দোকান উচ্ছেদ: ২০০ কোটি টাকা কার পকেটে?
৮ ডিসেম্বর ২০২০কিন্তু উচ্ছেদ হওয়ার পর দোকানদারেরা অভিযোগ করছেন, তারা গড়ে ২০ লাখ টাকায় একেকটি দোকানের পজেশন বরাদ্দ নিয়েছেন৷ সিটি কর্পোরেশন বলছে তারা কাদের টাকা দিয়েছে তা তাদের জানা নাই৷ তারা আদালতে গিয়ে মামলা করতে পারেন৷
উচ্ছেদ নিয়ে সংঘর্ষ
ডিএসসিসির ফুলবাড়িয়া সুপার মার্কেট-২ বহুতল মার্কেটটি নগর ভবনের পিছনের গেট থেকে মাত্র ১৫০ ফুট দূরে রাস্তার উল্টোদিকে৷ মঙ্গলবার সকাল ১১টার দিকে সিটি কর্পোরেশনের সম্পত্তি কর্মকর্তা ও তিনজন ম্যাজিষ্ট্রেটের নেতৃত্বে উচ্ছেদ অভিযান শুরু হলে ওই মার্কেটের ব্যবসায়ীরা তা প্রতিরোধের চেষ্টা করে৷ তারা ইট পাটকেল ছুড়লে সংঘর্ষ বেধে যায়৷ পুলিশ টিয়ার গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে৷ পরে অতিরিক্ত আরো পুলিশ এলে ব্যবসায়ীরা পিছু হটে এবং উচ্ছেদ অভিযান শুরু হয়৷ বিকেল ৪ টা পর্যন্ত উচ্ছেদ অভিযান চলে৷
ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন জানান, তাদের হিসেবে এই মার্কেটে ৯১১টি অবৈধ দোকান রয়েছে৷ সেগুলো মার্কেটের মূল নকশার বাইরে খালি জায়গা, লিফটের জায়গা এবং রাস্তা দখল করে বানানো হয়েছে৷ প্রথম দিনে ২৫০টি দোকান উচ্ছেদ করা হয়েছে৷ অভিযান অব্যাহত থাকবে৷ তিনি বলেন, ‘‘সিটি করর্পোরেশনের অন্য মার্কেটগুলোতেও অবৈধ দোকান উচ্ছেদ অভিযান চালানো হবে৷’’
কারা দোকান বানিয়ে বরাদ্দ দিলো?
উচ্ছেদের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর কঠোর উপস্থিতির মধ্যেও উচ্ছেদের শিকার দোকনদারেরা সেখানে দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ অনেকে মার্কেটের উপরেও অবস্থান নেন৷ উচ্ছেদ হওয়া দোকানদারদের একজন সাইফুল ইসলাম জানান, ২০০১ সাল থেকে সিটি কর্পোরেশনের কিছু কর্মকর্তা এবং মার্কেট সমিটির সভাপতি দেলোয়ার হোসেন মিলে ওই দোকানগুলো তৈরি করেন৷ এগুলো ধীরে ধীরে তৈরি করা হয়৷ এরপর পজেশন বিক্রি করা হয়৷ তিনি বলেন, ‘‘আমি একটি দোকানের পজেশন কিনেছি ৩০ লাখ টাকায়৷ আমি বিদ্যুৎ বিল দিয়েছি৷ আমার দোকানের হোল্ডিং নাম্বারও আছে৷ টাকা দিয়েছি মার্কেট সমিতির নেতাদের কাছে৷ সিটি কর্পোরেশনের কর্মকর্তারাও বলেছিল আমাদের বৈধতা দেয়া হবে৷ কিন্তু এখন তো সব শেষ৷’’
আরেকজন দোকানদার অনিক আহমেদ বলেন, ‘‘মার্কেট সমিতি তার কাছ থেকে ৩০ লাখ টাকা নিয়েছে দোকানের পজেশনের জন্য৷ আর বৈধ কাগজপত্র করে দেয়ার জন্য দিয়েছে আরো ১০ লাখ টাকা৷’’
