ইলন মাস্কের স্পেসএক্সের পরীক্ষা অবশেষে সফল। টেক্সাসের বেস থেকে স্টারশিপের প্রটোটাইপের পরীক্ষা সফল হয়। পরপর চারবার ব্যর্থতার মুখ দেখার পর সাফল্য এলো। চারবারই রকেটে আগুন লেগে গেছিল।
লঞ্চ কম্যান্ডার ঘোষণা করেছেন, স্টারবেস ফ্লাইট কন্ট্রোল জানিয়েছে, স্টারশিপ ল্যান্ড করেছে। স্টারশিপের স্টেইনলেস স্টিলের রকেট এসএন১৫ গালফ অফ মেক্সিকোর ১০ কিলোমিটার উপরে উঠে তারপর ফিরে এসে ল্যান্ড করে। ছয় মিনিটের এই উড়ান সফল।
তবে ল্যান্ডিংয়ের পর বেস-এ ছোট আগুন ধরেছিল। তবে স্পেসএক্সেরব্যাখ্যা এটা একেবারেই কোনো অস্বাভাবিক বিষয় নয়। মিথেন ফুয়েলকে জ্বালানি হিসাবে ব্যবহার করা হচ্ছে। সেখানে এটা হতে পারে। ইঞ্জিনিয়াররা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন। তবে আগুন সঙ্গে সঙ্গে নিয়ন্ত্রণে আনা হয়।
স্পেসএক্সের প্রতিষ্ঠাতা ইলন মাস্ক টুইট করে বলেছেন, স্টারশিপের ল্যান্ডিং স্বাভাবিক ছিল।
ইলন মাস্ক সম্পর্কে অজানা কিছু তথ্য
টেসলা, স্পেসএক্স, পেপ্যাল, বোরিং কোম্পানি ইত্যাদি প্রতিষ্ঠা করেছেন ইলন মাস্ক৷ বর্তমানে তিনি বিশ্বের অন্যতম শীর্ষ ধনী৷
১৯৭১ সালের ২৮ জুন দক্ষিণ আফ্রিকার প্রিটোরিয়াতে ইলন মাস্কের জন্ম৷ বাবা-মায়ের বিচ্ছেদের পর হাইস্কুল শেষে মা আর ভাই-বোনকে নিয়ে ক্যানাডায় চলে যান মাস্ক৷ সেখানে অন্টারিও’র একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও পরে যুক্তরাষ্ট্রের পেনসিলভেনিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিদ্যা আর অর্থনীতিতে মাস্টার্স করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/H. Guerrero
শেষ করেননি শিক্ষাজীবন
স্নাতকোত্তর শেষে পিএইচডি’র জন্য যুক্তরাষ্ট্রের স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে সুযোগ পান৷ কিন্তু অর্থ উপার্জনের নেশায় পিএচইডি অধরা থেকে যায়৷ বর্তমানে উদ্যোক্তা হিসেবে বিশ্বের তরুণদের আইকন তিনি৷
ছবি: picture-alliance/AP/J. Raoux
প্রতিভাধর
মাত্র দশ বছর বয়সে কমোডর ভিআইসি-২০ কম্পিউটার ব্যবহার করতে গিয়ে কম্পিউটারের প্রতি আগ্রহ জন্মায়৷ শেখেন কম্পিউটার প্রোগ্রামিং৷ ১২ বছর বয়সে বেসিক প্রোগ্রামিং ল্যাঙ্গুয়েজ ব্যবহার করে ব্লাস্টার নামে একটি ভিডিও গেম তৈরি করে ৫০০ ডলারে পিসি অ্যান্ড অফিস টেকনোলজি ম্যাগাজিনের কাছে বিক্রি করে দেন৷
ছবি: Ringo H.W. Chiu/AP Photo/picture alliance
জিপ-টু
উদ্যোক্তা হিসেবে ভাইকে সাথে নিয়ে তিনি জিপ-টু নামে একটি সফটওয়্যার কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেন৷ ১৯৯৫ সালে এর পথচলা শুরু হলেও সফল হতে সময় লেগেছিল৷ সেসময় অ্যাপার্টমেন্টে থাকার খরচ না থাকায় অফিসেই ঘুমাতেন৷ ১৯৯৯ সালে কমপ্যাক কোম্পানির কাছে ২২ মিলিয়ন ডলারে জিপ-টু বিক্রি করেন তিনি৷
ছবি: Patrick Pleul/dpa/picture alliance
পেপ্যাল
পেপ্যাল নামের টাকা লেনদেনের একটি ডিজিটাল সার্ভিস চালু করে তিনি সাফল্যের শীর্ষে পৌঁছে যান৷ ১৯৯৯ সালে তিনি এক্স.কম নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যা পরে পেপ্যালের সাথে একত্রিত হয়৷ ২০০২ সালে ই-বে’র কাছে পেপ্যাল ১.৫ বিলিয়ন ডলারে বিক্রি করে দেন৷ এই বিক্রি থেকে তার লাভ থাকে ১৬৫ মিলিয়ন ডলার৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/P. Sakuma
