জার্মানির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলছে, দুর্নীতির সুযোগ নিয়ে ওই দুইজন উগ্রপন্থির পাশাপাশি আরও এমন ৪৪ অভিবাসনপ্রত্যাশীও দেশটিতে থাকার অনুমোদন পেয়েছেন, যাদের ‘কট্টরপন্থী ইসলামী' দলগুলোর সাথে সম্পৃক্ততার প্রমাণ পাওয়া গেছে৷
জার্মানির সাংবাদিকদের সংগঠন রিডাকসিওন্সনেটজভের্ক ডয়েচলাণ্ড জানিয়েছে, ব্রেমেন অফিস ২০০০ সাল থেকে অন্তত ৮০ জন এমন অভিবাসীকে থাকার অনুমোদন দিয়েছে, যারা কোনওভাবেই অনুমোদন পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন না৷
সন্দেহভাজন বিদেশিদের দ্রুত ফেরত পাঠাবে জার্মানি
সম্ভাব্য সন্ত্রাসী হামলার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে যে কোনো বিদেশিকে দেশে ফেরত পাঠাতে কোনো আইনি বাঁধা নেই বলে রায় দিয়েছে জার্মানির সর্বোচ্চ আদালত৷ তবে সমালোচকরা একে সংবিধানবিরোধী বলছেন৷
ছবি: picture-alliance/dpa
আদালতের রায়
বৃহস্পতিবার কার্লসরুয়াতে সাংবিধানিক আদালত বলেছেন যে, যদি কোনো সন্ত্রাসের ঝুঁকি থাকে, তাহলে কোনো বিদেশিকে ফেরত পাঠাতে আইনি কোনো বাঁধা দেখছেন না৷ বিচারকদের রায় অনুযায়ী, দেশটির স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সন্দেহভাজনদের ব্যাপারে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নিতে পারে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
অভিবাসী আইনেই আছে
দ্রুত সময়ের মধ্যে সন্দেহভাজনদের ফেরত পাঠানোর জন্য জার্মান অভিবাসী আইনের একটি অনুচ্ছেদের রেফারেন্স দিয়ে বিচারকরা বলেছেন যে, ‘জার্মানির নিরাপত্তায় ঝুঁকি হিসেবে বিবেচিত হলেই’ তা ঠেকাতে এ ধরনের সিদ্ধান্ত নেয়া যাবে৷
ছবি: Reuters/K. Pfaffenbach
ওয়ান ইলেভেনের প্রভাব
২০০১ সালের সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রে সন্ত্রাসী হামলার পর জার্মানির সংবিধানে এই ধারাটি ঢোকানো হয়েছিল৷ এতদিন এটি নিয়ে কোনো কথা হয়নি৷ গত ডিসেম্বর মাসে বার্লিনে ক্রিস্টমাস মার্কেটে হামলার পর বিষয়টি আবারো সামনে আসে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/R. Jensen
জার্মানিতে জন্ম, কিন্তু বিদেশি
গেল ফেব্রুয়ারিতে পুলিশ জার্মানির স্যাক্সনি রাজ্যে এক আলজেরিয়ান ও এক নাইজেরিয়ানকে সম্ভাব্য সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে আটক করে৷ তাদের দ্রুত দেশে ফেরত পাঠানোর উদ্যোগ নেয়া হলে আইনের আশ্রয় নেন তারা৷ তারা লাইপসিগে ফেডারেল প্রশাসনিক কোর্টে আবেদন করলে সাময়িক আইনি সুরক্ষা পান৷
ছবি: picture alliance/dpa/A. Dedert
প্রশাসনের হুঁশিয়ারি
গেল মার্চে লোয়ার স্যাক্সনির স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী বরিস পিস্টোরিয়াস হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে বলেছিলেন যে, যারা সন্ত্রাসী হামলার মতো উন্মাদ আচরণ করতে চায়, তাদের এক সেন্টিমিটারও ছাড় দেয়া হবে না৷ তিনি আরো বলেন যে, তারা যে দেশেরই হোন না কেন, আইনের কড়া প্রয়োগ করা হবে তাদের বিরুদ্ধে৷
