অভিবাসীদের অনিয়ন্ত্রিত আগমন পুরোপুরি থামাতে না পারলেও বিভিন্ন দেশের মধ্যে অভিবাসন নিয়ে সম্পর্ক স্থাপন করে তাদের অভিবাসন ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করতে পারে ৷
বিজ্ঞাপন
এমন বেশ কয়েকটি চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছে জার্মানি গত কয়েক বছরে৷
জানুয়ারিতে মরক্কোর রাজধানী রাবাত সফরকালে জার্মান অর্থনৈতিক সহযোগিতা ও উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী স্ভেনিয়া শুলৎজে মরক্কোর সাথে নতুন সহযোগিতার কথা বলেন৷
কয়েক দিন পর, ৬ ফেব্রুয়ারি নাইজেরিয়ার রাজধানী আবুজার কাছে নিয়ানিয়াতে একটি অভিবাসী সম্পদ কেন্দ্র উদ্বোধন করেন তিনি৷
গত বছর মে মাসে জার্মান চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস কেনিয়ার সাথে এমনই একটি সহযোগিতা ঘোষণা করেন, যা এই দেশ থেকে দক্ষ কর্মীদের জার্মানি আসতে আকৃষ্ট করবে৷
মরক্কো, নাইজেরিয়া, কেনিয়াসহ এমন অভিবাসন বিষয়ক সহযোগিতার চুক্তি করেছে কলম্বিয়া, ভারত, কিরগিজস্তান, উজবেকিস্তান, জর্জিয়া ও মলডোভার সাথেও৷
ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন স্তরে এই ধরনের সহযোগিতা গত ১৫ বছর ধরে চলে আসছে৷ পরিসংখ্যান বলছে, এমন ৫০টি সহযোগিতা চুক্তি ইতিমধ্যে স্বাক্ষরিত হয়েছে৷
জার্মানির অভিবাসন নীতিতে যেসব পরিবর্তন আসছে
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য জার্মানি আরো অনাকর্ষণীয় হতে যাচ্ছে ২০২৪ সালে৷ তবে সহজ হবে দক্ষ কর্মীদের অভিবাসন৷ বিস্তারিত ছবিঘরে...
ছবি: Uwe Zucchi/dpa/picture alliance
আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের ‘ডিপোর্টেশন’
জার্মানির চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎস আগেই জানিয়েছেন, নতুন বছরটি আশ্রয় আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের জন্য কঠিন হতে যাচ্ছে৷ ডেয়ার স্পিগেল ম্যাগাজিনকে দেয়া সাক্ষাৎকারে ডিসেম্বরে শলৎস বলেছেন, তিনি আবেদন প্রত্যাখ্যাতদের ‘বড় আকারে ডিপোর্টেশন’ বা প্রত্যাবাসনের পক্ষে অবস্থান নিয়েছেন৷
ছবি: Michael Kappeler/dpa/picture alliance
প্রত্যাবাসন আইনের পরিবর্তন
সরকারি হিসাবে ২০২৩ সালের প্রথমার্ধে জার্মানি সাত হাজার ৮৬১ জনকে ডিপোর্ট করেছে৷ ‘প্রত্যাবাসন উন্নয়ন আইন’ নামের একটি বিল পাস হলে সংখ্যাটি আরো বাড়তে পারে৷ এই আইনে আগে থেকে ডিপোর্টেশনের ঘোষণা দেয়ার ইতি টানা হবে, বাড়ানো হবে বন্দি রাখার সময়সীমা৷ সেই সঙ্গে যাদের ফেরত পাঠানো হবে তাদের তল্লাশি ও ফোনের মতো ব্যক্তিগত সম্পত্তি জব্দের বাড়তি ক্ষমতা পাবে পুলিশ৷ অপরাধীদের ক্ষেত্রে ডিপোর্ট আরো দ্রুত হবে৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
‘নিরাপদ দেশ’-এর সংখ্যা বাড়বে
যেসব দেশে তেমন নিরাপত্তা ঝুঁকি নেই তাদেরকে ‘নিরাপদ দেশ’ এর তালিকায় রাখে সরকার৷ এসব দেশের নাগরিকেরা আশ্রয়ের জন্য কম বিবেচিত হন এবং দুই দেশের চুক্তি অনুযায়ী তাদেরকে দ্রুত ফেরত পাঠানো যায়৷ এমন দেশের সংখ্যা বাড়াতে চায় জার্মানি৷ সবশেষ নভেম্বরে এই তালিকায় ঢুকেছে জর্জিয়া ও মলডোভা৷ ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে তুরস্কের একটি চুক্তি পুনর্নবায়ন হলে দেশটির আশ্রয়প্রার্থীদেরও দ্রুত ফেরত পাঠানো যাবে৷
