অবশেষে মসজিদে হামলাকারীর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ
২১ মে ২০১৯
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে মসজিদে হামলা চালিয়ে ৫১ জনকে হত্যা করা অস্ট্রেলীয় যুবকের বিরুদ্ধে মঙ্গলবার সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ এনেছে পুলিশ৷ প্রায় দুই মাস আগে হামলার ঘটনা ঘটেছিল৷
বিজ্ঞাপন
এর আগে ২৮ বছর বয়সি ঐ যুবকের বিরুদ্ধে ৫১টি হত্যার অভিযোগ ও ৪০টি হত্যাচেষ্টার অভিযোগ আনা হয়েছিল৷ তবে তাঁর বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনতে দুই মাসেরও বেশি সময় নিলো নিউজিল্যান্ডের পুলিশ৷ তারা বলছে, সরকারি আইন বিশেষজ্ঞ ও কৌঁসুলিদের সঙ্গে পরামর্শ করে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে৷
২০০১ সালে যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলার পর ২০০২ সালে নিউজিল্যান্ডে ‘টেররিজম সাপ্রেশন অ্যাক্ট' প্রণয়ন করা হয়৷ তবে এখন পর্যন্ত এই আইনের আওতায় কোনো বিচার হয়নি৷ ফলে মসজিদে হামলাকারীর বিচারই এই আইনের প্রথম বিচার হতে যাচ্ছে৷ এই আইনে সর্বোচ্চ শাস্তি হচ্ছে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড৷
মার্চের ১৫ তারিখে মসজিদে হামলার দিনই নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্দার্ন একে ‘পরিকল্পিত সন্ত্রাসী হামলা' বলে উল্লেখ করেছিলেন৷
হামলাকারীকে আটক করে কারাগারে রাখা হয়েছে৷ সেখানে তিনি মানসিকভাবে বিচারের মুখোমুখি হওয়ার মতো সুস্থ কিনা, তা যাচাই করে দেখা হচ্ছে৷
জুনের ১৪ তারিখ তার আবার আদালতে হাজির হওয়ার কথা রয়েছে৷
মসজিদে হামলার ঘটনার পর নিউজিল্যান্ডে বন্দুক কেনা সংক্রান্ত আইন কঠিন করা হয়েছে৷ এছাড়া অনলাইনে সন্ত্রাসবাদ ছড়ানো ঠেকাতে সামাজিক মাধ্যমগুলোকে আরো শক্ত ভূমিকা রাখতে বাধ্য করতে নিউজিল্যান্ডের উদ্যোগে আন্তর্জাতিকভাবে চাপ দেয়া হয়েছে৷ ফলে গত সপ্তাহে প্যারিসে ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ ও নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্দার্ন ও প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলোর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের উপস্থিতিতে ‘ক্রাইস্টচার্চ কল' নামে একটি সনদ প্রকাশ করা হয়৷
সনদে স্বাক্ষর করা প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানগুলো বলেছে, তারা ইন্টারনেট থেকে সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ বিষয়ক সহিংস কনটেন্ট সরানোর বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দেবে৷ এই ধরনের কনটেন্ট চিহ্নিত করার জন্য নতুন নতুন অ্যালগোরিদম নিয়ে তারা কাজ করবে৷ সেই সঙ্গে ব্যবহারকারীদের জন্য কনটেন্ট আপলোডের নতুন নীতিমালাও নিয়ে আসা হবে৷
নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চে দুইটি মসজিদে সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হন ৫০ জন৷ স্থানীয় মুসলমানরা এই ঘটনায় যাতে আতঙ্কিত না হন সেজন্য তাদের দিকে সহানুভূতির হাত বাড়িয়েছেন অন্য ধর্মাবলম্বীরা৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মসজিদে হামলা
শুক্রবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চ শহরে জুম্মার নামাজের সময় মসজিদে ঢুকে এলোপাথাড়ি গুলি চালায় ডানপন্থি এক জঙ্গি৷ এতে ৫০ জন নিহত হন৷ আহত হয়েছেন আরো অনেকে৷ হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে বিশ্বের বিভিন্ন সম্প্রদায় থেকে আসতে থাকে সমবেদনার বার্তা৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Matrixpictures
নিহতদের মধ্যে রয়েছেন বাংলাদেশিরাও...