স্পেস এক্সের মঙ্গল অভিযান
রকেট নির্মাণপ্রতিষ্ঠান স্পেসএক্স৷ গত ফেব্রুয়ারিতে স্পেসএক্সের তৈরি রকেট ফ্যালকন হেভির সফল উৎক্ষেপণের পর তুমুল আলোচিত হন মাস্ক৷ স্পেসএক্স থেকে ফ্যালকন ১ নামের রকেটটি উৎক্ষেপণ করতে গিয়ে বারবার ব্যর্থ হয়েছিলেন কিন্তু হাল ছাড়েননি৷ ২০৫০ সালের মধ্যে মঙ্গলে একটি পরিপূর্ণ শহর স্থাপনের পরিকল্পনা মাস্কের৷
ছবি: Gene Blevins/REUTERS
টেসলা
২০০৩ সালে যখন এই কোম্পানি প্রতিষ্ঠিত হয়, তখন এর সাথে ছিলেন না মাস্ক৷ পরবর্তীতে ২০০৪ সালে ইলন মাস্ক বোর্ড অফ ডিরেক্টরসে যোগ দিলে কোম্পানিতে আমূল পরিবর্তন আসে৷ বর্তমানে বৈদ্যুতিক গাড়ি প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানটি র প্রধান নির্বাহী এবং পণ্য প্রকৌশলী তিনি৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS/Tesla Motors
দ্য বোরিং কোম্পানি
২০১২ সালে এই হাইপারলুপ প্রযুক্তির দৈনন্দিন ব্যবহারে সর্বপ্রথম আগ্রহ দেখান ইলন মাস্ক৷ হাইপারলুপ-এর জন্য সুরঙ্গ খুঁড়তে তিনি ‘দ্য বোরিং কোম্পানি’ নামক একটি কোম্পানি প্রতিষ্ঠা করেছেন৷ সম্প্রতি ঘণ্টায় এক হাজার কিলোমিটার গতিবেগে চলা হাইপারলুপের প্রথম পরীক্ষা সফল হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP Images/R. Beck
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট
বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠিয়েছে ইলন মাস্কের কোম্পানি স্পেস এক্স৷ স্পেস-এক্স-এর সবচেয়ে আধুনিক ফ্যালকন রকেটের মাধ্যমে ২০১৮ সালের মে মাসে বঙ্গবন্ধু-১ টেলিকম স্যাটেলাইট মহাকাশে পাঠানো হয়৷
ছবি: picture-alliance/AP/R. Huber/O. Sentinel
নিউরালিঙ্ক
২০১৬ সালে মাস্কের প্রতিষ্ঠিত এই কোম্পানিটি সম্প্রতি একটি ব্রেইন-মেশিন ইন্টারফেস প্রকাশ করেছে, যা মানুষের মস্তিষ্কের সাথে কম্পিউটার ও মোবাইল ফোন যুক্ত করবে৷
ছবি: Patrick Pleul/dpa/picture alliance
বেতন
কোম্পানির সিইও হিসেবে বছরে বেতন নেন মাত্র এক ডলার৷ নিজের অংশীদারিত্ব থাকা বিভিন্ন কোম্পানি থেকে প্রাপ্ত লভ্যাংশসহ আরো কিছু সুবিধা পান মাস্ক, যার বেশিরভাগই আসে টেসলা থেকে৷ বছরে ১ ডলার বেতন নেয়াটা আসলে সিলিকন ভ্যালির একটা ট্রেন্ড৷
বিতর্কের জন্ম দিতে ভালোবাসেন মাস্ক৷ টুইটারে নানা বিতর্কিত টুইট করেন৷ নিজের প্রতিষ্ঠানের সহযোগীদের সাথে দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন নানা সময়৷ একবার কমেডিয়ান জো রোগান-এর সঙ্গে অংশ নেওয়া এক পডকাস্টে সরাসরি সম্প্রচারের সময় গাঁজা সেবন করেছিলেন৷
ছবি: YouTube/PowerfulJRE
12 ছবি1 | 12
গত মাসে নাসা স্পেসএক্সের সঙ্গে ৩০০ কোটি ডলারের চুক্তি করেছে। তারা স্পেসএক্সের স্টারশিপ করে চাঁদে মহাকাশচারীদের পাঠাবে।
মাস্ক চাইছেন, সৌরমণ্ডলের বিভিন্ন গ্রহে যাওয়ার জন্য সুপার হেভি রকেটে করে স্টারশিপকে পাঠাতে। সেই রকেট আবার ব্যবহার করা যাবে। তিনি চাঁদে ও মঙ্গলে মানুষও পাঠাতে চান। মঙ্গলে কলোনি তৈরি করতে চান। চাঁদে একটি লুনার স্টেশনও তৈরি করবেন তিনি।