পার্সেল বা অন্য কোনো বাক্সের মধ্যে মোড়কসহ কতরকম উপকরণই পাওয়া যায়৷ প্যাকেজিং-এর এই সব মালমশলা দিয়ে ওলন্দাজ এক শিল্পী অপূর্ব শিল্পকর্ম সৃষ্টি করছেন৷ সেইসঙ্গে চলছে ফটোগ্রাফি৷
বিজ্ঞাপন
বাবল ব়্যাপ দিয়ে তৈরি ড্রেস, কম্পিউটারের মনিটরের আবরণ দিয়ে তৈরি মাথা ঢাকার কাপড় – এগুলি কি প্রাচীন মাস্টারপিস, নাকি আধুনিক শিল্প?
সুসান ইয়োংমান্স-এর শিল্পকর্মের উপাদান হলো প্যাকেজিং সামগ্রী৷ নেদারল্যান্ডসের ব্রেডা শহরে নিজের স্টুডিওতে এই শিল্পী প্যাকেজিং-এর জন্য প্রয়োজনীয় যাবতীয় বস্তু মজুত করে রাখেন৷ তাঁর মতে, এই সব উপাদান আরও অনেক টেকসই পদ্ধতিতে ব্যবহার করা উচিত৷
শিল্পীর মনে নানা আইডিয়া ঘোরাফেরা করে৷ তিনি বলেন, ‘‘এটা দেখলেই মনে হয় হেডস্কার্ফ হতে পারে৷ আর এটা জামার হাত হতে পারে৷ এইটা দেখলে মনে হয় কারো মাথার উপর কলার হতে পারে৷ ঠিক এ রকম৷''
ডিজিটাল প্রযুক্তির মাধ্যমে বিখ্যাত শিল্পকর্ম উপস্থাপন
04:38
শিশু হিসেবেই সুসান বাবা-মার সংগ্রহে রাখা শিল্পের বই দেখে মুগ্ধ হতেন৷ আজও তিনি পঞ্চদশ ও ষোড়শ শতাব্দীর নেদারল্যান্ডসের শিল্পকর্ম থেকে প্রেরণা পান৷ বিশেষ করে রোখির ফান ডেয়ার ভাইডেন অথবা ইয়ান ফান আইক-এর ছবি তাঁকে নাড়া দেয়৷ সুসান কিন্তু সেই সব ছবির অবিকল নকল করেন না, বরং নতুন করে ব্যাখ্যা করেন৷
সেই কাজে স্টাইরোফোম বিডস অথবা স্বচ্ছ প্লাস্টিকের আবরণ ব্যবহার করেন তিনি৷ সুসান বলেন, ‘‘যাঁরা আমাকে প্রেরণা জুগিয়েছেন, আমি তাঁদের সঙ্গে সংলাপ চালাতে চাই৷ তা থেকে নিজস্ব কাহিনি সৃষ্টি করতে চাই৷ মূল চিত্রের মতো দেখতে হলেও আরও কাছ থেকে লক্ষ্য করলে বোঝা যাবে সেটি সমসাময়িক শিল্পকর্ম৷ অর্থাৎ কিছুটা একাল, কিছুটা সেকালের ছোঁয়া রয়েছে৷''
এবার ফটোশুট-এর পালা৷ মাথার পেছনে আলোকবৃত্ত হিসেবে স্টাইরোফোম বিডস ব্যবহার করা হচ্ছে৷ প্যাকিং বাক্সের ফাঁক ভরতে যা ব্যবহার করা হয়, সেগুলি দিয়ে গয়না তৈরি হয়েছে৷
শুটিং-এর সময় একটি মাত্র নিখুঁত ছবি তোলাই লক্ষ্য নয়৷ সুসান ইয়োংমান্স কয়েক'শ ছবি তোলেন৷ প্রত্যেকটির ফোকাস আলাদা, নানারকম খুঁটিনাটি বিষয় তাতে ফুটে ওঠে৷ সুসান ইয়োংমান্স মনে করেন, ‘‘বলতে গেলে এটা আমার চিত্রকর্ম৷ অনেক ছবি তুলে কম্পিউটারের মধ্যে সেগুলি একত্র করি৷ কোনো নির্দিষ্ট মুহূর্ত নয়, বরং প্রত্যেক ফ্রেমের সেরা অংশগুলি একত্র করি৷ একজন চিত্রকার যেমনটা করেন৷''
আমস্টারডাম থেকে প্রায় ১০০ কিলোমিটার দক্ষিণে ব্রেডা শহরে ৪১ বছর বয়সি এই শিল্পী সপরিবারে বসবাস করেন৷ শিল্প নিয়ে উচ্চশিক্ষার পর ২০০৭ সাল থেকে তিনি প্যাকেজিং-এর উপাদান নিয়ে কাজ করছেন৷ সুসান বিষয়টি ব্যাখ্যা করে বলেন, ‘‘আমি আসলে কোনো কিছুর খোঁজ করি না, বরং পেয়ে যাই বলা চলে৷ যেমন বাজারে ফল কিনতে গিয়ে কী পেয়েছি দেখুন৷ ফল খাবার পর আমি হয়তো এই মোড়ক দিয়ে কিছু একটা করবো৷''
