লন্ডন হলো ইউরোপের স্টার্ট-আপ ‘হাব', অর্থাৎ কেন্দ্রস্থল৷ টেক দুনিয়ার নতুন ইনোভেশন, নতুন বিজনেস আইডিয়া এখানেই সার্থক হতে পারে – যদি না ঠিকমতো কর্মী সংগ্রহ করতে গিয়ে ব্রিটেনের অভিবাসন নীতির সম্মুখীন হতে হয়৷
বিজ্ঞাপন
টেক স্টার্ট-আপগুলোকে বাড়তে গেলে, তাদের নতুন কর্মী নিতে হয়৷ কিন্তু ব্রিটেনের অভিবাসন নীতি ক্রমেই আরো সংকীর্ণ হওয়ার ফলে বিশ্বব্যাপী যে প্রতিভাধরদের ভাণ্ডার রয়েছে, তা থেকে কর্মী সংগ্রহ করা ক্রমেই আরো বেশি শক্ত হয়ে উঠছে৷
রয়টার্স সংবাদ সংস্থার ‘ইনসাইট' পর্যায়ে গত সপ্তাহে ব্রিটেনের দিকে নজর দেওয়া হয় এবং মার্কিন মুলুক থেকে লন্ডনে আগত এক টেক প্রতিভার কাহিনি শোনানো হয়৷ এফে কাকারেল তাঁর এমইউবিআই বা মুবি কোম্পানিটির গোড়াপত্তন করেন সাত বছর আগে৷ তখনও তিনি ক্যালিফর্নিয়ার পালো আল্টোতে থাকতেন৷ ২০১০ সালে তিনি লন্ডনে আসার সিদ্ধান্ত নেন, কেননা স্বদেশে থেকে নেটফ্লিক্স কিংবা হুলুর মতো বড় কোম্পানির গ্রাসে পড়ার ইচ্ছে তাঁর ছিল না৷
কেন? কারণ মুবি হলো একটি অনলাইন সার্ভিস, যা থেকে দিনে একটি ফিল্ম (অর্থাৎ কাহিনিচিত্র) অর্ডার করা যায়৷ কারাকেল তাঁর মুবি কোম্পানি নিয়ে ইউরোপে আসেন এবং অবশ্যই লন্ডনে আড্ডা গাড়েন – বিশেষ করে ব্রিটেন যখন তাঁকে বিশেষ দক্ষ কর্মীদের জন্য ‘স্পেশ্যাল' ভিসাটি প্রদান করে৷ সেযাবৎ কারাকেল-এর কোম্পানি প্রতি সপ্তাহে তিন শতাংশ করে বাড়ছে৷ কোম্পানিটি গোড়ায় মার্কিন মুলুক থেকে ভেঞ্চার ক্যাপিটাল এনেছিল৷ তাই দিয়েই অফিসের ভাড়া, কর্মীদের মাইনে ইত্যাদি দেওয়া সম্ভব হয়েছিল৷ তার পর থেকে কোম্পানি বাড়তে থাকে: আজ মুবিতে ২০ জন মানুষ কাজ করেন এবং কারাকেল-এর আরো ডজন খানেক ভালো প্রোগ্রামার দরকার – যাঁদের তিনি পারলে সরাসরি সিলিকন ভ্যালি থেকে নিয়ে আসতেন৷ কিন্তু সে গুড়ে বালি দিয়েছে ব্রিটেনের অভিবাসন নীতি৷
২০১৪ সালে ইউরোপীয় ইউনিয়নের চ্যালেঞ্জ
ইইউ অঞ্চলের বিদ্যমান সংকট নিরসনে নতুন বছরে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয়া হবে৷ ছবিঘরে সেসব বিষয় সম্পর্কে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
ছবি: picture-alliance/dpa
নির্মাণাধীন ভবন
ইউরোপীয় ইউনিয়ন প্রতিনিয়ত বদলাচ্ছে৷ গড়ে উঠছে নতুন নতুন ভবন৷ ভবন নির্মাণের সময় প্রচুর শব্দ হয়, ধুলাও হয় প্রচুর৷ আর্থিক দিকটা দেখে নির্মাণ প্রতিষ্ঠান আর নির্মাণ শ্রমিকরা নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করেন, আশপাশের এলাকাবাসীর সব রকমের ঝামেলাই মেনে নিতে হয়৷
ছবি: DW
ইউরোপীয়দের আছে বিকল্প
চলমান সংকটের সময় ইইউ-র নানা কর্মসূচিকে প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে, অনেক ক্ষেত্রে কর্মসূচির কার্যকারীতা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করা হয়েছে৷ মে মাসে অনুষ্ঠেয় ইউরোপীয় নির্বাচনেও এর প্রভাব দেখা যেতে পারে৷ গত কয়েক বছর ধরে নির্বাচনে ভোটারের উপস্থিতি কমছিল৷ কিন্তু এবার ভোটারদের অংশগ্রহণ বাড়াতে বিভিন্ন ধরণের উদ্যোগ নিচ্ছে ইইউ পার্লামেন্ট৷ এমনকি টেলিভিশনে বিতর্কের মাধ্যমেও অংশগ্রহণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে৷
ছবি: Getty Images
ইউরোপীয় বিস্ময়?