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় পাঁচ জন বাংলাদেশির মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করেছে৷ মোট দশ জন বাংলাদেশি এই হামলায় আক্রান্ত হয়েছেন বলে জানিয়েছে তারা৷ যার মধ্যে কয়েকজন নিখোঁজ রয়েছেন৷ উপরের ছবিতে এক বাংলাদেশি নারীকে দেখা যাচ্ছে, শুক্রবারের পর থেকে তিনি তার স্বামীর সন্ধানে রয়েছেন৷
ছবি: Reuters/J. Silva
মানবিক ভূমিকায় নিউজিল্যান্ডের প্রধানমন্ত্রী
হামলার খবর প্রকাশিত হবার পর থেকে পরিস্থিতি সামাল দেয়ার চেষ্টা করছেন প্রধানমন্ত্রী জেসিন্ডা আর্ডার্ন৷ তিনি ক্রাইস্টচার্চের একটি মসজিদে নিহতদের প্রতি তাঁর শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করেন, আক্রান্তদের পরিবারের সাথে সময় কাটান৷ তাদের আস্বস্ত করতে তিনি বলেন, ‘‘নিউজিল্যান্ড আসলে এমন নয়৷ আমার কাজ এখন আপনাদের ভালোবাসা, নিরাপত্তা আর সহযোগিতা দেওয়া, যাতে নির্দ্বিধায় আপনারা নিজেদের সংস্কৃতি আর ধর্মকে ধরে রাখতে পারেন৷’’
ছবি: Reuters/New Zealand Prime Minister's Office
‘মুসলমান ভাইদের পাশে’ পোপ
রোববারের প্রার্থনাসভায় নিউজিল্যান্ডের সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের আত্মার প্রতি সমবেদনা জ্ঞাপন করেন পোপ ফ্রান্সিস৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি নতুন করে নিহতদের জন্য সবাইকে প্রার্থনা করতে আহবান জানাচ্ছি৷ আমরা মুসলমান ভাইয়েদের পাশে আছি এবং হিংসা ও সহিংসতার বিরুদ্ধে শান্তির বার্তা দিচ্ছি৷’’
ছবি: Imago/Zuma
‘পাহারায়’ অন্যান্য ধর্মের মানুষ
নিউজিল্যান্ডের স্থানীয় খ্রিস্টান ও অন্য ধর্মাবলম্বীরা আক্রান্তদের কাছে ছুটে যাচ্ছেন৷ মুসলমান ধর্মাবলম্বীদের জন্য অনেকেই হালাল খাবার জোগাড় করে দিচ্ছেন৷ ভুক্তভোগীদের জন্য অর্থ সংগ্রহ করছেন অনেকে৷ কেউ কেউ বলছেন যে, মুসলিমরা প্রার্থনা করার সময় প্রয়োজন হলে মসজিদের বাইরে থেকে তারা পাহারা দেবেন৷
ছবি: Reuters/J. Silva
পাশে দাঁড়িয়েছে ইহুদিরাও
তাহির নওয়াজ, নিউজিল্যান্ডের আন্তর্জাতিক মুসলিম জনগোষ্ঠীর প্রেসিডেন্ট৷ তিনি বলেন, ‘‘আমার ধর্মের মানুষ ছাড়াও অসংখ্য খ্রিষ্টান ও ইহুদি আমাকে সমবেদনা ও সাহায্যের বার্তা পাঠাচ্ছেন৷ অন্য ধর্মের বেশ কয়েকজন নেতাও আমার সাথে যোগাযোগ করেছেন৷’’ ওপরের ছবিতে এক ইহুদি নারীকে দেখা যাচ্ছে, যিনি তাঁর মুসলমান ভাইদের পাশে থাকার কথা বলছেন৷
ছবি: Reuters/R. U. Abbasi
আদিবাসীদের সমবেদনা
নিউজিল্যান্ডের অন্যতম আদিবাসী গোষ্ঠী মাওরি৷ শুক্রবারের হামলার পর, দেশের বিভিন্ন জায়গায় মৃতদের উদ্দেশ্যে শোক জানান তারাও৷ শুধু তাই নয়, আক্রান্তদের পাশে থাকার বহিপ্রকাশ হিসেবে নিজেদের ঐতিহ্যবাহী ‘হাকা’ নাচও পরিবেশন করেন তারা, যা মাওরি সংস্কৃতির অংশ৷ (প্রতীকী ছবি)
ছবি: Getty Images/H. Peters
ছোট থেকে বড়- সবার চোখে জল
ক্রাইস্টচার্চের ভয়াবহ হামলার ঘটনার পর থেকে নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন জায়গায় নিহতদের উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করছেন সাধারণ মানুষ৷ মসজিদের সামনে জড়ো হয়ে ফুল দিয়ে বা মোমবাতি জ্বালিয়ে শ্রদ্ধা জানান তারা৷ বয়স, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে প্রত্যেকের মুখে ছিল শোকের ছায়া৷