শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সংগ্রামের জন্য কৈলাশ সত্যার্থী নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হয়েছেন৷ এবং তিনি অপর নোবেল বিজয়ী মালালা ইউসুফজাই-এর সঙ্গে একত্রে কাজ করার পরিকল্পনা রাখেন, একান্ত সাক্ষাৎকারে ডিডাব্লিউ-কে বললেন সত্যার্থি৷
বিজ্ঞাপন
কৈলাশ সত্যার্থী তাঁর জীবন উৎসর্গ করেছেন, যে সব লক্ষ লক্ষ শিশু শ্রমের দাসত্বে বাঁধা পড়ে আছে, তাদের মুক্তির জন্য, তাদের পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানোর জন্য৷ সত্যার্থীর জন্ম ১৯৫৪ সালে, পেশায় তিনি ইলেকট্রিক ইঞ্জিনিয়ার৷ ১৯৮০ সালে তিনি ‘বচপন বচাও আন্দোলন' (বিবিএ), বা শৈশব বাঁচাও আন্দোলন সংগঠনটি প্রতিষ্ঠা করেন৷
সে'যাবৎ বিবিএ হাজার হাজার দোকান-কারখানা ও বসতবাড়িতে হানা দিয়ে শিশু শ্রমিকদের উদ্ধার করেছে৷ সত্যার্থীকে বারংবার শিশুশ্রম সংক্রান্ত সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচেষ্টায় সংশ্লিষ্ট হতে দেখা গেছে৷ ১৯৯৮ সালে শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে বিশ্ব পদযাত্রার নেতৃবর্গের মধ্যে ছিলেন সত্যার্থী: সেই পদযাত্রা ১০৩টি দেশ পরিব্রজনা করে৷
গত ১০ই অক্টেবর নরওয়ের নোবেল কমিটি ‘‘শিশু-কিশোরদের নিপীড়নের বিরুদ্ধে এবং সব শিশুর শিক্ষার অধিকারের দাবিতে সংগ্রামে'' উভয়ের অবদানের জন্য ৬০-বছর-বয়সি কৈলাশ সত্যার্থী ও ১৭-বছর-বয়সি মালালা ইউসুফজাইকে যুগ্মভাবে নোবেল শান্তি পুরস্কার প্রদান করে৷ ডয়চে ভেলের সাক্ষাৎকারে কৈলাশ সত্যার্থী শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে তাঁর সংগ্রামের প্রেরণা, সেই সংগ্রামের পথে প্রতিবন্ধক ও তাঁর ভবিষ্যতের স্বপ্নের কথা বলেন৷
বিভিন্ন দেশের শিশুদের লেখা শেখার কৌশল
বিভিন্ন দেশে শিশুদের শেখার ধরণ ভিন্ন ভিন্ন৷ জার্মানিতে এই হেমন্তেই শিশুদের লেখা শেখার একটি নতুন নিয়ম চালু হয়েছে৷ কোন দেশের শিশুদের কীভাবে লেখায় হাতে-খড়ি হয়, চলুন সে বিষয়ে জানা যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চীন: যত তাড়াতাড়ি লেখা শেখা যায়, তত ভালো
চীনে তিন বছর বয়স হলে বাচ্চাদের কিন্ডারগার্টেনে পাঠানো হয় অক্ষরজ্ঞান শেখার জন্য৷ তবে শিশুরা ঠিকমতো লেখা শিখতে শুরু করে ছয় বছর বয়সে৷ পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বাচ্চাদের দশ হাজার অক্ষর শিখে ফেলতে হয়, যা বেশ কঠিন৷ পরে যা শিখতে হয় তার তেমন কোনো নির্ধারিত নিয়ম নেই৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জাপান: স্কুল ফাইনাল শেষ হওয়া পর্যন্ত
ক্লাস ওয়ান শেষ হওয়া মানেই কিন্তু লেখা শেখা শেষ নয় জাপানে৷ সেখানে ক্লাস নাইন পর্যন্ত সিলেবাসেই থাকে নির্ধারিত কিছু অক্ষর শেখার নিয়মকানুন৷ জাপানে লিখতে পারার জন্য একজনকে মোটামুটি ২১০০ অক্ষর জানতে হবে৷ জাপানে লেখা জানার জন্য নিয়মিত অনুশীলন করতে হয়, তা না হলে কোনো না কোনো অক্ষর খুব সহজেই ভুলে যেতে পারে যে কেউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মিশর: একটি ‘নতুন’ ভাষা
মিশরের বাচ্চাদের লেখা শেখার সাথে সাথে একটি নতুন ভাষাও শিখতে হয়৷ কারণ সেখানে বেশ কয়েকটি আঞ্চলিক ভাষা রয়েছে৷ যার ফলে, সেখান থেকে শুদ্ধ আরবি ভাষাকে আলাদা করা বেশ অসুবিধা৷ এছাড়া, সেখানকার কোনো স্কুলে ক্লাসে প্রতি ৮০ জন করে ছাত্র থাকে৷ ফলত লেখাপড়ার মান নীচু হয়৷ এর জন্য অনেক ছাত্র কখনোই ঠিকমতো লিখতে বা পড়তে পারে না৷
ছবি: Fotolia/Ivan Montero
মরক্কো: শুধু আরবি ভাষা নয়
