রাজনৈতিক সংকটের অবসান
৬ জুলাই ২০১৮শরণার্থী সংক্রান্ত নীতি নিয়ে জার্মানির রক্ষণশীল ইউনিয়ন শিবিরের দুই দলের মধ্যে বিবাদ এমন সর্বনাশা রূপ নিয়েছিল, যার ফলে চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল, বর্তমান জোট সরকার ও ইউনিয়ন শিবিরের অস্তিত্ব প্রশ্নের মুখে পড়েছিল৷ বৃহস্পতিবার জোট সরকারের ৩ শরিক দল আলোচনার মাধ্যমে সব অনিশ্চয়তা দূর করে শরণার্থী ও অভিবাসনের প্রশ্নে ঐকমত্যে এসেছে৷ গ্রীষ্মকালীন বিরতির আগে এমন সুখবরের ফলে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলতে পারছেন আঙ্গেলা ম্যার্কেল৷
শুধু বাভেরিয়া নয়, জার্মানির সীমান্ত বরাবর সার্বিকভাবে বেআইনি অভিবাসন রুখতে একাধিক পদক্ষেপ নিতে চলেছে জার্মানির সরকার৷ বিশেষ করে যেসব শরণার্থীর জার্মানিতে আশ্রয় পাবার কোনো সম্ভাবনা নেই, তাঁদের দ্রুত বহিষ্কার করতে আরও দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া হবে৷ সেইসঙ্গে এসপিডি দল অভিবাসন সংক্রান্ত একটি আইন প্রণয়নের দাবি মেটাতে বাকি দুই শরিকের সম্মতি আদায় করতে পেরেছে৷ চলতি বছরেই আইনের খসড়া প্রস্তুত করার লক্ষ্যমাত্রা স্থির করা হয়েছে৷ এর আওতায় জার্মানির চাহিদা অনুযায়ী কিছু ক্ষেত্রে দক্ষ বিদেশি কর্মীদের অভিবাসন তরান্বিত করা হবে৷
তবে জার্মানির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও বাভেরিয়ার সিএসইউ দলের নেতা হর্স্ট সেহোফার বাভেরিয়া সীমান্ত থেকে অবৈধ শরণার্থীদের বিদায় করতে যে ‘ট্রানজিট সেন্টার' গড়ে তোলার দাবি করেছিলেন, সেই প্রক্রিয়ায় কিছু কাটছাঁট করা হয়েছে৷ প্রথমত, ইউরোপীয় ইউনিয়নের অন্য কোনো দেশে রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করলে তবেই কোনো শরণার্থীকে সীমান্ত থেকে বিদায় করার চেষ্টা করা হবে৷ তবে জার্মানির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির আওতায় তাকে ফেরত পাঠানো হবে৷ বৃহস্পতিবারের আলোচনায় এসপিডি দল স্পষ্ট করে দিয়েছিল যে, জার্মানি একক উদ্যোগে কোনো পদক্ষেপ নিতে পারবে না৷ আলাদা করে ‘ট্রানজিট সেন্টার' না গড়ে সীমান্তের কাছে জার্মান ফেডারেল পুলিশ বাহিনীর কেন্দ্রগুলিতেই বর্তমান আইন মেনে ধৃত ব্যক্তিদের ৪৮ ঘণ্টা পর্যন্ত আটক রাখা যেতে পারে৷ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে সেহোফারকেই ইটালি ও গ্রিসের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তি স্বাক্ষরের প্রচেষ্টা চালাতে হবে৷ এই দুই দেশ হয়েই বেশিরভাগ শরণার্থী বাভেরিয়া সীমান্তে পৌঁছায়৷ তবে এই মুহূর্তে তাঁদের সংখ্যা মাত্র দেড়শ'র মতো৷
নিজের দাবি পুরোপুরি পূরণ না হওয়া সত্ত্বেও সরকারি জোটের এমন সিদ্ধান্তের ফলে অভিভূত সেহোফার৷ তিনিই গত কয়েক সপ্তাহ ধরে চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের উপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করে চলেছিলেন৷ বৃহস্পতিবারের সিদ্ধান্তের পর তিনি বলেন, দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী হিসেবে এর থেকে বেশি কিছু চাওয়ার থাকতে পারে না৷ এত কম সংখ্যক অবৈধ শরণার্থীকে বিদায় করার দাবিতে এমন তীব্র বিবাদের প্রয়োজনীয়তা নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, সংখ্যা নয় – সীমান্তে আইনি শাসন কায়েম করাই তাঁর মূল উদ্দেশ্য ছিল৷
জার্মানির সরকার শেষ পর্যন্ত ঐকমত্যে পৌঁছলেও ইউরোপীয় ইউনিয়নের অনেক দেশ জার্মানির সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক চুক্তির বিষয়ে আগ্রহী নয়৷ বার্লিন সফরে এসে হাঙ্গেরির প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর ওরবান শরণার্থী ফিরিয়ে নিতে অস্বীকার করেছেন৷
ভিয়েনায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সেহোফারের সঙ্গে আলোচনার পরঅস্ট্রিয়ার চ্যান্সেলর সেবাস্টিয়ান কুয়র্ৎসও এ বিষয়ে অনীহা দেখিয়েছে৷ ইটালি আগেই এমন সম্ভাবনা উড়িয়ে দিয়েছিল৷ ইইউ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীদের আসন্ন বৈঠকে সেহোফার তাঁর প্রচেষ্টা জারি রাখবেন বলে ধরে নেওয়া হচ্ছে৷