ের বিধায়ক, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা অমর রাইয়ের কথায়৷ তিনি এখন কলকাতায়৷ ডয়চে ভেলের সঙ্গে কথা বলতে গিয়ে তাঁর নিস্তেজ কণ্ঠই বলে দিচ্ছে পরিস্থিতি কতটা খারাপ৷ রাই বললেন, এখন পরিস্থিতি স্বাভাবিক৷ পর্যটকরা চাইলে যেতেই পারেন৷ কিন্তু কেউ যাবেন কিনা, তা তাঁরা জানেন না৷ অমর রাই মুখে যা-ই বলুন, তিনি ভালোমতোই জানেন, এবারের পর্যটক মরশুম নষ্ট হওয়ায় পাহাড়ের অর্থনীতির কতটা ক্ষতি হলো৷
গত মঙ্গলবার কোনও অজ্ঞাত আস্তানা থেকে, সম্ভবত সিকিমের কোনও ডেরা থেকে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতা বিমল গুরুং বনধ তুলে নেওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন৷ অবশ্য গুরুং ভাঙেন, তবু মচকান না৷ তিনি ঘোষণায় বলেছেন, কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের অনুরোধে তাঁরা বনধ তুলে নিলেন৷ অর্থাৎ, দার্জিলিং নিয়ে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের ভূমিকাকে তাঁরা যে গুরুত্বই দেন না, সেটাই হাবেভাবে বোঝাতে চাইলেন গুরুং৷ অবশ্য মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জির কুশলী রাজনৈতিক চালে গুরুং এখন বেশ বেকায়দায়৷ বিনয় তামাংকে পাহাড়ের বিকল্প নেতা হিসেবে তুলে ধরে তিনি গোর্খা জনমুক্তি মোর্চায় একটা ভাঙন ধরাতে সফল হয়েছেন৷ যদিও তাতেও পাহাড়কে স্বাভাবিক করা যায়নি৷ চোরাগোপ্তা নাশকতা চালিয়ে গুরুং সমর্থকরা একটা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করেই রেখেছিল৷ আর পাহাড়ের মূল রাজনীতি যেহেতু জাতিসত্তার দাবিতে, রাজনৈতিক বিভাজন দিয়ে মমতা ব্যানার্জি কতদূর সেটা রুখতে পারবেন, সেটাও এখন দেখার৷