অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য ‘নিরাপদ দেশের' খোঁজে জার্মানি
৭ আগস্ট ২০২৫
ইউরোপীয় বিচার আদালতের এক রায়ে অনিয়মিত অভিবাসীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ‘নিরাপদ' দেশের তালিকা প্রণয়নে জার্মান সরকারের পরিকল্পনা বাধার মুখে পড়তে পারে৷
অনিয়মিত অভিবাসন নিয়ন্ত্রণ এবং প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠাতে ‘নিরাপদ’ দেশের তালিকা দীর্ঘ করতে চায় জার্মানি৷ছবি: Daniel Kubirski/IMAGO
বিজ্ঞাপন
জার্মান সরকার বা ইউরোপীয় ইউনিয়নের মূল্যায়নে একটি দেশ তখনই নিরাপদ, যখন দেশটির কোনো নাগরিককে রাষ্ট্রীয় নির্যাতনের ভয়ে থাকতে হয় না৷ এই ধরনের মূল্যায়ন কতটা যৌক্তিক, তা নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে৷ আর সেই বিতর্কের অবসান হয় আদালতে৷
১ আগস্ট ইউরোপীয় বিচার আদালত (ইসিজে) এক রায়ে বলেছে, একটি দেশকে ‘নিরাপদ' ঘোষণা করতে হলে সেই দেশটিতে সংখ্যালঘুসহ সব মানুষের জন্য পর্যাপ্ত সুরক্ষা রয়েছে, সেই বিষয়ে নিশ্চিত হতে হবে৷
লুক্সেমবুর্গভিত্তিক আদালতটি ওই রায়ে উল্লেখ করেছে, আশ্রয় আবেদন দ্রুত সম্পন্ন করার ক্ষেত্রে ইইউ আইনের লঙ্ঘন না হলেও, নিরাপদ দেশগুলোর নাম বিচারিক তদন্তের আওতায় আনার সুযোগ থাকতে হবে৷ যাতে, কোনো আশ্রয়প্রার্থী তাদের আশ্রয় আবদেন প্রত্যাখ্যানের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করতে পারেন৷
‘নিরাপদ দেশের' একটি তালিকা তৈরি করেছে জার্মানি৷ এমন নিয়মে করা হয়েছে, যার ফলে, তালিকাভুক্ত দেশগুলো থেকে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের জার্মানিতে আশ্রয় পাওয়ার সম্ভাবনা খুব ক্ষীণ৷ জার্মানির করা ‘নিরাপদ' দেশের তালিকায় বর্তমানে ইইউর সদস্য নয় এমন আটটি ইউরোপীয় দেশের নাম রয়েছে৷ এছাড়া, দুটি আফ্রিকান দেশের নামও রয়েছে তালিকাটিতে৷
দীর্ঘ হতে পারে ‘নিরাপদ' দেশের তালিকা
রক্ষণশীল সিডিইউ/সিএসইউ এবং মধ্য-বামপন্থি এসপিডি-র সমন্বয়ে গঠিত জার্মানির নতুন জোট সরকার ‘নিরাপদ' দেশের তালিকায় আরো কয়েকটি দেশের নাম যুক্ত করার বিষয়ে সম্মত হয়েছে৷
বিবেচনায় রয়েছে আলজেরিয়া, ভারত, মরক্কো এবং টিউনিশিয়ার নাম৷
জোট সরকার গঠনের চুক্তিতে বলা হয়েছে, ‘‘কোন কোন দেশ ‘নিরাপদ দেশ' ঘোষণার শর্ত পূরণ করছে, সেদিকটায় আমরা নজর রাখছি৷ বিশেষ করে, গত পাঁচ বছরে যেসব দেশের নাগরিকদের আশ্রয় আবেদন মঞ্জুরের হার পাঁচ শতাংশের নিচে, সেসব দেশকে ‘নিরাপদ দেশ' হিসেবে তালিকাভুক্ত করা হবে৷''
কিন্তু ইউরোপীয় বিচার আদালতের দেয়া রায়ের কারণে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন যতটা সহজ বলে মনে হচ্ছিল, ততটা সহজ হবে কিনা তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যাচ্ছে৷
জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র বলেছেন, ইসিজে-র দেয়া রায়টি পর্যালোচনা করা হবে৷
একটি দেশকে ‘নিরাপদ' ঘোষণার প্রক্রিয়ায় বড় ধরনের সংস্কার আনতে যাচ্ছে জার্মান সরকার৷ ভবিষ্যতে কোনো দেশকে ‘নিরাপদ' ঘোষণা করা হলে, সরকার একটি ডিক্রি জারি করে তা জানিয়ে দেবে৷ এর অর্থ হলো, এই বিষয়ে জার্মান পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ ‘বুন্ডেসটাগ' বা উচ্চকক্ষ ‘বুন্ডেসরাট' কোনো মতামত জানাতে পারবে না৷
নেদারল্যান্ডসে অভিবাসন নিয়ে অনন্য এক মিউজিয়াম
04:32
This browser does not support the video element.