ছবি: Alexander Pohl/NurPhoto/picture alliance
আশ্রয় প্রক্রিয়ায় গতি
আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়ায় গতি আনতে চায় জার্মানি৷ বর্তমানে একটি আশ্রয় আবেদন প্রক্রিয়া শেষ হতে দুই বছরের বেশি পর্যন্ত সময় লাগে৷ প্রস্তাবিত আইনে তা তিন মাস থেকে ছয় মাসে নামিয়ে আনার কথা বলা হয়েছে৷ আশ্রয় আবেদনকারীদের ভাতাসহ বিভিন্ন সরকারি সুবিধাগুলোও কমানোর কথা বলা হয়েছে৷ বর্তমানে ১৮ মাস পরে ‘কল্যাণভাতা’ পাওয়া যায়, যা তিন বছর পর মিলবে৷ রাষ্ট্রীয় আবাসনে যারা থাকবেন তাদের খাবার খরচ কেটে নেয়া হবে৷
ছবি: DW
‘ক্যাশ’-এর বদলে কার্ড
ব্যাংকের মাধ্যমে ক্যাশ বা অর্থ প্রদানের বদলে কার্ড ব্যবস্থা চালুর পরিকল্পনা করছে জার্মানির বিভিন্ন রাজ্য, যাতে তারা পরিবারকে বা অন্য কাউকে অর্থ পাঠাতে না পারে৷ হ্যানোফার গত ডিসেম্বরে ‘সোশ্যাল কার্ড’ ব্যবস্থা চালু করেছে৷ পূর্বের রাজ্য ঠুরিঙ্গিয়াও আশ্রয় আবেদনকারীদের জন্য কার্ড ইস্যু করেছে৷ ২০২৪ সালে এই ব্যবস্থা চালু করবে হামবুর্গ ও বাভারিয়াও৷
ছবি: Julian Stratenschulte/dpa/picture alliance
সুখবর দক্ষ কর্মীদের জন্য
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠলেও দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণে সম্প্রতি আইনে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়েছে৷ ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পয়েন্ট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীরা চাকরি খোঁজার জন্য এক বছরের ভিসা পাবেন৷ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ যেসব খাতে কর্মী সংকট আছে সেসব ক্ষেত্রে ইউ ব্লু কার্ডের আওতা বাড়ানো হবে৷
ছবি: Daniel Karmann/dpa/picture alliance
সুখবর দক্ষ কর্মীদের জন্য
আশ্রয়প্রার্থীদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে উঠলেও দক্ষ কর্মীদের আকর্ষণে সম্প্রতি আইনে বেশ কিছু সংস্কার আনা হয়েছে৷ ভাষাগত দক্ষতা, পেশাগত অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে পয়েন্ট ব্যবস্থা চালু করা হচ্ছে, যার মাধ্যমে অভিবাসীরা চাকরি খোঁজার জন্য এক বছরের ভিসা পাবেন৷ স্বাস্থ্যসেবা ও শিক্ষাসহ যেসব খাতে কর্মী সংকট আছে সেসব ক্ষেত্রে ইউ ব্লু কার্ডের আওতা বাড়ানো হবে৷
ছবি: Jens Krick/Flashpic/piture alliance
পরিবারের সদস্যদের নিয়ে অভিবাসন
মার্চ থেকে বিদেশিরা দক্ষতার ভিত্তিতে সরাসরি জার্মানিতে এসে চাকরিতে যোগ দিতে পারবেন৷ আবেদনকারীদের পরিবারের সদস্য আনার প্রক্রিয়াও সহজ হবে৷ ব্যয় বহনের সামর্থের প্রমাণ দিতে পারলে কর্মীরা তাদের উপর নির্ভরশীলদের নিয়ে তিন বছরের বসবাসের অনুমতি পাবেন৷ কিছু দেশের জন্য বিশেষ অভিবাসন কোটার সংখ্যা বাড়ানো হবে৷ যেমন জুনে বলকান দেশগুলোর জন্য এই সংখ্যা দ্বিগুন বৃদ্ধি করে ৫০ হাজারে উন্নীত করা হচ্ছে৷
ছবি: Armando Babani/Xinhua/picture alliance
8 ছবি1 | 8
কেমনএইসহযোগিতা?