সুসান ইয়োংমান্স-এর বড় ক্যানভাসের ফটোগ্রাফির দাম প্রায় ৫,০০০ ইউরো৷ আধুনিক এই সব মাস্টারপিস দেখিয়ে দিচ্ছে, কীভাবে প্লাস্টিক দিয়ে শিল্প সৃষ্টি করা সম্ভব৷
হেনড্রিক ভেলিং/এসবি
বিশ্বের দামি কিছু শিল্পকর্ম
বিখ্যাত শিল্পীদের আঁকা ছবি ও ভাষ্কর্যের জন্য সংগ্রাহকরা বিপুল পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে থাকেন – ৪০ কোটি ডলারের বেশি দাম ওঠাও আশ্চর্যের কিছু নয়৷ দেখুন ছবিঘরে৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
সালভাদর মুন্ডি
লিওনার্দো দা ভিঞ্চির আঁকা ২০টি অক্ষত ছবির একটি এটি৷ ধারণা করা হয়, ১৫০০ সালে এ ছবিটি আঁকা হয়৷ ১৯৫৮ সালে ছবিটিকে অনুলিপি ভেবে নিলামে মাত্র ৬০ মার্কিন ডলারে এটি বিক্রি হয়৷ যিশুখ্রিষ্টের এ ছবিটি ২০১৭ সালে ১০ কোটি মার্কিন ডলারে বিক্রি হবে ধারণা করা হলেও অজ্ঞাত এক ক্রেতা ৪৫ কোটি ডলার দিয়ে কেনেন এটি৷
ছবি: picture alliance/ZUMAPRESS/R.Tang
ইন্টারচেঞ্জ
ডাচ-অ্যামেরিকান শিল্পী উইলেম ডে কুনিং-এর আঁকা ইন্টারচেঞ্জ নামে একটি তৈলচিত্র ২০১৫ সালে ৩০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
তাস খেলায় মগ্ন
উত্তর অভিব্যাক্তিবাদ ঘরানার ফরাসি শিল্পী পল সেজানের আঁকা এ ছবিটির নাম ‘দ্যা কার্ড প্লেয়ার’৷ ২০১১ সালে ২৫ কোটি ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: picture-alliance/akg-images
‘যখন তুমি বিয়ে করবে’
এ ছবিটি আঁকা হয়েছিল ১৮৯২ সালে৷ শিল্পী ফ্রান্সের পল গগাঁ৷ ‘হোয়েন উইল ইউ মেরি’ শিরোনামের এ ছবিটির দাম ২১ কোটি ডলার৷
ছবি: picture-alliance/akg-images/E. Lessing
‘নাম্বার ১৭এ’
অ্যামেরিকান শিল্পী জ্যাকসন পোলোকের আঁকা ‘নাম্বার ১৭এ’ নামের একটি চিত্রকর্ম ২০১৫ সালে ২০ কোটি ডলারে বিক্রি হয়৷ উপরের ছবিটি পোলোকের আঁকা, যার নাম নাম্বার ৭৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিয়ের ছবি’
নেদারল্যান্ডসের বিখ্যাত মার্টেন ও ওপইয়েন এর ১৬৩৪ সালের অনুষ্ঠিত বিয়ের ছবি এটি৷ চিত্রকর ডাচ শিল্পী রেমব্রান্ট হারমেনসুন ফান রিন৷ ২০১৫ সালে বিক্রি হওয়া এ ছবিটির দাম পড়েছে ১৮ কোটি ডলার৷
ছবি: gemeinfrei/DW Montage
আলজিয়ার্সের মহিলারা
লেডি অব আলজিয়ার্স শিরোনামে ছবিটি স্পেনের জগদ্বিখ্যাত চিত্রকর পাবলো পিকাসোর ১৯৫৫ সালে আঁকা৷ নিলামে ছবিটির দাম উঠে ১৭ কোটি ৯৪ লাখ ডলারে৷
ছবি: Reuters
‘ন্যু কুশে’
ইটালির চিত্রকর আমেদেও মোদিগলিয়ানি এই ছবিটি আঁকেন ১৯১৭ সালে, তার মৃত্যুর তিন বছর আগে৷ ১৭কোটি চার লাখ ডলারে ২০১৫ সালে বিক্রি হয় ছবিটি৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
‘মাস্টারপিস’
