করোনা মহামারির শুরু থেকেই বিষয়টি হালকাভাবে নিচ্ছিলেন ডনাল্ড ট্রাম্প৷ এই ভাইরাস নিয়ে নানা বিভ্রান্তিও ছড়িয়েছেন তিনি৷ তবে, দেরিতে হলেও সম্ভবত ভাইরাসটির ভয়াবহতা বুঝেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট, পরতে শুরু করেছেন মাস্ক৷
বিজ্ঞাপন
করোনার আঘাতে মার্কিন মুল্লুকের অবস্থা কাহিল৷ আর এই অবস্থার জন্য মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্পকে দায়ী করছেন অনেকে৷ নিন্দুকরা মনে করছেন, ভাইরাসটি প্রতিরোধে যথেষ্ট সচেতন ছিলেন না তিনি৷ আর তার পরিণাম ভুগতে হচ্ছে মার্কিনিদের৷
প্রেসিডেন্টের বিরোধিতা করে ‘বেকার’ তাঁরা
ডনাল্ড ট্রাম্প আর ব্রাজিলের জাইয়া বলসোনারোর কাছে যেন মানুষের প্রাণের চেয়ে দেশের অর্থনীতিই বড়৷ তাদের এমন মনোভাবের বিরোধিতা করে বিপদে পড়েছেন কর্মকর্তারা৷
ছবি: imago images/ZUMA Wire/Y. Gripas
ডা. অ্যন্থনি ফাউচি
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় এলার্জি ও সংক্রামক রোগ ইনস্টিটিউটের প্রধান৷ এছাড়া হোয়াইট হাউসের করোনা ভাইরাস রেসপন্স টিমের একজন বিশেষজ্ঞ৷ করোনা ভাইরাস নিয়ে বিভিন্ন তথ্য দিতে একসময় ফাউচি নিয়মিত টেলিভিশনে উপস্থিত হতেন৷ কিন্তু ৪ মে’র পর আর তাঁকে টিভিতে দেখা যায়নি৷ কারণ নির্বাচনের বছর হওয়ায় প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প তাড়াতাড়ি লকডাউন তুলে দিতে চান, যার বিরুদ্ধে ফাউচি৷ এজন্য তাকে আর টিভির সামনে আসতে দেয়া হচ্ছে না৷
ছবি: imago images/ZUMA Wire/Y. Gripas
ট্রাম্পের সমালোচনায় ওবামা
করোনা মহামারি শুরুর পর ট্রাম্পের নেয়া পদক্ষেপকে ‘অ্যাবসোলিউট ক্যাওটিক ডিজাস্টার’ বলেছেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ এদিকে, কলম্বিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের এক গবেষণা বলছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি এক সপ্তাহ আগে লকডাউনে যেতো তাহলে ৩৬ হাজার মানুষের প্রাণ হয়ত বেঁচে যেতো৷ দেশটিতে এখন পর্যন্ত ৯৫ হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছেন৷
ছবি: Reuters/M. Rehle
লুই হেনরিক মানদেত্তা
তিনি ব্রাজিলের স্বাস্থ্যমন্ত্রী ছিলেন৷ বর্তমানে এই দেশটিতে করোনার প্রকোপ বেশি দেখা যাচ্ছে৷ করোনা প্রতিরোধে লকডাউনের সমর্থক ছিলেন মানদেত্তা৷ কিন্তু তাঁর চরম ডানপন্থি প্রেসিডেন্ট জাইয়া বলসোনারো দ্রুত দেশের অর্থনীতিকে স্বাভাবিক অবস্থায় নিয়ে যেতে চান৷ তাই গত মাসের মাঝামাঝি মানদেত্তাকে পদ থেকে সরিয়ে দেয়া হয়৷
ছবি: Getty Images/A. Anholete
নেলসন টাইখ
