ব্রেক্সিট নিয়ে অচলাবস্থা
৩০ জানুয়ারি ২০১৯প্রায় ২ বছর ধরে আলাপ-আলোচনার পর ব্রিটেনের সরকার ও ইউরোপীয় ইউনিয়ন ব্রেক্সিট সংক্রান্ত চুক্তি স্বাক্ষর করেছিল৷ সেই চুক্তির মধ্যে ২০১৯ সালের ২৯শে মার্চ বিচ্ছেদের পর প্রায় ২ বছর পর্যন্ত দুই পক্ষের মধ্যে অন্তর্বর্তীকালীন সম্পর্কের রূপরেখা স্থির করা হয়েছিল৷ সেই সময়কালে ভবিষ্যৎ স্থায়ী সম্পর্ক নিয়ে নতুন চুক্তির দিশাও স্থির করে দিয়েছিলেন ব্রিটেন ও ইইউ নেতারা৷
কিন্তু ব্রিটেনের সংসদ সেই চুক্তি মেনে নিতে অস্বীকার করেছে৷ তাঁদের মূল আপত্তি আয়ারল্যান্ডের সঙ্গে স্থল সীমান্তে তথাকথিত ‘ব্যাকস্টপ' ব্যবস্থা নিয়ে৷ তার আওতায় দুই পক্ষের মধ্যে স্থায়ী বোঝাপড়া হওয়া পর্যন্ত উত্তর আয়ারল্যান্ড ও আয়ারল্যান্ডের মধ্যে শান্তি বজায় রাখা ও ব্রিটিশ যুক্তরাজ্যের ঐক্যের স্বার্থে সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ এড়াতে ব্রিটেনকে ইইউ-র শুল্ক কাঠামোর মধ্যে রাখার সিদ্ধান্ত হয়েছে৷ এর ফলে ব্রিটেন অনির্দিষ্টকালের জন্য ইইউ-র সঙ্গে যুক্ত থেকে যাবে বলে অনেকে আশঙ্কা করছেন৷ ইইউ এ বিষয়ে একাধিক আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও সেই সংশয় থেকে গেছে৷
তবে সংখ্যাগরিষ্ঠ সংসদ সদস্যরা তার বদলে ঠিক কী চান, তা এতকাল অস্পষ্ট ছিল৷ মঙ্গলবার ৭টি প্রস্তাবের মাধ্যমে সেই অচলাবস্থা কাটানোর উদ্যোগ নিয়েছিলেন তাঁরা৷ এর মধ্যে ৫টি প্রস্তাব খারিজ হয়ে যায়, ২টি অনুমোদিত হয়৷ ফলে এবার স্পষ্ট হয়ে গেল যে, ব্রিটিশ জনপ্রতিনিধিরা চুক্তি ছাড়া ব্রেক্সিট চান না৷ ব্রেক্সিটের মেয়াদও তাঁরা বাড়াতে চান না৷ আবার চুক্তির মধ্যে আয়ারল্যান্ডের স্থলসীমান্তে ‘ব্যাকস্টপ' সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত তাঁদের পছন্দ নয়৷ তাঁরা প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে-কে ফের ব্রাসেলসে গিয়ে এর ‘বিকল্প ব্যবস্থা' আদায় করার নির্দেশ দিয়েছেন৷ সেই বিকল্প সম্পর্কে কোনো গঠনমূলক প্রস্তাব অবশ্য তাঁরা দেননি৷ অনেকে শুধু ব্যাকস্টপ ব্যবস্থার মেয়াদ সীমিত রাখা বা একতরফাভাবে ব্রিটেনকে সেই ব্যবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার অধিকারের দাবি করছেন৷
ইউরোপীয় ইউনিয়ন অবিলম্বে ব্রিটিশ সংসদের এই প্রস্তাব মানতে অস্বীকার করেছে৷ ইইউ শুরু থেকেই জানিয়ে এসেছে যে, ব্রেক্সিট সংক্রান্ত চুক্তিকে কোনোরকম রদবদল সম্ভব নয়৷ অতএব ব্যাকস্টপ ব্যবস্থাও আলোচনার ঊর্দ্ধে৷ ব্রিটেন তার অভ্যন্তরীণ সংকট মেটাতে বাড়তি সময় নিতে চাইলে ব্রেক্সিটের মেয়াদ কিছুটা বাড়ানো যেতে পারে৷ তবে যুক্তিসহকারে এমন আবেদন করতে হবে৷ ইইউ পরিষদের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড টুস্কের এক মুখপাত্র মঙ্গলবার রাতেই এ সংক্রান্ত এক বিবৃতি দেন৷
আয়ারল্যান্ড ও ফ্রান্সও ব্রিটিশ সংসদের সর্বশেষ প্রস্তাবের বিরোধিতা করেছে৷ ফ্রান্সের প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল মাক্রোঁর দফতর থেকে ব্রেক্সিট চুক্তি নিয়ে নতুন করে আলোচনার সম্ভাবনা উড়িয়ে দেওয়া হয়েছে৷ তার বদলে ব্রিটেন থেকে ‘গ্রহণযোগ্য' প্রস্তাবের দাবি করা হয়েছে৷
দুই পক্ষের অনড় অবস্থানের প্রেক্ষাপটে এই মুহূর্তে কোনো রকম অগ্রগতির সম্ভাবনা দেখা যাচ্ছে না৷ চুক্তিতে রদবদল সম্ভব হলে আগামী ১৩ই ফেব্রুয়ারি ব্রিটিশ সংসদে সেই পরিবর্তিত চুক্তি অনুমোদন করার পরিকল্পনা রয়েছে৷ সে ক্ষেত্রে সংসদের হাতে খুব বেশি বিকল্প অবশিষ্ট থাকবে না৷ হয় ২৯শে মার্চ চুক্তি ছাড়া ইইউ ত্যাগ করতে হবে, অথবা বিচ্ছেদের আবেদন প্রত্যাহার করে ইইউ-তে থেকে যেতে হবে৷ নতুন গণভোট বা আগাম নির্বাচনের স্বার্থে ব্রেক্সিটের মেয়াদ বাড়ানোর আবেদনও করা যেতে পারে৷ তবে সে ক্ষেত্রেও চূড়ান্ত ফয়সালা সম্ভব হবে কিনা, তা স্পষ্ট নয়৷
এসবি/এসিবি (রয়টার্স, এএফপি)