সেই ১৯৯৪ কি ৯৫ সালের কথা৷ ক্রিকেটে বাংলাদেশের সবচেয়ে বড় প্রতিপক্ষ কেনিয়া৷ এর আগে আইসিসির সহযোগী দলগুলোর মধ্যে থেকে দুটি দলকে বিশ্বকাপ খেলার সুযোগ দেয়া হলেও সেবারই প্রথম সেই সংখ্যা বাড়িয়ে করা হয় তিনটি৷
বিজ্ঞাপন
বিশ্বকাপে খেলার সবচেয়ে বড় সুযোগ তৈরি করেও কেনিয়ার কাছে সেমিফাইনালে হেরে হাতছাড়া হয় স্বপ্ন৷
সিলেটের বিভাগীয় স্টেডিয়াম তখন কেবল তৈরি হচ্ছে৷ গ্যালারিতে তখনও কংক্রিটের কাঁচা গন্ধও শুকোয়নি৷ পাশেই মেডিকেল কলোনিতে আদর্শ স্কুল৷ ৮টায় ক্লাস শুরু হয়ে ১১টায় টিফিন ব্রেক৷
টিফিন ব্রেকে সাধারণত দুই দলে ভাগ হয়ে চোর-পুলিশ খেলেই কাটতো সময়৷ বিশাল খোলা মাঠ আর পুরনো ঘর-বাড়ি আমাদের সে আনন্দে যোগ করতো নতুন মাত্রা৷ কিন্তু একদিন বন্ধু আশিক আর জোবায়ের খেলা বাদ দিয়ে জোর করে ধরে নিয়ে গেল সেই নির্মাণাধীন স্টেডিয়ামে৷ সেখানে নাকি বাংলাদেশের সঙ্গে কেনিয়া ক্রিকেট খেলবে৷
সাবেক অধিনায়কদের চোখে ইংল্যান্ড বিশ্বকাপ
এবারের বিশ্বকাপ কেন আলাদা? কার ব্যাটে উঠবে ঝড়? কোন বোলার ত্রাস ছড়াবেন? সেরা অধিনায়কই বা কে হবেন? কতদূর যাবে বাংলাদেশ? কে নিতে পারে ট্রফি? এমন সব প্রশ্নের উত্তর দিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়করা৷
ছবি: Getty Images/Graham Chadwick/ALLSPORT
হাবিবুল বাশার
ফরম্যাটের কারণে এবারের বিশ্বকাপ জমজমাট হবে৷ কারণ, প্রথমত, কোনো দুর্বল দল এই আসরে খেলার সুযোগ পায়নি৷ দ্বিতীয়ত, সব দলকে সবার সাথে খেলতে হবে৷ ফেভারিট হিসেবে ইংল্যান্ডকেই এগিয়ে রাখবো৷ বাংলাদেশ সেমিফাইনালে যাওয়ার যোগ্যতা রাখে, তবে আমার বিশ্বাস পঞ্চম হতে পারে৷ আলোচনায় না থাকলেও, চমক দেখাতে পারে ওয়েস্ট ইন্ডিজ৷ তবে অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাকেই এগিয়ে রাখবো, কারণ, তার ব্যক্তিত্ব ও অভিজ্ঞতা৷
ছবি: DW/Z. Chowdhury
মিনহাজুল আবেদিন নান্নু
সাম্প্রতিক ফর্ম এবং হোম কন্ডিশন বিবেচনায় আমি ইংল্যান্ডকেই ফেভারিট মনে করি৷ অস্ট্রেলিয়ারও ভালো সম্ভাবনা আছে৷ তবে বড় আসরে পাকিস্তান সব সময়ই চমক দেখিয়ে থাকে৷ এবারের আসরে বাংলাদেশ দল নিয়ে আমি অনেক আশাবাদী৷ আমার বিশ্বাস, নিজেদের সেরাটা খেলতে পারলে টাইগাররা সেমিফাইনালে খেলার যোগ্যতা রাখে৷ মুশফিকের ব্যাটিং সবার নজর কাড়তে পারে৷ মাশরাফির অধিনায়কত্ব বাংলাদেশ দলের সাথে বাকি দল গুলোর ব্যবধান গড়ে দিতে পারে৷
ছবি: Ratan Gomes
মোহাম্মদ আশরাফুল
