‘সরকার এবার বাধ্য হবে’
১৮ জুলাই ২০১৩পরিবেশ আইনবিদ সমিতি বা বেলার মামলায় দেশের সর্বোচ্চ আদালত সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের চূড়ান্ত রায়ে ঢাকার আমিনবাজারে মধুমতি মডেল টাউনকে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে৷ এই পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ করা হয়েছে ১১ই জুলাই৷ রায়ে মধুমতি মডেল টাউনের ভূমি ৬ মাসের মধ্যে আগের অবস্থায় জলাভূমিতে ফিরিয়ে নিতে বলা হয়েছে৷ ব্যর্থ হলে এ কাজ করবে রাজউক, খরচ দেবে মধুমতি মডেল টাউনের মূল প্রতিষ্ঠান মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপারস৷ যাঁরা এই প্রকল্পে প্লট কিনেছেন, তাঁদের নিবন্ধনের টাকাসহ দ্বিগুণ অর্থ ফেরত দিতে বলা হয়েছে৷ সে সঙ্গে বলা হয়েছে, কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান ১০০ বিঘার বেশি জমি রাখতে পারবেনা৷
রাজউকের অনুমোদন ছাড়া মেট্রো মেকার্স অ্যান্ড ডেভেলপারস ঢাকা আরিচা মহাসড়কের পাশে বিলামালিয়া এবং বলিয়ারপুর মৌজায় বন্যা প্রবাহ অঞ্চল ভরাট করে সাড়ে ৫০০ একর বা দেড় হাজার বিঘা জমিতে এই হাউজিং প্রকল্প গড়ে তুলেছে৷ বিক্রি করেছে সাড়ে ৫ হাজারের বেশি প্লট৷
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির প্রধান নির্বাহী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান ডয়চে ভেলেকে জানান, ‘‘মধুমতি মডেল টাউন নিয়ে আদালতের রায় এখন দেশের সব হাউজিং কোম্পানির জন্য প্রযোজ্য৷ তা বাস্তবায়ন করতে হবে সরকারকে৷ এখন আর কেউ পরিবেশ, জলাধার, ভূমি মালিকানা আইন লঙ্ঘন করে হাউজিং প্রকল্প করতে পারবেনা৷ আর যাঁরা করেছেন, তাঁদের অবৈধ কাজ বন্ধ করতে হবে৷''
ভারপ্রাপ্ত এটর্নি জেনারেল এমকে রহমান বলেন, এই রায় সরকারের জন্য নির্দেশনামূলক৷ তাই রায়ের আলোকে সরকার তথা রাজউককে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ তিনি আরও বলেন, এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ রায় যা বাংলাদেশের অবৈধ হাউজিং ব্যবসা বন্ধে কাজ করবে৷
ডিটেইলড এরিয়া প্ল্যান বা ড্যাপ এলাকায় এখন রাজউক অনুমোদিত হাউজিং প্রকল্প ২৮টি৷ বন্যাপ্রবাহ অঞ্চলে, জলাধারে রাজউক কোনো প্রকল্পের অনুমোদন দিতে পারেনা৷ তাহলে ঢাকা এবং ঢাকার আশপাশে আরো যে ১ হাজারেরও বেশি হাউজিং প্রকল্প চলছে, সেগুলোর বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নেয়া হবে জানতে চাইলে রাজউক চেয়ারম্যান প্রকৌশলী মো. নুরুল হুদা জানান, তাঁরা আদালতের রায়ের আলোকে ব্যবস্থা নেবেন৷ এ জন্য জনবল বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে৷
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলনের সমন্বয়কারী স্থপতি ইকবাল হাবিব ডয়চে ভেলেকে জানান, তাঁরা এখন এই রায় পুরোপুরি বাস্তবায়নের জন্য মাঠে নামবেন৷ সরকার এবং রাজউক যেখানেই ব্যবস্থা নিতে গড়িমসি করবে সেখানেই তারা কথা বলবেন৷ আনবেন আদালতের নজরে৷ তাঁর মতে, এই রায়ের ফলে সরকারকে এখন চলমান সব অবৈধ হাউজিং প্রকল্পের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে৷ আর অবৈধ প্রকল্পের ভূমি আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে হবে৷ ফলে দেশের পরিবেশ রক্ষা পাবে৷ বন্ধ হবে ভূমিদস্যুতা৷