আশ্রয় আইনের সংস্কার চান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর প্রক্রিয়াটি গতিশীল করতে একটি বিলের খসড়া পার্লামেন্টে উত্থাপন করেছে জোট সরকার৷ জুলাইয়ে এই বিলটি নিয়ে পার্লামেন্টে আলোচনাও হয়েছে৷ গ্রীষ্মের ছুটির পর সংসদ অধিবেশন শুরু হলে এই ইস্যুতে ভোটাভুটি হতে পারে৷
জার্মানিতেআশ্রয় আবেদন বাতিল হয়েছে এমন অনেক অভিবাসীকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো সম্ভব হচ্ছে না৷ এই ইস্যুতে ভীষণ ক্ষুব্ধ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আলেকজান্ডার ডোব্রিন্ডট৷ এই প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, ‘‘এখন আমাদের লক্ষ্য হলো, অনিয়মিত অভিবাসন কার্যকরভাবে সীমিত করার পথে সব বাধা দূর করা৷''
জার্মানির বর্তমান আইন অনুসারে, যেসব ব্যক্তিকে দেশ ছাড়তে বলা হয়েছে, তাদের নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর আগে আইনি আশ্রয় চাওয়ার সুযোগ রয়েছে৷ এই বিধানটি বাতিল করতে চায় সরকার৷ ডোব্রিন্ডট আশা করছেন, এমন প্রেক্ষাপটে ‘নিরাপদ' হিসাবে তালিকাভুক্ত দেশগুলোতে অনিয়মিত অভিবাসীদের ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে কোনো আইনি বাধা আসবে না৷
প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের নিজ নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর ক্ষেত্রে নতুন পরিকল্পনা নিয়েছে ইউরোপীয় ইউনিয়নও৷ প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের প্রত্যাবাসনে ইউরোপীয় ইউনিয়নের বাইরে ‘রিটার্ন হাব' বা যৌথ কেন্দ্র স্থাপনের বিষয়টি নিয়েও আলোচনা চলছে জোটভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে৷ গত জুলাইয়ে ডেনমার্কের রাজধানী কোপেনহেগেনে এক বৈঠকে ইইউ সদস্য রাষ্ট্রগুলোর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীরা এই বিষয়ে আলোচনা করেছেন৷
ইইউর এমন পরিকল্পনায় পূর্ণ সমর্থন দিচ্ছেন ডোব্রিন্ডট৷ তিনি বলেছেন, একটি দেশের পক্ষে একা ইইউর বাইরের দেশগুলোর সঙ্গে চুক্তি করে রিটার্ন হাব নির্মাণ করা কঠিন৷ কিন্তু জোটের মাধ্যমে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা অনেক সহজ৷
বিজ্ঞাপন
‘যারা যোগ্য নন, তাদের আসা উচিত নয়'
ডোব্রিন্ডট বলেন, অতীতে জার্মানিতে আসা অনেক আশ্রয়প্রার্থী আশ্রয়ের জন্য যোগ্য ছিলেন না৷ তিনি আশা করেন, পরিকল্পিত সংস্কার একটি স্পষ্ট বার্তা দেবে: ‘‘যারা নিরাপদ দেশ থেকে আসছেন, তাদের যাত্রা করা উচিত নয়৷ যারা আশ্রয়ের যোগ্য নন, তাদের আসা উচিত নয়৷''
