1. কন্টেন্টে যান
  2. মূল মেন্যুতে যান
  3. আরো ডয়চে ভেলে সাইটে যান

দোকান উচ্ছেদ: ২০০ কোটি টাকা কার পকেটে?

হারুন উর রশীদ স্বপন ঢাকা
৮ ডিসেম্বর ২০২০

দোকানদারদের প্রতিরোধের মুখে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএসসিসি) ফুলবাড়িয়া এলাকায় অবৈধ দোকানপাট উচ্ছেদ শুরু করেছে৷ প্রথম দিনে ২৫০টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে৷ মোট অবৈধ দোকান রয়েছে প্রায় এক হাজার৷

ফুলবাড়িয়ায় দোকান উচ্ছেদ
ছবি: Harun Ur Rashid Swapan/DW

কিন্তু উচ্ছেদ হওয়ার পর দোকানদারেরা অভিযোগ করছেন, তারা গড়ে ২০ লাখ টাকায় একেকটি দোকানের পজেশন বরাদ্দ নিয়েছেন৷ সিটি কর্পোরেশন বলছে তারা কাদের টাকা দিয়েছে তা তাদের জানা নাই৷ তারা আদালতে গিয়ে মামলা করতে পারেন৷

উচ্ছেদ নিয়ে সংঘর্ষ
ডিএসসিসির ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ বহুতল মার্কেটটি নগর ভবনের পিছনের গেট থেকে মাত্র ১৫০ ফুট দূরে রাস্তার উল্টোদিকে৷ মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে  সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা ও তিনজন ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা তা প্রতিরোধের চেষ্টা করে৷ তারা ইট পাটকেল ছুড়লে সংঘর্ষ বেধে যায়৷ পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে৷ পরে অতিরিক্ত আরো পুলিশ এলে ব্যবসায়ীরা পিছু হটে এবং উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়৷ বিকেল ৪ টা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলে৷

ফুলবাড়িয়ায় দোকান উচ্ছেদ অভিযান

01:30

This browser does not support the video element.

ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন জানান, তাদের হিসেবে এই মার্কেটে ৯১১টি অবৈধ দোকান রয়েছে৷ সেগুলো মার্কেটের মূল নকশার বাইরে খালি জায়গা, লিফটের জায়গা এবং রাস্তা দখল করে বানানো হয়েছে৷ প্রথম দিনে ২৫০টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে৷ অভিযান অব্যাহত থাকবে৷ তিনি বলেন, ‘‘সিটি করর্পোরেশনের অন্য মার্কেটগুলোতেও অবৈধ দোকান উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে৷’’

কারা দোকান বানিয়ে বরাদ্দ দিলো?
উচ্ছেদের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর উপস্থিতির মধ্যেও উচ্ছেদের শিকার দোকনদারেরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ অনেকে মার্কেটের উপরেও অবস্থান নেন৷ উচ্ছেদ হওয়া দোকানদারদের একজন সাইফুল ইসলাম জানান, ২০০১ সাল থেকে  সিটি কর্পোরেশনের কিছু কর্মকর্তা এবং মার্কেট সমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মিলে ওই দোকানগুলো তৈরি করেন৷ এগুলো ধীরে ধীরে তৈরি করা হয়৷ এরপর পজেশন বিক্রি করা হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি একটি দোকানের পজেশন কিনেছি ৩০ লাখ টাকায়৷ আমি বিদ্যুৎ বিল দিয়েছি৷ আমার দোকানের হোল্ডিং নাম্বারও আছে৷ টাকা দিয়েছি মার্কেট সমিতির নেতাদের কাছে৷ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারাও বলেছিল আমাদের বৈধতা দেয়া হবে৷ কিন্তু এখন তো সব শেষ৷’’

সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারও বলেছিল আমাদের বৈধতা দেয়া হবে: সাইফুল ইসলাম, দোকানদার

This browser does not support the audio element.