ইইউ-র সংশয়বাদী অংশগুলো নিজেদের ভোট বাড়ানো জন্য উঠেপড়ে লেগেছে৷ ব্রিটেনের ইউকে ইন্ডিপেনডেন্ট পার্টি, ফ্রান্সের ন্যাশনাল ফ্রন্ট কিংবা জার্মানির অল্টারনেটিভ ফর ডয়েচলান্ড – সবাই চায় ‘স্বল্প ইউরোপ’৷ প্রশ্ন হলো, তারা কি একটি স্থিতিশীল প্যান-ইউরোপিয়ান জোট গড়তে পারবে?
ছবি: picture alliance/ZUMA Press
সংকট ব্যাবস্থাপনা
কয়েক বিলিয়ন বেইলআউট সংকটাপন্ন ইউরোপে কিছুটা স্থিতিশীলতা এনেছে৷ আর্থিক অনুদান এবং সংস্কার কর্মসূচির মাধ্যমে আয়ারল্যান্ড ইইউ-র বিশেষ অর্থায়নের সহায়তা ছাড়াই চলতে পারছে৷ অন্য দেশগুলোতেও কৃচ্ছতা সাধন এবং আর্থিক সংস্কার কর্মসূচিতে কঠোরতা আসার অপেক্ষায়৷
ছবি: picture-alliance/dpa
সংকট নিরসনে অলৌকিকের সহায়তা?
সংকট নিরসনের আগে কারণটা জানতে হয়৷ ইইউ অঞ্চলে ব্যাংকিং ব্যবস্থার দুর্বলতা দূর করার চেষ্টা চলছে৷ যেসব ব্যাংকের অস্তিত্ব বিপন্ন, তাদের কখনোই দেশের অর্থনৈতিক সংকট চরমে তোলার মতো পদক্ষেপ নেয়া উচিত নয়, নাগরিকদের উচিত নয় করের টাকায় ব্যাংকগুলোকে বেইলআউটের দিকে এগিয়ে দেয়া৷ প্রস্তাবিত ব্যাংকিং ইউনিয়ন গুরুত্বপূর্ণ আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে দেউলিয়া হওয়া থেকে বাঁচাতে ইইউকে আগেই হস্তক্ষেপ করার সুযোগ দেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাকুরি প্রত্যাশীদের জন্য সুখবর
ইইউ অঞ্চলের ২ কোটি ৬০ লাখেরও বেশি বেকারের জন্য পরিস্থিতি কিছুটা ভালো হতে পারে৷ অতীতে সংকটের সময় কর্মহীনদের কাজ দেয়ার ব্যাপারে সহায়তা না করায় কঠোর আর্থিক পরিকল্পনা এবং আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সমালোচনা হয়েছে৷ এবার ব্রাসেলস থেকে সাহায্যের হাত বাড়ানো হবে, সংকটাপন্ন দেশগুলোর তরুণদের সহায়তা করবে ইইউ-র বিভিন্ন কর্মসূচি৷
ছবি: picture-alliance/dpa
চাই আরো প্রতিযোগিতার মনোভাব
বৈশ্বিক প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে ইইউ অঞ্চলের অর্থনীতিকে আরো শক্তিশালী করতে হবে৷ এ লক্ষ্যে উন্মুক্ত অভ্যন্তরীণ বাজার এবং তৃতীয় দেশের সঙ্গে মুক্ত বাণিজ্যকে উৎসাহিত করার কথা ভাবছে ইউরোপীয় কমিশন৷ এছাড়া ইইউ-র সংকটগ্রস্ত সদস্য দেশগুলোকে নিজ নিজ সমস্যা সমাধানে অবশ্যই আরো বেশি উদ্যোগী হতে হবে৷
ছবি: Getty Images
