শরণার্থী সংকটের সমাধান খুঁজতে আগামী বৃহস্পতিবার ইউরোপীয় ইউনিয়নের শীর্ষ নেতারা বৈঠকে বসবেন৷ তার আগে রবিবার নিজেদের মধ্যে কথা বলবেন কয়েকজন নেতা৷
বিজ্ঞাপন
ইউরোপীয় কমিশনের প্রেসিডেন্ট জঁ ক্লোদ ইয়ুংকার বুধবার জানান, ইউরোপে অভিবাসন ও আশ্রয় নিয়ে আলোচনার জন্য তিনি রবিবার ব্রাসেলসে ‘অনানুষ্ঠানিক' এক বৈঠক আহ্বান করেছেন৷ ‘‘ইইউ শীর্ষ সম্মেলনের আগে শরণার্থী সংকটের একটি ইউরোপীয় সমাধানসূত্র পাওয়ার লক্ষ্যে কয়েকজন রাষ্ট্রপ্রধান নিজেদের মধ্যে আলোচনা করবেন,'' বলে এক টুইট বার্তায় জানান ইয়ুংকার৷
জার্মানি, ফ্রান্স, ইটালি, স্পেন, গ্রিস, অস্ট্রিয়া ও বুলগেরিয়ার নেতৃবৃন্দ এতে অংশ নেবেন বলে এএফপি জানিয়েছে৷ এদিকে, মাল্টার প্রধানমন্ত্রী জানিয়েছেন, তিনিও ইয়ুংকারের আমন্ত্রণ পেয়েছেন৷
বৈঠকে ‘ডাবলিন রেগুলেশন' সংস্কার নিয়ে আলোচনা হতে পারে৷ এই নীতি অনুযায়ী, শরণার্থীরা প্রথমে যে দেশে নিবন্ধিত হবেন, সেই দেশেই তাদের আশ্রয়ের আবেদন করতে হয়৷ এই নিয়মের কারণে ইটালি ও গ্রিসের সমস্যা হচ্ছিলো৷ কারণ, বেশিরভাগ শরণার্থীই সাধারণত ভূমধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে এই দেশ দুটিতে আশ্রয় নিয়ে থাকেন৷
উল্লেখ্য, ২০১৫ সাল থেকে এখন পর্যন্ত ইউরোপীয় ইউনিয়নে প্রায় ১৫ লক্ষ শরণার্থী প্রবেশ করেছে৷ তাঁদের কারণে ইইউ'র আশ্রয় ব্যবস্থা সংস্কারের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে৷
শরণার্থী: জলবায়ু পরিবর্তন যার অন্যতম কারণ
বিশ্বে দু’ধরনের শরণার্থী রয়েছে৷ ১. জাতিগত সহিংসতা কিংবা রাজনৈতিক আদর্শগত কারণে, ২. জলবায়ুর কারণে সৃষ্ট৷ এই দু’ধরনের শরণার্থীই এখন বাংলাদেশের দুশ্চিন্তার কারণ৷ আর এই দু’টো কারণেই বিদেশে আশ্রয় নিচ্ছেন বাংলাদেশিরা৷
ছবি: Reuters/Beawiharta
রোহিঙ্গা শরণার্থী
১৯৯১-৯২ সালে আড়াই লক্ষাধিক মুসলিম রোহিঙ্গা শরণার্থী সামরিক জান্তার নির্যাতন-নিপীড়ন থেকে মুক্তি পেতে মিয়ানমার থেকে পালিয়ে বাংলাদেশে এসে আশ্রয় নেয়৷ ইউএনএইচসিআর-এর প্রতিবেদন অনুযায়ী গত বছরের অক্টোবর থেকে এ বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত আরও ৭৪ হাজার নতুন রোহিঙ্গা আশ্রয় নিয়েছে বাংলাদেশে৷
ছবি: picture-alliance/dpa
জলবায়ু উদ্বাস্তু: প্রতি সাতজনে একজন
বাংলাদেশের জলবায়ু শরণার্থীদের সংগঠন ‘অ্যাসোসিয়েশন ফর ক্লাইমেট রিফিউজি’ বা এসিআর-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০৫০ সাল নাগাদ বিশ্বে ৪৫ জনের মধ্যে ১ জন জলবায়ু উদ্বাস্তুতে পরিণত হবে৷ আর বাংলাদেশে সংখ্যাটা হবে প্রতি সাতজনে একজন৷ পরিবেশ বিজ্ঞানীদের আশঙ্কা, আগামীতে বাংলাদেশের প্রায় তিন কোটি মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের শিকার হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিতে বাধ্য হবে৷
ছবি: picture-alliance/dpa/Zakir Hossain Chowdhury
জলবায়ু উদ্বাস্তু: প্রতি বছর ২,০০০ মানুষ আসছে ঢাকায়
আগে কেবল দারিদ্র্যের কারণে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে ঢাকায় আসত মানুষ৷ আর এখন জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঢাকায় আশ্রয় নিচ্ছে অনেকে৷ প্রতি বছর নতুন করে দুই হাজার মানুষ জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঢাকায় ঠাঁই নিচ্ছে৷
ছবি: Getty Images/A. Joyce
আন্তর্জাতিক উদ্বাস্তু সংস্থা আইওএম-এর রিপোর্ট
বিশ্বব্যাংক বলছে, প্রতি বছর ঢাকার বাইরে থেকে কমপক্ষে ৪ লাখ মানুষ এই শহরে আসছে৷ আর আইওএম বলছে, ঢাকার বস্তিতে যেসব মানুষ থাকে, তার মধ্যে ৭০ ভাগই জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে ঘর-বাড়ি হারিয়ে এই শহরে আশ্রয় নিয়েছে৷
ছবি: Getty Images/AFP/M. uz Zaman
ইউরোপে শরণার্থীদের মধ্যে বাংলাদেশিদের সংখ্যা বাড়ছে
গত বছরের প্রথম তিন মাসে ইটালিতে গিয়েছিল মাত্র একজন বাংলাদেশি শরণার্থী৷ কিন্তু ২০১৭ সালে সেটা আশ্চর্যজনকভাবে বেড়েছে৷ প্রথম তিন মাসে ইটালিতে বাংলাদেশি শরণার্থী এসেছে ২ হাজার ৮শ’ জন৷ নৌকায় ভূ-মধ্যসাগর পাড়ি দিয়ে ইটালিতে পৌঁছেছেন তাঁরা৷
ছবি: Reuters/Marina Militare
১০ হাজার ডলারের বিনিময়ে
দালালদের ১০ হাজার মার্কিন ডলার দিয়ে থাকেন এই শরণার্থীরা৷ প্রথমে যান দুবাই বা তুরস্ক, সেখান থেকে লিবিয়া হয়ে ইটালিতে পৌঁছান তাঁরা৷ এই দীর্ঘ ও দুর্গম পথ পাড়ি দিতে তাঁদের অনেকের কয়েক বছর লেগে যায়, প্রাণ হারান কেউ কেউ৷
ছবি: picture-alliance/dpa/S. Palacios
6 ছবি1 | 6
শরণার্থী সংকটকে কাজে লাগিয়ে বিভিন্ন দেশে ডানপন্থি দলগুলো জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে৷ জার্মান চ্যান্সেলর আঙ্গেলা ম্যার্কেল তাঁর মানবিক শরণার্থী নীতির কারণে সম্প্রতি রাজনৈতিক সংকটে পড়েছেন৷