জার্মানির বিরোধী রাজনৈতিক দলগুলো আশা করছে, ইউরোপীয় বিচার আদালতের দেয়া এই রায় জার্মান সরকারকে তার আশ্রয়নীতিতে পরিবর্তনআনতে বাধ্য করবে৷
গ্রিন পার্টির আইনপ্রণেতা ফিলিৎস পোলাট বলেন, ‘‘নিরাপদ দেশ নিয়ে ইউরোপীয় বিচার আদালতের রায় মানবাধিকার এবং ইউরোপে আশ্রয় অধিকার রক্ষায় একটি বড় সাফল্য৷''
তিনি আরো বলেন, বুন্ডেসটাগ এবং বুন্ডেসরাট-এর অনুমোদন ছাড়া সরকারি নির্দেশে কোনো দেশকে ‘নিরাপদ ঘোষণা' করার পরিকল্পনাও উচিত নয়৷
যুক্তরাষ্ট্রে অনিশ্চয়তায় অভিবাসীরা
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সীমান্তে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। ট্রাম্প দ্বিতীয় মেয়াদে দায়িত্ব গ্রহণের পর জোরপূর্বক ফেরত পাঠানোর আশঙ্কায় দেশটিতে বসবাসরত অনেক অভিবাসী।
ছবি: Carlos Barria/REUTERS
প্রত্যর্পণের ভয়
জানালার পর্দার ফাঁক গলে কয়েকজন পুলিশকে একটি বাড়ির দিকে এগোতে দেখছেন একজন। যদিও বাড়ির ভেতরে প্রবেশ করতে বাসিন্দাদের অনুমতির প্রয়োজন। কিন্তু তাদের উপস্থিতিতেই আতঙ্কিত হয়ে পড়ছেন অনিয়মিত অভিবাসীরা। জোরপূর্বক দেশে ফেরত পাঠানো হবে -এই ভয়ে তাদের সন্তানদের স্কুলে পাঠাচ্ছেন না অনেকে।
চরম অনিশ্চয়তায় অভিবাসীরা
ভেনেজুয়েলা থেকে আসা ২২ বছরের ইতাইলি বলেন "আগামীতে কী ঘটতে যাচ্ছে এ নিয়ে আমি বেশ আতঙ্কে দিন পার করছি।" তার ছেলে বন্ধুকে কয়দিন আগেই একটি নিরাপত্তা চৌকিতে আটক করা হয়। ৫ মাসের শিশুসহ জর্জিয়ার আটলান্টায় একটি বাড়িতে বসবাস করছেন ইতাইলি। কিছুদিন আগেই রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদন করেছেন তারা। এর মাঝেই প্রশাসনের সাম্প্রতিক তৎপরতায় অস্থিরতার মধ্যে দিন অতিবাহিত করতে হচ্ছে তাদের।
ছবি: Carlos Barria/REUTERS
পুলিশে নতুন নিয়োগ
অনিয়মিত অভিবাসীদের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদার করতে সীমান্তবর্তী অনেক রাজ্যেই নতুন করে পুলিশ নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। আটলান্টা আইসিই পুলিশের কর্মকর্তা ক্রিস্টিন সুলিভান বলেন, "আমাদের অবশ্যই সদস্য বাড়ানো প্রয়োজন।"
ছবি: Carlos Barria/REUTERS
অধিকার লঙ্ঘনের অভিযোগ
রাজনৈতিক আশ্রয়ের আবেদনের ফয়সালা হয় আদালতে, যার উপর নির্ভর করে একজন অনিয়মিত অভিবাসী যুক্তরাষ্ট্রে থাকতে পারবেন কিনা অথবা তাকে নিজ দেশে ফেরত পাঠানো হবে কিনা। তবে আদালত আশ্রয় আবেদন খারিজ করে দিলেও যুক্তরাষ্ট্রে তার কোনো অপরাধের রেকর্ড না থাকলে তিনি দেশটিতে থাকতে পারেন। কিন্তু বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায়ই এই অধিকার ক্ষুণ্ণ করা হচ্ছে বলে অনেকের অভিযোগ।