সেরা ১০ দল খেলবে এবারের বিশ্বকাপে, এই কারণে লড়াইটা বেশি হবে৷ আগের আসরগুলোতে গ্রুপে এক বা দুটি তুলনামুলক দুর্বল দল সুযোগ পেতো৷ এবার সেটা হচ্ছে না৷ ইংল্যান্ডের বিশ্বকাপ রেকর্ড সন্তোষজনক না হলেও, এবারের দলটি ভিন্ন বার্তা দিচ্ছে৷ ইংলিশদের শিরোপা জয়ের অপেক্ষার অবসান হতে পারে বলে আমি মনে করি৷ আফগানিস্তান বাকি দলগুলোর জন্য চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ অধিনায়ক হিসেবে মাশরাফিকেই এগিয়ে রাখবো৷
ছবি: privat
আমিনুল ইসলাম বুলবুল
টি টোয়েন্টির কারণে ক্রিকেটে অনেক গতি এসেছে৷ তাই ব্যাটসম্যানরাই শাসন করবে এবারের আসর৷ সম্ভাবনা অনেকের থাকলেও ইংল্যান্ডের জস বাটলারকেই এগিয়ে রাখবো৷ এই ইংলিশ রয়েছেন দারুণ ছন্দে৷ বাটলার ছন্দে থাকলে এবারের আসরে তাঁর দল ইংল্যান্ড অনেক দূর যাবে৷ আর বল হাতে রশিদ খানের চমক দেখার অপেক্ষায় আছি৷ বিশ্ব ক্রিকেটের সর্বোচ্চ মঞ্চে এই লেগ স্পিনার ব্যাটসম্যানদের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারেন৷
ছবি: Ratan Gomes
খালেদ মাহমুদ সুজন
আমি পুরো আসরে বাংলাদেশের চমক দেখার অপেক্ষায়৷ আমার বিশ্বাস, বাংলাদেশ দল সেমিফাইনাল পর্যন্ত যাবে৷ সাকিবের এটি চতুর্থ বিশ্বকাপ৷ ঘূর্ণি বোলিংয়ের সাথে তার অভিজ্ঞতা যে কোনো দলের বিপক্ষেই ম্যাচের পরিস্থিতি পাল্টে দেয়ার ক্ষমতা রাখে৷ নিজের সেরাটা খেলতে পারলে শীর্ষ ব্যাটসম্যানদের তালিকায় আশা করি তামিমকে৷ আর অধিনায়ক মাশরাফি যে ছন্দে আছে তা আমাকে আরো আশাবাদী করে তুলছে বাংলাদেশকে নিয়ে৷
ছবি: privat
গাজী আশরাফ হোসেন লিপু
ইংল্যান্ডের পরই ভারত শিরোপার অন্যতম দাবীদার৷ এই দলে আছে কোহলি, ধোনির মতো অভিজ্ঞ ক্রিকেটার, বুমরার মতো বোলার৷ সব মিলে ভারত শিরোপা জিতলে মোটেও অবাক হবো না৷ ইংল্যান্ড হচ্ছে বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য আবেগের জায়গা৷ কারণ এখানে বিশ্বকাপে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশের৷ বাংলাদেশকে বলতে চাই, আসরের ডার্ক হর্স, যে দলটা তিন বা চারটা জয় পেতে পারে৷ তবে মাশরাফি বিন মোর্ত্তজার অধিনায়কত্বে পাল্টে যেতে পারে অনেক কিছুই৷
ছবি: DW/Z. Chowdhury
খালেদ মাসুদ পাইলট
ফেভারিটের তালিকায় সবার আগে ইংল্যান্ডকে রাখলেও আমার নজর থাকবে দক্ষিণ আফ্রিকার উপর৷ এই দলটা বিশ্বকাপে এসে চোকার হয়ে যায়৷ আমার বিশ্বাস, এবার তারা কাউকে সুযোগ দেবে না৷ কঠিন হলেও বাংলাদেশের সেমিতে খেলার সম্ভাবনা দেখছি৷ কন্ডিশন পেসারদের অনুকুলে হলেও বল হাতে নজর কাড়বে যে কোনো লেগ স্পিনার৷ আর ব্যাট হাতে ওয়ার্নার ও কোহলি শাসন করবে বলে আমার বিশ্বাস৷ অধিনায়কদের তালিকায় মাশরাফি বিন মোর্ত্তজাকেই এগিয়ে রাখবো৷