তথ্য নিরাপত্তা ২.০
ইইউ অঞ্চলে দু’বছর পর্যন্ত সবার টেলিফোন এবং ইন্টারনেট তথ্যের রেকর্ড রাখা আইনসম্মত৷ তবে এক্ষেত্রে পরিবর্তন আসতে পারে৷ ইউরোপীয় কোর্ট অফ জাস্টিস এ বছরের শুরুতেই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত আইনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে৷ বিচারকদের অনেকেই মনে করেন, দীর্ঘমেয়াদে তথ্য ধারণ করে রাখলে মৌলিক অধিকার ক্ষুণ্ণ হয়৷ তাই তথ্য ধারণ সংক্রান্ত প্রচলিত নিয়মে পরিবর্তন আসতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে৷
ছবি: CC-BY-Verena Hornung 3.0
অভিবাসন নীতিমালা
ইইউ অঞ্চলে শরণার্থী এবং রাজনৈতিক আশ্রয় বিষয়ক নীতিমালা নিয়ে বিতর্ক চলছে৷ ২০১৩ সালের অক্টোবরে ইউরোপে উন্নত জীবনের আশায় এসে ৩৬০ জন আফ্রিকান অভিবাসী ভূমধ্যসাগরে ডুবে মরার পর, ইইউ-র অভিবাসন নীতিমালা পড়েছে তোপের মুখে৷ নতুন বছরে ইইউ তাই অভিবাসন প্রত্যাশীদের মূল দেশ এবং ট্র্যানজিট দেশের সঙ্গে সহযোগীতা বৃদ্ধিতে উদ্যোগী হবে৷ এক্ষেত্রে উল্লেখিত দেশগুলোকে আরো বেশি উন্নয়ন সহায়তা দেয়ার কথাও ভাবছে ইইউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa
9 ছবি1 | 9
ভিসা বাতিল
কারাকেল যে ভিসায় ব্রিটেনে এসেছিলেন, তা বাতিল হয়ে গেছে ২০১২ সালে৷ টায়ার ওয়ান পোস্ট স্টাডি ওয়ার্ক ভিসা বলে যে ভিসাটিতে ব্রিটিশ ইউনিভার্সিটিগুলির বিদেশি ছাত্রছাত্রীরা পড়াশুনা শেষ করার পর অন্তত কিছুদিন ব্রিটেনে কাজ করার সুযোগ পেতেন – তা-ও বাতিল করা হয়েছে৷ অবশ্যই লন্ডনের টেক সম্প্রদায় প্রচুর চেঁচামেচি করার পর গত এপ্রিল মাস থেকে একটি টায়ার ওয়ান ‘এক্সেপশনাল ট্যালেন্ট' বা ‘ব্যতিক্রমী প্রতিভা' ভিসা চালু করা হয়েছে, কিন্তু তার কোটা হলো বছরে দু'শোটি ভিসা৷ অথচ লন্ডনে টেক স্টার্ট-আপ'এর সংখ্যা প্রায় এক হাজার এবং তাদের মধ্যে একশো'টি সংস্থা লোক নিচ্ছে৷ কাজেই ব্যতিক্রমী প্রতিভাদের কোটায় সে খাঁই মিটবে না৷
কাজেই লন্ডনকে কোনো একটা পন্থা ভাবতে হবে: ইউকেআইপি-র মতো অভিবাসন-বিরোধী দলের বিপুল সাফল্যে চমকে গিয়ে হাত-পা গুটিয়ে বসে থাকলে চলবে না৷ কারাকেল যেমন বলেছেন: ‘‘লোক চাই, লোক দিয়েই কাজ হয়৷ তোমার যদি প্রতিভাধরদের ধরে রাখার মতো নীতি না থাকে, তাহলে সেই প্রতিভা অন্য কোথাও যাবে৷''