মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প একদিকে অভিবাসনে রাশ টেনে সমর্থকদের বাহবা কুড়ালেও বেআইনি অভিবাসীদের মার্কিন নাগরিকত্ব গ্রহণের সুযোগ দিতে সার্বিক সংস্কারের জন্য চাপ দিচ্ছেন৷
গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ট্রাম্প প্রশাসন এই কর্মসূচি বাতিলের সিদ্ধান্ত ঘোষণা করে৷ তবে এই কর্মসূচির বিকল্প সৃষ্টি করতে ট্রাম্প মার্কিন কংগ্রেসকে মার্চ মাস পর্যন্ত সময় দিয়েছিলেন৷
মঙ্গলবার সান ফ্রানসিস্কো শহরের এক আদালত বেআইনি অভিবাসী শিশুদের জন্য বিশেষ কর্মসূচি বাতিল করার ফেডারেল সিদ্ধান্ত কার্যকর করার পথে আপাতত বাধা সৃষ্টি করেছে৷ বিচারপতি উইলিয়াম অ্যালসাপ তাঁর রায়ে গোটা দেশে ‘ডাকা' কর্মসূচি আবার চালু করার নির্দেশ দিয়েছেন৷ তাঁর রায় অনুযায়ী, এ বিষয়ে চূড়ান্ত রায়ের আগে কোনো রদবদল চলবে না৷ মঙ্গলবারই ট্রাম্প রিপাবলিকান ও ডেমোক্র্যাট দলের সংসদ সদস্যদের উপর ‘ড্রিমার্স' কর্মসূচি নিয়ে বোঝাপড়ার জন্য চাপ দিয়েছেন৷ তিনি বেআইনি অভিবাসন সংক্রান্ত সমস্যার ক্ষেত্রে সার্বিক এক সমাধানসূত্রে সম্মতির ইঙ্গিত দিয়েছেন৷ তবে এর বদলে তিনি বিরোধী ডেমোক্র্যাটিক দলের কাছ থেকে সীমান্ত সুরক্ষা জোরদার করার প্রশ্নে সমর্থন চাইছেন৷ বিশেষ করে মেক্সিকো সীমান্তে প্রাচীর গড়ার বিতর্কিত সিদ্ধান্তে তাদের সম্মতি আশা করছেন ট্রাম্প৷
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আনুমানিক প্রায় ১ কোটি ১০ লক্ষ নথিবিহীন অভিবাসী বসবাস করেন৷ তাদের মার্কিন নাগরিকত্ব নেবার সুযোগ করে দিতে এক সার্বিক কর্মসূচি নিয়ে বহুকাল ধরে জল্পনাকল্পনা চলছে৷ ট্রাম্প নিজে এবার এমন এক আইন প্রণয়নের উপর জোর দিচ্ছেন৷ তবে ট্রাম্পের সমর্থকরা এমন এক প্রচেষ্টাকে যে ভালো চোখে দেখবেন না, সে বিষয়ে সন্দেহ নেই৷
যুক্তরাষ্ট্র নয়, মেক্সিকোতে যাচ্ছেন মধ্য অ্যামেরিকার অভিবাসীরা
যুক্তরাষ্ট্রে নর্দার্ন ট্রায়াঙ্গেল বা গুয়াতেমালা, হন্ডুরাস আর এল সালভাদর-এর বেশিরভাগ অভিবাসী মেক্সিকোতে যাওয়ার এবং সেখানে থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছে৷ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের অভিবাসন নীতির কারণেই এই সিদ্ধান্ত তাদের৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
যুক্তরাষ্ট্র আর প্রথম পছন্দ নয়
মেক্সিকোর গুয়াতেমালা সীমান্তের কাছে টেনোসিক এ আশ্রয় কেন্দ্রের শরণার্থী এই ব্যক্তি, যিনি হন্ডুরাস থেকে এসেছেন৷ তিনি জানালেন তার পরিকল্পনা ছিল পরিবার নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে পাকাপাকিভাবে থেকে যাওয়া৷ কিন্তু ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর সব বদলে গেছে৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
মেক্সিকোতে দীর্ঘ সময় থাকা
