পশ্চিমবঙ্গে সংসদীয় ভোটের আগে ৮ জন আধিকারিককে বদলি করার নির্দেশ মানতে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অস্বীকার করায় রাজ্যে ভোট স্থগিত রাখার মত পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল৷ শেষ পর্যন্ত রাজ্য সরকার নির্দেশিকা মেনে নিতে বাধ্য হন৷
বিজ্ঞাপন
গত সোমবার দিল্লির নির্বাচন কমিশনের ফুল বেঞ্চ বৈঠকের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রাজ্য সরকারকে চিঠি পাঠিয়ে কড়া বার্তা দেয়া হয় যে, মঙ্গলবার ৮ই এপ্রিলের মধ্যে সংশ্লিষ্ট আটজন আধিকারিককে বদলি করার নির্দেশ কার্যকর করা না হলে পশ্চিমবঙ্গে ভোট স্থগিত রাখা হতে পারে৷ পক্ষপাতিত্ব এবং নির্বাচনি বিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ওঠায় পশ্চিমবঙ্গে লোকসভা ভোটের আগে রাজ্যের আটজন আধিকারিককে বদলি করার নির্দেশ দেন কেন্দ্রীয় নির্বাচন কমিশন৷ সুষ্ঠু ও দুর্নীতিমুক্ত ভোটের জন্য এটা জরুরি৷ এই আট জন আধিকারিকের মধ্যে আছেন পাঁচজন জেলা পুলিশ সুপার, একজন জেলা শাসক এবং দুইজন অতিরিক্ত জেলা শাসক৷ শেষ পর্যন্ত মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় কমিশনের নির্দেশ মেনে নিতে বাধ্য হন৷
ভারতের নির্বাচন ২০১৪
ভারতে একমাসেরও বেশি সময় ধরে নয় দফায় ভোটগ্রহণ হবে৷ ৭ এপ্রিল থেকে ১২ মে পর্যন্ত চলবে ভোট গ্রহণ৷ ভোট গণনা হবে ১৬ মে৷ ৮০ কোটি ভোটার এই নির্বাচনে অংশ নেবেন৷
ছবি: DW/A. Chatterjee
জনগণের সরকার
ভারতের সংসদের মেয়াদ পাঁচ বছর৷ পার্লামেন্টে দুটি কক্ষ রয়েছে৷ উচ্চকক্ষকে বলা হয় রাজ্যসভা আর নিম্নকক্ষ লোকসভা হিসেবে পরিচিত৷ নিম্নকক্ষে যে দল বা জোট সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায় তারাই দেশের পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন করে৷
ছবি: AP
দৌড়ে এগিয়ে
সাম্প্রতিক জরিপে দেখা যাচ্ছে গুজরাটের মুখ্যমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী পরবর্তী প্রধানমন্ত্রী হওয়ার ক্ষেত্রে অনেকটাই এগিয়ে৷ তবে তিনি যদি প্রধানমন্ত্রী হন তাহলে যুক্তরাষ্ট্রকে ভারতের সাথে সম্পর্ক উন্নয়নের পথটা নতুনভাবে বিবেচনা করতে হবে৷ কেননা ২০০২ সালে গুজরাটে দাঙ্গার কারণে যুক্তরাষ্ট্র নরেন্দ্র মোদীকে বয়কট করেছে৷
ছবি: Reuters
কংগ্রেস নেতা
দীর্ঘ সময় ধরে কংগ্রেসের হাল ধরা সোনিয়া গান্ধী এবার দলের দায়িত্বের বোঝা তুলে দিয়েছেন নিজ পুত্র রাহুল গান্ধীর কাঁধে৷ ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রীর প্রপৌত্র, প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী পৌত্র এবং সবচেয়ে কমবয়সি প্রধানমন্ত্রীর ছেলে রাহুল৷ কিন্তু গত ১০ বছর ধরে রাজনীতির সাথে সংশ্লিষ্ট থেকেও সেখানে বড় কোনো ভূমিকা রাখতে পারছেন না তিনি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
দুর্নীতি বিরোধী নেতা
২০১৩ সালের ডিসেম্বরে দিল্লির রাজ্যসভা নির্বাচনে অভিষেক হয় দুর্নীতি বিরোধী দল আম আদমি পার্টির প্রধান অরবিন্দ কেজরিওয়ালের৷ নির্বাচনে বিপুল ভোটে জয়ী হয়ে দিল্লির মুখ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব নিয়েছিলেন তিনি৷ কিন্তু মাত্র ৪৯ দিনের মাথায় পদত্যাগ করেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘কিং মেকার’ দল
বামপন্থি চারটি দল এবং সাতটি আঞ্চলিক দল মিলে থার্ড ফ্রন্ট গঠন করেছে, যা বিজেপি এবং কংগ্রেসের জন্য বিরাট চ্যালেঞ্জ৷ লোকসভায় এখনই তাদের আধিপত্য আছে৷ ঝুলন্ত পার্লামেন্টের সম্ভাবনা থাকলে তারা হয়ে উঠতে পারে ‘কিং মেকার’৷ অর্থাৎ তারা যে দল সমর্থন করবে তারাই গঠন করবে সরকার৷
ছবি: Sajjad HussainAFP/Getty Images
সামাজিক গণমাধ্যমের ভূমিকা