মানদেত্তার পর টাইখকে স্বাস্থ্যমন্ত্রী বানিয়েছিলেন বলসোনারো৷ প্রথমে টাইখ তাঁর প্রেসিডেন্টের মতোই কথাবার্তা বললেও পরবর্তীতে দুজনের মধ্যে মতবিরোধ দেখা দেয়৷ এমনকি টাইখকে না জানিয়ে বলসোনারো একসময় জিম, বিউটি পার্লার ও সেলুনকে জরুরি সেবা হিসেবে ঘোষণা করেন৷ এছাড়া ম্যালেরিয়ার ওষুধ ক্লোরোকুইন ব্যবহার নিয়েও বলসোনারোর সঙ্গে টাইখের বিরোধ দেখা দেয়৷ এর ফল হিসেবে গত সপ্তাহে পদত্যাগ করেন টাইখ৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/E. Peres
করোনা নিয়ে বলসোনারো
মানুষ মারা গেলেও দ্রুত অর্থনীতি স্বাভাবিক করতে চান ব্রাজিলের প্রেসিডেন্ট৷ যেমন গতমাসে টাইখকে নিয়োগ দেয়ার সময় তিনি বলেছিলেন, ‘‘আমি জানি... জীবন অমূল্য৷ কিন্তু অর্থনীতি ও চাকরি অবশ্যই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে হবে৷’’ তারও আগে বলসোনারো এক সাংবাদিককে বলেছিলেন, ‘‘কয়েকজন মারা যাবে৷ আমি দুঃখিত৷ এটাই জীবন৷’’ ব্রাজিলে করোনায় মৃতের সংখ্যা ২০ হাজার ছাড়িয়ে গেছে৷
অব্যাহত এই সমালোচনার মাঝে জনসচেতনতার প্রতীক হতেও চাপ ছিল ট্রাম্পের উপর৷ সেই চাপের কাছে কি নতিস্বীকার করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট? প্রথমবারের মতো শনিবার তাকে জনসমক্ষে দেখা গেছে মাস্ক পরা অবস্থায়৷
যুদ্ধাহতদের দেখতে ওয়াশিংটনের কাছে ওয়াল্টার রিড সেনা হাসপাতাল দেখতে গিয়েছিলেন ট্রাম্প৷ সেই হাসপাতালের করিডরে গাঢ় রংয়ের মাস্ক পরা অবস্থায় হাঁটতে দেখা গেছে তাকে৷ এসময় তার সঙ্গে থাকা সেনা কর্মকর্তা ও নিরাপত্তারক্ষীদের মুখেও মাস্ক ছিল৷
মাস্ক পরা ট্রাম্প অবশ্য সাংবাদিকদের কোনো প্রশ্নের জবাব দেননি৷ তবে, হোয়াইট হাউস থেকে বের হওয়ার সময় বলেছিলেন, ‘‘আমি কখনোই মাস্ক পরার বিরুদ্ধে ছিলাম না৷ তবে আমি বিশ্বাস করি সেটা পরার একটা সময় এবং স্থান রয়েছে৷''
মার্কিন গণমাধ্যমে গত কয়েকদিন ধরেই খবর প্রকাশিত হচ্ছিল যে ট্রাম্পের ঘনিষ্ঠজনরা তাকে প্রকাশ্যে মাস্ক পরতে এবং সংবাদকর্মীদের সেই মাস্ক পরা অবস্থার ছবি তুলতে সুযোগ দিতে অনুরোধ করেছেন৷ দেশটির কিছু রাজ্যে বর্তমানে করোনা সংক্রমণের হার বাড়ছে৷ আর নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য মার্কিন নির্বাচনের আগে প্রতিদ্বন্দ্বী জো বাইডেনের তুলনায় জনসমর্থন নাকি কমছে ট্রাম্পের৷ মাস্ক পরা ট্রাম্পের ছবি তার জনপ্রিয়তা বাড়াতে পারে বলে মনে করছেন ট্রাম্প সমর্থকরা৷
উল্লেখ্য, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে গত কয়েকদিন ধরে টানা প্রতিদিন ষাট হাজারের বেশি নতুন করোনা সংক্রমণ ধরা পড়ছে৷ দেশটিতে রোববার পর্যন্ত করোনায় মৃতের সংখ্যা এক লাখ ৩৫ হাজার জন৷