ছবি: DW/Z. Chowdhury
আকরাম খান
ফরম্যাটের কারণেে এবার দল গুলোর ব্যবধান খুবই কম৷ সবার সমান সুযোগ থাকবে৷ তাই বাংলাদেশকেই আমি এগিয়ে রাখবো৷ অন্য দলগুলোর তুলনায় অভিজ্ঞতায় আমরা অনেক এগিয়ে৷ আর দলের তরুণ ক্রিকেটাররাও রয়েছে দারুণ ছন্দে৷ সম্প্রতি শেষ হওয়া তিন জাতির সিরিজের ট্রফি জয় আমাকে আরো বেশি আশাবাদী করে তুলছে৷ জাসপ্রিত বুমরা যে কোনো ব্যাটসম্যানের জন্য আতঙ্ক হয়ে দাঁড়াতে পারে৷ আর ব্যাটসম্যানদের তালিকায় কোহলিকে সবার চেয়ে এগিয়ে রাখবো৷
ছবি: DW/Z. Chowdhury
8 ছবি1 | 8
বন্ধুদের পীড়াপীড়িতে নিজে খেলা বাদ দিয়ে বাধ্য হয়ে গেলাম ‘মানুষের' খেলা দেখতে৷ গ্যালারিই তখনও হয়নি, ফলে টিকেট বা প্রবেশমূল্যের প্রশ্নও ওঠে না৷ তার ওপর আমাদের ক্ষুদ্র আকৃতি আর গায়ে স্কুলের ইউনিফর্ম দেখে কেউ আর আমাদের নিয়ে মাথাও ঘামালো না৷
দিব্যি গ্যালারির এক কোণে বসে অনেক দূরে খেলোয়াড়দের দৌড়াদৌড়ির দিকে তাকিয়ে থাকলাম৷ মাঝেমধ্যেই খালি মাঠের কোনো এক কোণ থেকে হাততালি আর ‘বাংলাদেশ, বাংলাদেশ' চিৎকার ভেসে আসছিল৷ দেখলাম, অনেক দূরে আরেক গ্যালারিতে কয়েকজন দর্শক বসে আছেন৷
আমরা ঠিকমতো দেখতে পাচ্ছিলাম না৷ একে তো ফুটবলের চেয়ে আকারে ক্রিকেট বল অনেক ছোট, তার ওপর মাঠের মাঝখান থেকে কখন বল আমাদের দিকে ছুটে আসবে, সে অপেক্ষায় ধৈর্যচ্যূতি ঘটছে৷ এত বড় মাঠে এত ছোট বল নিয়ে এতগুলো মানুষের ছুটোছুটি আমাদের ঠিক পছন্দ হয়নি৷
একসময় ধৈর্য হারিয়ে কে জিতলো তা জানার অপেক্ষা না করে রওয়ানা দিলাম স্কুলের দিকে৷ কিন্তু তখন তো আর আমাদের হাতে হাতে ঘড়ি ছিল না৷ মোবাইল ফোন তো প্রশ্নই ওঠে না৷ যতই স্কুলের দিকে যেতে থাকলাম, আশেপাশের এলাকা খুব নীরব মনে হতে থাকলো৷ খুব কাছে গিয়ে বুঝলাম, টিফিন ব্রেক অনেক আগেই শেষ, ক্লাস শুরু হয়ে গেছে৷
তৎকালীন সময়ে মোটামুটি ভালো ছাত্র হওয়ার সুবাদে বসতাম প্রথম বেঞ্চে৷ ফলে আমার অনুপস্থিতি বেশ ভালোই নজর কেড়েছে শিক্ষকের৷ ক্লাস শেষ হওয়ার পর এক দৌড়ে ঢুকেও শেষ রক্ষা হয়নি৷ পরের ক্লাসের শিক্ষক এসেই আমাকে আমার তিন বন্ধুসহ বেশ অপমান করলেন৷ অন্যদের কথা জানি না, আমার এসব কোনো কথা গায়েই লাগেনি৷
কিন্তু বিপত্তি বাঁধলো যখন শিক্ষক অপমান করে সন্তুষ্ট না হয়ে বেঞ্চে কানে ধরে দাঁড়াতে বললেন৷ আমার অধ্যাপক বাবা নিজে পাশেই এক কলেজে ক্লাস নেওয়া শেষ করে আমাকে নিয়ে যান৷ নিজের মান-সম্মান নিয়ে আমার তেমন কখনোই কোনো আশা-ভরসা না থাকলেও আমাকে ‘কানে ধরা' অবস্থায় দেখলে তাঁর মান-সম্মানের কী হবে, সেটাই ছিল চিন্তার বিষয়৷
