বিবাহ বহির্ভূত যৌনসম্পর্ক এবং ‘অবৈধ' গর্ভপাতের দায়ে মরক্কোর এক সাংবাদিককে এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ তবে সরকারের সমালোচক হওয়ায় তাঁকে ফাঁসানো হচ্ছে বলে দাবি এ সাংবাদিকের ৷
বিজ্ঞাপন
মরক্কোর এক আদালত ২৮ বছর বয়সি সাংবাদিক হাজার রেইসনিকে অবৈধ গর্ভপাতের দায়ে এক বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে৷
আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনগুলো রেইসনির বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলাটির শুরু থেকেই সমালোচনা করে আসছিল৷ মরক্কোয় নারীদের দুরবস্থার এক উদাহরণ হিসেবেও মামলাটি তুলে ধরছে অনেক সংগঠন৷
গত ৩১ আগস্ট মরক্কোর রাজধানী রাবাতে এক স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞের ক্লিনিক থেকে বের হওয়ার সময় রেইসনিকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ৷ তাঁর আইনজীবী আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডাব্লিউজ)-কে জানিয়েছেন যে, তাঁকে গ্রেপ্তারের পর একটি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয় এবং জোর করে তাঁর শারীরিক পরীক্ষা করা হয়৷
সেই ঘটনার কিছুদিন পরই রেইসনির বিরুদ্ধে গর্ভপাত এবং বিবাহ বহির্ভূত যৌনসম্পর্কে জড়ানোর অভিযোগ আনা হয়৷
রেইসনি অবশ্য এই অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, একটি রক্তের চাকের কারণে চিকিৎসা নিতে চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলেন তিনি৷ তবে, প্রসিকিউশন জানিয়েছে, হাজার রেইসনির স্বাস্থ্য পরীক্ষায় ‘স্বেচ্ছায় গর্ভপাতের' প্রমাণ মিলেছে৷
মরক্কোর দণ্ডবিধির ৪৯০ ধারা অনুযায়ী, বিবাহ বহির্ভূত যৌন সম্পর্ক অবৈধ৷ আর একজন নারীর জীবনের ঝুঁকি তৈরি হওয়ার ছাড়া অন্য কোনো কারণে গর্ভপাতও অবৈধ৷ রেইসনি যে স্ত্রীরোগবিশেষজ্ঞের কাছে গিয়েছিলেন তাঁকে অবৈধ গর্ভপাত করানোর দায়ে দুই বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷
আলোচিত এই সাংবাদিকের বাগদত্তা আমিন রিফাতকেও এক বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে৷ রেইসনির আইনজীবীরা অবশ্য আদালতের রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করা হবে বলে জানিয়েছেন৷
সমালোচকরা অবশ্য বলছেন যে, মরক্কোর সরকার সমালোচক সাংবাদিকদের উপর দমনপীড়নের অংশ হিসেবে রেইসনিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে৷ তিনি ‘আখবার আল ইয়াওম' নামের একটি পত্রিকার সাংবাদিক যেটি মাঝেমাঝেই সরকারের সমালোচনা করে প্রতিবেদন প্রকাশ করে৷ রিপোর্টার্স উইদাউট বর্ডার্স পত্রিকাটিকে মরক্কোর যে কয়েকটি পত্রিকা এখনো স্বাধীন সাংবাদিককতার চর্চা করছে সেগুলোর একটি বলে উল্লেখ করেছে৷
মরক্কো সরকার অবশ্য গর্ভপাত মামলার সঙ্গে রেইসনির সাংবাদিকতার কোনো সম্পর্ক নেই বলে দাবি করেছে৷
এআই/এসিবি (এএফপি, রয়টার্স, এপি)
