মঙ্গলবারই ভবিষ্যত মার্কিন প্রেসিডেন্ট বাইডেন ভবিষ্যৎ মন্ত্রিসভার গুরুত্বপূর্ণ সদস্যদের নাম প্রকাশ করতে চলেছেন৷ পেনসিলভানিয়া রাজ্যে চূড়ান্ত পরাজয় সত্ত্বেও ট্রাম্প এখনো হার মানতে নারাজ৷
বিজ্ঞাপন
একের পর এক রাজ্যে নির্বাচনের ফলাফল চ্যালেঞ্জ করেও প্রায় কোনো সাফল্য পাচ্ছেন না বিদায়ী মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প৷ তাঁর এমন মনোভাবের ফলে প্রথা অনুযায়ী ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হতে বিলম্ব ঘটছে৷ বাইডেনের টিম বরাদ্দ বাজেট থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে৷ টুইটার ও ফেসবুক অবশ্য জানিয়ে দিয়েছে, যে ২০শে জানুয়ারি মার্কিন প্রেসিডেন্টের অ্যাকাউন্ট বাইডেনের হাতে তুলে দেয়া হবে৷
এমন বাধা-বিপত্তি সত্ত্বেও সদ্য-নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট হিসেবে জো বাইডেন আগামী প্রশাসনের রূপরেখা ধীরে ধীরে স্পষ্ট করছেন৷ সম্ভবত মঙ্গলবারই তিনি গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রীদের তালিকা প্রকাশ করতে চলেছেন৷ বাইডেনের ‘চিফ অফ স্টাফ’ রন ক্লেন এক টেলিভিশন অনুষ্ঠানে এমন পূর্বাভাষ দিয়েছেন৷ প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী তিনি সব ক্ষেত্রে অভিজ্ঞ ও বিশেষজ্ঞ হিসেবে পরিচিত ব্যক্তিদের গুরুত্বপূর্ণ পদে নিযুক্ত করতে চান৷ ট্রাম্প প্রশাসনের ‘অ্যামেরিকা ফার্স্ট’ নীতির ফলে অ্যামেরিকা কার্যত একা হয়ে পড়েছে বলে তিনি প্রচারের সময়ে অভিযোগ করেছিলেন৷ তাঁর নেতৃত্বে নতুন প্রশাসন আবার আবার আন্তর্জাতিক সহযোগিতার পথে ফিরে যেতে বদ্ধপরিকর৷
ক্ষমতা আঁকড়ে রেখে ট্রাম্প আচমকা পররাষ্ট্র নীতির ক্ষেত্রে জোরালো তৎপরতা শুরু করে দিয়েছেন৷ আগামী ২০শে জানুয়ারি বাইডেন ক্ষমতা গ্রহণ করা পর্যন্ত সময়ে তিনি বেপরোয়া কিছু পদক্ষেপ নিয়ে বসবেন বলে আশঙ্কা বাড়ছে৷ সে ক্ষেত্রে ক্ষমতায় এসেই বাইডেন প্রশাসনকে সে সব ধাক্কা সামলাতে হবে৷ বাইডেন অ্যান্টনি ব্রিংকেনকে আগামী পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিসেবে নিযুক্ত করতে পারেন বলে শোনা যাচ্ছে৷ জাতিসংঘে মার্কিন রাষ্ট্রদূত হিসেবে লিন্ডা টমাস-গ্রিনফিল্ড এবং জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা হিসেবে জেক সালাইভানের নাম আলোচিত হচ্ছে৷ এই তিন ব্যক্তিই নিজস্ব ক্ষেত্রে অত্যন্ত অভিজ্ঞ ও বিচক্ষণ হিসেবে পরিচিত৷
বর্তমান করোনা সংকটের প্রেক্ষাপটে বাইডেনের টিম নতুন প্রেসিডেন্টের কার্যভার গ্রহণের দিনে বড় আকারে প্রথা অনুযায়ী কোনো উৎসবের পরিকল্পনা করছে না৷ সংক্রমণ এড়াতে ওয়াশিংটনে মানুষের বিশাল সমাবেশ চান না বাইডেন৷
এখনো পর্যন্ত রিপাবলিকান দলের শীর্ষ নেতারা প্রকাশ্যে ট্রাম্পের ক্ষমতা আঁকড়ে রাখার মনোভাবের সমালোচনা না করলেও দলের কিছু অংশে অস্বস্তি বাড়ছে৷ বিশেষ করে ঠিক সময়ে ক্ষমতা হস্তান্তরের প্রক্রিয়ায় বিলম্বের সমালোচনা বাড়ছে৷ একের পর এক রাজ্যের আদালতে নির্বাচনে অনিয়মের অভিযোগ খারিজ হয়ে যাওয়ায় দলের একাংশ পরাজয় মেনে নিয়ে ক্ষমতার মসৃণ হস্তান্তরের পক্ষে সওয়াল করছে৷ বিশেষ করে পেনসিলভানিয়া রাজ্যে বাইডেনের জয় নিশ্চিত হবার পর তাঁরা আর কোনো আশা দেখছেন না৷ ট্রাম্প নিজে অবশ্য রোববার এক টুইট বার্তায় আবার ব্যাপক কারচুপির অভিযোগ করেছেন৷
