দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক এবং নির্বাহী সম্পাদক আর দৈনিক আমার দেশে-র ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের বিরুদ্ধে রায় দিয়েছে আদালত৷ আদালত অবমাননার অভিযোগের আশঙ্কার কারণেই হয়ত সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে প্রতিক্রিয়া খুবই কম৷
বৃহস্পতিবার খুব গুরুত্বপূর্ণ দু'টি মামলার রায় দিয়েছে বাংলাদেশের আদালত৷ একটি মামলায় দৈনিক জনকণ্ঠ পত্রিকার সম্পাদক ও প্রকাশক মোহাম্মদ আতিকউল্লাহ খান মাসুদ এবং নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়কে আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত করা হয়েছে৷ অন্য মামলায় নিজস সম্পদের হিসেব না দেয়ায় দৈনিক আমার দেশ-এর ভারপ্রাপ্ত সম্পাদক মাহমুদুর রহমানের তিন বছরের কারাদণ্ড হয়েছে৷
গত ১৬ জুলাই জনকণ্ঠে ‘সাকার পরিবারের তৎপরতা: পালাবার পথ কমে গেছে' শিরোনামে একটি উপসম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়৷ নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়ের লেখা উপসম্পাদকীয়তে উল্লেখ করা হয়, মানবতাবিরোধী অপরাধের দায়ে অভিযুক্ত সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরীর পরিবারের সদস্যরা আপিল বিভাগের রায় প্রদানকারী এক বিচারকের সঙ্গে দেখা করেছেন৷ ওই উপসম্পাদকীয়টির কারণেই গত ২৯ জুলাই আদালত স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে জনকণ্ঠের সম্পাদক ও নির্বাহী সম্পাদকের বিরুদ্ধে রুল জারি করে তলব করেন৷ বৃহস্পতিবার এই মামলার রায় হয়েছে৷
টুইটারে খবরটি টুইট করেছেন অনেকে৷
তবে আতিকউল্লাহ খান মাসুদ এবং নির্বাহী সম্পাদক স্বদেশ রায়ের মতো আদালত অবমাননার অভিযোগে অভিুক্ত হতে চান না বলেই রায় নিয়ে কেউ মন্তব্য করেননি৷
মাহমুদুর রহমানের কাছে ২০১০ সালে সম্পদের বিবরণী চেয়ে নোটিশ পাঠিয়েছিল দুর্নীতি দমন কমিশন বা দুদক৷ তাতে সাড়া না দেওয়ায় দুদক-এর উপ-পরিচালক নূর আহম্মেদ গুলশান থানায় মামলা দায়ের করেন৷ সে বছরই ঢাকার মুখ্য মহানগর হাকিম আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হলেও অভিযোগ গঠনের মধ্যে দিয়ে গতবছর বিচার শুরু হয়৷
তবে ২০১৩ সালের এপ্রিলে যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারকের কথিত স্কাইপ কথোপকথন প্রকাশ, রাষ্ট্রদ্রোহ ও ধর্মীয় উসকানির অভিযোগে আমার দেশ কার্যালয় থেকে মাহমুদুর রহমানকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ তখন থেকেই তিনি কারাগারে৷ বৃহস্পতিবার রায় ঘোষণার সময় কারাগার থেকে তাঁকে আদালতে নেয়া হয়েছিল৷
টুইটারে মাহমুদুর রহমানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি মামলায় তিন বছরের কারাদণ্ডের খবরটিও অনেকেই শেয়ার করেছেন৷
এখানেও মন্তব্য খুব কম৷ তবে একজন লিখেছেন, ‘‘এতে অবাক হওয়ার কিছু নেই৷ বাংলাদেশে কিন্তু তিনটি টিভি চ্যানেল বন্ধই আছে৷''
মাহমুদুর রহমানকে ‘স্পষ্টবাদী সম্পাদক' হিসেবেও উল্লেখ করেছেন তিনি৷
২০০৭ সাল পর্যন্ত মাহমুদুর রহমান ছিলে সরকারি আমলা৷ ২০০৮ সালে তিনি বিএনপি নেতা মোসাদ্দেক আলী ফালুর মালিকানাধীন আমার দেশের ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব নেন৷ তখন থেকে পত্রিকাটির ভারপ্রাপ্ত সম্পাদকের দায়িত্বও পালন করেন মাহমুদুর রহমান৷
সাংবাদিকদের জন্য দুঃসময়
একটি সমীক্ষা অনুযায়ী গত দশ বছরেরও বেশি সময়ের মধ্যে সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতার পরিস্থিতি এতো খারাপ দেখা যায়নি৷ বিশ্ব জনসংখ্যার ৮০ শতাংশেরও বেশি মানুষ বাস করেন যে সব দেশে, সে সব দেশে সাংবাদিকদের কাজে হস্তক্ষেপ করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
মধ্য এশিয়ার পরিস্থিতি
