1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

অবসরের বয়স বাড়ে অর্থহীনতায়

৪ সেপ্টেম্বর ২০২০

অর্থ নেই৷ কিন্তু কাজ আছে৷ নিয়োগ নেই৷ কিন্তু অবসরের বয়স বৃদ্ধি আছে৷ এক অদ্ভুত সমীকরণে চলছে অবসর নিতে না চাওয়া একটি জাতি৷

ছবি: Getty Images/AFP/S. Hussain

কত বছর বয়সে পেশাদার জীবন থেকে অবসর নেওয়া উচিত? এ প্রশ্নের গ্রহণযোগ্য উত্তর খুঁজে পাওয়া মুশকিল৷ তবে ভারতীয়দের ক্ষেত্রে একটি কথা বহুল প্রচলিত৷ ভারতীয়রাই ভারতীয়দের নিয়ে এই রসিকতা করে৷ মৃত্যু না হলে অথবা তাড়িয়ে না দিলে ভারতের মানুষ স্বেচ্ছায় অবসর নিতে চান না৷ তা সে সৌরভ গঙ্গোপাধ্যায়ই হোক, পাড়ার ফটিকদা অথবা লালকৃষ্ণ আডবাণী৷ বছরখানেক খানিক শান্ত হলেও নব্বই পেরিয়েও বিজেপি নেতা আডবাণী রাজনীতিতে পুরো দস্তুর ব্যাটিং করে গিয়েছেন৷ গ্রেগ চ্যাপেলের গলা ধাক্কায় কার্যত চুপিসারে ক্রিকেট থেকে বিদায় নিতে হয়েছে সৌরভকে৷ অথচ অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডাম গিলক্রিস্টকে কিন্তু সেই গলাধাক্কা খেতে হয়নি৷ ক্যারিয়ারের সেরা সময়ে অবসর ঘোষণা করে রাজার মতো আন্তর্জাতিক ক্রিকেট মঞ্চ থেকে বিদায় নিয়েছিলেন৷

অভিনয়, খেলা এবং রাজনীতি আর পাঁচটা পেশার মতো নয়৷ কিন্তু মানুষের মনোভাব একইরকম৷ সকলে সুচিত্রা সেন নন৷ ক্যারিয়ারের মধ্যগগনে অবসর নিয়ে সম্পূর্ণ আড়ালে চলে গিয়েছিলেন সুচিত্রা৷ অমিতাভ এখনও চালিয়ে যাচ্ছেন৷ বলিউডে এখনও কেবল তাঁর বয়স মাথায় রেখেই নতুন নতুন চিত্রনাট্য তৈরি হচ্ছে৷ কারণ পরিচালক এবং প্রযোজকরা জানেন, দর্শক নতুন মুখ গ্রহণ করতে সময় নেন৷ বুড়ো ঘোড়া এখনও ব্যবসা দেয়৷

পশ্চিমবঙ্গের বিভিন্ন পেশায় বুড়ো ঘোড়ারাই ব্যবসা দিয়ে যাচ্ছেন৷ কারণ তরুণ তুর্কিদের চাকরি দেওয়ার পয়সা নেই৷ দুম করে সর্বভারতীয় স্তর থেকে পশ্চিমবঙ্গে নেমে আসার কারণ, পেশাদার দুনিয়ায় অবসরের বয়স কেন্দ্রীয় স্তরে এক, রাজ্য স্তরে আরেক রকম৷ শিক্ষকতা, কেরানিগিরি, কলমচি, সাংবাদিকতা বাসে কন্ডাক্টরি ইত্যাদি নানাবিধ পেশার সঙ্গে অভিনয়, সিনেমা, খেলা আর ওকালতির তফাত হলো, ওই সব ক্ষেত্রে অবসর স্বেচ্ছায় নেওয়া যায় না, সরকার বা বেসরকারি প্রতিষ্ঠান সময় নির্দিষ্ট করে দেয়৷ যাঁদের সেই চাপ নেই, তাঁরা মৃত্যুর আগের দিন পর্যন্ত কাজ করে যাচ্ছেন৷ আর যাঁদের হাত পা বাঁধা, তাঁরা অবসরের বয়স বৃদ্ধির জন্য আন্দোলন করে মরছেন৷