অ্যামেরিকান পপ আর্টিস্ট রয় লিচটেনস্টাইনের ১৯৬২ সালে একেছিলেন বিখ্যাত এ ছবিটি৷ ২০১৭ সালে ১৬ কোটি ৫০ লাখ ডলারে ছবিটি বিক্রি হয়৷
ছবি: Dan Kitwood/Getty Images
লুসিয়ান ফ্রয়েডের তিনটি প্রতিকৃতি
আইরিশ চিত্রকর ফ্রান্সিস বেকন এই তিন খণ্ডের ছবিটি আঁকেন ১৯৬৯ সালে৷ ছবিতে যার আলেখ্য, তিনি হলেন ব্রিটিশ চিত্রকর লুসিয়ান ফ্রয়েড, পক্ষান্তরে মনস্তত্বের জনক সিগমুন্ড ফ্রয়েডের পৌত্র৷ ২০১৩ সালে ক্রিস্টি’স-এর নিলামে ছবিটির দাম ওঠে ১৪ কোটি ২৪ লাখ মার্কিন ডলার৷ রয়েছে মার্কিন শিল্পকলা সংগ্রাহক এলেইন ওয়াইনের সংগ্রহে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অঙ্গুলিনির্দেশ
সুইস ভাস্কর আলবের্তো জাকোমেত্তির সৃষ্টি এই মানুষ-সমান ব্রোঞ্জ মূর্তিটি নিউ ইয়র্কে ক্রিস্টি’স-এ নিলাম করা হয় ২০১৫ সালে, কেনেন স্টিভ কোহেন নামের এক হেজফান্ড ম্যানেজার৷ মূর্তিটি আজ বিশ্বের সবচেয়ে দামি ক্রয়যোগ্য ভাস্কর্য বলে গণ্য৷ এটি বিক্রি হয়েছেল ১৪ কোটি ১৩ লাখ মার্কিন ডলারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/V. Hatfield/Christies
সোনার আডেলে
অস্ট্রিয়ার চিত্রকর গুস্তাফ ক্লিম্ট আডেলে ব্লখ-বাউয়ারের এই প্রতিকৃতিটি আঁকেন ১৯০৭ সালে৷ ম্যানহ্যাটানের ‘নয়ে গ্যালেরি’ নামের সংগ্রহশালার জন্য ২০০৬ সালে ছবিটি কেনেন মার্কিন ব্যবসায়ী রোনাল্ড লডার৷ ছবিটি ১৩ কোটি ৫০ লাখ মার্কিন ডলারে কেনার ব্যবস্থা করে ক্রিস্টি’স সংস্থা৷
ছবি: AUSSCHNITT: picture-alliance/Heritage Images
চিৎকার
নরওয়েজীয় চিত্রকর এডভার্ড মুঞ্চ ‘চিৎকার’ ছবিটি এঁকেছেন একাধিক বার ৷ দা ভিঞ্চির মোনালিসা ও ফান গখ-এর সূর্যমুখি ফুলের পরেই মুঞ্চের এই ছবিটিকে বিশ্বের খ্যাততম চিত্রকর্ম বলে গণ্য করা হয়৷ ছবিটির প্যাস্টেল রঙে আঁকা এই সংস্করণ নিলাম করা হয় ২০১২ সালে, নিউ ইয়র্কের সথেবি সংস্থায়৷ মার্কিন শিল্পপতি লিয়ন ব্ল্যাক ১১ কোটি ৯৯ লাখ মার্কিন ডলারে কিনেন এটি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নগ্নমূর্তি, সবুজ পাতা, আবক্ষ
পাবলো পিকাসো এই তেলরঙের ছবিটি এঁকেছিলেন মাত্র একদিনে – দিনটা ছিল ৮ই মার্চ, ১৯৩২৷ প্রায় অজ্ঞাত ছবিটি নিউ ইয়র্কের নিলামে বিক্রি হয় ১০ কোটি ডলারের বেশি মূল্যে, কেনেন এক অজ্ঞাত ক্রেতা৷ ব্যক্তিগত মালিকানায় থাকলেও, ছবিটি লন্ডনের টেট মডার্ন গ্যালারিকে ধার দেওয়া হয়েছে ২০১১ সালে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
রুপোলি গাড়ি দুর্ঘটনা
মার্কিন চিত্রকর অ্যান্ডি ওয়ারহল ১৯৬৩ সালে এই সিল্ক স্ক্রিন প্রিন্টটি সৃষ্টি করেন – যার বিষয়বস্তু হল একটি গাড়ি দুর্ঘটনা৷ ২০ বছর ধরে ব্যক্তিগত সংগ্রহে থাকার পর ২০১৩ সালে সথেবি-তে ছবিটি নিলাম করা হয়৷ ক্রেতা অজ্ঞাতই থাকেন; তবে ছবিটি পপ আর্ট শিল্পী ওয়ারহলের সবচেয়ে দামী ছবি বলে গণ্য করা হয়৷