আরেকজন দোকানদার অনিক আহমেদ বলেন, ‘‘মার্কেট সমিতি তার কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে দোকানের পজেশনের জন্য৷ আর বৈধ কাগজপত্র করে দেয়ার জন্য দিয়েছে আরো ১০ লাখ টাকা৷’’

সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দপত্র থাকার পরও দেলোয়ার হোসেন নামের আরেকজন দোকানদারও অবৈধ তালিকায় পড়েছেন৷ তার দোকানটি ভিতরে হওয়ায় এখনো ভাঙা হয়নি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাকে বরাদ্দপত্র দেয়া হলো৷ আমার কাছ থেকে বিদুৎ বিলও নেয়া হয়৷ এখন আমি কি করব বুঝতে পারছি না৷’’

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এইসব অবৈধ দোকানের একাংশকে ভুয়া বরাদ্দপত্রও দেয়া হয়েছে৷ সিটি কর্পোরেশনের একজন সম্পত্তি কর্মকর্তাসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত৷ বরাদ্দপত্র দেয়া হবে বলে দোকান প্রতি গড়ে অতিরিক্ত ১০ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে৷ প্রায় এক হাজার অবৈধ দোকান থেকে কম করে হলেও ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র৷

কারা টাকা নিয়েছে, কারা ভুয়া বরাদ্দপত্র দিয়েছে, তা জানিনা: ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন

This browser does not support the audio element.

এ নিয়ে কথা বলার জন্য মার্কেট সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে পাওয়া যায়নি৷  তবে ডিএসসিসি মার্কেট সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই প্রতারণা এবং অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ এবং বরাদ্দের সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের কিছু কর্মকর্তারও যোগসাজশ আছে৷ সিটি কর্পোরেশনের দেড়শ গজের মধ্যে এই মার্কেট, সেখানে তাদের চোখের সামনে নকশার বাইরে এইসব দোকান কীভাবে হল? এটাতো একদিনে হয়নি৷’’

তিনি আরো জানান, ‘‘সিটি কর্পোরেশন প্রতিনিধি তাদের কাছ থেকে এতদিন ভাড়ার টাকাও নিয়েছে৷ টাকা আদায়ের রসিদও দেয়া হয়েছে৷ আবার বৈধ করার জন্য অতিরিক্ত অর্থও নিয়েছে৷ এর মাধ্যমেই তাদের যোগসাজশ স্পষ্ট৷’’ সিটি কর্পোরেশন দোকানের পজেশন বরাদ্দ দেয়ার পর প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে ভাড়া নেয়৷

সিটি কর্পোরেশনের কিছু কর্মকর্তারও যোগসাজশ আছে: দেওয়ান আমিনুল ইসলাম

This browser does not support the audio element.

দায় নিচ্ছেনা ডিএসসিসি
তবে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘কারা টাকা নিয়েছে, কারা ভুয়া বরাদ্দপত্র দিয়েছে, তারা কাদের টাকা দিয়েছেন আমরা তা জানিনা৷ সিটি কর্পোরেশন নেয়নি৷ যারা নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন৷ দুদকে যেতে পারেন৷ আদালতে যেতে পারেন৷’’

সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত বা আইনগত পক্ষেপ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে তারা কোনো অভিযোগ করেননি৷’’

ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে এরকম ৮৬টি মার্কেট আছে৷ অভিযোগ আছে সব মার্কেটেই এরকম অবৈধ দোকানপাট নির্মাণ ও ভুয়া বরাদ্দ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন ও মার্কেট কমিটির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি চক্র৷ এখন সব মার্কেটেই উচ্ছেদ অভিযান হবে৷ তবে মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যাতে মূল মার্কেটের খালি থাকা দোকান বরাদ্দ পান তার উদ্যোগ নেবেন৷

স্কিপ নেক্সট সেকশন এই বিষয়ে আরো তথ্য

এই বিষয়ে আরো তথ্য

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

ডয়চে ভেলের শীর্ষ সংবাদ

স্কিপ নেক্সট সেকশন ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ

ডয়চে ভেলে থেকে আরো সংবাদ