কেন্দ্রীয় সরকারের চাকরির সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গ সরকারের চাকরির অনেক তফাত৷ বেতনে তফাত, অবসরের বয়সেও তফাত৷ তবে সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ সরকার বিভিন্ন পেশায় অবসরের বয়স বাড়াতে শুরু করেছে৷ বিশেষ করে শিক্ষাক্ষেত্রে৷ এই আলোচনায় শিক্ষাকেই আলোচনার একক হিসেবে ধরে নিয়ে এগনো যাক৷ বাকি পেশার অবস্থা এর থেকেই বুঝে নেবেন পাঠক৷

এক সময় পশ্চিমবঙ্গের শিক্ষকদের অবসরের বয়স ছিল ৬০৷ কেন্দ্রে বহু দিন ধরেই ৬৫৷ স্বাভাবিক ভাবেই মানসিক ভাবে অবসর নিতে না চাওয়া একটি জাতি ক্লাস ফাঁকি দিয়ে দীর্ঘ দিন ধরে অবসরের বয়স বাড়ানোর আন্দোলন করেছেন৷ মঞ্জুরও হয়েছে৷ বছরকয়েক আগে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অবসরের বয়স বাড়িয়ে করা হয় ৬২৷ তারপর ফের এক লাফে ৬৫৷ এতে সরকার বাহবা পেয়েছে৷ কিন্তু কেঁচোর সঙ্গে কেউটেও বেড়িয়ে পড়েছে৷ গত এক দশকে রাজ্যের কলেজ গুলিতে নিয়োগ প্রক্রিয়া প্রায় স্তব্ধ হয়েছিল৷ মাঝে সামান্য কিছু নিয়োগ হলেও, ফের তা থমকে গিয়েছে৷ ২০১৮ সালে কলেজ সার্ভিস কমিশনের পরীক্ষায় যাঁদের নাম উঠেছিল, এখনও তাঁদের প্যানেল থেকে নিয়োগ শুরু হয়নি৷ করোনার দোহাই অবশ্য এ ক্ষেত্রে আছে৷ কিন্তু তার আগে, ২০০৭-০৮ থেকে ’১৪-’১৫ পর্যন্ত কী কী সমস্যা ছিল? তা নিয়ে বিশেষ কেউ আলোচনা করেন না৷

সমস্যা একটাই৷ অর্থ৷ হিসেব বলছে, পশ্চিমবঙ্গে কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রায় ৩৫ শতাংশ আসন এখন খালি৷ কিন্তু সেই জায়গায় শিক্ষক নিয়োগ করা যায় না পয়সার অভাবে৷ পার্শ্ব শিক্ষক, কন্ট্র্যাকচুয়াল শিক্ষক, আধা শিক্ষকদের দিয়ে কাজ চালানো হচ্ছে৷ তারা কাজ করছেন পূর্ণ শিক্ষকের কিন্তু বেতন মিলছে দশ ভাগের এক ভাগ৷ সরকারকেও এই সব আধা শিক্ষকদের দায়িত্ব নিতে হচ্ছে না৷ অনেকটা চৈত্র সংক্রান্তির ৫০ শতাংশ সেলের মত পরিশ্রম বিক্রি করে চলেছেন তারা। উপায় কী? সরকার নতুন চাকরি দিচ্ছে না যে৷ আর প্রবীণ যে শিক্ষকরা পূর্ণ শিক্ষকের কাজ করছেন, সরকার তাঁদের কুমির ছানার স্টেটাস দিয়েছেন৷ প্রয়োজন হলেই গর্ত থেকে একই কুমির বহুবার বার করা হয়৷ এ ভাবেই এক আশ্চর্য অসম ভারসাম্য তৈরি করা হয়েছে৷ সমস্যা রয়েছে আরও৷ অবসর নেওয়ার সময় পূর্ণ শিক্ষকদের পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে দিতে হয়৷ সরকার হিসেব করে দেখেছে, পাঁচ বছর ধরে বেতন দিতে যে খরচ, একবারে পাওনাগণ্ডা মিটিয়ে দিতে তার চেয়ে ঢের বেশি খরচ৷ সুতরাং, অবসর নিতে না চাওয়া একটি জাতিকে খুড়োরকলে যদ্দিন ঝুলিয়ে রাখা যায়, তদ্দিনই ভালো৷ রাজকোষে টান পড়ে না৷

