অবশেষে সরকারি কর্মীদের বাড়তি ডিএ দিচ্ছে রাজ্য সরকার
১৫ ফেব্রুয়ারি ২০২৩
আগামী মার্চ মাসের বেতনে তিন শতাংশ বেশি ডিএ পাবেন রাজ্যের সরকারি কর্মীরা। চাপের মুখে সিদ্ধান্ত মমতা বন্দ্যোপাধ্য়ায়ের।
ছবি: Subrata Goswami/DW
বিজ্ঞাপন
রাজ্য বিধানসভায় বাজেট ভাষণের একেবারে শেষে এসে ডিএ দেয়ার কথা ঘোষণা করলেন রাজ্যর অর্থমন্ত্রী চন্ত্রিমা ভট্টাচার্য। তবে এটা তার বাজেট বাষণের অংশ ছিল না। বিধানসভায় দেখা যায়, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় একটা চিরকূট লিখে দেন মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাসকে। তিনি সেটা দেন চন্দ্রিমাকে। চিরকূট পড়ার পর চন্দ্রিমা জানান, মার্চের বেতনেই রাজ্য সরকারের কর্মী ও পেনশনভোগীরা তিন শতাংশ হারে বাড়তি ডিএ পাবেন।
তবে এই তিন শতাংশ ডিএ পেয়ে রাজ্য সরকারি কর্মীরা যে খুব খুশি হবেন এমন নয়। কারণ, তারা কেন্দ্রীয় হারে ডিএ-র দাবি করছিলেন। কেন্দ্রীয় সরকারের কর্মীদের তুলনায় তারা এখনো ৩২ শতাংশ ডিএ কম পান। এতদিন তাদের ডিএ বাড়েনি। তারা রাস্তায় নেমে আন্দোলন করছিলেন। হুমকি দিয়েছিলেন, পঞ্চায়েত ভোটের কাজও করবেন না। ফলে রীতিমতো চাপে ছিল রাজ্য সরকার।
যৌথ মঞ্চের দাবি
এর আগে রাজ্য সরকারি কর্মীদের সংগঠন সংগ্রামী যৌথ মঞ্চ এই সিদ্ধান্ত নিয়েছিল, ডিএ না পেলে তারা প়্চায়েত বোটের কাজ করবেন না। এই সংগঠনে রাজ্য সরকারি কর্মীদের ৩৫টি সংগঠন আছে। যৌথ মঞ্চের নেতা ভাস্কর ঘোষ বলেছেন, তারা রাজ্য সরকারকে সিদ্ধান্ত জানাবার জন্য দুই দিন সময় দিচ্ছেন। এখনো পর্যন্ত রাজ্য সরকারের কোনো প্রতিনিধি তাদের সঙ্গে দেখা করেননি বা কথা বলেননি।
কর্মী সংগঠনের দাবি, তাদের ৩৫ শতাংশ ডিএ বকেয়া আছে। কেন্দ্রীয় সরকার কর্মীদের পুরো ডিএ দিয়ে দিয়েছে। কিন্তু রাজ্য সরকার কিছুতেই তা দিচ্ছে না।
পশ্চিমবঙ্গে ডিএ-র দাবিতে অবস্থান সরকারি কর্মীদের
সরকারি কর্মীদের অভিযোগ, তারা দীর্ঘদিন ধরে প্রাপ্য ডিএ পাচ্ছেন না। হাইকোর্টের নির্দেশের পরেও রাজ্য সরকার দিচ্ছে না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
ডিএ-র দাবিতে
ডিএ মানে ডিয়ারনেস অ্যালাওয়েন্স বা মহার্ঘভাতা। মুদ্রাস্ফীতির সঙ্গে সমানুপাতিক হারে ডিএ পাওয়ার কথা সরকারি কর্মীদের। কিন্তু সরকারি কর্মী সংগঠনগুলির অভিযোগ, রাজ্য সরকার তাদের প্রাপ্য ডিএ দিচ্ছে না।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কেন্দ্র দিচ্ছে
ইতিমধ্যে কেন্দ্রীয় সরকার তাদের কর্মীদের প্রাপ্য ডিএ দিয়েছে। রাজ্য সরকারি কর্মীদের ফেডারেশনের দাবি, তাদের ৩১ শতাংশ ডিএ বকেয়া আছে। কিন্তু সেই ডিএ মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার দিচ্ছে না। সেজন্য তারা আন্দোলনে নেমেছেন। একদিনের অনশন সেই আন্দোলনের অঙ্গ।
ছবি: Subrata Goswami/DW
৩৩টি সংগঠন মিলে
এই আন্দোলনে সামিল হয়েছে সরকারি কর্মীদের ৩৩টি সংগঠন। যৌথ সংগ্রামী মঞ্চ নাম দিয়ে তারা এই আন্দোলন করছে। শিক্ষকদের সংগঠনও এই বিক্ষোভে সামিল।
ছবি: Subrata Goswami/DW
শিক্ষক, ডাক্তার, নার্সরাও
সরকারি শিক্ষক, চিকিৎসক ও নার্সরা যোগ দিয়েছেন এই আন্দোলনে। এর আগে তারা আলাদাভাবে আন্দোলন করেছেন। কিন্তু এবার তারা সকলেই একমঞ্চে। অনেকদিন ধরে তারা আন্দোলন করছেন। কিন্তু এখনও তাতে লাভ হয়নি।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অবস্থান চলছে