গুয়াতেমালার কনসেপসিওন বাওতিস্তা তার নবজাতক সন্তানকে নিয়ে একই আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিয়েছেন৷ তিনি জানিয়েছিলেন, যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পরিকল্পনা ছিল, কিন্তু তারা বর্তমানে মেক্সিকোতে থাকার কথাই ভাবছেন৷ কারণ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর অভিবাসন নীতি কীভাবে কাজ করে সেটা দেখার অপেক্ষায় আছেন তারা৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
মেক্সিকো: যা একসময় ট্রানজিট দেশ ছিল
...তবে সময় যাওয়ার সাথে সাথে তিনি বুঝতে পেরেছে মেক্সিকোতে আশ্রয়ের জন্য আবেদন করাটাই বুদ্ধিমানের কাজ হবে৷ মেক্সিকোর টেনোসিক আশ্রয়প্রার্থীদের তথ্য থেকে এটা স্পষ্ট যে এদের মধ্যে খুব কম মানুষই যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ব্যাপারে আগ্রহী৷ অনেকে তাদের দরিদ্র, সহিংসতার দেশে ফিরে যাচ্ছে৷ আর বেশিরভাগই মেক্সিকোতে থেকে যাওয়ার পরিকল্পনা করছে৷ মেক্সিকো আসলে যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার ট্রানজিট দেশ৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
কঠোর অভিবাসন নীতি
ট্রাম্পের কঠোর অভিবাসন নীতির প্রভাব এরই মধ্যে দেখা যাচ্ছে৷ ক্যালিফোর্নিয়ায় কৃষকরা মূলত মেক্সিকো থেকে কর্মী আনত চাষবাসের সময় এবং ফসল তোলার সময়৷ কিন্তু এই নীতির কারণে মেক্সিকোর অনেক মানুষ নিজের দেশেই কাজ যোগাড় করছে৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
২০১৭ সালে মেক্সিকোতে রেকর্ড ২২,৫০০ আশ্রয়প্রার্থীর আবেদন জমা পড়েছে
টেনোসিকের শরণার্থী কেন্দ্রে মধ্য অ্যামেরিকা থেকে আসা শরণার্থীরা ফুটবল খেলছে৷ ট্রাম্প নির্বাচনে জেতার পর মেক্সিকোতে আশ্রয়প্রার্থীদের আবেদনের সংখ্যা ১৫০ ভাগ বেড়েছে৷ তারা যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি দেওয়ার চেয়ে ক্যানাডায় যেতে আগ্রহী হচ্ছে৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
মানবপাচারকারীদের অর্থ চাহিদা বাড়ছে
গুয়াতেমালা সীমান্তের কাছে প্রত্যন্ত একটি এলাকায় দুই অভিবাসন প্রত্যাসী অভিবাসন কর্মকর্তাকে ফাঁকি দিয়ে অ্যামেরিকায় পালানোর চেষ্টা করছিলো৷ গুয়াতেমালার এক ব্যক্তি জানিয়েছে, ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর মানবপাচারকারীরা আগের চেয়ে অনেক বেশি অর্থ দাবি করছে৷ কয়েক বছর আগে যেখানে একজনকে পাঠাতে ৬ হাজার মার্কিন ডলার নিতো, বর্তমানে সেখানে ১০ হাজার ডলার নিচ্ছে৷
ছবি: Reuters/C. Jasso
মেক্সিকোর সব অভিবাসীরা বাড়ি ফিরতে চায় না
মেক্সিকোর অভিবাসন কর্তৃপক্ষের কঠোর নিয়ন্ত্রণের কারণে মধ্য অ্যামেরিকা থেকে আসা শরণার্থীরা প্রায়ই প্রত্যন্ত এলাকা দিয়ে ঢোকার চেষ্টা করে এবং ছিনতাইয়ের কবলে পড়ে৷ যুক্তরাষ্ট্র থেকে গত ডিসেম্বরে ফেরত পাঠানো হয়েছে এমন এক ব্যক্তি জানালেন, আমরা অনেকবার উত্তর অ্যামেরিকায় গিয়েছি, প্রত্যেকবারই যাওয়াটা ভীষণ কষ্টকর ছিল৷