ছবি: Getty Images/P.Stollarz
ফেরত পাঠানোর পরিসংখ্যান
গত নভেম্বরে প্রকাশ হওয়া পরিসংখ্যান বলছে, ২০১৬ সালের প্রথম নয় মাসে ১৯,৯১৪ জনকে দেশে ফেরত পাঠিয়েছে জার্মানি৷ পুরো ২০১৫ সালে ২০,৮৮৮ জনকে ফেরত পাঠানো হয়েছিল৷
ছবি: Getty Images/AFP/D. Roland
6 ছবি1 | 6
বার্তা সংস্থা ডিপিএ-কে জার্মান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, দুইজন উগ্রপন্থির মধ্যে অন্তত একজনের সম্ভাব্য সন্ত্রাসবাদী হামলার সাথে জড়িত থাকার ঝুঁকি রয়েছে৷
এ বছরের এপ্রিলে ব্রেমেন অভিবাসন অফিসের নারী কর্মকর্তা উলরিখে বি.-এর দুর্নীতি নিয়ে বিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা দেয়া হয়৷ তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল, অন্য চার কর্মকর্তাকে সাথে নিয়ে ১২০০ শরণার্থীকে জার্মানির অভিবাসন প্রক্রিয়ায় বৈধ করার ব্যাপারে ঘুষ নেয়া৷
২০১৩ সাল থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত বৈধ হওয়া ওইসব শরণার্থীর জার্মানিতে অভিবাসনের ক্ষেত্রে ন্যূনতম যোগ্যতার ঘাটতি ছিল৷
বিএএমএফ প্রধান উটা কর্ড্ট জানিয়েছিলেন, ২০০০ সাল থেকে ব্রেমেনের অফিস মোট ১৮ হাজার আশ্রয়প্রার্থীর আবেদনের বিষয়ে সিদ্ধান্ত দিয়েছে৷
আগামী তিন মাসে ওইসব সিদ্ধান্তই আবার খতিয়ে দেখা হবে বলেও জানিয়েছিলেন উটা কর্ড্ট৷
অভিযুক্ত ব্রেমেন অভিবাসন কর্মকর্তা উলরিখে বি. অবশ্য তার বিরুদ্ধে আনা এ ধরনের অভিযোগকে ‘ভিত্তিহীন' বলে উড়িয়ে দিয়েছেন৷ তিনি পালটা অভিযোগ করে বলেছেন, জার্মান অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ও সরকার অভিবাসন সংক্রান্ত অব্যবস্থাপনা ঢাকতেই তাকে ‘বলির পাঠা' বানাচ্ছে৷
জার্মানিতে কয়েকজন শরণার্থীর জীবন
যুদ্ধবিক্ষুব্ধ কোনো দেশ থেকে কীভাবে ইউরোপে আসছে লক্ষ লক্ষ মানুষ? সবাই কি স্থায়ীভাবে ইউরোপে থাকতে চান? থাকতে হলে কী করতে হবে? কী করছেন তাঁরা? কয়েকজন শরণার্থীর জীবন দেখে একটু ধারণা নেয়া যাক৷
চিকিৎসক থেকে শরণার্থী
সিরিয়ায় রাজধানী দামেস্কে চিকিৎসক হিসেবে ভালোই ছিলেন হামবার আল-ইসা৷ কিন্তু যুদ্ধ শুরুর পর জন্মভূমির সব সুখ ছেড়ে ইউরোপের উদ্দেশ্যে পাড়ি জমাতে হয় তাঁকে৷
অনেক পথ পেরিয়ে...
মেসিডোনিয়ায় পৌঁছানোর পর সার্বিয়ার সীমান্ত পর্যন্ত যেতে অনেকটা পথ হাঁটতে হয়েছে হামবারকে৷ হেঁটে কোনো শহরে পৌঁছালেই শুরু হতো ইন্টারনেট ক্যাফে খুঁজে বের করার চেষ্টা৷ পেলে প্রথম কাজ কোথায় আছেন, কেমন আছেন সে সম্পর্কে পরিবারকে বিস্তারিত জানানো৷ একা এসেছেন, তাই স্বজনদের তাঁর জন্য খুব চিন্তা৷ তাঁদের চিন্তা দূর করা ও তাঁদের সম্পর্কে জেনে নিজেকে নিশ্চিন্ত রাখতেই পছন্দ করেন হামবার৷
অবশেষে জার্মানিতে...