তবে বাঁচা গেল না৷ অনেক অনুরোধ সত্ত্বেও শিক্ষকের মন গলল না৷ বাবা স্কুলের সামনে এসে জানালা দিয়ে উঁকি দিয়েই দেখলেন, তাঁর সুপুত্র কানে ধরে দাঁড়িয়ে রয়েছে৷ এরপরের ইতিহাস রাগী বাবার প্রায় সকল সন্তানেরই অল্পবিস্তর একইরকম৷ ফলে আর বিস্তরিত বর্ণনায় গেলাম না৷
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের ম্যাচ জেতানো নায়কেরা
বিশ্বকাপে বাংলাদেশের জেতা ১৩টি ম্যাচে সেরার স্বীকৃতি টাইগাররা পেয়েছেন ১২ বার৷ বাকি একটি পুরস্কার যায় পরাজিত দলে৷ টাইগারদের মধ্যে দুইবার করে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছেন শুধু মোহাম্মদ আশরাফুল ও ইমরুল কায়েস৷
ছবি: Getty Images/R. Kinnaird
মিনহাজুল আবেদিন নান্নু, ১৯৯৯
১৯৯৯ সালে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ অংশ নেয় ক্রিকেট বিশ্বকাপে৷ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে যাত্রাটি শুরু হয় ছয় উইকেটের হার দিয়ে৷ বাংলাদেশ প্রথম জয় তুলে নেয় তৃতীয় ম্যাচে, স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে৷ এই ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন মিনহাজুল আবেদিন নান্নু৷ বাংলাদেশের ২২ রানে জেতা ম্যাচে ৬৮ রান (অপরাজিত) করেন তিনি৷ পাশাপাশি ৩ ওভার বল করে ১টি উইকেটও নিয়েছিলেন বিসিবির বর্তমান নির্বাচক৷
ছবি: M. Mohammad
খালেদ মাহমুদ সুজন, ১৯৯৯
১৯৯৯ সালের বিশ্বকাপে পাকিস্তানের বিপক্ষে আসরের দ্বিতীয় জয়টিও পেয়ে যায় বাংলাদেশ৷ ৬২ রানে জেতা সেই ম্যাচে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন খালেদ মাহমুদ সুজন৷ ব্যাট হাতে ২৭ রান করার পর বোলিংয়ে ৩ উইকেটও নিয়েছিলেন তিনি৷
ছবি: Getty Images/R. Kinnaird
মাশরাফি বিন মোর্তজা, ২০০৭
১৯৯৯ সালে প্রথমবার বিশ্বকাপে অংশ নিয়ে দুই ম্যাচে জয় পেলেও বিশ্বকাপে পরের জয়ের জন্য ৮ বছর অপেক্ষা করতে হয়েছে বাংলাদেশকে৷ ২০০৭ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজ বিশ্বকাপে ভারতের বিপক্ষে সেই জয়ের দেখা পায় টাইগাররা৷ ৪ উইকেট নিয়ে সেবার ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছিলেন মাশরাফি বিন মোর্তজা৷
ছবি: Getty Images/C. Rose
মোহাম্মদ আশরাফুল, ২০০৭