স্যমন্তক ঘোষ, ডয়চে ভেলেছবি: privat

বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলির অবস্থা ঠিক বিপরীত৷ অধিকাংশ জায়গাতেই অবসরের বয়স ৬০ থেকে কমিয়ে ৫৮ করা হয়েছে৷ বস্তুত অধিকাংশ বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ৫৮ পর্যন্তও ভাবতে রাজি নয়৷ পুরোটাই চলছে কনট্র্যাক্টে৷ এক বছর বা দুই বছরের কনট্র্যাক্ট৷ সময় হলে রিনিউ হয় অথবা হয় না৷ আবার একটা উদাহরণ দেওয়া যাক৷ ২০০৫-০৬ সাল নাগাদ ভারতে ইনফরমেশন টেকনোলজির বাজারে জোয়ার এসেছিল৷ বহু আন্তর্জাতিক এবং জাতীয় সংস্থা লাখ লাখ ছেলেমেয়েকে বিপুল টাকায় চাকরি দিয়েছিল৷ ১০-১৫ বছর পর সেই ছেলেমেয়েরা যখন পেশার মধ্য গগনে পৌঁছলেন, আইটি বুম ততদিনে অস্তমিত৷ আইটি কোম্পানিগুলো ধীরে ধীরে তাঁদের তাড়াতে শুরু করল৷ অথচ ৬০ বছর পর্যন্ত কাজ আছে, এটা ধরে নিয়ে ওই পেশাদাররা ততদিনে বাড়ি, গাড়ির গুচ্ছ টাকা লোন নিয়ে ফেলেছেন৷ জীবনযাপন তারকাখচিত৷ বেঙ্গালুরুতে এমনই এক কমিউনিটির নাম হাইপ্রোফাইল বেকার৷ কর্মহীন নেশারুতে পরিণত হয়েছেন অসংখ্য মানুষ৷ সংস্থাগুলি আসলে নীতি বদলে ফেলেছে৷ মাঝ বয়সের বেশি টাকার কর্মীর চেয়ে কম বয়সী কম বেতনের দুইজন কর্মী ভালো৷ মিড কেরিয়ারে পৌঁছনো ওই সব বেকারের অনেকেরই এখনও চাকরি হয়নি৷ কেউ কেউ ভিন্ন ব্যবসা বা কাজে ঢুকতে পেরেছেন অনেক কম বেতনে৷ শুধু আইটি শিল্প নয়, সাংবাদিকতা থেকে বেসরকারি বিদ্যুৎ সংস্থা-- সর্বত্রই ছবিটি কম-বেশি এক৷

যে দেশে কাজেরই নিশ্চয়তা নেই, সেখানে অবসরের বয়স নিয়ে আলোচনা অন্ধের হস্তিদর্শনের সমান৷ আগে কাজ, তারপর তো অবসর৷ দেশের আবহাওয়ায় অনিশ্চয়তা৷ হয়তো সে কারণেই গিলক্রিস্টের মতো সৌরভ অবসর নিতে পারেন না৷ এ দেশের মানুষের জল হাওয়াতেই যে কাজ হারানোর অনিশ্চয়তা!

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য
স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