ছবি: Carlos Barria/REUTERS
রেকর্ড মাত্রায় গ্রেপ্তার
ট্রাম্পের নেতৃত্বে যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি কতটুকু কঠোর হবে তা এখনো নিশ্চিত নয়। তবে পুলিশের দেয়া তথ্য অনুসারে, ২০২৫ সালের জানুয়ারিতে প্রতিদিন অন্তত ৮০০ থেকে এক হাজার গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে এই সংখ্যা কিছুটা কমে আসে। বাইডেন প্রশাসনের অধীনে ২০২৪ সালে প্রতিদিন গড়ে ৩১১ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। ২০২৪ সালে দুই লাখ ৭০ হাজার অভিবাসীকে যুক্তরাষ্ট্র ফেরত পাঠিয়েছে।
ছবি: Jose Luis Gonzalez/REUTERS
5 ছবি1 | 5
জর্জিয়া ও মলদোভা নিরাপদ নয়: ডি লিংকে
নিরাপদ দেশের তালিকার তৈরির ক্ষেত্রে জোট সরকারকে একটি বিস্তৃত পর্যালোচনার আহ্বান জানিয়েছেন বামপন্থি দল ডি লিংকে-র নেত্রী ক্লারা ব্যুঙ্গার৷ তিনি বলেন, ‘‘জর্জিয়া ও মলদোভাকে অবিলম্বে এই তালিকা থেকে বাদ দেওয়া উচিত৷''
আবখাজিয়া এবং সাউথ ওসেটিয়ার মতো বিচ্ছিন্ন অঞ্চলগুলোতে বিদ্যমান মানবাধিকার পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়েই এমন মন্তব্য করেছেন এই বামপন্থি রাজনীতিবিদ৷
এমনকি ইইউ সদস্য রাষ্ট্র চেকপ্রজাতন্ত্রও মলদোভার কিছু অংশকে নিরাপদ বলে মনে করে৷ কারণ, ট্রান্সনিস্ট্রিয়া অঞ্চলটি রাশিয়াপন্থি বিচ্ছিন্নতাবাদীরা নিয়ন্ত্রণ রেখেছে৷ ফলে, দেশটিকে পূর্ণ নিরাপদ মনে করা হয় না৷
ব্যুঙ্গার বলেন, ইসিজে-র এই রায় ‘‘টিউনিশিয়া এবং আলজেরিয়ার মতো অন্যান্য দেশগুলোকেও নিরাপদ হিসেবে তালিকাভুক্ত করার ক্ষেত্রে ফেডারেল সরকারের পরিকল্পনাকে প্রত্যাখ্যান করে৷''
কারণ, টিউনিশিয়া এবং আলজেরিয়ায় সমকামিতা আইনিভাবে শাস্তিযোগ্য অপরাধ৷ এই দেশগুলোকে নিরাপদ হিসাবে তালিকাভুক্ত করা ইউরোপীয় বিচার আদালতের রায়ের সঙ্গে সাংঘর্ষিক৷
মার্সেল ফ্যুরর্স্টেনাউ/টিএম/এসিবি
অনিয়মিত অভিবাসন ঠেকাতে ইইউর যত পদক্ষেপ
অনিয়মিত অভিবাসীদের আগমন ঠেকাতে তৎপর ইউরোপীয় ইউনিয়ন৷ জোটগত সিদ্ধান্তের পাশাপাশি সদস্য রাষ্ট্রগুলো নিজেদের মতো করেও নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে৷
ছবি: picture-alliance/NurPhoto/N. Economou
অনিয়মিত পথে অভিবাসীদের ঢল
