এশিয়া এবং আফ্রিকা থেকে রাশিয়া বিশ্বকাপ দেখতে আসা অনেক দর্শকই ইউরোপীয় ইউনিয়নে ঢুকে পড়ছে৷ জার্মানির গণমাধ্যমের সংবাদ অনুযায়ী, বেশ কয়েকজন এরমধ্যে ফিনল্যান্ড সীমানা দিয়ে ইইউতে প্রবেশ করেছে৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপের বিভিন্ন দেশের সীমান্ত কর্তৃপক্ষের অভিযোগ, রাশিয়ার দুর্বল ভিসা নিয়মের সুযোগ নিয়ে বিশ্বকাপ দেখার নাম করে অনেকেই ইউরোপীয় ইউনিয়নের আওতাভুক্ত দেশগুলোতে অবৈধভাবে অনুপ্রবেশ করছে বা করার চেষ্টা করছে৷
এক সপ্তাহ আগে বিশ্বকাপ শুরুর পর থেকে অন্তত পাঁচজন বেআইনিভাবে ফিনল্যান্ডে প্রবেশ করেছে কেবল তাদের কাছে থাকা তথাকথিত ‘ফ্যান আইডি' ব্যবহার করে৷ রাশিয়ার নাগরিক নন, এমন ব্যক্তিদের বিশ্বকাপের যে-কোনো খেলা দেখতে হলে টিকেট কেনার বিপরীতে ‘ফ্যান আইডি' সংগ্রহ করতে হচ্ছে৷
বৃহস্পতিবার জার্মান অনলাইন পত্রিকা স্পিগেল জানায়, এরই সুযোগ নিচ্ছে এশিয়া ও আফ্রিকার দর্শকরা৷
ফ্যান মানে ফ্যানাটিক!
রং মেখে, সং সেজে, ফুটবল ফ্যানরা যত না ইউরো ২০১৬ দেখতে যান, তার চেয়ে বেশি যান নিজেদের সাজ দেখাতে৷
আলবেনিয়ার ফ্যানরা নাচের ভঙ্গিতে দু’হাত মুড়ে স্বদেশের পতাকার ‘ডাবল ইগল’ বা দুমুখো বাজপাখির নকল করতে পারেন৷ অনেকে আবার নিজের মুখের উপরই ডাবল ইগল এঁকে বসে থাকেন!
ছবি: Getty Images/C. Brunskill
ফরাসি মোরগ
ফ্রান্সের ‘একিপ ত্রিকলর’ বা তেরঙ্গা দলের প্রতীক হলো ঝুঁটিওয়ালা মোরগ৷ বাঁদিকের ফ্যানটি যে কেন মাথার ওপর এক ডালমেশিয়ান কুকুর পরে আছেন, তা তিনিই জানেন৷
ছবি: Reuters/S. Mahe
আলুভাজার দেশ বেলজিয়াম
বেলজিয়ামেই ‘পম ফ্রিৎ’ বা ফিংগার চিপস আবিষ্কৃত হয়েছিল বলে শোনা যায়৷ বেলজিয়ামের এই মহিলা ফ্যান সেটিকেই নিজের ফ্যাশন স্টেটমেন্ট বানিয়ে নিয়েছেন বলে মনে হতে পারে৷
ছবি: Reuters/M. Dalder
আইসল্যান্ডের ভাইকিং যোদ্ধারা...
