অবশেষে বাদ যাচ্ছে ‘ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তি'
৫ জুলাই ২০১৮জাতীয় সংসদ ভবনে বুধবার অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে অংশ নেওয়া বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-র সভাপতি মঞ্জুরুল আহসান বুলবুল ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘আমরা যে ধারাগুলো বাদ দেয়ার সুপারিশ করেছিলাম তার অনেক কিছুই ইতিমধ্যে বাদ দেয়া হয়েছে৷ সরকারের সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীরা এ ব্যাপারে ইতিবাচক৷ আগামী ১৬ জুলাই পরবর্তী বৈঠকে বিষয়টি চূড়ান্ত হবে৷''
সংসদীয় কমিটির ওই বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ৷ বৈঠকে আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী আনিসুল হক, ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার এবং কমিটির সদস্য হোসনে আরা লুৎফা ডালিয়া অংশ নেন৷ এছাড়া কমিটির আমন্ত্রণে বৈঠকে অংশ নেন সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক, ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহফুজ আনাম, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়ন (বিএফইউজে)-র সভাপতি মনজুরুল আহসান বুলবুল, অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ৭১ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু৷
বৈঠকে কমিটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, প্রস্তাবিত আইনটি নিয়ে চলমান বিতর্ক ও গণমাধ্যমকর্মীদের মতামত আমলে নিয়ে তারা বিলের পূর্ণাঙ্গ শিরোনাম, প্রস্তাবসহ বেশ কিছু ধারা সংশোধনের সিদ্ধান্তনিয়েছে৷ এ লক্ষ্যে একটি খসড়া প্রস্তাবও তৈরি করা হয়েছে৷ কমিটির প্রস্তাবিত ৩২ ধারায় বলা হয়েছে, ‘‘যদি কোনো ব্যক্তি অফিশিয়াল সিক্রেট অ্যাক্ট ১৯২৩-এর আওতাভুক্ত কোনো অপরাধ কম্পিউটার, ডিজিটাল ডিভাইস, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে সংঘটন করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে তিনি অনধিক ১৪ বছর কারাদণ্ডে বা অনধিক ২৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ডে বা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হবেন৷ কেউ যদি এই অপরাধ দ্বিতীয়বার বা বারবার করেন, তাহলে তাঁকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বা সর্বোচ্চ এক কোটি টাকা অর্থদণ্ড বা উভয় দণ্ড ভোগ করতে হবে৷''
সংসদে উত্থাপিত আইনের খসড়ায় এই ধারায় একই পরিমাণ শাস্তির কথা উল্লেখ থাকলেও বলা রয়েছে, ‘‘কোনো ব্যক্তি বেআইনিভাবে প্রবেশের মাধ্যমে কোনো সরকারি, আধা সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত বা বিধিবদ্ধ কোনো সংস্থার অতি গোপনীয় বা গোপনীয় তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটার, ডিজিটাল যন্ত্র, কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, ডিজিটাল নেটওয়ার্ক বা অন্য কোনো ইলেকট্রনিক মাধ্যমে ধারণ, প্রেরণ বা সংরক্ষণ করেন বা করতে সহায়তা করেন, তাহলে সেই কাজ হবে কম্পিউটার বা ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির অপরাধ৷'' কমিটির প্রস্তাবে ৩২ ছাড়াও খসড়ার ৮, ১৮, ২১, ২৫, ২৮, ৪৩, ৪৬ ও ৬১ দফা বা ধারা সংশোধনের কথা বলা হয়েছে৷
অ্যাসোসিয়েশন অব টেলিভিশন চ্যানেল ওনার্সের ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ৭১ টিভির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোজাম্মেল হক বাবু ডয়চে ভেলেকে বলেন, ‘‘সরকারের আইনমন্ত্রী ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রী আমাদের বক্তব্যের ব্যাপারে খুবই নমনীয়৷ তাঁরা বলেছেন, ঐকমত্যে না পৌঁছানো পর্যন্ত এই আইন পাশ হবে না৷ আমাদের সাংবাদিকদের যেটা কনসার্ন সেই ধারাগুলো থাকছে না৷ এমনকি নতুন মোড়কে ৫৭ ধারার মতো কোনো ধারাও থাকছে না৷ আমরা এটা মনিটরিং করছি৷''
বৈঠক সূত্র জানায়, ধর্মীয় মূল্যবোধে আঘাতের শাস্তির মাত্রাও সাত বছর থেকে কমিয়ে ৫ বছর করার প্রস্তাব করা হয়েছে৷ বৈঠকে বিশেষ আমন্ত্রণে অংশ নেওয়া আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ‘‘যে যে পরিবর্তনগুলো করা প্রয়োজন ছিল, সে পরিবর্তনগুলো করা হয়েছে৷ তারা (সাংবাদিক পক্ষ) বলেছেন, এই পরিবর্তনগুলো নিয়ে তারা তাদের নিজস্ব ফোরামে আলোচনা করবেন৷'' সূত্র জানায়, প্রস্তাবিত আইনে ডিজিটাল গুপ্তচরবৃত্তির সংজ্ঞায় অফিসিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্ট ১৯৮৩ অনুসরণ করার কথা বলা হয়৷ এই আইনটি তথ্য অধিকার আইনের সঙ্গে সাংঘর্ষিক উল্লেখ করে সাংবাদিকদের পক্ষ থেকে আপত্তি জানানো হয়৷
বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি ইমরান আহমেদ সাংবাদিকদের বলেন, ‘‘আমরা একটি ভালো আইন চাই, যাতে সেটা সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়৷ তাই সব স্টেকহোল্ডারের সঙ্গে বৈঠক করছি৷ এই নজির খুব কমই আছে৷'' তিনি জানান, আগামী ১৬ জুলাই পুনরায় বৈঠকে মিলিত হবেন সংসদীয় কমিটি ও গণমাধ্যমের প্রতিনিধিরা৷
সম্পাদক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মাহফুজ আনাম বলেন, ‘‘আমরা দ্বিতীয়বারের মতো বৈঠকে মিলিত হয়েছিলাম৷ কমিটি কিছু সংশোধনী প্রস্তাব দিয়েছে৷ তবে যেহেতু আগে পাইনি, সে কারণে আমরা প্রস্তুত ছিলাম না৷ তাই মতামত দিতে পারিনি৷ আমরা অন্যান্য প্রতিনিধির সঙ্গে বসে সংশোধনীগুলো নিয়ে আলোচনা করে কমিটির আগামী বৈঠকে আমাদের ব্যাখ্যা তুলে ধরবো৷''
এর আগে গত ২৯ জানুয়ারি ‘ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ২০১৮'-এর খসড়া চূড়ান্ত অনুমোদন দেয় মন্ত্রিসভা৷ এর পর থেকে এ আইনের কয়েকটি ধারা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে সেগুলো বাতিলের দাবি তোলেন গণমাধ্যম ও মানবাধিকারকর্মীরা৷ ২০০৬ সালে বাংলাদেশে প্রথম তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) আইন করা হয়৷ এ আইনের ৫৭ ধারায় সাংবাদিকসহ বিভিন্ন পর্যায়ের মানুষ হয়রানির শিকার হয়৷