যাঁকে মনে করা হতো ইউরোপের সবচেয়ে ক্ষমতাবান, সেই আঙ্গেলা ম্যার্কেলের আসন এখন নিজের দেশেই টালমাটাল৷ ‘শরণার্থী সংকট' নিয়ন্ত্রণে না আসা পর্যন্ত পরিস্থিতির উন্নতির সম্ভাবনা কম৷ জাতিসংঘের প্রতিবেদন সংকট বাড়ার ইঙ্গিতই দিচ্ছে৷
বিজ্ঞাপন
জাতিসংঘের শরণার্থী বিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআর-এর সর্বশেষ প্রতিবেদন বলছে, মধ্যপ্রাচ্য থেকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ইউরোপমুখী স্রোত আগের সব সময়ের চেয়ে অনেক বেশি প্রবল৷ শুধু অক্টোবর মাসেই ইউরোপে প্রবেশ করেছে ২ লক্ষ ১৮ হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী৷ এর মধ্যে ২ লক্ষ ১০ হাজার ২৬৫ জন সমুদ্রপথে তুরস্ক থেকে ঢুকেছে গ্রিসে৷ বাকি ৮ হাজার ১২৯ জন উত্তর আফ্রিকার দেশগুলো থেকে ইটালিতে ঢুকেছে৷ শুরুতে গ্রিস আর ইটালিতে প্রবেশ করলেও অভিবাসনপ্রত্যাশীরা অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ ইউরোপীয় দেশগুলোতে ছড়িয়ে পড়ছে৷ ইউএনএইচসিআর-এর হিসেব অনুযায়ী এ বছর মোট অন্তত ৬ লক্ষ মানুষ অভিবাসী হতে ইউরোপে এসেছে৷
সবচেয়ে বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশী এসেছে জার্মানিতে৷ আঙ্গেলা ম্যার্কেল সরকার এখনো স্বাগতই জানাচ্ছে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের৷
তবে উল্টো স্রোত তীব্র থেকে তীব্রতর হচ্ছে রাজনীতির ময়দানে৷ ব্যাপক হারে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আগমনে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল জোটের মধ্যেই কোণঠাসা৷ বিশ্লেষকরার বলছেন, এখন তিনি রাজনৈতিক জীবনেরই সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি৷
এবং সেই চ্যালেঞ্জের সামনে তিনি একা!
এদিকে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের নিয়ে জনমনেও ক্ষোভ এবং শঙ্কা বাড়ার ইঙ্গিত দেখা যাচ্ছে৷ জার্মানির কিছু শিবির থেকে হঠাৎ উধাও হয়ে যাচ্ছেন অভিবাসনপ্রত্যাশীরা৷ অনেকে নাম, পরিচয় নথিভুক্ত করার আগেই গোপনে শিবির ছাড়ছেন৷ লোয়ার স্যাক্সনির শিবিরগুলো থেকে এ পর্যন্ত ৭০০ অভিবাসনপ্রত্যাশী উধাও হয়ে যাওয়ায় স্থানীয় প্রশাসনও পড়েছেন সমালোচনার মুখে৷ অনেকেই নাম নথিভুক্ত করার আগেই চলে গেছেন বলে সারা দেশের মোট ‘নিখোঁজ' অভিবাসনপ্রত্যাশীর সংখ্যা নির্ণয় করা যাচ্ছেনা৷ তবে সংখ্যাটা যত বড় হচ্ছে, ততই বাড়ছে অসন্তোষ, ক্ষোভ, শঙ্কা এবং ম্যার্কেলের সমালোচনা৷
শরণার্থীরা তাদের গন্তব্য হিসেবে জার্মানিকে বেছে নিচ্ছে৷ জার্মানিও তাদের প্রতি সহানুভূতি দেখাচ্ছে৷ কিন্তু জার্মানিতে এত শরণার্থী চান না অনেকে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
‘বিশ্বাসঘাতক’ ম্যার্কেল