জার্মানির অভিবাসন চুক্তি বিষয়ক বিশেষ কমিশনার ইওয়াখিম স্টাম্পের মতে, ‘‘একটি সার্বিক চিন্তার অংশমাত্র এই অভিবাসন সহযোগিতা চুক্তিগুলি৷ এর ফলে, অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণে ও বৈধপথে অভিবাসন আরো সুনিশ্চিত হবে৷''
শুধু অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন ঠেকানোই নয়, এই ধরনের উদ্যোগের লক্ষ্য সেই অব্যবস্থাকে বৈধ অভিবাসন দিয়ে পূরণ করা৷
বার্লিনের জার্মান ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যান্ড সিকিউরিটি অ্যাফেয়ার্সের বিশেষজ্ঞ স্টেফান আনগেনেন্ডট এই ধরনের উদ্যোগকে গুরুত্বপূর্ণ ও অপরিহার্য হিসাবে দেখেন৷
ডয়চে ভেলেকে তিনি বলেন, ‘‘এর আগে এমন চুক্তি সাধারণত অকার্যকর ছিল৷ কারণ ২০০৭ থেকে ইইউ এর সকল অভিবাসন সম্পর্কিত প্রকল্প বন্ধ ছিল ও এসবের মূল উদ্দেশ্য ছিল অনিয়ন্ত্রিত অভিবাসন কমানো৷''
চুক্তিতে স্বাক্ষর করা রাষ্ট্রদের উদ্দেশ্য এতে করে উপেক্ষিত হচ্ছিল বলে জানান আনগেনেন্ডট৷
জার্মানিতেআশ্রয়প্রার্থীরাপালাচ্ছেযুদ্ধথেকে
কাছ থেকে দেখলে বোঝা যাবে যে এই ধরনের অভিবাসন সহযোগিতাগুলি আসলে অভিবাসীদের যাতায়াত কমানোর জন্য তৈরি৷ জার্মানিতে অভিবাসনপ্রত্যাশীর বেশিরভাগই এমন দেশ থেকে আসে যেখানে হয় যুদ্ধ চলছে বা ব্যাপকহারে মানবাধিকার লঙ্ঘিত হচ্ছে৷
অভিবাসন নিয়ে তথ্যচিত্র- ভূ'মৃত্যু'সাগরের ওপারে
31:43
একটি বিবৃতিতে স্টাম্প বলেন, ‘‘সিরিয়া বা আফগানিস্তানের মতো দেশের সাথে এমন সহযোগিতায় যেতে পারব না আমরা৷'' বরং তার চেয়ে এই দেশগুলির পার্শ্ববর্তী দেশগুলিকে শরণার্থী ব্যবস্থাপনায় সাহায্য করতে পারবে জার্মানি৷
ইটালিওআলবেনিয়ারসাথেযেচুক্তি
আলবেনিয়ার সাথে এই বিষয়ে একটি বিতর্কিত চুক্তিতে গেছে ইটালি৷ অভিবাসন সহযোগিতা হিসাবে এটিকে মাঝেমাঝে দেখা হলেও আসলে তা সব শর্ত পূরণ করেনা৷
চুক্তি অনুযায়ী, আলবেনিয়া এই বছরে দুটি এমন কেন্দ্র চালু করবে যেখানে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদন সমন্বিত হবে৷ আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচের মতে, এই চুক্তি আন্তর্জাতিক আইন লঙ্ঘন করে৷
জার্মান মন্ত্রী নাইজেরিয়ার শরণার্থী ব্যবস্থাপনা কেন্দ্র উদ্বোধনের সময়ে বলেন, ‘‘অভিবাসন জীবনের সত্য৷ আমাদের এই বিষয়টি এমনভাবে সামলাতে হবে যা সবার জন্য উপযোগী: অভিবাসী, অভিবাসীদের উৎস রাষ্ট্র ও যে সমাজে তারা এসে পৌঁছায়, সবাই৷''