জার্মান নাটকের জগত
৭ অক্টোবর ২০১২বালহাউস নাউনিনস্ট্রাসে, এই হলো থিয়েটারটির নাম৷ দেয়ালে একদিকে যেমন থিয়েটারের পোস্টার সাঁটা, অন্যদিকে তেমন গ্র্যাফিটি, অর্থাৎ স্প্রে করে দেয়াল লিখন৷ নয়তো ডাইনে বাঁয়ে বসতবাড়ি৷ পতাকা আর নিওন সাইন না থাকলে বোঝাই মুশকিল হতো যে, এখানে একটা নাট্যশালা আছে৷ ক্রয়েৎসব্যার্গে আবার বহু তুর্কি এবং অন্যান্য বহিরাগতদের বাস৷ সে হিসেবে অভিবাসন বিষয়টিকে জার্মান নাট্যজগতে নিয়ে আসার পক্ষে এটা একটা আদর্শ স্থান৷ ১৮৬৩ সালে তৈরি একটি স্টাকো অলঙ্করণের বলরুমকে ৯৯টি আসন যোগ করে থিয়েটারে পরিণত করা হয়েছে৷
অপরদিকে এ'ও বলা দরকার, যে জার্মান নাট্যজগতে আজকাল অভিবাসন বিষয়টি প্রায়শই কোনো না কোনো রূপে স্থান পায়৷ অভিনেতা-অভিনেত্রীদের নাম দেখলেও সেটা বোঝা যায়৷ কিন্তু কিছুদিন আগে পর্যন্ত এ রকম ছিল না৷ জার্মান থিয়েটার ছিল যেন এই অভিবাসী তথা অভিবাসন বিষয়টির বিরুদ্ধে শেষ দুর্গ৷ আজও সেই প্রতিরোধের অন্ত ঘটেনি, কিন্তু বালহাউস নাউনিনস্ট্রাসে থেকে অন্য একটা ধারার শুরু হয়েছে৷ পরিচালক শেরমিন লাংহফ বললেন:
‘‘বালহাউস নাউনিনস্ট্রাসের সাফল্যের একটা কারণ নিশ্চয় এই যে, আমরা সমাজের বৈচিত্র্য নিয়ে বারংবার প্রশ্ন তুলি, অনুসন্ধান করি৷ এবং আমরা কোনো সহজ কি সস্তার উত্তর খুঁজি না৷''
বালহাউস নাউনিনস্ট্রাসে নাট্যশালাটির কর্মসূচির কথা বলতে গেলে, বলতে হয় যে, ২০০৮ সাল থেকে এখানে যে সব নাট্যকার, নাট্য পরিচালক এবং অভিনেতা-অভিনেত্রীরা কাজ করছেন, তাদের সকলেরই – লাংহফের ভাষায় – ‘পোস্ট-মাইগ্রান্ট' বা উত্তর-অভিবাসন পটভূমি আছে৷ অর্থাৎ তারা দ্বিতীয় কি তৃতীয় প্রজন্মের অভিবাসী৷ শেরমিন লাংহফ নিজেও তার ব্যতিক্রম নন:
‘‘এই বাস্তব নিয়েই তো আমাদের বেঁচে থাকতে হয়৷ আমি নিজে তুর্কি বংশোদ্ভূত এবং আমি বার্লিনে নিজেকে সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বলে মনে করি৷ আমার মায়ের জীবনও ফেডারাল জার্মান প্রজাতন্ত্রের ইতিহাসের সঙ্গে যুক্ত৷ আমার জীবন কিংবা আমার মায়ের জীবন সম্পূর্ণ স্বাভাবিক বলে আমি মনে করি৷ কিন্তু থিয়েটারে আমি এই স্বাভাবিকতা খুঁজে পাই না৷ কাজেই আমি বালহাউসের মতো একটি সাংস্কৃতিক উদ্যোগকে ‘পোস্ট-মাইগ্রান্ট' বা ‘উত্তর-অভিবাসন' তকমা দিয়েছি৷... অর্থাৎ যেটা সম্পূর্ণ স্বাভাবিক, তাকে একটা বিশেষ নাম এবং তকমা দিতে হয়েছে, কেননা ঠিক সেটাই এখানে ছিল না: এই নতুন জার্মানদের কাহিনিকার, নায়ক, দর্শক, সব পর্যায়ে দেখা এবং দেখানো৷''
শেরমিন লাংহফ তুরস্কে জন্মগ্রহণ করেন এবং ন'বছর বয়সে প্রথম জার্মানিতে আসেন৷ ২০০৮ সাল যাবৎ তিনি বালহাউস নাউনিনস্ট্রাসের দায়িত্বে, কিন্তু আগামী বছর আরো বড় দায়িত্ব নিতে চলেছেন বার্লিনের গর্কি থিয়েটারের ইন্টেন্ডান্ট বা পরিচালক হিসেবে৷ বিগত পাঁচ বছরে বালহাউসের সাফল্যের একটা খতিয়ান দেওয়া যেতে পারে: বালহাউসের নাটকগুলি কিংবা নুরকান এরপুলাত'এর মতো নাট্যপরিচালক আজ বার্লিনের বাইরেও যথেষ্ট পরিচিত৷ অন্যদিকে বালহাউস অভিবাসী-অধ্যুষিত ক্রয়েৎসব্যার্গে হওয়া সত্ত্বেও, আজ সেখানে বার্লিনের অন্যান্য অংশ থেকে নাট্যমোদীরা দর্শক হিসেবে সেখানে আসছেন৷
অন্যদিকে জার্মানিতে কোনো আন্তঃ-সাংস্কৃতিক নাট্যগোষ্ঠী আজও সফল হতে পারেনি, যদিও কোলোনে সে ধরণের একটা প্রচেষ্টা করা হয়েছিল৷ অ-জার্মান আকৃতি কিংবা অবয়বের হবু অভিনেতা-অভিনেত্রীদের প্রায়ই শুনতে হয়: ‘এখানে কি করবে? বালহাউসে যাও৷' শেরমিন লাংহফ সেই বালহাউস ছেড়ে যাচ্ছেন বটে, তবে ২০১৩ সাল থেকে বালহাউস এবং গর্কি থিয়েটারের মধ্যে একটি নতুন সহযোগিতা সৃষ্টি হচ্ছে৷ অর্থাৎ লাংহফ অভিবাসনের ‘থিম'-টিকে পরিত্যাগ করছেন না:
‘‘ও বিষয়বস্তুটির কোনো অন্ত নেই – অভিবাসনের যেমন কোনো অন্ত নেই, বালহাউসকে আমরা যতই উত্তর-অভিবাসন বলি না কেন৷ আমাদের কর্মসূচি হলো সেদিকে চোখ ফেরানো, আজকের জার্মানি এবং আজকের বার্লিনের দিকে মানুষের চোখ ফেরানো৷ আমার ধারণা, অভিবাসন হলো মানবজাতির একটি আদি বিষয়বস্তু, যে বিষয়বস্তুর মধ্যে বাকি সমস্ত বিষয় লুকিয়ে আছে৷''
প্রতিবেদন: ক্লাউডিয়া প্রেভেজানোস/এসি
সম্পাদনা: দেবারতি গুহ