আগামী ১৪ই ডিসেম্বর ইলেকটোরাল কলেজের সদস্যরা আনুষ্ঠানিকভাবে মিলিত হবেন৷ তার আগে রাজ্যগুলিরও সরকারি ফলাফল ঘোষণা করার কথা৷ সেই ‘পপুলার ভোট’-এর ভিত্তিতে ইলেকটোরাল কলেজ আনুষ্ঠানিকভাবে আগামী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত করবে৷ রিপাবলিকান দল সেই প্রক্রিয়ায় নানা বাধা ও বিলম্ব সৃষ্টি করার চেষ্টা করলেও শেষ পর্যন্ত সাফল্যের সম্ভাবনা কম বলে রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন৷
এসবি/কেএম (রয়টার্স, এএফপি)
জো বাইডেনের জীবনের গল্প
২০২০ সালের মার্কিন প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী ডেমোক্র্যাট প্রার্থী জো বাইডেনের জীবনের গল্প দেখুন এই ছবিঘরে৷
ছবি: Kevin Lamarque/Reuters
জন্ম ও পরিবার
১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর স্ক্র্যানটন পেনসিলভ্যানিয়াতে জন্মগ্রহণ করেন জোসেফ রবিনেট বাইডেন জুনিয়র বা আজকের ‘জো বাইডেন’৷ জীবনের প্রথমভাগ বাইডেন কাটান দাদা-দাদির সাথে৷ পরিবারে আর্থিক অনটন থাকলেও বাইডেন স্কুলজীবনে তুখোড় ফুটবল, বেসবল খেলোয়াড় ছিলেন, যা পরে বিশ্ববিদ্যালয়েও তাঁকে জনপ্রিয় করে তোলে৷ জানা যায়, ছোটবেলায় বাইডেন কথা বলতে গেলে তোতলাতেন, যা কবিতা আবৃত্তি করার মাধ্যমে পরে নিয়ন্ত্রণে আনেন তিনি৷
ছবি: Handout Joseph Biden/AFP
তারুণ্য
প্রথমে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে স্নাতক হবার পর আইনে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়াশোনা করতে বাইডেন পাড়ি দেন নিউ ইয়র্কের সাইরাক্যুজ বিশ্ববিদ্যালয়ে৷ সেখানেই তাঁর পরিচয় নেলিয়া হান্টারের সাথে৷ ১৯৬৬ সালে নেলিয়া ও বাইডেন বিয়ে করেন৷
ছবি: Keystone/dpa/picture-alliance
রাজনীতিতে পদার্পণ
১৯৭২ সালে মাত্র ২৯ বছর বয়েসে ডেলাওয়ারে দীর্ঘদিন ধরে ক্ষমতাসীন রিপাবলিকান সেনেটর কেলেব বগসের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে নির্বাচনে লড়েন বাইডেন৷ অর্থাভাব, রাজনীতির ময়দানে অনভিজ্ঞতা সত্ত্বেও পারিবারিক সহায়তা ও মাঠপর্যায়ে প্রচার চালিয়ে গবসকে পরাজিত করেন বাইডেন৷ সেখান থেকেই ডেমোক্র্যাট হিসাবে তাঁর উত্থানের সূত্রপাত৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Keystone
পারিবারিক বিপর্যয়
সেনেটর নির্বাচিত হবার কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই বাইডেনের জীবনে আসে বিপর্যয়৷ একটি গাড়ি দুর্ঘটনায় তাঁর স্ত্রী নেলিয়া ও কন্যা নাওমির মৃত্যু হয়৷ মারাত্মকভাবে জখম হন তাঁর দুই পুত্রও৷ এই বিপর্যয়ের কারণে রাজনীতি ছেড়ে দিতে চেয়েছিলেন বাইডেন৷ কিন্তু দলের জোরাজুরিতে হাসপাতালেই সেনেটর পদে শপথগ্রহণ করেন বাইডেন৷ পরে ১৯৭৭ সালে জিল জেকবসকে বিয়ে করেন বাইডেন৷ তাঁদের একটি কন্যা রয়েছে, নাম অ্যাশলি৷
ছবি: Kevin Larkin/AFP/Getty Images
রাজনীতির চেয়ে পরিবারকে প্রাধান্য
বাইডেনের পারিবারিক জীবনে আবার বিপর্যয় আসে ২০১৫ সালে৷ ভাইস-প্রেসিডেন্ট থাকাকালীন ব্রেন টিউমারজনিত জটিলতায় তিনি তাঁর পুত্র জোসেফকে হারান৷ পরের বছর ২০১৬ সালের নির্বাচনে প্রেসিডেন্ট পদপ্রার্থী হিসাবে লড়ার পরিকল্পনা থাকলেও পরিবারকে সময় দিতে নির্বাচন থেকে সরে আসেন বাইডেন৷
ছবি: Kevin Lamarque/REUTERS
