জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার জানিয়েছেন চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে অভিবাসন নীতি নিয়ে তাঁর দ্বন্দ্বের অবসান ঘটেছে৷ এর আগে শরণার্থী নীতি নিয়ে বিরোধে পদত্যাগেরও হুমকি দিয়েছিলেন তিনি৷
বিজ্ঞাপন
খ্রিষ্টীয় সামাজিক ইউনিয়ন- সিএসইউর নেতা সেহোফার রোববার জানিয়েছেন, খ্রিষ্টীয় গণতন্ত্রী দল- সিডিইউয়ের সাথে তাঁর জোট এখন ভবিষ্যতের পরিকল্পনা করছে৷ দৈনিক পত্রিকা বিল্ডকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি বলেন, ‘‘গাড়ির পেছনে দেখার গ্লাসের চেয়ে সামনের উইন্ডস্ক্রিন সবসময়ই বড় হয়৷ আমরা সবসময়ই সে মূল্যবোধে ধরে এগুচ্ছি৷''
ম্যার্কেলের অবস্থান শুধু জার্মানিতেই নয়, পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নে বিপদে ফেলার জন্য দুঃখপ্রকাশে অবশ্য রাজি নন সেহোফার৷
তিনি বলছেন, ‘‘আমাদের কিছু বিষয়ে মতবিরোধ ছিলো৷ কিন্তু কখনই তা ব্যক্তিগত আক্রমণে রূপ নেয়নি৷'' এখন ম্যার্কেলের সাথে একসাথে কাজ করা তাঁর ‘দায়িত্ব' বলেও মন্তব্য করেন সেহোফার৷
সীমান্ত থেকে অবৈধ শরণার্থীদের বিদায় করতে জার্মান নীতি কার্যকরে বদ্ধপরিকর ছিলেন সেহোফার৷ তবে চ্যান্সেলর ম্যার্কেল বারবার বলছিলেন, এর ফলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চলাচলের স্বাধীনতা বিষয়ক যে মূলনীতি, তা বাধাগ্রস্ত হবে৷
সেহোফার এবং তাঁর সিএসইউ দল একভাবে সিদ্ধান্ত নিয়ে সীমান্তে কড়াকড়ির হুমকিও দিয়েছিলো৷ তখন ধারণা করা হচ্ছিল, চ্যান্সেলরকে এড়িয়ে কোন একক সিদ্ধান্ত নিলে বরখাস্ত হতে পারেন সেহোফার৷
বাভারিয়ায় অক্টোবরের নির্বাচন
এর আগে, কঠোর নীতি গ্রহণ না করলে পদত্যাগ, এবং জোট সরকার ভেঙে দেয়ার হুমকিও দিয়েছিলেন সেহোফার৷ জোটে সেহোফারের সিএসইউ, ম্যার্কেলের সিডিইউ ছাড়াও মধ্যবামপন্থি সোশ্যাল ডেমোক্র্যাট -এসপিডিও রয়েছে৷
বৃহস্পতিবার এই তিন দলের নেতাই জার্মানিতে অবৈধ অভিবাসন ঠেকাতে এবং একটি কঠোর নীতি গ্রহণে একমত হন৷
তবে বিরোধীদের অভিযোগ, অক্টোবরে বাভারিয়ার নির্বাচনে কট্টরপন্থি ভোটারদের নিজের দিকে টানতেই শরণার্থী ইস্যুতে এমন কঠোর অবস্থানে গিয়েছেন সেহোফার৷
জার্মানির সবচেয়ে দক্ষিণে অবস্থিত বাভারিয়ান রাজ্যে ২০১৫ এবং ২০১৬ সালে লাখ লাখ শরণার্থী প্রবেশ করেছেন৷ এরপর থেকে সেখানে শরণার্থীবিরোধী মনোভাব ধীরে ধীরে প্রবল হয়ে উঠেছে৷
বাভারিয়ায় শরণার্থীবিরোধী দল অলটারনেটিভ ফর ডয়েচল্যান্ড- এএফডি এখন ব্যাপক জনপ্রিয়৷ ২০১৭ সালের নির্বাচনে দেশের সবচেয়ে বড় বিরোধী দলের জায়গা দখল করেছে এএফডি৷
এডিকে (এপি, ডিপিএ)
ইইউতে ম্যার্কেলের বন্ধু ও শত্রুরা
শরণার্থী সংকটকে ঘিরে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ও তাঁর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফারের মধ্যে মতানৈক্য চরমে পৌঁছেছে৷ একই বিষয়ের কারণে ইউরোপীয় ইউনিয়নের নেতারাও ম্যার্কেলের বন্ধু ও শত্রু হয়ে উঠেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/O.Matthys
বন্ধু