২০০৭-এর আসরে বিশ্বকাপের তৃতীয় জয়টিও পেয়ে যায় বাংলাদেশ৷ গ্রুপ পর্যায়ের সেই ম্যাচে বারমুডাকে হারায় টাইগাররা৷ ব্যাট হাতে ৩২ বলে হার না মানা ২৯ রান করায় ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ নির্বাচিহ হন মোহাম্মদ আশরাফুল৷ ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৭ উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/AFP/P. Singh
মোহাম্মদ আশরাফুল, ২০০৭
২০০৭ সালের সেই আসরেই প্রথম বারের মতো সুপার এইটে উঠে সাউথ আফ্রিকাকেও হারিয়ে দেয় বাংলাদেশ৷ ৮৩ বলে ৮৭ রান করে আবার ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন মোহাম্মদ আশরাফুল৷ ম্যাচটি বাংলাদেশ জিতেছিল ৬৭ রানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/A. Dennis
তামিম ইকবাল, ২০১১
২০১১ সালে ঘরের মাঠের বিশ্বকাপে তিনটি জয় পায় বাংলাদেশ৷ গ্রুপ পর্যায়ে প্রথমে আয়ারল্যান্ডকে হারায় ২৭ রানে৷ ওই ম্যাচে ৪৩ বলে ৪৪ রান তুলে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন তামিম ইকবাল৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
ইমরুল কায়েস, ২০১১
২০১১ বিশ্বকাপে গ্রুপ পর্যায়ের আরেক ম্যাচে ইংল্যান্ডকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ৷ সেই ম্যাচে ১০০ বলে ৬০ রান করে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন ইমরুল কায়েস৷ বাংলাদেশ জয়ী হয়েছিল ২ উইকেটে৷
ছবি: Getty Images/M. Lewis
ইমরুল কায়েস, ২০১১
২০১১ সালের সেই বিশ্বকাপের গ্রুপ পর্যায়ের ম্যাচে আরেকটি জয়ও পেয়ে যায় সহ-আয়োজক বাংলাদেশ৷ ওই ম্যাচে নেদারল্যান্ডকে ৬ উইকেটে হারিয়েছিল টাইগাররা৷ চট্টগ্রামে অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে ১১৩ বলে ৭৩ রান করে ম্যাচ সেরা হন ইমরুল কায়েস৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. Zaman
মুশফিকুর রহিম, ২০১৫
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে তিনটি ম্যাচে জয় পেয়েছিল বাংলাদেশ৷ তবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে জিতলেও ম্যাচে ম্যান অব ম্যাচ হাতছাড়া হয় বাংলাদেশের৷ তবে আফগানিস্তানকে ১০৫ রানে হারানোয় ৫৬ বলে ৭১ রানের অবদান রেখে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হয়েছিলেন মুশফিকুর রহিম৷
ছবি: Getty Images/C. Spencer
মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ, ২০১৫
২০১৫ সালের বিশ্বকাপে টাইগাররা দ্বিতীয় জয়টি পায় ইংল্যান্ডের বিপক্ষে৷ ওই ম্যাচে ১৩৮ বলে ১০৩ রান তুলে ‘ম্যান অব দ্য ম্যাচ’ হন মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ৷ বাংলাদেশ ওই ম্যাচ জিতেছিল ১৫ রানে৷