বেশি দিন আগের কথা নয়, যখন মরক্কোর স্কুলে বাচ্চারা শুধু আরবি ভাষা শিখতো৷ তবে ২০০৪ সাল থেকে এর পরিবর্তন হয়েছে৷ তখন থেকেই ক্লাস ওয়ানের বাচ্চাদেরও হিব্রু ভাষার পাশাপাশি তামাসিখট ভাষাও শিখতে হয়৷ গ্রামাঞ্চলে অক্ষরজ্ঞান নেই এবং শুধু হিব্রু ভাষায় কথা বলে, এ রকম মানুষের সংখ্যা দিন দিন কমে যাচ্ছে৷ ২০১১ সাল থেকে তামাসিখট ভাষাকে সেখানকার স্বীকৃত ভাষা হিসেবে সংবিধানের অন্তর্ভুক্ত করা হয়৷
ছবি: picture alliance/Ronald Wittek
পোল্যান্ড: শূন্য থেকে শুরু
পোল্যান্ডে স্কুল শুরু হয় ক্লাস ওয়ান থেকে নয়, শূন্য থেকে৷ স্কুলে যাবার আগেই প্রতিটি শিশুর শূন্য ক্লাসে বা কিন্ডারগার্টেনে যাওয়া বাধ্যতামূলক এবং তখন খেলার ছলে বাচ্চাদের অক্ষরজ্ঞান দেওয়া হয়৷ অবশ্য ঠিকমতো লেখা শেখা শুরু হয় ক্লাস ওয়ান থেকেই৷ তবে কোনো কোনো অক্ষর খুব ভালো করে শিখতে বা মনে রাখতে হয়, কারণ সেগুলোর উচ্চারণ প্রায় একই রকম৷ এক্ষেত্রে বাংলার ‘ন’ এবং ‘ণ’ অক্ষরের সাথে তুলনা করা যেতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/PAP
সার্বিয়া: ভাষা এক, লেখা দু’রকম
সার্বীয় ভাষা সিরিলিক এবং ল্যাটিন অক্ষরে লেখা হয়, তাই বাচ্চাদের ছোটবেলা থেকেই একসাথে দু’রকম লেখা শিখতে হয়৷ ক্লাস ওয়ানে শিখতে হয় সিরিলিক অক্ষর, তারপর ল্যাটিন৷ কয়েক বছর পর ছাত্ররা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নিতে পারে তারা কোন ভাষাকে প্রাধান্য দিতে চায়৷
ছবি: DW/D. Gruhonjic
জার্মানি: শুনে শেখা
২০ বছর আগে থেকেই এই সিস্টেম বা মাধ্যমে বহু স্কুলে লেখা শেখানো হয়ে থাকে৷ শেখার সুবিধার জন্য বোর্ডে একটি জানালার ছবির পাশে শুধু ‘জ’ বা ঘড়ির পাশে ‘ঘ’ লেখা হয়৷ বাকিটা শিখতে হয় শুনে শুনে৷ সমালোচকদের অভিযোগ, এভাবে অনেক বাচ্চার পক্ষেই ঠিকমতো লেখা শেখা সম্ভব নয়৷ তবে এই নিয়মে পড়া শেখার ব্যাপারে কিন্তু তাড়াতাড়ি সাফল্য এসেছে৷
ছবি: Grundschule Harmonie
7 ছবি1 | 7
ডয়চে ভেলে: আপনার কাছে, এবং আপনার কাজের জন্য এই পুরস্কারের মূল্য কী?
কৈলাশ সত্যার্থী: এই পুরস্কার শিশুদের দাসত্ব ও শোষণের বিরুদ্ধে সংগ্রামে আমাকে আরো শক্তি যোগাবে৷....যে সব লক্ষ লক্ষ শিশুরা উপেক্ষিত এবং অবহেলিত, তাদের পক্ষে এ'টি একটি বড় সম্মান ও স্বীকৃতি৷
শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর প্রেরণা পেলেন কোথা থেকে?
আমি শৈশব এবং ছাত্রজীবন থেকেই বিষয়টি নিয়ে ভাবনাচিন্তা করে থাকি৷ তা থেকে আমি এই সিদ্ধান্তে আসি যে, যে সব শিশুর শৈশব কেড়ে নেওয়া হয়েছে, আমাকে তাদের হয়ে কাজ করতে হবে৷....ধীরে ধীরে আমি বুঝতে শিখি যে, শিশুশ্রম বুনিয়াদী মানবাধিকার ভঙ্গের সমতুল৷
শিশুশ্রমের বিরুদ্ধে সংগ্রামে কী ধরনের বাধা পেয়েছেন?
এটা চিরকালই একটা কঠিন যুদ্ধ ছিল৷ আমি আমার দু'জন সহকর্মীকে হারিয়েছি: একজনকে গুলি করে মারা হয়েছে, অন্যজনকে পিটিয়ে মারা হয়েছে৷ আমাকে এবং আমার পরিবারের সদস্যদের একাধিকবার আক্রমণ করা হয়েছে৷
[No title]
(নোবেল শান্তি পুরস্কার) একজন পাকিস্তানি নাগরিক ও মানবাধিকার আন্দোলনকারী, মালালা ইউসুফজাইকেও প্রদান করা হয়েছে৷ একজন ভারতীয় ও একজন পাকিস্তানির যুগ্ম বিজয়ী হওয়া সম্পর্কে আপনার কী বক্তব্য?
আমি মালালাকে শ্রদ্ধা করি৷ উনি একজন চমৎকার মহিলা৷ পুরস্কার ঘোষণার পর আমি ফোনে ওঁর সঙ্গে কথা বলেছি , এবং আমরা কিভাবে বিভিন্ন বিষয়ে একত্রে কাজ করতে পারি, এখানে যেমন মেয়েদের জন্য শিক্ষা ও শিশুশ্রম – তা নিয়ে আমরা অনেকক্ষণ কথা বলেছি৷ তবে আরো বড় কথা, আমরা কিভাবে আমাদের এলাকায় – এবং সারা বিশ্বে – শান্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে পারি, শান্তির পরিবেশ সৃষ্টি করতে পারি, তা নিয়েও আমরা আলোচনা করেছি৷