গত ২৭ জানুয়ারি থেকে কলকাতার শহিদ মিনারের কাছে অবস্থান করছেন সরকারি কর্মীরা। এর মধ্যে একদিন দুই ঘণ্টার জন্য কর্মবিরতি করেছেন। একদিন অনশনও করেছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কর্মীদের বক্তব্য
সংগ্রামী মঞ্চের আহ্বায়ক ভাস্কর ঘোষ বলেছেন, সরকারের বিরুদ্ধে লড়াই করতে করতে দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে তখন এই ব্যবস্থা নিতে হয়। অনশনের পরেও সরকারের হুঁশ না হলে তখন বৃহত্তর আন্দোলনে নামতে হবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সরকারি দাবি খারিজ
নার্সদের সংগঠনের কর্মকর্তা ভাস্বতী মুখোপাধ্য়ায় দাবি করেছেন, সরকার বলছে তাদের কাছে টাকা নেই। কিন্তু ২০২০ সালে তারা বিধায়কদের বেতন দ্বিগুণ করেছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অবসরপ্রাপ্ত কর্মীও
অনশনে বসেছেন চেতলার অনিরুদ্ধ ভট্টাচার্যের মতো অনেক অবসরপ্রাপ্ত কর্মী। ২০১৬ সালে তারা স্টেট অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ ট্রাইবুন্যালে মামলা করে। সরকার ছয়বার হেরে যায়। তারপর তারা উচ্চআদালতের দ্বারস্থ হয়েছে। সেই মামলার শুনানি চলছে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
অনশনভঙ্গ
ফলের রস খেয়ে অনশনভঙ্গ করলেন সরকারি কর্মীরা। তবে তাদের আন্দোলন চলবে। আগামী ১৩ ফেব্রুয়ারি তারা কর্মবিরতির ডাক দিয়েছেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
সরকারের প্রতিক্রিয়া
সরকারি কর্মীদের এই অনশনের পর রাজ্যের মন্ত্রী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায় বলেন, সরকার কর্মীদের ডিএ মিটিয়ে দেবে। তার দাবি, আসলে কেন্দ্র রাজ্যের প্রচুর টাকা আটকে রেখেছে। সেসব পেয়ে গেলেই রাজ্য সরকার ডিএ মিটিয়ে দেবে।
ছবি: Subrata Goswami/DW
কর্মীরা হাতে পেতে চান
আন্দোলনরত কর্মীরা বলেছেন, রাজ্য সরকার অনেকবার তাদের ডিএ দেবে বলে জানিয়েও কিছু দেয়নি। তাই তারা আগে বর্ধিত ডিএ হাতে পাবেন, তারপর বিশ্বাস করবেন।
ছবি: Subrata Goswami/DW
11 ছবি1 | 11
ইতিমধ্যেই ইমেল করে তাদের দাবি মুখ্যসচিব ও রাজ্য নির্বাচন কমিশনারের কাছে পাঠিয়ে দিয়েছে কর্মী সংগঠন। বুধবার তারা সেই চিঠি দুজনের কাছে গিয়ে জমা দেবেন।
এর আগে ২০২২ সালে মে মাসে কলকাতা হাইকোর্ট রাজ্য সরকারি কর্মীদের ৩১ শতাংশ হারে ডিএ দেয়ার জন্য রাজ্য সরকারকে নির্দেশ দেয়। কিন্তু রাজ্য সরকারের দাবি, এই ডিএ দিতে গেলে তাদের ৪১ হাজার কোটি টাকার বেশি খরচ করতে হবে। তাদের হাতে সেই পরিমাণ অর্থ নেই। হাইকোর্টের নির্দেশের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টে গেছে রাজ্য সরকার।
আগামী ১৫ মার্চ সুপ্রিম কোর্টে মামলার পরবর্তী শুনানি। গত বছর ৫ ডিসেম্বর সুপ্রিম কোর্টে মামলাটি ওঠে। তখন ঠিক হয় ১৪ ডিসেম্বর শুনানি হবে। কিন্তু বিচারপতি দীপঙ্কর দত্ত মামলা থেকে সরে দাঁড়ানোয় আর শুনানি হয়নি। ঠিক হয় ১৬ জানুয়ারি শুনানি হবে। কিন্তু সেদিনও শুনানি হয়নি। এখন ১৫ মার্চ শুনানি হওয়ার কথা।
কংগ্রেস নেতা অধীর চৌধুরী এবিষয়ে ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন, ''সরকারি কর্মীদের দাবি ন্যায্য। রাজ্য সরকারের দ্রুত এবিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়া উচিত।''