ছবি: Getty Images/AFP/S. Khan
সাকিব আল হাসান, ২০১৯
২০১৯ সালে বিশ্বকাপ মিশনের প্রথম ম্যাচে সাউথ আফ্রিকার বিপক্ষে জয় পায় বাংলাদেশ৷ ম্যাচে অলরাউন্ডার নৈপুণ্য দেখিয়ে ম্যান অব দ্য ম্যাচ হন সাকিব৷ ব্যাট হাতে করেছেন ৮৪ বলে ৭৫ রান আর বল হাতে ১০ ওভারে ৫০ রান দিয়ে নেন এক উইকেট৷ বাংলাদেশ জিতে যায় ২১ রানে৷
ছবি: picture-alliance/A. Salahuddin
11 ছবি1 | 11
এরপর জলে জলে বেলা গড়িয়েছে৷ ১৯৯৭ সাল৷ আমিও বড় হয়েছি, বাংলাদেশ দলও বড় হয়েছে৷ এখন তো ফেসবুক, ইউটিউবে বিশ্বের যে-কোনো প্রান্তে বসে অন্য প্রান্তের খেলা আমরা দেখে ফেলি৷ কিন্তু তখন একমাত্র ভরসা বিটিভিরও সরাসরি খেলা দেখানোর নিজস্ব ব্যবস্থা ছিল না৷ ফলে আইসিসি ট্রফির সেমিফাইনালে স্কটল্যান্ডকে হারিয়ে বাংলাদেশ যখন প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা অর্জন করল, সেটি জানতেও আমার লেগে যায় অনেক সময়৷
ফাইনালে আর সে ভুল করিনি৷ আগের দিন ৫০ ওভারে ২৪১ রান করেছিল কেনিয়া৷ স্টিভ টিকোলো একাই করেছিলেন ১৪৭ রান৷ কিন্তু এরপর বৃষ্টিতে আর বাংলাদেশ মাঠেই নামতে পারেনি৷ পরদিন খেলা হবে৷ খোঁজ-খবর নিয়ে সকাল থেকে সব কাজ গুছিয়ে বাসার লাল ট্রানজিস্টারটা ঠিকঠাক টিউনিং করে শুনছি ধারাভাষ্য৷ মালয়েশিয়ার সেই কিলাত কেলাব মাঠ৷ প্রতিপক্ষ সেই কেনিয়া৷ ডাকওয়ার্থ-লুইস মেথডে নতুন লক্ষ্য ২৫ ওভারে ১৬৬৷
তখনকার দিনে বড় সারির দলের সামনেও প্রতিপক্ষ যে-ই হোক না কেন মাত্র ২৫ ওভারে এ লক্ষ্য অতিক্রম করা খুবই দুসাধ্য৷ কিন্তু ধীরে ধীরে নিয়মিত উইকেট হারালেও এগোতে থাকলো বাংলাদেশ৷ সারাজীবন মনে থাকবে শেষ বলটির কথা৷ ধারাভাষ্যকার যখন বললেন, এক বলে দরকার এক রান, ক্রিজে তখন হাসিবুল হোসেন শান্ত৷ সেই যে কানে ধরেছিলাম তিন-চার বছর আগে, তার সব রাগ গিয়ে পড়ল কেনিয়ার ওপর৷ উত্তেজনায় লাল হয়ে গিয়েছিল কান৷
রেডিওতে শুনলেও ঠিক যেন নিজের চোখেই দেখতে পাচ্ছিলাম শান্তর পায়ে লেগে বল চলে গেছে৷ এক দৌড়ে মাঠে নেমে গেছে পুরো গ্যালারি৷ ততক্ষণে আমি এক ছুটে বাড়ি ছেড়ে রাস্তায়৷ শিশু থেকে বৃদ্ধ, নারী-পুরুষ, হাজার হাজার মানুষ রাস্তায়৷ সেই প্রথম বাংলাদেশের ক্রিকেট-উন্মাদনা আমার গায়ে লেগেছিল৷
বাংলাদেশ এরপর অনেক এগিয়েছে৷ ওয়ানডে স্ট্যাটাস তো আগেই ঘোষণা হয়েছিল, ২০০০ সালে মিলে যায় টেস্ট স্ট্যাটাসও৷ কিন্তু কখনো কি মনে পড়ে, কী হলো সেই কেনিয়ার? কোথায় আছেন সেই মাঠ কাঁপানো স্টিভ টিকোলো, মরিস ওদুম্বে, টমাস ওদোয়ো, মার্টিন সুজি, টনি সুজি?