সিটি কর্পোরেশনের বরাদ্দপত্র থাকার পরও দেলোয়ার হোসেন নামের আরেকজন দোকানদারও অবৈধ তালিকায় পড়েছেন৷ তার দোকানটি ভিতরে হওয়ায় এখনো ভাঙা হয়নি৷ তিনি বলেন, ‘‘আমাকে বরাদ্দপত্র দেয়া হলো৷ আমার কাছ থেকে বিদুৎ বিলও নেয়া হয়৷ এখন আমি কি করব বুঝতে পারছি না৷’’
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে এইসব অবৈধ দোকানের একাংশকে ভুয়া বরাদ্দপত্রও দেয়া হয়েছে৷ সিটি কর্পোরেশনের একজন সম্পত্তি কর্মকর্তাসহ আরো কয়েকজন কর্মকর্তা এর সঙ্গে জড়িত৷ বরাদ্দপত্র দেয়া হবে বলে দোকান প্রতি গড়ে অতিরিক্ত ১০ লাখ টাকা করে নেয়া হয়েছে৷ প্রায় এক হাজার অবৈধ দোকান থেকে কম করে হলেও ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র৷
এ নিয়ে কথা বলার জন্য মার্কেট সমিতির সভাপতি দেলোয়ার হোসেনকে পাওয়া যায়নি৷ তবে ডিএসসিসি মার্কেট সমিতি ফেডারেশনের সভাপতি দেওয়ান আমিনুল ইসলাম বলেন, ‘‘এই প্রতারণা এবং অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ এবং বরাদ্দের সঙ্গে সিটি কর্পোরেশনের কিছু কর্মকর্তারও যোগসাজশ আছে৷ সিটি কর্পোরেশনের দেড়শ গজের মধ্যে এই মার্কেট, সেখানে তাদের চোখের সামনে নকশার বাইরে এইসব দোকান কীভাবে হল? এটাতো একদিনে হয়নি৷’’
তিনি আরো জানান, ‘‘সিটি কর্পোরেশন প্রতিনিধি তাদের কাছ থেকে এতদিন ভাড়ার টাকাও নিয়েছে৷ টাকা আদায়ের রসিদও দেয়া হয়েছে৷ আবার বৈধ করার জন্য অতিরিক্ত অর্থও নিয়েছে৷ এর মাধ্যমেই তাদের যোগসাজশ স্পষ্ট৷’’ সিটি কর্পোরেশন দোকানের পজেশন বরাদ্দ দেয়ার পর প্রতি মাসে নির্ধারিত হারে ভাড়া নেয়৷
দায় নিচ্ছেনা ডিএসসিসি
তবে ডিএসসিসির প্রধান সম্পত্তি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, ‘‘কারা টাকা নিয়েছে, কারা ভুয়া বরাদ্দপত্র দিয়েছে, তারা কাদের টাকা দিয়েছেন আমরা তা জানিনা৷ সিটি কর্পোরেশন নেয়নি৷ যারা নিয়েছে তাদের বিরুদ্ধে ক্ষতিগ্রস্তরা আইনের আশ্রয় নিতে পারেন৷ দুদকে যেতে পারেন৷ আদালতে যেতে পারেন৷’’
সিটি কর্পোরেশনের পক্ষ থেকে কোনো তদন্ত বা আইনগত পক্ষেপ নেয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘‘আমাদের কাছে তারা কোনো অভিযোগ করেননি৷’’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনে এরকম ৮৬টি মার্কেট আছে৷ অভিযোগ আছে সব মার্কেটেই এরকম অবৈধ দোকানপাট নির্মাণ ও ভুয়া বরাদ্দ দিয়ে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে সিটি কর্পোরেশন ও মার্কেট কমিটির সমন্বয়ে গড়ে ওঠা একটি চক্র৷ এখন সব মার্কেটেই উচ্ছেদ অভিযান হবে৷ তবে মেয়র আশ্বাস দিয়েছেন প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত ব্যবসায়ীরা যাতে মূল মার্কেটের খালি থাকা দোকান বরাদ্দ পান তার উদ্যোগ নেবেন৷