তবুও উত্তরণ
এর আগে ১৯৮৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে প্রাথমিকভাবে অংশগ্রহণ করলেও প্রাইমারি নির্বাচনের আগেই নিজের প্রার্থিতা প্রত্যাহার করে নেন৷ কিন্তু সেনেটর হিসাবে কাজ করে যান তিনি৷ ২০০৮ সালেও প্রথমে প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আগ্রহ দেখিয়েছিলেন তিনি৷ জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার প্রতীক হিসাবে ২০১৬ সালে তৎকালীন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা তাঁকে ‘প্রেসিডেনশিয়াল মেডাল অফ ফ্রিডম’ প্রদান করেন৷
ছবি: Getty Images/AFP/N. Kamm
গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ
রাজনীতির শুরু থেকেই বাইডেন ক্রেতা সুরক্ষা ও পরিবেশবিষয়ক ইস্যু নিয়ে সোচ্চার থেকেছেন৷ ২০১০ সালের ‘পেশেন্ট প্রোটেকশান অ্যান্ড অ্যাফোর্ডেবল কেয়ার’ আইনের বাস্তবায়নে তাঁর ভূমিকার কথা বারবার আলোচিত হয়েছে৷ শুধু তাই নয়, ১৯৯২ সাল থেকেই আইনি কড়াকড়ি বাড়ানো ও সাজার মেয়াদ বাড়ানোর পক্ষে তাঁর অবস্থান তিনি স্পষ্ট করেছেন, যা অনেক ক্ষেত্রেই তাঁর দলের নীতির সাথে পুরোপুরি খাপ খায়নি৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
বাইডেনকে ঘিরে বিতর্ক
১৯৮৮ সালের নির্বাচনি প্রচারের সময় বাইডেনের বিরুদ্ধে ব্রিটিশ লেবার পার্টির নিল কিনকের বক্তব্য চুরির অভিযোগ ওঠে৷ এছাড়া অ্যামেরিকার দক্ষিণাঞ্চলের বর্ণভিত্তিক বিভেদপন্থিদের সাথে সুর মিলিয়ে আদালতের রায়ের বিরোধিতা করে সমালোচিত হন বাইডেন৷ ২০১২ সালেও সমকামী জুটিদের বিয়ের অধিকারের পক্ষে কথা বলে বাইডেন শিরোনামে উঠে আসেন৷
ছবি: Carolyn Kaster/AP/picture alliance
যৌন নির্যাতনের অভিযোগ
২০২০ সালের মার্চ মাসে টারা রিড অভিযোগ আনেন যে ১৯৯৩ সালে জো বাইডেন তাঁকে যৌন নির্যাতন করেছিলেন৷ সেনেটর থাকাকালীন বাইডেনের অফিসে সহযোগী হিসাবে কাজ করতেন রিড৷ ১৯৯৩ সালে বিষয়টি আলোচিত হবার পর নতুন করে এবছর আবার প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের প্রেক্ষিতে সেটি আলোচনায় উঠে আসে৷ এই অভিযোগ বাইডেন উড়িয়ে দিলেও আরো কয়েকজন নারী বাইডেনের বিরুদ্ধে অসঙ্গত আচরণের অভিযোগ এনেছেন৷
ছবি: picture-alliance/AP Photo/J. Locher
বাইডেনের যত নাম
গণমাধ্যমে বাইডেনের নামের সাথে জুড়েছে নানা ধরনের বিশেষণ৷ জীবনের গোড়ার দিকের অর্থনৈতিক বাস্তবতার কারণে কখনো তাঁর নাম হয়েছে ‘মিডল ক্লাস জো’৷ ২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণের সময় বয়সের কারণে ডনাল্ড ট্রাম্প তাঁকে তাচ্ছিল্য করে বলেন ‘স্লো জো’ ও ‘স্লিপি জো’৷
ছবি: Jim Watson/AFP/Getty Images
প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে অংশগ্রহণ
২০২০ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্র্যাট প্রার্থী হিসাবে অংশগ্রহণ করেন জো বাইডেন৷ তার পক্ষে ব্যাপকভাবে প্রচারে নামেন সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা৷ টুইটার-ইন্সটাগ্রামে পাশে দাঁড়ান সেলেব্রেটিরাও৷ নির্বাচনে ডনাল্ড ট্রাম্পকে হারিয়ে বিজয়ী হন তিনি৷ বাইডেনের নির্বাচনসঙ্গী কমলা হ্যারিস দেশের প্রথম ভারতীয় বংশোদ্ভূত, প্রথম আফ্রিকান-অ্যামেরিকান ও প্রথম নারী ভাইস প্রেসিডেন্ট হয়ে ইতিহাস গড়েন৷