স্বাধীনভাবে মত প্রকাশের শাস্তি যখন কারাদণ্ড এবং নির্যাতন
মারধর, কারাদণ্ড, হত্যা: এই পাঁচ সাংবাদিক, শিল্পী, লেখক স্বাধীনভাবে তাঁদের মত প্রকাশের মূল্য দিচ্ছেন৷ ছবিঘরে জেনে নিই তাঁদের কথা৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Uz Zaman
অসম্পূর্ণ তালিকা
বিশ্বব্যাপী কতজন সাংবাদিক, কবি এবং লেখক কারাবন্দি বা নিখোঁজ তার সঠিক হিসাব কারো জানা নেই৷ এমনকি লেখকদের আন্তর্জাতিক সংগঠন ‘পেন’-এর কাছে মামলার যে তালিকা রয়েছে, সেটাও পূর্ণাঙ্গ তালিকা নয়৷
ছবি: picture alliance/dpa
ওয়াইল আব্বাস: কারাবন্দি
ওয়াইল আব্বাস একজন মিশরীয় ব্লগার৷ তাঁর ব্লগে নিজ দেশে মানবাধিকার লঙ্ঘন, দুর্নীতি, পুলিশের দ্বারা সহিংসতার কথা তুলে ধরতেন তিনি৷ এসব লেখার কারণে ২০১৭ সালের মে মাসে তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এখনো তিনি কারাবন্দি৷ পুলিশ তাঁর লেখার সব সরঞ্জাম এবং ব্যক্তিগত অনেক জিনিস জব্দ করেছে৷
ছবি: Facebook
শহীদুল আলম: কারাবন্দি, পরে মুক্তি
বাংলাদেশে নিরাপদ সড়কের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলন চলার সময় বাংলাদেশ সরকারের সমালোচনা করে আল-জাজিরা টেলিভিশনে বক্তব্য দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রখ্যাত আলোকচিত্রী, লেখক ও অধিকার কর্মী শহীদুল আলম৷ আগস্টের ৫ তারিখে তথ্য ও যোগাযোগপ্রযুক্তি আইনের বিশেষ ধারায় তাঁকে গ্রেপ্তার করা হয়৷ এখনো তিনি কারাবন্দি৷ ২০১৮ সালে মানবিকতার আলোকচিত্রের জন্য তিনি লুসি পুরস্কার পান৷ ২০ নভেম্বর জামিনে মুক্তি পান তিনি৷
ছবি: Munir Uz Zaman
মিরোস্লাভা ব্রিচ ভেলদুসিয়া: হত্যা
২০১৭ সালের মার্চ মাসে নিজ অ্যাপার্টমেন্টে খুন হন মেক্সিকোর এই সাংবাদিক৷ তাঁকে মাথায় গুলি করে হত্যা করা হয়৷ তিনি দেশের রাজনীতিবিদ এবং মাদকপাচারকারীদের মধ্যে যোগসূত্র এবং দুর্নীতি নিয়ে প্রতিবেদন করেছিলেন৷ ২০০৪ সাল থেকে এ পর্যন্ত দেশটিতে ৯৬ জন লেখক এবং সাংবাদিককে হত্যা করা হয়েছে৷
ছবি: EPA
দাওইত ইসাক: নিখোঁজ
ইরিত্রিয়ান-সুইডিশ এই লেখকের ঘটনা খুবই হতাশাজনক৷ ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে ইরিত্রিয়া থেকে গ্রেপ্তার হন তিনি এবং কারাবন্দি হওয়ার পর তাঁর আর কোনো খবর পাওয়া যায়নি৷ গত ১৭ বছর ধরে কেউ তাঁর সঙ্গে কোনো ধরনের যোগাযোগ করতে পারেনি৷ তিনি জীবিত আছেন কিনা তা নিয়েও সন্দেহ রয়েছে৷
ছবি: Kalle Ahlsén
ওলেগ সেন্তসভ: আটক এবং পুরস্কার বিজয়ী!
২০১৪ সালে ক্রাইমিয়ায় বিক্ষোভ চলাকালে রাশিয়ার বিরোধিতা করলে ইউক্রেনের লেখক এবং চলচ্চিত্র নির্মাতা ওলেগ সেন্তসভকে রুশ নিরাপত্তাকর্মীরা গ্রেপ্তার করে৷ রাশিয়ার সামরিক আদালত তাঁকে ২০ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছে৷ মুক্তচিন্তার বিকাশে ভূমিকা রাখায় ইউরোপীয় ইউনিয়নের সর্বোচ্চ মানবাধিকার বিষয়ক পুরস্কার সাখারভ সম্মাননা পেয়েছেন তিনি৷