...যেন আবার ফিরে এসেছেন ইউরো ২০১৬-র টানে৷ মোট ত্রিশ হাজার আইসল্যান্ডবাসী ফ্রান্সে এসেছেন দলকে সাপোর্ট করতে – যা কিনা আইসল্যান্ডের মোট জনসংখ্যার আট শতাংশ৷
ছবি: Getty Images/M. Steele
ব্লোয়িং এ কিস
ক্রোয়েশিয়ান ফ্যানরা শুধু বাজি ফাটান না, দরকার হলে চুম্বন ছুঁড়ে দেন৷ পোশাকে কিন্তু ক্রোয়েশিয়ার ফ্ল্যাগের লাল-সাদা থাকা চাই৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S.Allaman
রোমক সৈন্য
ইটালি থেকে এসেছেন জুলিয়াস সিজারের ভায়রাভাই, মানে তাঁর সৈন্যরা৷ ইটালির ফুটবলাররাও এবার পোড় খাওয়া রোমক লেজিওনারিদের মতোই তাঁদের অভিযান চালাচ্ছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/D. Dal Zennaro
পিপি লংস্টকিং-এর সর্বাধুনিক সংস্করণ
এক মাথার লালচুলো বিনুনিটি ছাড়া অবশ্য আর কিছুই মেলে না৷ সুইডেনের অমর শিশুসাহিত্যিক অ্যাস্ট্রিড লিন্ডগ্রেন তাঁর ন’বছর বয়সের মেয়ের জন্যে পিপি লংস্টকিং-এর কাহিনিগুলি রচনা করেন৷ দাড়িগোঁফওয়ালা ফুটবল ফ্যানদের মাথায় পিপি-র পরচুলা ফুটবলের না হোক, নারীত্বের একটা বড় জয় বৈকি৷
ফিনল্যান্ডের প্রশাসনের বরাত দিয়ে স্পিগেল অনলাইন তাদের প্রতিবেদনে জানায়, মরক্কোর তিনজন, একজন নাইজেরিয়ান এবং একজন চীনা বিশ্বকাপ দেখতে এসে ফিনল্যান্ডে প্রবেশের পর দেশটিতে ‘অ্যাসাইলাম' বা রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন৷
এরমধ্যে মরক্কোর নাগরিকরা স্থলপথে সীমান্ত পাড়ি দিয়েছেন৷ চীনা ব্যক্তি রাশিয়া থেকে বিমানে সরাসরি ফিনল্যান্ডের রাজধানী হেলসিংকিতে গিয়েছেন৷
‘ফ্যান আইডি' থাকার কারণে বিনা ভিসাতেই রাশিয়ায় থাকার সুযোগ মিলছে দর্শকদের৷ আর বিশ্বকাপ প্রতিযোগিতা শেষ হওয়ার দশ দিন পর পর্যন্ত এই আইডিতে রাশিয়ায় থাকার অনুমতি পাচ্ছেন৷ বিশ্বকাপ শেষ হচ্ছে জুলাইয়ের ১৫ তারিখে৷
সবচেয়ে বেশি সমর্থক কোন দলের?
01:33
রাশিয়ার পুলিশের বরাত দিয়ে স্পিগেল অনলাইন তাদের প্রতিবেদনে বলেছে, এছাড়াও আরও বেশকিছু সীমান্ত পাড়ি দিতে চাওয়া মানুষকে ইইউতে প্রবেশের আগেই আটকে দেওয়া সম্ভব হয়েছে৷ এর মধ্যে চারজন মরক্কোর নাগরিক আছেন, যাদের নরওয়ে সীমান্তে আটকানো সম্ভব হয়েছে৷
তাদের প্রত্যেককে ২৭ ইউরো বা ২৭০০ টাকার সমপরিমাণ জরিমানা করে ছেড়ে দেওয়া হয়েছে৷
বেলারুশের কর্তৃপক্ষও মরক্কোর চার নাগরিককে ‘ফ্যান আইডি'সহ গ্রেপ্তার করেছে, যারা পোল্যান্ডে ঢোকার চেষ্টা করছিলেন৷ ঢোকা বেশ সহজ, কেননা, সেখানে ঢিলেঢালাভাবে প্রবেশকারীদের কাগজপত্র পরীক্ষা করা হয়, আবার কখনো হয়তো এ পরীক্ষা এড়ানোও যায়৷
টিমোথি জোন্স/এইচআই
রাশিয়ার ‘জাপাড’ নিয়ে কেন এত হইচই?
রাশিয়া বরাবরই বলে আসছে যে বেলারুশের সাথে এ বছরের যৌথ সামরিক মহড়া সব ধরনের আন্তর্জাতিক আইন মেনেই করা হবে৷ কিন্তু তাতে আশ্বস্ত হয়নি ন্যাটো এবং পশ্চিম ইউরোপের দেশগুলো৷ কিন্তু কেন? উত্তর খোঁজার চেষ্টা করেছে ডয়চে ভেলে৷
ছবি: Reuters/V. Fedosenko
জাপাড কী?
রুশ ভাষায় ‘জাপাড’ মানে পশ্চিম৷ ইউরোপের সাথে রাশিয়ার উত্তর-পশ্চিম সীমান্তে রুশ এবং বেলারুশিয়ান সেনাবাহিনীর যৌথ মহড়াকে এ নামে ডাকা হয়৷ তবে এই এলাকা ন্যাটোর আওতাধীন৷ ২০১৭ সালে সেপ্টেম্বরের ১৪ থেকে ২০ তারিখ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত হয় এই মহড়া৷ সেনাবাহিনীর দক্ষতা ও সমর কৌশল উন্নয়নে বিভিন্ন অঞ্চলে চার বছরে একবার এই মহড়া করে রাশিয়া৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Druginyn
অতীত জাপাড কেমন ছিল?