ম্যার্কেলের রাজনৈতিক বন্ধু বলতে যদি কাউকে বোঝায় তবে সেটা ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁ৷ ম্যার্কেলের মতোই তিনি শরণার্থী সংকটের ইউরোপীয় সমাধানের পক্ষে ছিলেন৷ ইইউ’র নেতারা সম্প্রতি ব্রাসেলসে এক বৈঠকে সংকট সমাধানের লক্ষ্যে একটি চুক্তিতে পৌঁছান৷
ছবি: picture-alliance/Tass/dpa/M. Metzel
দরদি
সম্প্রতি ইটালি ভূমধ্যসাগরে উদ্ধার হওয়া শরণার্থীদের একটি জাহাজ তাদের উপকূলে ভেড়ার অনুমতি দেয়নি৷ পরে স্পেন সেই জাহাজ তাদের দেশে ভিড়তে দেয়৷ এই ঘটনায় স্পেনের নতুন প্রধানমন্ত্রী পেড্রো সানচেজকে শরণার্থী ইস্যুতে ম্যার্কেলের নীতির সমর্থক বলে মনে হতে পারে৷ তবে তিনিও বলেছেন, সংকট সামলাতে তাদের সহায়তা প্রয়োজন৷
ছবি: Getty Images/AFP/J. Soriano
মধ্যস্থতাকারী
ম্যার্কেলের মতো ডাচ প্রধানমন্ত্রী মার্ক রুটে-ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ সীমান্ত খোলা রাখার পক্ষে৷ তবে তাঁর নিজের দেশেই শরণার্থীদের বিরুদ্ধে বৈরী মনোভাব বাড়ছে৷
ছবি: Reuters/F. Lenoir
কৌশলী
ঋণ-সংকট ইস্যুতে সম্প্রতি ম্যার্কেলকে গ্রিসের বিরুদ্ধে নমনীয় হতে দেখা গেছে৷ ফলে শরণার্থী ইস্যুতে ম্যার্কেলের প্রতি সমর্থন জানিয়েছেন গ্রিসের প্রধানমন্ত্রী আলেক্সিস সিপ্রাস৷ এর মাধ্যমে তিনি হয়ত ঋণ ইস্যুতে কিছুটা ছাড় পাওয়ার আশা করছেন৷
ছবি: Reuters/A. Konstantinidis
কট্টরপন্থি
ডেনমার্কের প্রধানমন্ত্রী লার্স রাসমুসেনকে দেখতে কট্টরপন্থির মতো মনে না হলেও অভিবাসন ইস্যুতে তিনি সেরকম মনোভাবই দেখিয়েছেন৷ আশ্রয়প্রার্থীদের ডেনমার্কে ঢুকতে না দেয়ার ক্ষেত্রে তিনি যে কঠোর মনোভাব দেখিয়েছেন, তা ইইউ’র অন্য কোনো সরকার করেনি৷
ছবি: imago/Belga
প্রতিদ্বন্দ্বী
ব্যক্তিগত পর্যায়ে ম্যার্কেলের সঙ্গে মার্জিত ব্যবহার দেখান অস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুয়রৎস৷ তবে শরণার্থী ইস্যুতে যে তিনি ম্যার্কেলের খোলা দুয়ার নীতির বিরোধী, তা সরাসরিই জানিয়েছেন৷ ম্যার্কেলের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হর্স্ট সেহোফার, স্বাস্থ্যমন্ত্রী ইয়েন্স স্পান ও বাভেরিয়ার মুখ্যমন্ত্রী মার্কুস শ্যোডারের সঙ্গে তাঁর সখ্য রয়েছে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/P. Kneffel
সমস্যা সৃষ্টিকারী
ইইউ নেতারা সম্প্রতি যে চুক্তিতে পৌঁছেছেন, শুরুতে তা ভন্ডুল করে দিতে চেয়েছিলেন ইটালির প্রধানমন্ত্রী জুসেপে কন্টে৷ কারণ, সম্প্রতি দায়িত্ব নেয়া কন্টে তাঁর ভবিষ্যতের জন্য লিগা পার্টির উপর নির্ভরশীল৷ এই দলের নেতা স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মাটেও সালভিনি আর কোনো শরণার্থী না নেয়ার পক্ষে৷
ছবি: picture-alliance/ZumaPress
উদাসীন
২০১৫ সালে ম্যার্কেল যখন শরণার্থী ইস্যুতে খোলা দুয়ার নীতি গ্রহণ করেছিলেন, তখন ম্যার্কেলের সবচেয়ে বেশি সমালোচনা করেছিলেন হাঙেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর অর্বান৷ তখন তিনি বলেছিলেন, শরণার্থী সংকট ম্যার্কেলের সমস্যা৷