জার্মানির ইসলাম ও অভিবাসী বিরোধী গোষ্ঠী পেগিডার হাজার হাজার সমর্থক সোমবার জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের শরণার্থী নীতির বিরুদ্ধে বিক্ষোভ করেছে৷ শরণার্থীদের প্রতি নরম মনোভাবের কারণ তারা ম্যার্কেলের বিরুদ্ধে ‘উচ্চ পর্যায়ের বিশ্বাসঘাতকতা’ ও ‘জার্মানির মানুষের বিরুদ্ধে অপরাধ’-এর অভিযোগ আনেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
শরণার্থীদের নিয়ে কটূক্তি
পেগিডার (প্যাট্রিয়টিক ইউরোপিয়ান অ্যাগেনস্ট দ্য ইসলামাইজেশন অফ দ্য অক্সিডেন্ট) প্রতিষ্ঠাতা লুটৎস বাখমান সম্প্রতি শরণার্থীদের ‘পশু’, ‘আবর্জনা’ ও ‘উচ্ছৃঙ্খল জনতা’ বলে আখ্যায়িত করেন৷ এ জন্য তাঁর বিরুদ্ধে মামলা করেছে সরকার৷
ছবি: picture-alliance/dpa/O.Berg
সমাজে অন্তর্ভুক্তি সম্ভব নয়
সোমবার বিক্ষোভের সময় বাখমান বলেন, শরণার্থীর সংখ্যা দেড় কিংবা দুই মিলিয়নেই থেমে থাকবে না৷ এরপর আসবে তাদের স্ত্রী; আসবে এক, দুই কিংবা তিন সন্তান৷ ফলে এতগুলো লোকের জার্মান সমাজে অন্তর্ভুক্তির কাজ অসম্ভব হয়ে পড়বে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/B. Settnik
জার্মান সরকারের অস্বীকার
জার্মানির জনপ্রিয় পত্রিকা ‘বিল্ড’ সরকারের গোপন ডকুমেন্টের উদ্ধৃতি দিয়ে জানিয়েছে, চলতি বছর জার্মানিতে প্রায় দেড় মিলিয়ন শরণার্থী আসবে বলে মনে করছে সরকার৷ যদিও প্রকাশ্যে সরকার বলছে সংখ্যাটা এক মিলিয়ন হতে পারে৷ তবে জার্মান সরকারের এক মুখপাত্র এ ধরনের কোনো গোপন ডকুমেন্টের কথা তিনি জানেন না বলে সাংবাদিকদের বলেছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Thalia Engel
শরণার্থীর মৃত্যু
জার্মানির পূর্বাঞ্চলের এক শরণার্থীদের বাসস্থানে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় ইরিত্রিয়া থেকে আসা ২৯ বছরের এক শরণার্থীর মৃত্যু হয়েছে৷ অগ্নিকাণ্ডের কারণ এখনও জানা যায়নি৷ এদিকে, জার্মান সরকারের হিসেবে দেখা যাচ্ছে, চলতি বছর শরণার্থী ও তাদের বাসস্থানের উপর হামলার সংখ্যা বেড়েছে৷ এ বছরের প্রথম ছয় মাসেই এরকম ২০২টি ঘটনা ঘটেছে বলে সরকার জানিয়েছে, যেখানে গত বছর সংখ্যাটি ছিল ১৯৮৷
ছবি: picture-alliance/dpa
বিপদে ম্যার্কেল
শরণার্থীদের সঙ্গে এমন আচরণের কারণে নিজ দল সহ অন্যান্য দলের রাজনীতিবিদদের তোপের মুখে পড়েছেন ম্যার্কেল৷ তাঁরা জার্মানির শরণার্থী নীতি ও শরণার্থীদের আগমনের সংখ্যা নিয়ন্ত্রণে চ্যান্সেলরকে আরও কঠোর হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/F. Bensch
6 ছবি1 | 6
সংকলন: আশীষ চক্রবর্ত্তী
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ
আপনি কি ম্যার্কেলের এই অভিবাসননীতি সমর্থন করেন? জানিয়ে দিন নীচের মন্তব্যের ঘরে৷