ক্ষুধা, দারিদ্র্য, সংঘাত ও যুদ্ধ থেকে পালিয়ে উন্নত জীবনের আশায় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে ইউরোপ পাড়ি জমাতে চান আফ্রিকা, এশিয়া, মধ্যপ্রাচ্যসহ বিশ্বের নানা প্রান্তের মানুষ৷ ইউরোপীয় বর্ডার অ্যান্ড কোস্ট গার্ড এজেন্সি (ফ্রন্টেক্স) এক বিবৃতিতে জানিয়েছে, বছরের প্রথম আট মাসে মোট এক লাখ ৩৯ হাজার ৮৪৭টি অনিয়মিত সীমান্ত পারাপারের প্রচেষ্টা নথিভুক্ত করা হয়েছে৷
ছবি: Europa Press/ABACA/picture alliance
নানামুখী পদক্ষেপ
অনিয়মিত পথে আসা অভিবাসনপ্রত্যাশীদের ঠেকাতে নানা পরিকল্পনা করছে ইউরোপের দেশগুলো৷ যুক্তরাজ্য ও ইটালি এরই মধ্যে তৃতীয় বা ইউরোপের বাইরের কোনো দেশে অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের পদক্ষেপ নিয়েছে৷ তবে আদালতের বাধার মুখে তাদের পরিকল্পনা এখনো আলোর মুখ দেখেনি৷ অনিয়মিত অভিবাসীদের নিয়ন্ত্রণে জার্মানি, ডেনমার্ক, অস্ট্রিয়ার মতো ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশেও এমন পরিকল্পনা নেয়া হচ্ছে৷
ছবি: Attila Husejnow/ZUMA Press Wire/IMAGO
ইটালির আলবেনিয়া পরিকল্পনা
ভূমধ্যসাগর তীরের এই দেশটিতে এশিয়া ও আফ্রিকার হাজার হাজার অভিবাসনপ্রত্যাশী প্রতিবছর সমুদ্র পাড়ি দিয়ে হাজির হন৷ ইটালির জর্জা মেলোনির নেতৃত্বাধীন রক্ষণশীল সরকার অভিবাসীদের এই স্রোত সামলাতে নানা পদক্ষেপ নিচ্ছে৷ এর অংশ হিসেবে আলবেনিয়ার সাথে চুক্তি করেছে দেশটি৷ এরইমধ্যে গত ১৩ অক্টোবর সাগর থেকে উদ্ধার হওয়া ১০ বাংলাদেশি ও ৬ মিশরীয়কে আলবেনিয়াতে পাঠানো হয়েছে৷
ছবি: Florion Goga/REUTERS
যুক্তরাজ্যের রুয়ান্ডা পরিকল্পনা
অনিয়মিত পথে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে যুক্তরাজ্যে আশ্রয় নিতে চাওয়া অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আবেদন যাচাই-বাছাইয়ের জন্য আফ্রিকার দেশ রুয়ান্ডার সাথে চুক্তি করেছিলেন যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক৷ তবে রাজনৈতিক দলগুলোর বিরোধিতার মুখে এবং আদালতের নিষেধাজ্ঞায় শেষ পর্যন্ত বাতিল হয়ে যায় ওই চুক্তি৷
যুক্তরাজ্য ও ইটালির মতো তৃতীয় কোনো দেশে অনিয়মিত অভিবাসনপ্রত্যাশীদের আবেদন যাচাই-বাছাই নিয়ে নিজেদের পরিকল্পনার কথা জানায় ইউরোপের আরেক দেশ অস্ট্রিয়া৷ ইউরোপের অন্যান্য দেশগুলোকে উৎসাহী করতে আলোচনা শুরুর কথাও জানান দেশটির চ্যান্সেলর কার্ল নেহামের ৷ ইউনিয়নের ১৪টি দেশ এই পরিকল্পনায় সমর্থন দেয়৷
ছবি: JOHN THYS/AFP
কঠোর অবস্থানে ডেনমার্ক
