ইইউ’র বাইরের দেশগুলি থেকে যাওয়া অভিবাসন-প্রয়াসীদের ব্রিটেনে ঢোকা আরো কঠিন হবে৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে'র কনজারভেটিভ দলের নির্বাচনি ইশতেহারে এমন অঙ্গীকার করা হয়েছে৷
বিজ্ঞাপন
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, মে অভিবাসনের উপর বিধিনিষেধ আরোপ করবেন ও পেনশনভোগীদের কিছু কল্যাণমূলক সুযোগসুবিধা খর্ব করবেন৷
যেসব নিযোগকারী সংস্থা ইইউ-বহির্ভূত দেশ থেকে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত শ্রমিক আমদানি করতে চাইবেন, তাদের দ্বিগুণ পরিমাণ ‘স্কিলস চার্জ’ দিতে হবে৷ এছাড়া অভিবাসী শ্রমিকদের ন্যাশনাল হেল্থ সার্ভিসে আরো বেশি অনুদান দিতে হবে বলেও জানিয়েছে বিবিসি৷ এই পন্থায় যে অতিরিক্ত অর্থ সংগৃহীত হবে, তা দিয়ে ব্রিটিশ শ্রমিকদের বিশেষ প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে৷
ব্রেক্সিটের পর ইইউ দেশগুলি থেকেও অভিবাসন কমানোর পরিকল্পনা করছেন মে, বলে জানিয়েছে বিবিসি৷ অপরদিকে বুধবার বার্লিনে জি-টোয়েন্টি শ্রমিক সংগঠনগুলির একটি সম্মেলনে জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল ব্রিটেনকে সতর্ক করে বলেন, ইইউ-নাগরিকদের মুক্ত যাতায়াতের উপর বাধানিষেধ আরোপের ‘মূল্য দিতে হবে’৷ এক বা দু’লাখের চেয়ে বেশি ইইউ নাগরিককে ব্রিটেনে আসতে না দেওয়ার নীতি প্রয়োগের ঝুঁকি সম্পর্কেও সাবধান করে দেন ম্যার্কেল৷
ব্রেক্সিট: পরের পদক্ষেপ
ব্রিটেন লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্রটি কার্যকর করতে চলেছে, যার মাধ্যমে ব্রিটেনের ইউরোপীয় ইউনিয়ন ত্যাগের প্রক্রিয়া শুরু হবে৷ কিন্তু প্রক্রিয়াটা কী?
ছবি: Getty Images/J. Taylor
৫০তম সূত্রটি কী?
লিসবন চুক্তির ৫০তম সূত্র অনুযায়ী ইউরোপীয় ইউনিয়নের যে কোনো সদস্য দেশের একতরফাভাবে ইইউ ছাড়ার অধিকার রয়েছে৷ সূত্রে তার প্রক্রিয়াও বর্ণনা করা হয়েছে৷ বিদায়ী রাষ্ট্রটি তার ইউনিয়ন পরিত্যাগের শর্তাবলী আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে নির্দিষ্ট করার জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ ৫০তম সূত্র একবার সক্রিয় হলে, সব সদস্যদেশের সম্মতি ছাড়া সে প্রক্রিয়া রোধের আর কোনো পন্থা নেই৷
ছবি: Reuters/T. Melville
৫০তম সূত্রের বক্তব্যটা কী?
৫০তম সূত্রে বলা হয়েছে যে, বিদায়ী দেশকে সরকারিভাবে ইউরোপীয় পরিষদকে (ইইউ পরিত্যাগের অভিপ্রায়) জানাতে হবে এবং সংশ্লিষ্ট দেশ ইইউ-এর সঙ্গে আপোশে পৌঁছানোর জন্য দু’বছর সময় পাবে৷ সংশ্লিষ্ট দেশ তার ইইউ ত্যাগ সম্পর্কে ইউরোপীয় ইউনিয়নের অভ্যন্তরীণ শলা-পরামর্শে অংশ নিতে পারবে না৷ ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত চুক্তি একটি ‘কোয়ালিফায়েড মেজরিটি’-র দ্বারা অনুমোদিত হতে হবে এবং ইউরোপীয় সংসদের সদস্যদের সমর্থনও আবশ্যক হবে৷
ছবি: picture alliance/dpa
কবে শুরু হবে ইইউ ত্যাগের প্রক্রিয়া?
যুক্তরাজ্য ২০১৬ সালের জুন মাসের গণভোটে ইইউ পরিত্যাগের সিদ্ধান্ত নেয়৷ ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী টেরেসা মে বিভিন্ন সংসদীয় বিতর্ক ও অন্যান্য আইনগত বিধিব্যবস্থার পর একটি পত্রের মাধ্যমে সরকারিভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অবহিত করবেন – যার ফলে ৫০তম সূত্রটি কার্যকর হবে৷ ইইউ কর্মকর্তারা এই বিচ্ছেদের জন্য ব্রিটেনের কাছ থেকে ৫৫ থেকে ৬০ বিলিয়ন ইউরো পাওনার আভাস দিয়েছেন৷
ছবি: Reuters/Y. Herman
তারপর...?