সোভিয়েত ইউনিয়নে প্রথম শুরু হয়েছিল জাপাড৷ রুশ ফেডারেশনে এই মহড়া সর্বশেষ অনুষ্ঠিত হয় ২০১৩ সালে৷ ন্যাটো অভিযোগ তুলেছিল সেই মহড়ার মাধ্যমে ২০০৮ সালে জর্জিয়া আক্রমণ এবং ২০১৪ সালে ক্রিমিয়া ও পূর্ব ইউক্রেন দখলের প্রস্তুতিই নিয়েছিল রুশ সেনাবাহিনী৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A.Druginyn
কেমন হবে এবারের জাপাড?
অরগানাইজেশন ফর সিকিউরিটি অ্যান্ড কোঅপারেশন ইন ইউরোপ বা ওএসসিই-এর ২০১১ ভিয়েনা ঘোষণা অনুযায়ী, ১৩ হাজার সৈন্যের চেয়ে বেশি সৈন্য নিয়ে কোনো সামরিক মহড়া করলে অন্য দেশগুলোকে তা পর্যবেক্ষণ করার সুযোগ দিতে হবে৷ রাশিয়া বলছে, জাপাড মহড়ায় অংশ নেবে ১২ হাজার সাতশ সেনা৷ তবে পশ্চিমা নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা বলছেন, এই মহড়ায় এক লাখের কাছাকাছি সেনা অংশ নিতে পারে৷
গোপন অভিপ্রায় নেই
অন্য কোনো উদ্দেশ্য নিয়ে এই মহড়া করছে রাশিয়া, ন্যাটোর এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছে দেশটি৷ প্রস্তুতি থেকে বাস্তবায়ন পর্যন্ত সব ধাপই স্বচ্ছ রাখার ঘোষণাও দিচ্ছে রুশ সেনাবাহিনী৷ দেশটির উপ প্রতিরক্ষামন্ত্রী আলেক্সান্ডার ফোমিন ডয়চে ভেলেকে জানিয়েছেন জাপাড-২০১৭ হবে ‘খুবই শান্তিপূর্ণ এবং আত্মরক্ষামূলক’৷
ছবি: Getty Images/AFP/K. Kudryavtsev
পর্যবেক্ষণ করছে ন্যাটো
রাশিয়া যতই আশ্বাস দিক, তাতে মন গলছে না ন্যাটোর৷ সংস্থার মহাসচিব ইয়েন্স শটলটেনবার্ক বলছেন, ‘‘রাশিয়া যা বলছে, তার চেয়ে বেশি সেনা ব্যবহার করবে’’ স্নায়ুযুদ্ধের সময়কার স্মৃতি বিবেচনায় এ কথা ভাবতেই পারে পশ্চিমা দেশগুলো৷ ন্যাটো সতর্কতার সাথে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে বলেও জানান তিনি৷
ছবি: Reuters/I. Kalnins
ভয়ে আছে জার্মানিও
এ বছরের জাপাডে রাশিয়া ‘এক লাখেরও বেশি’ সেনা মোতায়েন করবে বলে আশংকার কথা জানিয়েছেন জার্মান প্রতিরক্ষামন্ত্রী উর্সুলা ফন ডেয়ার লাইয়েন৷ জানুয়ারিতে এক ন্যাটো মিশনের অংশ হিসেবে লিথুয়ানিয়ায় ৪৫০ জন সেনাসদস্য পাঠিয়েছিল জার্মানি৷ এই মহড়া নিয়ে অস্বস্তিতে আছে সাবেক সোভিয়েত ইউনিয়নের অংশ লিথুয়ানিয়াও৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Malukas
বেলারুশে বিক্ষোভ
জাপাড নিয়ে শুধু রাজনীতিবিদরাই বিচলিত নন, ক্ষোভ আছে খোদ বেলারুশের সাধারণ মানুষের মধ্যেও৷ জাপাড শুরুর সপ্তাহখানেক আগেই রাজধানী মিনস্কে জড়ো হন শত শত বিক্ষোভকারী৷ দেশটির সাত হাজার সেনা অংশ নেবে রাশিয়ার সাথে যৌথ এই মহড়ায়৷ জাপাড দু’দেশের মধ্যে সম্পর্কে আর উন্নতি ঘটাবে বলে মনে করে রাশিয়া৷ ছবিতে বিক্ষোভকারীদের হাতের ব্যানারে লেখা রয়েছে ‘শান্তিপূর্ণ বেলারুশ চাই’৷