অনেক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে অবশেষে জার্মানিতে পৌঁছেছেন হামবার৷ সিরিয়াতে সার্জন হিসেবে কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকা সত্ত্বেও নতুন দেশে চাইলেই তো আর চিকিৎসক হিসেবে কাজ শুরু করা যায় না৷ জার্মান ভাষা শিখে নিজেকে তৈরি করতে হবে সবার আগে৷ সেই চেষ্টা চলছে৷ পাশাপাশি স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনুবাদকের কাজও করছেন৷ তাঁর স্বপ্ন অবশ্য জার্মানিতে বসবাস করা নয়৷ সুসময় ফিরে এলে নিজের দেশেই ফিরতে চান হামবার৷
দেশান্তরী এক আফগান কিশোরী
তোবার বয়স এখন ১৬ বছর৷ আফগানিস্তানের হেরাত থেকে জার্মানিতে এসেছে সে৷ হেরাতে নিয়মিত স্কুলে যেত সে৷ লেখাপড়া করেই প্রতিষ্ঠিত হওয়ার স্বপ্নও দেখতো৷ কিন্তু তালেবান বেছে বেছে মেয়েদের স্কুলে হামলা শুরু করায় তোবার পক্ষেও আর দেশে থাকা সম্ভব হয়নি৷
সপরিবারে জার্মানিতে
আফগানিস্তান থেকে জার্মানিতে অবশ্য একা আসেনি তোবা৷ দুই বোন এবং তাঁদের স্বামীও এসেছেন সঙ্গে৷ কাছের এই মানুষগুলো সঙ্গে থাকার কারণেই ইরান, তুরস্ক, গ্রিস এবং বলকান অঞ্চল হয়ে জার্মানিতে পৌঁছাতে পেরেছে তোবা৷
দুঃস্বপ্নে পোড়া স্কুল, স্বপ্নে সুন্দর আগামী
তালেবান হামলা থেকে বাঁচতে আফগানিস্তান ছেড়ে এলেও স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন কিন্তু ছাড়েনি তোবা৷ নিজেকে নতুন করে তৈরি করছে সে৷ জার্মান ভাষা শিখছে৷ স্বাবলম্বী হতে হলে জার্মানিতে ভাষা শেখাটা তো সবার জন্যই জরুরি৷
এক সাংবাদিকের পরিবার
ওপরের ছবির তিনজন জার্মানিতে এসেছেন সিরিয়ার ইদলিব থেকে৷ আহমেদ (মাঝখানে)-এর সঙ্গে তাঁর স্ত্রী হেবা এবং বন্ধু সালেহ৷ সিরিয়ায় সাংবাদিক হিসেবে বেশ কিছুদিন কাজ করেছেন আহমেদ৷
শৈশবেই প্রবাসী
আহমেদ-হেবা দম্পতির এই মেয়েটিও এসেছে জার্মানিতে৷ মাত্র এক বছর বয়সেই শুরু হয়েছে তার প্রবাসজীবন৷ ওর বাবা অবশ্য যুদ্ধ থামলেই ফিরে যেতে চায় সিরিয়ায়৷
8 ছবি1 | 8
২০১৫ সালের শরণার্থীর সঙ্কট শুরু হওয়ার পর থেকেই জার্মানির অভিবাসন অফিসগুলো কড়া নজরদারিতে এসেছে৷
১ লাখেরও বেশি অভিবাসনপ্রত্যাশীকে বৈধ করে নেওয়ার সরকারী সিদ্ধান্তের পর এসব অভিবাসন অফিসে ব্যস্ততা ও চাপ বেড়েছে৷ ফলে অভিবাসন কর্মকর্তা-কর্মচারীর সংখ্যাও ৩ হাজার থেকে বাড়িয়ে ৭ হাজার ৩০০ করতে হয়েছে৷
এছাড়া প্রত্যেক অভিবাসন অফিসকে গড়ে সাড়ে ৩টি করে অভিবাসন আবেদনের ব্যাপারে নিষ্পত্তির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে৷ গত বছর ৬৬টি অভিবাসন অফিসের মধ্যে মাত্র তিনটি আবেদন নিষ্পত্তির এ ন্যূনতম লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করতে পেরেছে৷
এদিকে অভিবাসন দুর্নীতি এবং ব্যবস্থাপনায় গলদের জন্য জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেলের ‘গা-ছাড়া' মনোভাবকে দায়ী করেছে অভিবাসন অফিসের সাবেক প্রধান ফ্রাঙ্ক ইউরগোন ভাইজার৷
২০১৫ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত অভিবাসন বিভাগের প্রধান হিসেবে দায়িত্ব পালন করা ভাইজার বলেন, ‘‘বারবার সাবধান করার পরও ব্যর্থতা সরকারের গা ছাড়া মনোভাবের কারণে হয়েছে৷ এ ধরনের অবস্থা প্রতিরোধ করা সম্ভব ছিল৷''