প্রাথমিক প্রতিক্রিয়া জ্ঞাপন করার পর ইইউ নেতৃবর্গ ২৯শে এপ্রিল একটি শীর্ষবৈঠকে মিলিত হয়ে ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনার নির্দেশাবলী নির্দিষ্ট করবেন৷ বাস্তবিক ব্রেক্সিট আলাপ-আলোচনা শুরু হবে মে অথবা জুন মাসে৷ এই আলাপ-আলোচনার সবচেয়ে কণ্টকিত বিষয় হবে, যে দশ লাখের বেশি ব্রিটিশ নাগরিক ইইউ-তে বাস করছেন ও যে ত্রিশ লাখের বেশি ইইউ নাগরিক ব্রিটেনে বসবাস করছেন, তাদের একটা ব্যবস্থা করা৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Vitvitsky/Sputnik
দ্য গ্রেট রিপিল বিল
সেপ্টেম্বর নাগাদ যুক্তরাজ্য সরকার ইইউ পরিত্যাগ সংক্রান্ত আইন প্রণয়ন করবেন এবং যাবতীয় ইইউ আইনকানুনকে ব্রিটিশ আইনে পরিণত করবেন৷ এর ফলে ১৯৭২ সালের ইউরোপিয়ান কমিউনিটিজ অ্যাক্ট বা ইসিএ তামাদি হয়ে যাবে – কেননা ইসিএ-র বলেই ইইউ-এর আইনকানুন সঙ্গে সঙ্গে ব্রিটেনেও বলবৎ হয়৷ এছাড়া এই রিপিল বিল পার্লামেন্টকে ইইউ-এর প্রণীত আইনের বিভিন্ন অংশ ব্রিটিশ আইনে পরিণত করার ও বাদবাকি অংশ বাতিল করার ক্ষমতা দেবে৷
ছবি: picture-alliance/empics/PA
গোটা প্রক্রিয়া কতদিন ধরে চলবে?
ইইউ নেতৃবর্গ বলেছেন যে, তারা ১৮ মাসের মধ্যে ব্রেক্সিটের শর্তাবলী সংক্রান্ত আলাপ-আলোচনা সমাপ্ত করতে চান এবং সেই শর্তাবলী ব্রিটিশ পার্লামেন্ট ও ইউরোপীয় সংসদ এবং অপরাপর ইইউ রাষ্ট্রের সংসদের দ্বারা অনুমোদিত দেখতে চান৷ দু’বছরের মধ্যে কোনো সমঝোতা না হলে ব্রিটেন স্বয়ংক্রিয়ভাবে ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও সেই সংক্রান্ত যাবতীয় চুক্তি থেকে বিদায় নেবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/A. Rain
কিন্তু যুক্তরাজ্য যদি মত পাল্টায়?
৫০তম সূত্রের পঞ্চম অনুচ্ছেদে সে পরিস্থিতির কথা ভাবা হয়েছে – অর্থাৎ কোনো দেশ যদি ইইউ পরিত্যাগ করার পরে আবার তাতে যোগদান করতে চায়৷ সেক্ষেত্রে ৪৯ নম্বর সূত্রটি প্রযোজ্য হবে৷
ছবি: picture-alliance/ZUMAPRESS.com/J. Goodman
7 ছবি1 | 7
প্রধানমন্ত্রী মে'র অন্যান্য পরিকল্পনা
মে ‘দ্য সান’ পত্রিকায় লেখেন যে, তিনি ‘‘সাধারণ খেটে খাওয়া পরিবারবর্গের জীবনযাত্রার ব্যয় কমাতে, কর নীচু পর্যায়ে রাখতে এবং খোলাবাজারের অর্থনীতি যেখানে ঠিকমতো কাজ করছে না, সেখানে হস্তক্ষেপ করতে বদ্ধপরিকর’’৷
‘দ্য টেলিগ্রাফ’ পত্রিকার বিবরণ অনুযায়ী, মে ২০২০ সালের মধ্যে কোম্পানিগুলোর কর্পোরেশন ট্যাক্স কমিয়ে ১৭ শতাংশ করার পরিকল্পনায় সরকার অটল৷
যেসব নাগরিক বাড়িতে নিখর্চার স্বাস্থ্যগত পরিচর্যা পাচ্ছিলেন, তাদের আরো বেশি ‘অনুদান’ দিতে হবে৷ ছোট ছেলেমেয়েদের বিনামূল্যে সার্বজনীন দুপুরের খাওয়ার জন্য সরকারি বরাদ্দ কমিয়ে সেই অর্থ শিক্ষা খাতের অপরাপর এলাকায় ব্যয় করা হবে৷
আগামী ৮ই জুনের নির্বাচনে টেরেসা মে ও তাঁর কনজারভেটিভ দলের বিপুল জয়ের সম্ভাবনা রয়েছে বলে বিভিন্ন জরিপে দেখা যাচ্ছে৷