ফ্রিডম হাউস নামে একটি প্রতিষ্ঠান ১৯৯৭টি দেশের ওপর একটি সমীক্ষা চালিয়েছে, যার ফলাফলে দেখা গেছে, তুর্কমেনিস্তান, উজবেকিস্তান এবং বেলারুশের সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা সবচেয়ে কম৷ অন্যদিকে সাংবাদিকদের সবচেয়ে বেশি স্বাধীনতা রয়েছে নেদারল্যান্ডস, সুইডেন এবং নরওয়েতে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সাংবাদিকদের ওপর হামলা
তুরস্কে অনেক সাংবাদিকদের ওপর হামলা করা হয়েছে৷ সাংবাদিক গ্যোকহান বিচিচি-কে প্রেপ্তার করা হয় গেজি পার্কে বিক্ষোভ চলাকালীন সময়ে৷ সাংবাদিকদের স্বার্থরক্ষা কমিটির মতে গত ডিসেম্বরের শুরুতে তুরস্কে ৪০জন সাংবাদিকদের আটক করা হয়৷
ছবি: AFP/Getty Images
অপ্রিয় রিপোর্ট
ইউক্রেনেও সাংবাদিকদের ওপর হামলা চালানো হয়৷ বিশেষ করে কিয়েভের ময়দান স্কোয়ারে প্রতিবাদ বিক্ষোভের সময়৷ সরকারের সমালোচক সাংবাদিক টেটিয়ানা চর্নোভোল ঐ হামলার শিকার হন৷ তিনি পদচ্যুত প্রেসিডেন্ট ভিক্টর ইয়ানুকোভিচ বিলাসী জীবনযাত্রার ওপর একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেছিলেন৷ হাজারো মানুষ এই সাবেক প্রেসিডেন্টের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করেন৷
ছবি: Genya Savilov/AFP/Getty Images
মিথ্যা বলা বন্ধ করুন!
চীন এবং রাশিয়াতেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতা সমালোচনার মুখে৷ দুই দেশের সরকারই মিডিয়ার ওপর প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে এবং সরকারের মতামত মিডিয়াকে জানানোর জন্য একটি আইনও প্রণয়ন করে৷ এমনকি রাশিয়ায় সংবাদ সংস্থা ‘রিয়া নভোস্তি’ বন্ধ করে সেটা রাষ্ট্রায়ত্ত্ব করা হয়৷ অনেক রুশ নাগরিকের তা পছন্দ না হওয়ায় তারা ‘মিথ্যা বলা বন্ধ করুন’ প্ল্যাকার্ড হাতে নিয়ে বিক্ষোভে অংশ নেয়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
মার্কিন সরকারের আড়িপাতা
অ্যামেরিকায় সংবাদপত্রের স্বাধীনতা রয়েছে৷ কিন্তু মার্কিন তথ্যনীতি ক্রমঃশই প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে৷ সমীক্ষা অনুযায়ী, সরকার সম্পর্কে কোনো তথ্য পাওয়া বেশ কঠিন হয়ে গেছে৷ শুধু তাই নয়, এমনকি সরকার সাংবাদিকদের কাছে তথ্য সূত্রও জানতে চায়৷ এছাড়া, মার্কিন সরকার সংবাদ সংস্থা এপি-র সাংবাদিকদের টেলিফোনেও আড়ি পেতেছে৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo
মুবারক জমানায় প্রত্যাবর্তন
মিশরে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা পরিস্থিতির অবনতি ঘটেছে৷ প্রেসিডেন্ট মুরসির পতনের পর সেখানকার পরিস্থিতির আরো অবনতি হয়েছে৷ সমীক্ষা প্রতিষ্ঠান ফ্রিডম হাউস-এর মতে, ২০১৩ সালের মাঝামাঝি সময়ে সামরিক অভ্যুথ্যানের পর থেকে বেশ কিছু সাংবাদিককে গ্রেপ্তার করা হয় হয় এবং পাঁচজন মারা যান৷
ছবি: AFP/Getty Images
মালিতে পরিস্থিতির উন্নতি
মালিতে সংবাদপত্রের স্বাধীনতার ইতিবাচক উন্নতি হয়েছে৷ প্রেসিডেন্ট নির্বাচন ইসলামি বিদ্রোহীদের দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বিতাড়নের পর মালির আইন ও শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়৷ ২০১২ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের পর বেশ কিছু মিডিয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছিলো৷ সেগুলো এখন আবার কাজ করছে৷
ছবি: AFP/Getty Images
কিরগিজিস্তান ও নেপালে ইতিবাচক প্রবণতা
যে সব দেশে সংবাদপত্রের স্বাধীনতা বাড়ছে, সেগুলোর মধ্যে রয়েছে কিরগিজিস্তান৷ সেখানকার সাংবাদিকরা ২০১৩ সালে খুব কম আক্রমণের শিকার হয়েছেন৷ নেপালেও মিডিয়ার ওপর রাজনৈতিক প্রভাব কমেছে, যদিও সাংবাদিকদের হুমকি দেওয়া বন্ধ হয় নি৷ সমীক্ষা অনুযায়ী ইসরায়েলেও সংবাদপত্রের স্বাধীনতার উন্নতি হয়েছে এবং এখন তাঁরা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারছেন৷