এ বছর নির্বাচনে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বড় ভূমিকা রয়েছে৷ এটিকে নির্বাচনি হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করতে কোনো দলই পিছিয়ে নেই৷ এ বছর প্রথম ভোট দেবেন এমন মানুষের সংখ্যা ১০ কোটি৷ এদের মধ্যে ৪০ ভাগ শহরে বাস করে, যারা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যাপক সক্রিয়৷ ফলে নতুন এই প্রজন্ম এবারের নির্বাচনে একটা বড় ভূমিকা রাখছে৷
মেশিনের মাধ্যমে ভোট
লোকসভার ৫৪৫ টি আসনের প্রতিনিধি নির্বাচনে ভারতের মানুষ ভোট দেবেন ৫ সপ্তাহ ধরে৷ ইলেকট্রনিক মেশিন পদ্ধতিতে ভোট গ্রহণ চলবে৷ ফলাফল জানা যাবে ১৬ মে৷
ছবি: AP
সংখ্যালঘুদের উপর নির্ভরশীলতা
ভারতে ১৩ শতাংশ ভোটদাতা মুসলিম৷ ১০০টি সংসদীয় কেন্দ্রে ১৫-২০ শতাংশ, ৩৫টি কেন্দ্রে ৩০ শতাংশ এবং ৩৮টি আসনে মুসলিম ভোটদাতাদের সংখ্যা ২০ থেকে ৩০ শতাংশের মতো৷ কাজেই আসন্ন সাধারণ নির্বাচনে মুসলিম ভোটবাক্স নির্ণায়ক ভূমিকা নিতে পারে বলে মনে করছেন ভোট বিশেষজ্ঞরা৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘নমো’ উন্মাদনা
যখন থেকে বিজেপি নরেন্দ্র মোদীকে (নমো) তাদের সম্ভাব্য প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তুলে ধরার সিদ্ধান্ত নেয়; তখন থেকেই সে দেশের গণমাধ্যমের একটি বড় অংশ হিন্দুত্ববাদী রাজনীতির ব্র্যান্ড হিসেবে ‘নমোকে’ তুলে ধরার উদ্যোগ নেয়৷ বিজেপির প্রচার-কুশীলবদের রি-ব্র্যান্ডিং অভিযানের তোড়ে নৈতিকতার প্রশ্নগুলো হাওয়ায় মিলিয়ে গেছে৷
ছবি: Sam Panthaky/AFP/Getty Images
9 ছবি1 | 9
এর আগে রাজ্য সরকারের কাছে এই নির্দেশ পৌঁছোবার পর তেলে বেগুনে জ্বলে ওঠেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ নির্বাচন কমিশনের এই নির্দেশকে বিরোধী দলগুলি এবং নির্বাচন কমিশনের চক্রান্ত বলে অভিহিত করে বলেন, কোনোমতেই এই নির্দেশ মানা সম্ভব নয় যেহেতু রাজ্য সরকারের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনোরকম পরামর্শ করা হয়নি৷ এই নির্দেশ মানতে গেলে রাজ্যে ভোটের সময় আইন শৃঙ্খলা বজায় রাখার সমস্যা হবে৷ তার জন্য রাজ্য সরকার দায়ী থাকবে না৷ চক্রান্তের অভিযোগ করায় মমতাকে কারণ দর্শাবার নোটিস জারি করার দাবি জানায় বিরোধী দল বিজেপি৷
এই ইস্যু নিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় এবং নির্বাচন কমিশনের সংঘাত ওঠে চরমে৷ প্রসঙ্গত উল্লেখ করা যেতে পারে, গত বছর জুলাই মাসে পশ্চিমবঙ্গের পঞ্চায়েত নির্বাচন নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার মীরা পান্ডের সঙ্গে বিরোধে জড়িয়ে পড়েছিলেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়৷ সেই বিরোধ গড়িয়েছিল সুপ্রিম কোর্ট পর্যন্ত৷ সেখানেও মমতাকে মাথা নত করতে হয়েছিল৷ সংবিধান বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, প্রতিবার নির্বাচন কমিশনের মত এক সাংবিধানিক সংস্থাকে চ্যালেঞ্জ করা যায়না৷ সুষ্ঠু ও পক্ষপাতহীন ভোট পরিচালনার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের নির্দেশ অমান্য করতে পারেনা কোনো রাজ্য সরকার৷ মমতার বক্তব্য নিয়ে রাজ্য নির্বাচন কমিশনার কোনো মন্তব্য না করে স্রেফ বলেন, জনপ্রতিনিধিত্ব আইনের ২৮এ ধারা অনুযায়ী গত ৫ই মার্চ গোটা দেশে নির্বাচনি বিজ্ঞপ্তি জারির পর রাজ্য পুলিশের ডায়রেক্টর-জেনারেল থেকে পুলিশের কনস্টেবল পর্যন্ত সবাই নির্বাচন কমিশনের অধীনে৷ উল্লেখ্য, উত্তরপ্রদেশেও একই অভিযোগে পুলিশ ও প্রশাসনের ২৯ জন কর্তাব্যক্তিকে সরিয়ে দেয়া হয়৷
রাজ্যে বামফ্রন্ট জমানায় একই ধরনের সংঘাত সৃষ্টি হয়েছিল প্রয়াত মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসুর সঙ্গে তৎকালীন নির্বাচন কমিশনার টি এন শেষনের৷