বাংলাদেশ যখন কেবল ক্রিকেটের কৈশোরে, তখনই দুর্দান্ত দাপটে খেলতো কেনিয়া৷ ব্যক্তিগত শতরান, দলের তিনশ' ছুঁইছুঁই স্কোরের অভাব নেই৷ ১৯৯৬ সালে ওডিআই স্ট্যাটাস পেয়েছিল সে দেশটিও৷ ১৮ বছরের লড়াইয়ে পাঁচটি বিশ্বকাপ খেলেছে দেশটি৷ ২০০৩ সালে সবাইকে চমকে দিয়ে সেমিফাইনালে উঠে যাওয়া সেই কেনিয়া ২০১৪ সালে এসে বাছাইপর্বে পঞ্চমস্থান পেয়ে ওয়ানডে স্ট্যাটাসই হারিয়ে ফেলে৷
কিন্তু কেন এমন হবে? জানি, এর কোনো সহজ উত্তর নেই৷ একটি দেশের অভ্যন্তরের রাজনীতি, অর্থনীতি, অনেক কিছুই প্রভাব ফেলে খেলাতেও৷ কিন্তু ফুটবল নিয়ে ফিফা যেভাবে বিশ্বব্যাপী এগিয়ে যাচ্ছে, তুলনা করলে ক্রিকেট কি সে অর্থে আইসিসির হাতে সত্যিকার অর্থে ‘ইন্টারন্যাশনাল' হয়েছে?
এখন আরব আমিরাত, হংকংয়ের মতো অনেক নতুন দল উঠে আসছে বটে, কিন্তু লক্ষ্য করলে দেখা যাবে, সেসব দলের অধিকাংশই ভারতীয় উপমহাদেশ থেকে সে দেশগুলোতে অভিবাসী৷ সেই দেশগুলোতেও কি স্থানীয়দের মধ্যে জনপ্রিয় হতে পারছে ক্রিকেট?
এশিয়া কাপে কেন ভারত, বাংলাদেশ, পাকিস্তান, আফগানিস্তান, শ্রীলঙ্কা, নামের কয়েকটা দলের আধিপত্য? কেন এশিয়া কাপে খেলার জন্য পুরো এশিয়া মহাদেশে হইহই কাণ্ড শুরু হয় না? কেন আফ্রিকার প্রায় অর্ধশত দেশ থেকে নতুন কোনো দেশ ক্রিকেটে এগিয়ে আসছে না?
বিশেষজ্ঞরা হয়তো বলতে পারবেন ভালো, কিন্তু একটা খেলায় কেন এত বাধা প্রয়োগ করে চূড়ান্ত পর্বে গুটিকয়েক দলকে সুযোগ দেয়া হবে, আর তারপর সেটাকে ‘বিশ্বকাপ' নাম দিয়ে ‘প্রহসন' করা হবে, তা-ও আমি কখনোই বুঝতে পারি না৷ আমার কাছে ফুটবল মানে বৃষ্টির মধ্যেও কাদা মাঠে ইচ্ছেমতো ছুটাছুটি, ক্রিকেট মানে ইট দিয়ে বা দেয়ালে দাগ কেটে বানানো স্ট্যাম্প দিয়ে, গাছের গুঁড়ি কেটে বানানো ব্যাট আর লন টেনিসের বল দিয়ে খেলা৷
সেদিনের অপেক্ষায় থাকবো, যেদিন অভিজাতদের কবল থেকে মুক্ত হবে ক্রিকেট৷
প্রিয় পাঠক, আপনার কি কিছু বলার আছে? লিখুন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