অ-নথিভুক্ত অভিবাসীদের আবেদন যাচাই-বাছাই তৃতীয় কোনো দেশে করার কথা স্ক্যান্ডিনেভিয়ার দেশ ডেনমার্কও ভাবছে৷ এই লক্ষ্যে অস্ট্রিয়ার সাথে মিলে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে চিঠিও দিয়েছে দেশটি৷
প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের ডিপোর্ট করা বা নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর বদলে আফ্রিকার দেশ উগান্ডায় পাঠানোর কথা ভাবছে নেদারল্যান্ডস৷ ১৬ অক্টোবর দেশটির বৈদেশিক বাণিজ্য বিষয়ক মন্ত্রী টেলিভিশন চ্যানেল এনওএস-কে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে এ কথা বলেছেন৷ পরিকল্পনা অনুযায়ী, প্রত্যাখ্যাত আশ্রয়প্রার্থীদের অভ্যর্থনা শিবিরে স্থান দেবে উগান্ডা৷ সেখানে তাদেরকে আর্থিক ক্ষতিপূরণও দেয়া হবে৷
ছবি: Remko de Waal/ANP/IMAGO
সীমান্ত নজরদারিতে জার্মানি
১৬ সেপ্টেম্বর থেকে নয়টি প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে থাকা সব স্থল সীমান্তে নিয়ন্ত্রণ শুরু করেছে জার্মান পুলিশ৷ ছয় মাসের এই সিদ্ধান্তের মাধ্যমে দেশটি অনিয়মিত অভিবাসন ও আন্তঃসীমান্ত অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করতে চায়৷ এই সিদ্ধান্তের আলোকে লুক্সেমবুর্গ, বেলজিয়াম, নেদারল্যান্ডস ও ডেনমার্ক সীমান্তে জার্মান পুলিশ নজরদারি শুরু করছে৷ এর আগেও সীমান্তে এমন কড়াকড়ি শুরু হয়েছিল৷
ছবি: Christoph Hardt/Panama Pictures/IMAGO
ভিন্ন চিন্তা ফ্রান্সের
ফ্রান্স অবশ্য ইটালি বা যুক্তরাজ্যের মতো কোনো পরিকল্পনা করছে না বলে জানা গেছে৷ দেশটির প্রধানমন্ত্রী মিশেল বার্নিয়ের এরই মধ্যে এমন ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তবে ফ্রান্স সরকার অভিবাসীদের ট্রানজিট দেশগুলোর সঙ্গে, অর্থাৎ যেই পথ ধরে অভিবাসনপ্রত্যাশীরা যাত্রা করেন ওই দেশগুলোর সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে চায়৷
ছবি: Christopher Furlong/Getty Images
টিউনিসিয়ার সাথে ইউরোপের চুক্তি
অনিয়মিত পথে অভিবাসন থামাতে যাত্রা পথেই তাদেরকে আটকে দিতে চায় ইইউ৷ এই লক্ষ্যে উত্তর আফ্রিকার দেশ টিউনিশিয়ার সাথে একটি চুক্তিও স্বাক্ষর করেছে ইউনিয়ন৷ চুক্তি অনুযায়ী, ইইউর সহযোগিতায় ঝুঁকিপূর্ণ এসব যাত্রা আটকে দিতে কাজ করছে টিউনিশিয়ার আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী৷ চলতি বছর ইইউ-র সঙ্গে যৌথ সহযোগিতার ফলে টিউনিশিয়ার উপকূলরক্ষীরা অভিবাসীদের বহনকারী প্রায় ২৪ হাজার নৌকা আটকে দিয়েছে৷